সঠিক সময়ে সব দলের অংশগ্রহণে সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনো না কাটলেও সিলেটে বসে নেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ফলে সিলেটের সর্বত্র বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। পুরনোদের পাশাপাশি এবার নতুন অনেক মনোনয়নপ্রত্যাশীও নেমেছেন প্রচারণায়। সিলেটের ৬টি আসনই নতুনদের পদচারণায় মুখর। এখন পর্যন্ত প্রচারণায় পুরনোদের চেয়ে নতুনরাই এগিয়ে রয়েছেন।
সংসদ নির্বাচন নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপি। দলটির পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানানো হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ারও সিদ্ধান্ত জানিয়েছে দলটি। তবে বসে নেই বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। সিলেটের ৬টি আসনেই বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বসে নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। পুরনোদের ব্যর্থতার সুযোগে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে তৃণমূলের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছেন তারা। সিলেট-১ আসনে গত নির্বাচনে সাইফুর রহমানকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আবুল মাল আবদুল মুহিত। সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীর নাম উচ্চারিত হয়। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই শমসের মবিন চৌধুরীও মাঠ ছেড়ে যান।
প্রার্থী শূ্যনতা পূরণে মাঠে নামেন সিলেট-১ আসনের তিনবারের সাবেক এমপি খন্দকার আবদুল মালিকের ছেলে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। প্রায় দুই বছর ধরে তিনি মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছেন। সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি ভোটারদের উজ্জীবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পাশাপাশি তিনি বহুধাবিভক্ত দলীয় নেতা-কর্মীদেরও ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। সিলেট-১ আসনের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত তিনি চষে বেড়ানোর কারণে ঝিমিয়ে পড়া নেতা-কর্মীদের মাঝেও প্রাণের সঞ্চার হয়েছে।
এদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের জনবিচ্ছিন্নতার সুযোগে এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দৌড়ে নেমেছেন সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর সঙ্গে মতবিনিময় সভায় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মুহিতের পাশাপাশি এই দুই নেতারও নাম প্রস্তাব করেন সিলেটের নেতারা। সিলেট-২ আসনে এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে শাফিকুর রহমানের মনোনয়ন পাওয়া অনেকটাই নিশ্চিত। তারপরও এ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন বিশ্বনাথ উপজেলা চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন নিখোঁজ সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী।
দলের নেতা-কর্মীরা বিশ্বাস করেন, নির্বাচনের আগেই ফিরে এসে প্রার্থী হবেন ইলিয়াস। তবে ইলিয়াস কোনো কারণে ফিরে না এলে তার বদলে ইলিয়াসপত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা এ আসনে প্রার্থী হতে পারেন। সে লক্ষ্যে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন লুনা। এ আসনে জাতীয় পার্টির নতুন মুখ হিসেবে মাঠে রয়েছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল্লাহ সিদ্দিকী ও জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। সিলেট-৩ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মাহমুদ উস সামাদ কয়েসের পাশাপাশি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব।
এই আসনে গত নির্বাচনে চারদলীয় জোটের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেওয়া সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরী ও বিদ্রোহী প্রার্থী যুবদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল কাইয়ূম চৌধুরীর পাশাপাশি বিএনপির নতুন মুখ হিসেবে দলীয় সমর্থন পাওয়ার চেষ্টায় আছেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি আবদুল আহাদ খান জামাল। সিলেট-৪ আসনের আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি ইমরান আহমদের পাশাপাশি প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমদ। বিএনপির মনোনয়ন পেতে সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিমের সঙ্গে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান ও গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী। এর মধ্যে সামসুজ্জামান প্রায় প্রতিদিনই নির্বাচনী এলাকায় সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে যুক্তরাজ্য প্রবাসী এটিইউ তাজ রহমান ও স্থানীয় ১৭ পরগনা সালিশ সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক সিরাজ উদ্দিন আহমেদের নাম শোনা যাচ্ছে।
সিলেট-৫ আসনে গত নির্বাচনে জামায়াতের ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীকে পরাজিত করে বিজয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাফিজ আহমদ মজুমদার। তবে নির্বাচনে তিনি দল ও জনগণের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। এ সুযোগে এবার আসনটিতে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় মাঠে রয়েছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য আবদুল মোমিন চৌধুরী, রূপালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আহমদ আল কবীর ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ। এ আসনে বিএনপির পক্ষে নতুন মুখ হিসেবে প্রচারণায় রয়েছেন কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশীদ মামুন। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবি্বর আহমদ ও আল ইসলাহ'র মহাসচিব হুসাম উদ্দিন আহমদ ফুলতলীও নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
সিলেট-৬ আসনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের মনোনয়ন প্রাপ্তি প্রায় নিশ্চিত। এ আসনে আওয়ামী লীগের তেমন প্রার্থী-জটও নেই। তবে আসনটিতে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় নতুন মুখ হিসেবে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমদ চৌধুরী, জেলা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ফয়সল আহমদ চৌধুরী ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাওলানা অ্যাডভোকেট রশীদ আহমদ। তবে এখানে সব মহলেই গ্রহণযোগ্যতা থাকায় ইনাম আহমদ চৌধুরী সুবিধাজনক অবস্থানে। জাতীয় পার্টি থেকে এ আসনের প্রার্থী হিসেবে ইতোমধ্যে সেলিম উদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।