আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

”শয়তানের ত্রিভূজ”

মোঃ রাইসুল করিম রিয়াদ ছোট বেলা সবার কিছু সাধারণ ঘটনার মধ্যে একটা হচ্ছে শুক্রবার রাত ৮.৩০ মিনিটে আম্মুর পাশে বা কাথার নিচে লুকিয়ে লুকিয়ে ”আলিফ লাইলা” দেখা । সিন্দাবাদের সেই তলোয়ারের ঝলকানী বা দৈত্য দানবের গগন বিদারী চিৎকারে কতই না মজা লাগতো। আমাদের অনেকের ছোট বেলার প্রিয় নায়ক ছিল সিন্দাবাদ, রবিনহুড বা হারকিউলিকস । ভয়ে শিউরে উঠতাম সিন্দাবাদের সেই অভিযান গুলো দেখে কিংবা রবিনহুড ও হারকিউলিকসের দুঃসাহসীক কান্ডকারখানা দেখে । তবে একটা ঘটনা আমার মনে দাগ কেটে যায় তা হচ্ছে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল ।

শুধু আমার নয় অনেকেরই এটা নিয়ে কৌতুহলের সীমা ছিলো না । আলিফ লাইলায় দেখা যেত বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের শুরুতে একটা মূর্তি সবাইকে মানা করছে ওদিকে যেতে । আর কেউ ভূল ক্রমে গেলে দেখা যেত তারা একটা ঘন কূয়াশার মাঝে পড়তো এবং ধীরে ধীরে ডুবে যেত । তাদের কোন খবর পাওয়া যেত না । শুধু আলিফ লাইলা না অনেক বড় বড় লেখক এমন গল্প ফেঁদেছেন হয়তো সস্তা নাম বা অর্থ কামানোর উদ্দেশ্যে নতুবা শুধু গল্পের উদ্দেশ্যে ।

যেমন ১৯৫০ সালের ১৬ই সেপ্টেম্বরে ই. ভি ডব্লিউ জোন্স সর্বপ্রথম খবরের কাগজে বারমুডা ট্রায়াঙ্গল সম্পর্কে লিখেন । তার দেখানো পথে আরো অনেকেই চলেছেন যেমন, জর্জ এক্র স্যান্ড তার লেখা “সী মিস্ট্রি এট আওয়ার ব্যাক ডোর” প্রবন্ধে অপরিচিত ত্রিভূজাকৃতির অঞ্চলের কথা প্রথম উল্লেখ করেন । তবে বেশীর ভাগ লেখক একে অতিপ্রাকৃতিক ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন । তাই একে বলা হয় ”শয়তানের ত্রিভূজ” । বেশীর ভাগ লোকেরই ধারণা এখানে ‍অতিপ্রাকৃতিক কোন শক্তি এসব ঘটনা ঘটিয়ে থাকে ।

যেখানে কোন জাহাজ যাওয়া মাত্রই ঘন কুয়াশা তাদের ঘিরে ধরবে এবং ধীরে ধীরে ডুবে যাবে । হারিয়ে যাবে অজানা কোন স্থানে । এ ত্রিভূজের অবস্থান সম্পর্কেও ভিন্ন মত রয়েছে । কারো কারো মতে স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা, বাহামা ও ক্যারিবিয়ান দ্বীপ পূন্জে এর অবস্থান । আবার অনেকের লেখায় এর অবস্থান বলা হয়েছে ফ্লোরিডার আটলান্টিক উপকূল, সান হোয়ান, পর্তু রিকো মধ্য আটলান্টিকের বারমুডা দ্বীপপুন্জ ও বাহামা জুড়ে ।

