বৃষ্টি হচ্ছে সুনিশ্চিত এই মুহুর্তে পৃথিবীর কোথাও না কোথাও
এক.
যে জায়গায় বন্ধু অন্যমনস্ক শরত শুরু করছে আমি সেইখান থেইকাই চিন্তাটা টানি। ব্লগীয় মোহগ্রস্থতা।
অনেকেই ব্লগরে নিজের দ্বিতীয় জীবন বানানোর মোহে আবদ্ধ। এইটা আধুনিক সময়ের অন্যতম বিপজ্জনক এবং তুলনামূলকভাবে খুব নতুন সামাজিক সমস্যা। পশ্চিমে অলরেডী শুরু হইছে।
আমাদের দেশেও এক্সপেরিমেন্টটা সামহোয়্যার দিয়েই হইতাছে মনে হয়। মাঝে মধ্যে মনে হয়, বেচারারা, দে ডোন্ট হ্যাভ এনি থিং বেটার দ্যান দিস। প্যাথেটিক!
এন্টারটেইনমেন্টের এতই অভাব যে অনেক পরিপক্ক মানুষদের (অন্তত বয়সে ও সামাজিক অবস্থানে তো বটেই) দেখি সবে মাত্র কৌশর পার হওয়া কোন বালকের সাথে পচানী টিটকারী মাইরা সময় পার করতাছে। রামছাগল, তিরিভুজ বিষয়ক কাদাছুড়াছুড়ি দেখলে আসলেই মনে হয়, অনেক মানুষের আসলেই মনে হয় এরচেয়ে ভালো কিছু করার নাই। আফসোস।
একটা হাইপোথিসিসে বিশ্বাস করতাম যে সম্ভবত শিক্ষা (প্রাতিষ্ঠানিক) মানুষের নোংরামী দূর করতে পারে। মাঝে মধ্যে মনে হয় ভূল। সম্ভবত শিক্ষার নতুন সংজ্ঞা প্রয়োজন অথবা সুআচরন সেখাইতে আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যর্থ।
শিশুতোষ ছেলেমানুষী কাটাইয়া ম্যাচুরিটি প্রয়োজন। রাজকার, মুক্তিযুদ্ধ, ধর্ম, মৌলবাদ, যৌণতা - বিষয় যেইটাই হউক না কেন, ইন্টারনেট হওয়া উচিত সেনসর বিহীন বিশ্ব।
সেইটাই ইন্টারেনেটের স্পিরিট। এন্ড উই অল লাভ ইট। উই অল বেনিফিট ফ্রম ইট।
জামাত আইডিওলজী অথবা শিবির প্রপাগান্ডা যেইটার যতখানি বিরোধীতাই আমি করি না কেন, ডায়ালগ ইজ অল ওয়েজ এ বেটার অপশন দ্যান টার্নিং দি মাইক্রোফোন অফ।
ব্লগে সবার বাকস্বাধীনতার পক্ষে আমার অবস্থান, এমনকি যেইটা আমার কাছে অশ্লীল সেইটারও।
সময় ও পাঠকেই নির্ধারন করবে গ্রহনযোগ্যতা।
দুই.
আরিফ জেবতিক একটা পোস্ট করছিলেন আরিলরে উদ্দেশ্য কইরা। বিষয় হইলো বিশেষ বিশেষ রাজনৈতিক নেতাদের ছবি যেন ব্লগে দেখানো না হয়।
তুমুল আবেগী পোস্ট। বরাবরের মতো আমরা বাঙ্গালীরা আবেগে গইলা পড়ি।
এইখানেও যে পড়ছি সেইটা মন্তব্য দেখলেই বুঝা যায়।
কথা সেইটা না, কথা প্রথমে হইলো এই দাবীর ম্যাচিউরিটি নিয়া। প্রশ্ন আসে ইন্টারেনেটের ফ্রিস্পিচ কম্প্রোমাইজ প্রসঙ্গটা। যেইখানে আমি মাসুদা ভাট্রি বা মহুয়া মঞ্জুরী বা রাসেলরের বাক স্বাধীনতা সমর্থন করুম, সেইখানে আমি সো কলড শিবির, জামাতের বক্তব্য রাখার জায়গাটারেও সমর্থন করতে হয়। নীতিমালা থাকুক, সেইটার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হউক এবং একই সাথে সেই নীতিমালার ভিতরে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংরক্ষিত হউক সবার জন্য।
মিত্র বা শত্রু তা তুমি যেই হও না কেন। এইটারেই কয় সহনশীলতা, গ্রহনযোগ্যতা।
তিন.
