একটি ব্লগে একাউন্ট খুলতে প্রযুক্তি-কাঁচা এক ছেলেকে সামহোয়্যার ইন ব্লগ এ একাউন্ট খোলাতে বারংবার ইনস্ট্রাকশান দিয়েও ব্যর্থ হয়ে সুমন চৌধুরী বিরক্তমুখে একটা নিক আর একাউন্ট পাসওয়ার্ড ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে দিলে ছেলেটির প্রথম কাজ হলো ব্লগটির নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠা করা। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার স্মৃতির অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া জ্ঞান থেকে কোন কিছু না ভেবেই যে কাজটি ছেলেটি করলো, তা হলো পুরনো যে পোষ্টটি জ্বলজ্বল করছিল - সেই ’পাকসারবাদ জমিন ’ (নামটা ঠিক আছে তে?) ঝাড় মুছ করে পরিস্কার করে ফেলা। পরিস্কার মানে একটি সাদা কাগজের টুকরা - আর সাদা কাগজের টুকরো পেলে যে ছেলেটির আকিবুকি টানতে ভাল লাগে। খেলতে খেলতে তৈরী হলো - এক টুকরো আপেল হবো - ভাবিনি কখনও’।
সব তো ঠিকই আছে - সুমনেরই একাউন্ট পাঠানোর কথা, ছেলেটির সেটি নিজের করে নেয়া, সাদা পাতায় আকিবুকি খেলা- তবে আর, মতা-বিজ্ঞানের সূত্র বাকি থাকবে কেন ? নিজের করে নেয়ার কাজ শুরু করতে না করতেই সুমন চৌধূরীর এম এস এন এ বার বার চিৎকার - মুছলা ক্যান.. .. মুছলা ক্যান .. .. মুছলা ক্যান >>
সম্পর্কতো এক ব্রম্মাস্ত্রই, সঙ্গে লেখাটি আলাদা সেভ করে রেখেছি ’ এই প্রবোধের যোগে সুমন চৌধূরীর শান্ত হয়ে যাওয়ার সূযোগে বেশ খানিক এলোমেলো দাগটানা আর এর ওর ঘরে উকোউকি।
ধর্ম আর ঈশ্বরতত্ত্ব নিয়ে ব্লগ বেশ তপ্ত তখন, আস্ত মেয়ে নামে একজন বেশ তলোয়ারবাজী করছে। বেশ মজাই লাগলো। আমিও ছোটবেলার স্মৃতি নিয়ে টপাটপ লেখা লিখে ফেললাম কয়েকটি, এর ওর যুদ্ধ লড়াই এসব দেখতে দেখতে। কয়েক দিনের মধ্যেই মনে হলো মেয়েটি আসল এ যতটা খেলছে ততটা খেলুড়ে নয়। ব্ল্যাঙ্ক স্পেসে খেলতে ভালবাসে।
সূযোগসন্ধানী !! -
সূযোগসন্ধানী মানেই খারাপ তা নয়। সুযোগকে চিনে উঠে একে কাজে লাগানোর মধ্যে একটা কৃতিত্ব আছে বৈ কি। প্রায় পুরো খেলা খালি দাড়িয়ে থাকা রোনালদোর এই মতাটি ছিল আর অনেকের মতোই কিন্তু অসাধারন ফিনিশিং এর কারনে সেই সেরা । এই কারনে তাকে ছুড়ে দেয়া গালিগুলো চোরামনের গজগজানি হয়ে প্রায়ই ফেরত আসতো।
আমার ভালো লাগে মাতোয়ারা দিয়াগো, সৃষ্টিশীল জিদানে, ীপ্র শ্রমিক ম্যাথায়াসকে।
কিন্তু আস্ত মেয়ে (আমাদের সমাজকাল বিবেচনায়) রোনালদো নয়, এমনকি তার গোত্রেরও নয়। বুদ্ধিমান সূযোগসন্ধানীরা পায়ে বেশিন বল রাখে না, দ্রত ছুড়ে দিতে চায় অভীষ্ট ল্েয। কিন্তু আস্ত মেয়ে নিজের পায়ে বল রেখে দেবে পুরোটা সময়, যেন লাইম লাইটের আলোয় পুড়ে পুড়ে সে সোনা হয়ে যেতে পারে। চরিত্রটাতো মজারই - না ?