তবে অবস্থান যাই হোক ঘটনার কোন তারতম্য নেই । যেমন ক্রিস্টোফার কলোম্বাস লিখেছিলেন যে তাঁর জাহাজের নাবিকেরা এ অঞ্চলের দিগন্তে আলোর নাচানাচি, আকাশে ধোঁয়া দেখেছেন এবং কম্পাসের উল্টোপাল্টা দিক নির্দেশের কথা বলেছেন । তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা গুলোর মধ্যে হলো ১৯১৮ সালের মার্চ মাসে ইউ এস এস সাইক্লপস এর ডুবে যাওয়া ও ১৯৪৫ সালের ডিসেম্বর মাসে এয়ার ক্র্যাফট ফ্লাইট নাইনটিন এর নিঁখোজ হওয়া । তবে বর্তমানে বেশীর ভাগ ঘটনাগুলোর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় । যেমন কলোম্বাসের নাবিকরা যে আলোর নাচানাচি দেখেছেন তা ঐ এলাকার বাসীন্দাদের নৌকায় ব্যবহ্রত আগুনের আলো হতে পারে ।

আবার এই এলাকাতে ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য কম্পাসের দিকনির্দেশে ভূল হতেই পারে । আবার ইউ এস নেভির ওয়েব সাইট ঘেটে ইউ এস এস সাইক্লপস এর ডুবে যাওয়া সম্পর্কে যে তথ্য পাওয়া যায় তাতে বলা হয় ইউ এস এস সাইক্লপস ডুবে যায় বড় ধরনের ঝড়ে যা সমূদ্রে খুবই স্বাভাবিক ঘটনা । আর এয়ার ক্র্যাফট ফ্লাইট নাইনটিন সম্পর্কে জানা যায় এয়ার ক্র্যাফটটির জ্বালানী শেষ হয়ে যাওয়ায় এয়ার ক্র্যাফটটি ধ্বংশ হয় । আরোও বেশ কিছু ঘটনার ব্যাখ্যা দেন লরেন্স ডেভিড কুসচ । তার “ দ্যা বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল মিস্ট্রি: সলভড“ বইয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেন ।

যা ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত হয় । তবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে ঘটে যাওয়া ঘটনার পিছে অন্য কারনও থাকতে পারে । যেমন মেক্সিকো উপসাগর থেকে উস্ঞ স্রোতের প্রবাহ স্ট্রেইটস অব ফ্লোরিডা হয়ে উত্তর আটলান্টিকের (অপেক্ষাকিত শীতলতর স্থান) দিকে প্রবাহিত হয় । এই স্রোতের কারণও বিঞ্জানের ছাত্র মাত্রই জানা । কারণ তরল সব সময় উস্ঞ অংশ থেকে শীতলতর অংশে প্রবাহিত হয় ।

তাই এ অংশে পানির স্রোত বেশী । আবার অনেক সময় সমুদ্রের পানিতে মিথেন হাইড্রেটস এর বুঁদবুঁদ উৎপন্ন । যা পানির প্লব্যতা (ডেনসিটি) কমিয়ে দেয় । তাই হঠা‍ৎ করে ঐ অংশে কোন জাহাজ আসলে তা ডুবে যেতে পারে । আকাশেও মিথেন হাইড্রেটস এর উপস্থিতি বিমান ভূপাতিত করতে পারে ।

তবে ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে এর ওয়েব সাইট থেকে জানা যায়, গত ১৫০০ বছরের মধ্যে ঐ এলাকায় তেমন হাইড্রেট গ্যাসের উদগীরন ঘটেনি। তবে ভৌগোলীক কারণে এ এলাকাতে অনেক বড় বড় ঝড় ও হারিকেন আঘাত হানে । তাই বলে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলে যে পরিমাণ জাহাজ ও উড়োজাহাজ নিখোঁজ হওয়ায় কথা বলা হয় তার পরিমাণ বিশ্বের অন্যান্য সমুদ্রের তুলনায় বেশি নয় । তবুও এখনো অনেক মানুষ বারমুডা ট্রায়াঙ্গল কে অশুভ কোন শক্তির ছায়াছন্ন স্থান বলে মানে । আসলে আমরা একটু বেশীই কল্পনা প্রবন বা অলৌকিক কিছুতে বিশ্বাস করতে ভালবাসী ।

কারণ এগুলো হলো আমাদের গল্পের রসদ । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।