আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ত্রিভূজ খ্যাত বালকের ধৃষ্টতা ঃ জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তনের ইন্ধন ও দেশপ্রেমহীন রবি সাহেব (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)!

প্রান্তরে প্রান্তরে কুড়িয়ে ফিরি ধূলিকনা

আফগানিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত পরিবর্তিত হয়েছে, বাংলাদেশেও এর পরিবর্তনের আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে বৈকি! নিশ্চয়ই আবশ্যকতা দেখা দিয়েছে ইরানে প্রবর্তিত কয়েক কয়েক মিনিট বা ঘন্টা স্থায়ি বিবাহ্ পদ্ধতি 'সিঘেহ্‌'র দ্রুত প্রচলন নিশ্চিত করার। অসম্ভব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে সৌদি আদলে 'লিখিত' চারটি ও 'অলিখিত' যত সম্ভব স্ত্রী গ্রহণ দুরস্ত করার। আবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে জনপ্রিয় সৌদি ডিশগুলোকে সারা বাংলায় দ্রুত জনপ্রিয় করে তোলার। শিক্ষাক্ষেত্রে খুব বেশী দরকার সৌদি তকমার। সকল বিষয়ে নারীদের প্রবেশাধিকার বন্ধের সময় এখনই।

দেরি হয়ে গেলেই বড্ড বিপদ! কতখানি স্পর্ধা থাকলে এই উক্তি করা সম্ভব। জ্ঞানের গভীরতা কত সুগভীর হলে এই উক্তি করা সাজে। জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে মস্করা তাও নিতান্ত এক বালক সুলভ লিখিয়ের মাধ্যমে। মূর্খের মূর্খতা প্রমানে কোন সুনির্দিষ্ট যুক্তির প্রয়োজন নেই। যেমন প্রয়োজন নেই এই অদ্ভুদ মানসিকতা সম্পন্ন চিড়িয়ার ক্ষেত্রে।

তিনি বাংলাভাষী বাংলা সংস্কৃতির কাছাকাছি অবস্থান করেন ভাবলেও পাপ হয়। অথচ তিনিই কিনা শ্রেষ্ঠতম বাঙালিকে 'রবি সাহেব' বলতেও দ্বিধা করেন না। আমরা ব্লগবাসী তাঁর উম্মাদীয় আচরণে পুলকিত হই। সেও বঙ্গ সন্তান! বাংলাভাষী! বাংলার কোন্ বিশেষ ব্যক্তিত্ত্বের অবদান এঁর কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সেটাও বোধকরি অচিরেই জানা যাবে। কী প্রমাণ করতে চান এই বালক? জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে তামাশা করা বা বাঙালির তাবত জীবন দর্শন প্রণেতা কবিগুরুকে অশ্রদ্ধা করার সাহস আসেই বা কী করে? বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথে তিনটি ঘটনা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্টের বিজয় অন্যটি হলো একষট্টির রবীন্দ্র জন্ম শতবার্ষিকী। এটি ছিল সাংস্কৃতিক বিদ্রোহ। স্বাধীনতা অভিমূখে সাংস্কৃতিক জাগরণের মূলেই ছিল রবীন্দ্র শত বার্ষিকী। এগারো দিন জুড়ে- তিনশো গান-চারটি নৃত্যণাট্য, চারটি নাটক ও নানাবিধ প্রদর্শনীর সমন্বয়ে। টনক নড়ে পাকিস্তানি কর্তাদের।

সবশেষ কেন্দ্রীয় তথ্য মন্ত্রী ঢাকা নবাব বাড়ির ট্যারা শাহাবুদ্দিন (ম্যাট্রিক পাশ না হয়েও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ হওয়াতে যাকে নিয়ে কলঙ্ক হয়েছিল) রেডিও থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচার নিষিদ্ধ করেন। চট্টগ্রাম রেডিও’র বাঙালি কর্মকর্তা ঘোষণা করেন আমার লাশের ওপর দিয়ে এই কেন্দ্র থেকে রবীন্দ্র সঙ্গীত প্রচারিত হবে। ইয়হিয়া পার্লামেন্টের মার্চের অধিশেন বাতিল করলে দেশে ঝড় ওঠে। গঠিত হয় বিক্ষুব্ধ শিল্পি সমাজ। প্রতি মোড়ে শহীদ মিনারে শিল্পিরা গাইতে থাকে দেশোদ্দীপনার গান।

’ও আমার দেশের মাটি’, ’আমার সোনার বাংলা’, ’জনতার সংগ্রাম চলবে’, ’বিপ্লবের রক্তরাঙা ঝাণ্ডা ওড়ে আকাশে’, ’বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে এই জনতা’, ’বাংলার মাটি বাংলার জল পূণ্য হোক, হে ভগবান’ ইত্যাদি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মানুষ এক রইল চোখের জলে ’আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গাইতে গাইতে। এত সবের মধ্যে মূল ঘটনা দু’টোঃ ১. রাষ্ট্রভাষা তথা বাঙালির আপন ভাষা সংস্কৃতি অভিমূখে যাত্রারম্ভ; ২. বাঙালির সমাজে মননে রাজনীতিতে রবীন্দ্রনাথের প্রত্যাবর্তন ও পূণঃপ্রতিষ্ঠা তথা সাম্প্রদায়িকতা উর্ত্তীণ হয়ে মানবতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা ও উদার সৃজনশীল জীবন ও সমাজের মধ্যে প্রবেশের যোগ্য প্রস্তুতি। বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের অবস্থান এইটুকুই। মননশীল জাতি নির্মাণে মানববতার পথ ধরে উদারনৈতিক সমাজ সংস্কৃতির আহ্বান।

তাঁর রচিত ’আমার সোনার বাংলা’ শুধুমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতই নয়, বাঙালির রক্ত দিয়ে কেনা কোটি প্রাণের গুঞ্জন। তিরিশ লক্ষের আত্মাহুতি আর দু’লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হানি এই ছোট্ট সুমধুর রবীন্দ্র সঙ্গীতকে ঘিরেই। আমার সোনার বাংলা এমনকি রবীন্দ্রনাথের থাকেনি, বাংলাদেশের প্রবাহমান প্রজন্মের রক্তধারায় নিদারুণ বঞ্চনার শ্রেষ্ট উপহার হিসেবে মিলেমিশে একাকার। বাঙালি নিশ্চিহ্ন হলেই এর মৃত্যু হতে পারে নচেৎ নয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.