ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করা হয়েছে 'উপজাতি' হিসাবে। তাদের খাদ্যাভাস, জীবন প্রণালী, ভাষা, কৃষ্টি ও ঐতিহ্য --সব কিছু ব্যাখ্যা করা হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে।
এই প্রতিবেদকের অনুসন্ধানে আদিবাসী সম্পর্কে অসংখ্য বিকৃিত এবং ভুল তথ্যের সমাবেশ ধরা পড়েছে বাংলাদেশ জাতীয় জ্ঞানকোষ বাংলাপিডিয়ার বাংলা ও ইংরেজি সংস্করণে। আদিবাসী নেতারা বলছেন, এই জ্ঞানকোষ পড়লে যে কেউ আদিবাসী সম্পর্কে বিকৃত ও ভুল ধারণা পাবে।
জ্ঞানকোষটির প্রধান সম্পাদক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম এসব ভুলের কথা অকপটে স্বীকার করে বলেছেন, পরবর্তী সংস্করেণেই আদিবাসী সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য প্রত্যাহার করে তা নতুন করে প্রকাশ করা হবে।
এ কাজের দায়িত্বও দেওয়া হবে আদিবাসী গবেষকদেরই।
বাংলাপিডিয়ায় দেওয়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস সম্পর্কিত তথ্যের বেশিরভাগই বাস্তবতার সঙ্গে সম্পর্কবিহীন।
আদিবাসীরা স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠী হলেও বাংলাপিডিয়ায় তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে 'উপজাতি' হিসাবে। সেখানে এমন অনেক তথ্য আছে যা 100 বছরের পুরনো, বর্তমান সময়ের আদিবাসী জীবনাচারের সঙ্গে যার কোনোই মিল নেই।
এতে মারমা ও রাখাইনদের 'মগ', টিপরা বা ত্রিপুরাদের 'তিপরা', ম্রোদের 'মুরং' -- ইত্যাদি বিকৃত অভিধায় চিহ্নিত করা হয়েছে।
বলা হয়েছে, ত্রিপুরাসহ অনেক আদিবাসী নিজেদের ভাষা ভুলে গিয়ে এখন বাংলায় কথা বলে। যা আদৌ সঠিক নয়।
এতে 'উপজাতি' সম্পর্কে বলা হচ্ছে, "বাংলাদেশের বেশকিছু উপজাতি এখন নিজস্ব ভাষা বিস্মৃত হয়ে বাংলা ভাষায় কথা বলে। যেমন, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের তিপরাদের (?) অনেকের ভাষা বাংলা। ... অনেক উপজাতি আছে বহুভাষী।
গারো ও খাসিয়ারা দ্বিভাষী। বাংলা ও নিজেদের ভাষায় যুগপৎ কথা বলতে পারে। .... দু'একটি ছাড়া সব উপজাতীয় ভাষাই অলিখিত, অর্থাৎ সে সবের কোনো লিখিত রূপ নেই। চাকমা ও মগ (?) ভাষা ছাড়া অন্য কোনো ভাষার নিজস্ব বর্ণমালাও নেই। " (দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা 9)
''খ্রিস্টান মিশনারিরা গারো ভাষায় রোমান অর প্রচলন করেন।
পরে তারা চীনা চিত্রলিপির ন্যায় এক ধরনের লিপিমালাও আবিষ্কার ও প্রয়োগ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু কোনটাই স্থায়ী হয়নি। বাংলা হরফে গারো ভাষা স্বচ্ছন্দে লেখা যায়। বর্তমানে গারোদের পারিবারিক ভাষা গারো, কিন্তু পোষাকী ভাষা বাংলা। " (দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা 10)
"উপজাতীয়রা তাদের টোটেম ছাড়া সবই খায়। বিড়াল গারোদের টোটেম।
তাই তারা বিড়াল খায় না। মগ, চাকমা ও খাসিয়ারা গোমাংস ও গারোরা গোদুদ্ধ খায় না। মগ ও চাকমা নরনারী ধূমপানে অভ্যস্ত। টক ও পঁচা চিংড়ির প্রস্তুত খাদ্য তাদের প্রিয়। ওঁরাওরা ইঁদুর, বাইনমাছ, আলু, খেসারীর ডাল ইত্যাদি খায়।
ভাত পচাঁনো মদ সব উপজাতিরই প্রিয় পানীয়। " (দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা 15)
''মগরা বাড়ি করে সমতলে। " (দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা 16)
পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে বাংলাপিডিয়া বলছে,"পাহাড়ি ভূমি চাষাবাদের অনুপযুক্ত। তবে প্রাকৃতিক উদ্ভিদাদি প্রচুর জন্মে। পাহাড়ি ঢালে জুম চাষের প্রয়াস চলছে।
দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপতক্যার সমতল ভূমিতে তুলা, ধান, চা ও তৈলবীজের চাষ হচ্ছে। " (পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা 371)
"কাপ্তাই হ্রদের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ যে বিপুল তির সম্মুখীন হয়, তা তাদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। এই হ্রদের জন্য তাদের মূল ভূখণ্ডের 40 ভাগ ভূমি হারাতে হয়। ফলে প্রায় এক লাখ লোক গৃহহারা হয়ে পড়ে। এদের অনেকে ভারতের অরুনাচলে গিয়ে বসতি স্থাপন করে বলে শোনা যায়।
....1997 সালের 2 ডিসেম্বর শান্তিচুক্তি স্বারের মাধ্যেমে প্রায় দুই দশকে সশস্ত্র বিদ্রোহের অবসান হয়। " (পঞ্চম খণ্ড, পৃষ্ঠা 376)
বাংলাপিডিয়ার ইন্টারনেট সংস্করণে বলা হচ্ছে, "গারোদের প্রধান আয়ের উৎস হলো পাহাড়ের ঢালে জুম চাষ, পশু পালন ও শিকার। হস্তশিল্প ও কুটিরশিল্প এখন তাদের আয়ের আরেকটি উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। "
"স্বামী নপুংসক হলে খাসিয়া মেয়েরা একাধিক স্বামী রাখতে পারে। "
''চাকমা বর্ণমালার সাথে ত্রিপুরা বর্ণমালার মিল রয়েছে; তবে দুই ভাষার উচ্চারণ ভিন্ন।
"
''মুরংদের (?) অধিকাংশই খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী। অধুনা ক্রামা ধর্মের প্রচলন হয়েছে। "
আদিবাসী নেতা ও গবেষকরা বাংলাপিডিয়ার বিভিন্ন অধ্যায় পাঠ করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, বাংলাপিডিয়া পাঠ করলে যে কারো ধারণা হতে পারে, এ দেশের আদিবাসীরা আদিম, জংলী ও নরমাংসভোজী, বাংলাদেশে বাস করলেও তারা সবাই বহিরাগত। ...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।