স্বাধীনতার এত বছর পরেও দেশের মতো একটা বিশাল ইনসটিটিউট, এতগুলা সরকার যুদ্ধাপরাধী, ধর্ম ব্যবসায়ীদের কিছু করতে পারলো না, পারবে বইলাও মনে হয় না; সেইখানে আরিলরে সম্বোধন করে, "এই সিদ্ধান্ত এখুনই নিতে হবে, নাইলে খেলবো না, আমার বড় অশলীল লাগে" - এই ধরনের বক্তব্যে বেজায় ফাঁক। ইমোশন ভরা, কিন্তু গ্রহনযোগ্য যুক্তির অভাব। আমরা বোধহয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ফাঁকা ইমোশন অনেক দেখছি আমাদের এই দু:খিনী বাংলাদেশে!
চার.
দ্বিতীয় আরেকটা জায়গা আপাতত খুব হালকা মনে হইলেও আমার কাছে অন্তত হালকা লাগে নাই।
আরিফ জেবতিক আরিলরে তার ব্যক্তিগত অনুভূতি জানাইছে। সেইটারে আমি শ্রদ্ধা করি। সে জানাইতেই পারে কোনটা তার কাছে শ্লীল আর কোনটা অশ্লীল। কিন্তু পোস্টের শুরু ছবিটায় আমার চোখ আটকে যায়।
ইমোশন ড্র করা ভালো।
তবে ইমোশন ড্র করার জন্য যা কিছু সীমারেখাকে সন্মান করা মনে হয় কাম্য।
মুক্তিযুদ্ধের এই চরম বেদনাদায়ক একেকটা ছবিকে এভাবে হালকা করে অপমান করবেন না। আরিলকে, কতৃপক্ষকে কিছু জানাতে চান, জানান। খুব ভালো কথা। কিন্তু তার সাথে মুক্তিযুদ্ধের আবেগকে এভাবে ব্যবহার করার ভিতরে আমি সমস্যা দেখি।
যে ইস্যু তোলা হইছে সেইটা সামহোয়্যারের নীতিমালার সম্পর্কিত। এইখানে সামহোয়্যারের অবস্থান থেকে অবশ্যই তারা প্রত্যেকের মত প্রকাশকে প্রায়োরিটি দেবে, বি ইট জামাত অর হার্ডকোর আওয়ামীলীগ অর হোয়্যাট এভার।
সুতরাং এই ধরনের দাবীর সাথে ইচ্ছেমতো মুক্তিযুদ্ধের ছবি জুড়ে দেওয়া আমার কাছে মুক্তিযুদ্ধের অনুভব, চেতনা আর স্পিরিটকে হালকা করা, ঠুনকো করা। এমনিতেই তাদের আমরা যোগ্য সন্মান দিতে ব্যর্থ হয়ে আসছি ধারাবাহিক। আর টেনে নীচে নামাবেন না, উপরে তোলার মোহগ্রস্থতায়।
অনুগ্রহ করে ঐ চরম মমতার দেহগুলোকে এভাবে সস্তা চিঠির মনোগ্রাম বানাবেন না।
পাঁচ.
নাম জানা ও অজানা সকল মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত মা, বোন, ভাইদের রুহের মাগফেরাত কামনা করি। তাদের ত্যাগ হোক মহিমাময়, রাজনৈতিক স্লোগানের সস্তা ব্যানারের লেখনী নয়। কখনোই নয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।