জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।
কুরআন মুহাম্মদ (সা) লিখেছেন, এই রকম একটা ইঙ্গিত দেয়া হচ্ছে ব্লগের কিছু লেখায়। আমি নিজে খুব নিশ্চিত কথাটা ভুল। কারণ, কুরআন নিজে পড়েছি। হাদীস পড়েছি।
হাদীসে মুহাম্মদ (সা) এর কথা আর কুরআনের আয়াতগুলোর মধ্যে আকাশ পাতাল তফাৎ। নজরুলের কবিতার কিছু লাইন নিয়ে তাকে প্রবল ইসলাম বিদ্বেষী প্রমান করা যাবে, আবার কিছু লাইন নিয়ে তাকে ইসলামের কান্ডারী প্রমান করা যাবে। তিনি আসলে কি ছিলেন, সেটা বুঝার জন্য তাঁর সব কবিতা, সব লেখা পড়তে হবে, সমসাময়িক কালে তাঁকে নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে সেগুলো জানতে হবে। কুরআন আর হাদীসের ব্যাপারটাও ওরকম। হাওয়ায় হাওয়ায় প্রমান হয়ে যাচ্ছে এখানে!
সে যাক গে, একটা ব্যাপারেই আমি দৃষ্টি আকর্ষন করতে চাই, যারা কুরআন বা হাদীসকে পুরাপুরি বানানো বলতে চান, তাদের কল্পনা শক্তি বেশ ভালো।
কারণ তাতে করে পুরা ইসলামকেই একটা গ্র্যান্ড কন্সপায়রেসি হিসেবে প্রমান করা যায়। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কন্সপায়রেসি! এমনই শক্ত কন্সপায়রেসি, ক্রুসেডের সময়ের কিছু প্রবল মুসলিম বিদ্বেষী খ্রীষ্টান ছাড়া আর কেউ টের পায় নি! যুগে যুগে এই কন্সপায়রেসীর আফিম খাইয়ে পাগল বানিয়ে ছেড়েছে কোটি কোটি মানুষ। এখনও নাকি পৃথিবীতে মাতালের সংখ্যা ১.৫ বিলিয়ন। ড্যাম!
নতুন কিছু না লিখে, আমার বেশ আগের লেখা একটা লেখা থেকে কিছু কপি পেস্ট করছি, আগ্রহীদের মনের খোরাক জোগাবে আশা করছি। তর্ক করতে ইচ্ছা করছে না, তাই তর্কে নাও জড়াতে পারি।
"কুরআন মুহাম্মদ (সা) এর লেখা নয়, সেটার পক্ষে সবচেয়ে বড় প্রমান হলো, মুহাম্মদ (সা) এর ধীর পরিবর্তন এবং সমসাময়িক কুরআনের আয়াত। যে কেউ কুরআন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে বুঝবে কুরআনের মূল দর্শন একটুও বদলায় নি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।
অথচ, একজন লেখকের পরিবর্তন ঘটে তাঁর লেখার সাথে সাথে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের ২৩ বছরের ব্যবধানে তাঁর দু'টো কবিতা নিলে একই ধারা, একই বাচনভঙ্গি, একই দৃষ্টভঙ্গি, একই দর্শন পাওয়া যাবে না। এটা অসম্ভব।
স্রেফ অসম্ভব। ২৩ বছরে মানুষের জীবন দর্শনে বদল আসবেই। পরিস্থিতির সাথে সাথে লেনিন সহ সব সমাজবিদদের হাইপোথিসিসই পাল্টে গিয়েছে। পরিবর্তিত হয়েছে। মার্জিত হয়েছে।
অথচ কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই দর্শন পাবেন, একই বাচনভঙ্গি পাবেন।
মানুষ মুহাম্মদ (সা) এর মনস্তত্তও দেখার মত। প্রথম দিকে মুহাম্মদ (সা) এবং খাদীজা (রা) এর কথাবার্তা শুনে বুঝা যায়, তিনি শঙ্কিত ছিলেন, বিভ্রান্ত ছিলেন, অনিশ্চিত ছিলেন, যেটা ওরকম একটা ঘটনার বিপরীতে চরম মানবিক প্রতিক্রিয়া। আলম নাশরাহ এর মত অনেক সূরায় আল্লাহ প্রথম দিকে তাঁকে শান্তনা দেন, স্থির হওয়ার জন্য আল্লাহর উপর ভরসা করার উপদেশ দেন। আস্তে আস্তে মুহাম্মদ (সা) এর পরিপক্কতা আসে।
শেষের দিকের হাদীসগুলো পরে বুঝা যায় তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত, আত্মবিশ্বাসী। মক্কার একজন সাধারন মানুষ তিনি পুরো আরবের তার বিরুদ্ধে চলে যাওয়াকেও সামলে নিয়েছেন, রোমান সাম্রাজ্যের সামনেও দাঁড়িয়েছেন। বদলে দিয়েছেন ইতিহাসের পাতা।
এই মেটামরফসিসের অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া পড়ার কথা ছিল তাঁর লেখনীতে। শুধু এতটুকুই প্রমান করে কুরআন তাঁর লেখা নয়।
পুরো ২৩ বছর ধরে লেখা কুরআনের বক্তব্য খুবই গোছানো। যেটা একই সময়ে লেখা একজনের মাথা থেকে না আসলে হবে না। কিন্তু কুরআন পুরোটা এক বসায় লেখা হয় নি। তর্কের খাতিরে ধরে থাকলেও, আমাদের নির্ণয় করতে হবে কোন সময়ে। ২৩ বছরের আগে না পরে? যদি বলেন আগে, তাহলে দেখুন, কোন নতুন আয়াত আসলেই তিনি সমাবেশে সেটা বলতেন।
চারজন নির্দিষ্ট লেখক লিখে রাখতেন মুহাম্মদ (সা) এর নির্দেশে সংরক্ষনের জন্য, বাকিরা লিখতেন নিজেদের সংগ্রহের জন্য। এখন আগে লিখে রাখলে এবং প্রয়োজন অনুযায়ী এক একটা আয়াত বের করলে... এই কাজটা করার জন্য অতি প্রাকৃতিক শক্তি দরকার, কারণ মানুষ জানবে না ভবিষ্যতে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। আর পুরোটা একবারে ২৩ বছরের শেষে লেখা অসম্ভব, কারণ পুরো ঘটনা খুবই ওয়েল ডকুমেন্টেড। তাছাড়া কুরআন পুরোটা আসার পরে বছর না ঘুরতেই মুহাম্মদ (সা) মারা গিয়েছেন। একজন মানুষের যতটুকু সময় দরকার, ততটুকু তিনি পান নি।
"
(লেখাটা লিখেছিলাম মুহাম্মদ তাঁর নবী হয়ে ওঠা নামের একটা লেখায়, 'ক্রিটিক্যাল লাইভস: মুহাম্মদ' বইটা পড়ার পরবর্তী প্রতিক্রিয়া হিসেবে। এত কথাগুলো এক পোস্টের আওতায় বলা যায় না ঠিক। বইটার অনুবাদ পেতে ইচ্ছা করছে, কারণ মুহাম্মদ (সা) এর জীবন সম্পর্কে আমরা জাতিগত ভাবে আসলেই কম জানি। এই কম জানার উপরে লোকে যাই বলে তাই ঠিক মনে হতে পারে। পাঠক কি মনে করেন এ ব্যাপারে?)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।