আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দারুণ খবর, তবে আরো দারুণ হবে যদি....



বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম খুলতেই দারুণ একটা খবর চোখে পড়লো। ছোট্ট খবর, অনেকের হয়তো চোখেই পড়বে না। বিষয়, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শুরুর তারিখ। খবরে বলা হচ্ছে, ২০০৮ সালের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হবে ২৮ ফেব্র“য়ারি, আর এইচএসসি ২৯ এপ্রিল। আর ২০১০ সাল থেকে এই পরীক্ষা দুটি প্রতি বছর শুরু হবে যথাক্রমে ১ ফেব্র“য়ারি আর ১ এপ্রিল থেকে, ফল বেরুবে ২৫ মে ও ২৫ জুলাই।

এটা যদি সত্যিই বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে কিন্তু দারুণ হবে! শিক্ষা ব্যবস্থায় একটা নিয়ম চালু করা সম্ভব হবে! এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে অবশ্য আমাদের দেশে কোনো সেশনজট নেই, সেটা আছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যও যদি এমন একটা নিয়ম চালু করা যেতো, তাহলে কিন্তু বেশ হতো। জুলাইতে যদি এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়, তাহলে আমি নিশ্চিত, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আগস্টেই শুরু করে দেবে সেমিস্টার, বড় জোর সেটা হতে পারে সেপ্টেম্বর। তাহলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কেন অন্তত জানুয়ারিতে শুরু করতে পারবে না তাদের সেশন? আমি আগস্টেই শুরু করার পক্ষে, কিন্তু জানি নানা কারণে সেটা শেষ পর্যন্ত সম্ভব হবে না। তাই জানুয়ারির কথা বলছি।

এখন এইচএসসি পরীক্ষার ফল বের হতে হতে আগস্ট/সেপ্টেম্বর মাস লেগে যায়, কিন্তু আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হতে লাগে তারপরের আরো অন্তত ছয় মাস। এ বছরে যেমন প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হয়েছে ১৫ এপ্রিল থেকে। এ বছরেই সেমিস্টার পদ্ধতি চালু করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদকে বেশ ঝক্কি পোহাতে হয়েছে, অনেক শিক্ষকরাই সন্দিহান এই পদ্ধতিটা ঠিকমতো কাজ করবে কি না তা নিয়ে। কারণ, আমাদের তো কোনো নির্দিষ্ট সময়সূচি নেই সেমিস্টার শুরু আর শেষের! সেমিস্টার পদ্ধতির নীতিমালায় বলা আছেÑ ২৬ সপ্তাহের সেমিস্টারের ১৫ সপ্তাহ হবে ক্লাস, ২ সপ্তাহ ছাত্রদের প্রস্তুতির জন্য ছুটি, ৩ সপ্তাহ পরীক্ষা নেওয়া, ৩ সপ্তাহ ফল প্রকাশ আর ৩ সপ্তাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছুটি। খুব ভালো হয়, যদি এই সেমিস্টারটা আমরা জানুয়ারি আর জুলাইয়ে শুরু করতে পারি আর সেটাকে একটা নিয়মের মধ্যে আনতে পারি।

এটা করতে হয়তো কয়েকটা বছর শিক্ষকদের একটু কষ্ট করতে হবে, আগের বছরগুলোর জমা হওয়া সেশনজটের কারণে একই বর্ষে একাধিক ব্যাচ থাকবে। কিন্তু ২০০৮ সাল থেকেই যদি আমরা কোনোভাবে জানুয়ারির শুরুতে ক্লাস শুরু করতে পারি আর কোনোভাবে চারটা বছর এই নিয়মানুবর্তিতা ধরে রাখতে পারি, তাহলেই সেশনজটের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেওয়া সম্ভব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ই বা কেন, দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও। আর একবার এই নিয়মটা চালু করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও সুখেই থাকবেন। কারণ, এখন নিয়ম নেই বলে আসলে সারা বছরে তাদের ছুটিগুলো থাকে কেবল কাগজে কলমেই।

জুন মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস থাকে না, কিন্তু সারা মাসই লেগে থাকে পরীক্ষা, তাই থাকে হলে দায়িত্ব পালনের ঝক্কি, থাকে খাতা দেখার চাপও। ডিসেম্বরের শীতকালীন ছুটি আর সেপ্টেম্বর/অক্টোবরের শরৎকালীন ছুুটির ক্ষেত্রেও থাকে একই অবস্থা। আর রোজায় তো আজকাল আর ছুটিই থাকে না, ঈদের সময় কেবল দিনদশেক ছুটি থাকে। নতুন নিয়মটা পুরো চালু হলে জুনের একমাস ছুটিটা তিন সপ্তাহে নেমে আসবে, শরতের ছুটিটাও সেভাবে থাকবে না হয়তো। কিন্তু ডিসেম্বরে দুই সপ্তাহের জায়গায় পাওয়া যাবে তিন সপ্তাহ, এবং নির্ভেজাল ছুটি।

আর ছাত্রদের প্রস্তুতির ছুটির দুই সপ্তাহকে প্রয়োজনে ঈদ, পুজোর সঙ্গে সমন্বয় করে নেওয়া যাবে। তারপর পরীক্ষা গ্রহণ আর ফল প্রকাশের জন্য নির্ধারিত ছয় সপ্তাহ করে বছরে দুবার এমন সময় পাওয়া যাবে যখন আসলে উত্তরপত্র মূল্যায়ণসহ নানা রকম প্রশাসনিক কাজ করার অবকাশ পাওয়া যাবে। সেটাও বা কম কিসে! কিন্তু এতে সবচেয়ে উপকার হবে আমাদের শিক্ষার্থীদের, পরোক্ষে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি একটা বড় সমস্যা বটে, কিন্তু এই সমস্যা নিয়ে আমরা যত ভাবি, তার সিকি শতাংশও যদি ভাবতাম শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে তাহলে এই রাজনীতির নিগড়ে থেকেও বদলে দেওয়া যেত বিশ্ববিদ্যালয়কে। আশা করি এই ভাবনাটা নাড়া দেবে তাদেরকেও, যাদের ভাবনা আসলে কাজে আসবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।