ওর সাথে মজা করতে গিয়ে জন্ম নিল আস্ত মেয়ের। চোরাবালি নামটা এতনে আমার হয়ে গেছে।
আমি কিন্তু সত্যিই এ নতুননামে লিখতে গিয়ে একটা দ্বি-চারীত্বের অর্ন্তদ্বন্দ্ব অনুভব করেছিলাম। কিন্তু মজাটার লোভটা ছিল। তাই তাড়াতাড়ি এক তরতাজা ঝুক্তির ঝাপি খুলে ফেললাম। এই ঝাপির তরিতরকারী দিয়ে অপটু রান্নার স্বাদ পাওয়া যায় চোরাবালি ব্লগে ’আমার হারিয়ে যাওয়া জলচৌকির গল্প আর যেমন খুশী সাজোর মেলা *** পোষ্টে (১২.০৮.০৬)।
এক লাফে আস্ত মেয়ের সরাসরি প্রতিপ হবার সূযোগসন্ধানী পথে আস্তছেলে (ব্লগ এন্ট্রির সময় মাঝখানের স্পেসটা দিতে ভুলে গিয়েছিলাম) নামলো।
খেলাটা শুরু করে দিলেও দু একটি বিষয় ব্যাক্তিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। প্রথমত আমার সময় সত্যি খুবই কম যে সিরিয়াসলি এই ব্লগে সময় দিতে পারবো। অথচ মজাটা একটু নিজের মাঝে জমাট বাধাতে চাইলে খানিকটা সময়তো দাবী করবেই। আমার পেশাগত কাজের একটা অংশ লেখা সংক্রান্ত। তাই আমাকে একটা সময় লেখা, লেখার ষ্ট্রাকচার, ক্যারেকটারাইজেশন এইসব নিয়ে সময় দিতে হয়।
আস্তছেলে নিক চালিয়ে নিতে আমার জন্য যে কাজটি ঠিক করলাম সেটি লেখার ষ্ট্রাকচার নিয়ে। আমি আরবী মনে হবে এমনভাবে ভাষাটা তৈরী করার চেষ্টা করলাম যার প্রতিটি শব্দ প্রচলিত বা অপ্রচলিত বাংলা থেকে নেয়া। আস্তছেলে নামে যে কয়টি লেখা আমি লিখেছিলাম তাতে এই এক্সপেরিমেন্ট চালিয়েছিলাম।
এরপর একের পর আরেক। সবসময় যে ভাষাটাই মূখ্য ছিল, তা নয়।
একটি নিটোল একটা মেয়ের ( যেমন মেয়ের প্রেমে আমি পড়ি) মনস্তত্ত্ব খোজার জন্য তৈরী করলাম ফ্রিদা। ফ্রিদা নামে লেখাগুলো আমার খুব প্রিয় হয়ে গিয়েছিল। ব্লগটা আমার একটা এক্সপেরিমেন্টের জায়গা হিসেবে খুব মন্দ ছিল না। পেছন ফিরে তাকালে বেশ কিছু অসফল প্রয়াসও চোখে পড়ে। পরিমিতিবোধের অভাবে নারীবাদী মানুষ, বিবাহিত, নিয়ে বেশিদুর এগুনো হয় নি।
লাষ্টবেঞ্চি ছিল এক ব্যর্থ অভিমানী এক তরুন , বোকাবুড়ো এক বৃদ্ধের প্রতিচ্ছবি । অলসতার কারনে প্রিয় এই চরিত্রদুটি নিয়ে বেশি কাজ না করার একটা দুঃখ আমার মধ্যে এখনও রয়ে গেছে।
আর একটি নিক আমার সন্তুষ্টি কিছুটা মেটাতে পেরেছে সেটি পুরুষ। একটি বালকের মধ্যে কিভাবে ছেলে বিষয়ক বোধ তৈরী হতে পাওে তারই একটা কড়চা যৌনতার কারনে খানিকটা সমালোচিত হলেও আমি যে কারনে এটি লিখতে চেয়েছি সেটি হলো সরল ভাষা চর্চা। আস্তছেলের ভাষা নিরীার ঠিক উল্টো ছিল এটা।
ব্লগের একটা নিয়ম থাকে। অনেকটা সামাজিক রীতি নীতির মতো। দেখা না হলেও মন্তব্য, লেখা -পাল্টা লেখার ভেতর দিয়ে এর বায়বীয় অস্তিত্ব সাকার পায়। বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, শত্র“ তৈরী হয়। আমার পে এই ইন্টারেকশন মেইনটেইন করার স্কোপ ছিল না মূলত সময়ের অভাবের কারনে।
তবুও চোরাবালির সাথে ঝরাপাতার বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারতো, যেমন ফ্র্রিদার সাথে রাগ ইমনের। আস্তছেলে এক নিঃসঙ্গ পথিক আর পুরুষ এর প্রাপ্তি বলতে জেবতিক আরিফের প্রেরণা।
ব্লগের কারনে একজন রক্তমাংসের মানুষের সাথে পরিচয় ঘটেছিল তিনি হচ্ছেন অমি রহমান পিয়াল। আমাদেও একটা প্রজেক্ট চলছে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক প্রোপটের অডিও ভিজ্যূয়াল ডকুমেন্টেশন। অঃ রঃ পিঃ মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করেন, তার সাথে দেখা করলে কাজটা আরেকটু এগুবে এই ভেবে তারসাথে দেখা করি।
বেশ কয়েকবার কথাবলার পরও মূলত আমার অলসতার কারনে তার সাথে আর এগোনো হয় নি।
এখনও যখন জেলায় জেলায় ঘুরে বেড়াই পুরনো ইতিহাসের খোজে তখন মাঝে মাঝে অঃ রঃ পিঃর কথা মনে হয়। লোকটা থাকলে ভালোই হতো!
