এ ব্লগে আর কোন মৌলিক লেখার দরকার নেই, যেহেতু আমি আমার নিকৃষ্টতম লেখার স্বত্ব ও কাউকে দিতে রাজী নই
(একটা কুমারী গল্পের জন্ম দিচ্ছি । কোন পুর্বপ্রস্তুতি নেই । একটানে লিখে যাওয়া, যতোটুকু যায় । ইদানিং ব্লগে লেখালেখির পরিবেশ ফিরে এসেছে মনে হচ্ছে । সেই ভরসাতে এগোনো ।
যতোটুকু লিখলাম, তুলে ফেললাম ব্লগে আনএডিটেড। এখন ঘুম পাচ্ছে । ঘুম ভাংগার পর, তাড়না পেলে লেখাটাকে তাড়িয়ে নিয়ে যাবো আরো । না হয়, এই অতটুকুই । এমনি এমনিই লেখা)
-------------------------------------------------------------------------
'ভালো থাইকেন ওস্তাদ'
ওস্তাদ তার পোকায় খাওয়া দাঁত বের করে হাসলেন ।
জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিলেন । আমি ও হাত বাড়ালাম ।
অর্ধেকে নেমে আসা 'অফিসার্স চয়েজ' এর বোতলটা হাতে চলে এলো । ওস্তাদের শুভেচ্ছার নিদর্শন । বোতলের অর্ধেক শেষ করেছেন ওস্তাদ, কোম্পানীগঞ্জ বাজার থেকে ভোলাগঞ্জ আসতে আসতে ।
আমাকে ও দয়া করেছেন অবশ্য । পাশের সীটে নজু ছিল । নামাজী ভদ্রলোক ব্যাটা । নাক কুঁচকেছে এই যা ।
ট্রাকের পেছন থেকে লাফিয়ে নামলো আবীর আর পার্থ ।
ওস্তাদ ট্রাক ঘুরালেন ।
আমাদের চার জোড়া চোখ এবার ঘুরে তাকালো আদিগন্ত । বহুদূর থেকে যা ছিলো রহস্যময় নীল, এখন তা স্পর্শের সবুজ । যেনো চাইলেই জড়িয়ে ধরা যায় । এই তো খাসীয়া পাহাড়, পাহাড়ের গায়ে তূলো তুলো মেঘ ।
পাহাড়ের পায়ের নীচে ছেঁড়া ছেঁড়া নদী, পিয়াইন তার নাম । শত শত মানুষ পাথর কুড়োচ্ছে । শত শত মানুষ, অথচ কি ভীষন স্তব্দতা । যেনো সবার জানা হয়ে গেছে, এই বিশালতার কাছে এসে এরকম স্তব্দ হয়ে যেতে হয় ।
এই স্তব্দতাকে মাখতেই আমরা ছুটে এসেছি শহুরে গালগল্প পেছনে ফেলে ।
ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারীর কাছাকাছি কোথাও নাকি একটা সরকারী ডাকবাংলো আছে । আবীরের বাবা'র জানাশোনা ।
একজন কেয়ারটেকার এসে আমাদের নিয়ে যাবার কথা । তার নাম শামসুদ্দিন । শামসুদ্দিন কে আমরা চিনিনা ।
তবে শামসুদ্দিন আমাদের চিনে নেবে ।
শামসুদ্দিন আমাদের চিনে নেয় । মধ্যবয়স্ক লোক । তেলতেলে মুখ । মুখে লাগানো হাসি ।
আমরা তার পেছনে পেছনে এগোই । পাথর দেখি । ছোট ছোট পাথর, বড় বড় পাথর । পার্থ নীচু হয়ে পিয়াইনের জলে হাত দেয় । কবি মানুষ, তাকে এই সব মানায় ।
আমি ঘাড় ঘুড়িয়ে মানুষ দেখি । সারি সারি 'বারকী' নৌকা ।
মানুষজন ডুব দিচ্ছে। ডুব দিয়ে তুলে আনছে বড় বড় পাথর । পেশি বহুল মানূষ গুলো ।
আমার সুলতানের ছবির মানুষের কথা মনে পড়ে যায় ।
আমরা এগিয়ে যাই । একটা বাঁক পেরোই । পেরোতেই অদৃশ্য হয়ে যায় পাথর কোয়ারী, 'বারকী' নৌকা আর পাথর কুড়ানো মানুষ । এখন কেবল তীব্র সবুজ ।
ঘন জংগল । আর কি আশ্চর্য, সেই জংগলের ভেতরই ডাকবাংলো ।
কেয়ারটেকার শামসুদ্দিন আমাদের নিয়ে আসে ভেতরে । পুরোটাই কাঠের । তিনটে বড় বড় রুম ।
সব গুলোই খালি । আমরা দুই রুম দখল করি । চমৎকার বিছানা পাতা । এমন কি বাথরুমে গরমপানি । পেছনে টানা বারান্দা ।
বারান্দায় এসে দাঁড়াতেই চোখে পড়ে দীর্ঘ বালিয়াড়ি । বালিয়াড়ির শেষে বেশকিছু কাঠের ঘর । ঘরগুলো যেনো ঝুলে আছে খাসিয়া পাহাড়ে । ওপাড়ে একটা পাকা সড়ক চোখে পড়ে । সাপের মতো পেঁচিয়ে উঠতে উঠতে হঠাৎ করেই হারিয়ে গেছে পাহাড়ের গহীনে ।
আমাদের সকলের চোখে মুগ্ধ বিষ্ময় । আর শামসুদ্দীনের ঠোঁটের কোনে গর্বিত হাসি, যেনো এই একাকী সাম্রাজ্যের সেই নৃপতি ।
শামসুদ্দীন চলে গেলে, আমরা চারজন এসে বারান্দায় দাঁড়াই । ডিসেম্বরের পাহাড়ী ঠান্ডা গায়ে লাগছে । হাল্কাপাতলা খিদে ও লেগেছে ।
কেয়ারটেকার নিশ্চয় খাবারের ব্যবস্থা করবে । জিজ্ঞেস করা হয়নি এখনো । আমি 'অফিসার্স চয়েজ' এর বোতল বের করি । গলায় ঢালি । নজু নাক কুঁচকায় ।
আবীর বড়লোকের ব্যাটা । সস্তা মদে আগ্রহ নেই । তবু হাত বাড়ায় । আবীরের হাত থেকে বোতল যায় পার্থ'র কাছে । কবি বলেই কিনা কে জানে, বড় নির্মোহ ভংগীমায় সে গলায় ঢালে ।
দ্বিতীয় চক্করেই বোতল উলটে গেলো আর আমাদের তিনজনের একসাথে মনে পড়ে গেলো- তুমুল মাতাল হবার এক ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়ে এসেছি আমরা এই অরণ্যে । এই এলাকায় খুব সস্তায় দেদারসে পাওয়া যায় ভারতীয় মাল । আমাদের মাতাল হবার নেশা চাগিয়ে উঠে দ্রুত ।
শামসুদ্দিন' কে ধরতে হবে ।
কিন্তু হারামজাদা গেলো কই?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।