ঢাকা নিয়ে দীর্ঘ আর একটি কাজ করছি আমরা, তখন সত্যিই মনে হয় ঝরা পাতার কথা। অনেক কথা (লেখা, মন্তব্য) হয় নি কিন্তু এই মানুষটিকে সম্ভবত আমি বুঝতে পারি।
আরেকজন অনাহূত আগন্তুক - এই ছেলেটি আমার চোখে সেরার সেরা।
ওর লেখার প্রতিটি শব্দ এক একটা জগৎের শব্দ, গন্ধ, স্পর্শ নিয়ে উপস্থিত হত। আমাকে এই কথার জন্য মা করবেন - ওই সেরা , যতজনের কথাই বলুন। লেখার পেছনে যদি শক্তিশালী অনূভুতি কিংবা অভিজ্ঞতার উপস্থিতি বিবেচনা করা যায় তবে আমরা কেউই ওর কাছাকাছি যেতে পারি নি। একমাত্র ওর কিছু লেখা আমি নিজের কাছে রেখে দিযেছিলাম অবসর করে শেখার জন্য। কিন্তু ওর লেখায় মন্তব্য আর পাঠ সংখ্যা দেখে ওর জন্য কষ্ট হতো, আর সবার জন্য পড়ে থাকতো রাগ আর বিরক্তি আর অভিমান।
এই কারনে সে যখন চলে গেলো তখন ব্লগ নিয়েই একটা প্রশ্ন উঠেছিল আমার কাছে। আমি ওকে হারাতে চাই নি, ওর ইমেল এড্রেস যোগাড় করে ফেললাম যেন সে না হারায়।
আমি এমনিতেই গুহাবাসী কল্পনাপ্রবন মানুষ, অনেক মানুষের ভিড়ে আমি কেমন গুটিয়ে আমার আকাশ বড় করে ফেলি। কোনদিন জানতেও পারে না তারা, এমন মানুষেরা তারা হয়ে সেখানে জেগে থাকে। আমাকে মাঝে মাঝে ডুব দিতে হয় এই শহর ছেড়ে।
কোন নদীর নির্জন চরে কিংবা পাহাড়ী রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে চেনা মানুষের মুখচ্ছবির সাথে কয়েকজন অদেখা মানুষের নাম মনে পড়ে .. নিরলস কবি শেখ জলিল, কনফুসিয়াস, হাসান মোরশেদ, শিয়াল পন্ডিত, হযবরল .. যাদের সাথে কখনও হয়তবা দেখা হবে না।
আরেকজনের সাথে দেখা হওয়ার সাধ জেগেছিল একবার। অরূপ - ওর ওই হেমিংওয়ের মতো চেহারাটা দেখে। পরে যেই মনে হলো সে ওই বুড়োটা নয়- সাধ গেল মরে।
এমনি এমনি সব টুকরো টুকরো স্মৃতি সামহোয়্যার ইন ব্লগে আমার দিনগুলিতে।
শোহাইল মোতাহার চৌধুরী একবার ফাস করে দিয়েছিলেন চোরাবালি সুমন চৌধুরীর আর একটা নাম। প্রযুক্তি দিয়ে সব সত্য ধরা যায় না এটা ভেবে ভাল লেগেছিল খুব। আগেইতো বলেছি বড্ড বেশি প্রযুক্তি বিরোধী মানুষ আমি। ভালবাসি সোনালী গম েেতর পাশে মাটির ঘ্রান নিতে নিতে গায়ের ন্যাংটো ছেলেদের সাথে মার্বেল খেলতে। মার্বেল পাবো কোথায় - আমার সামনে পড়ে আছে - জার্মানীর আকাশ থেকে বাংলাদেশে আছড়ে পড়ে ভেঙে যাওয়া কয়েক টুকরো কাঁচ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।