আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিসিএসআইআর এর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও কার্যক্রম- খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট (আইএফএসটি), ঢাকা

১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হিসেবে কর্মকাণ্ড শুরু করে। ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পূর্বে এ প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৬ সাল থেকে তদানীন্তন পূর্বাঞ্চলীয় গবেষণাগারের একটি বিভাগ হিসাবে কাজ করে আসছিল। দেশকে কৃষি নির্ভর শিল্পে স্বনির্ভরশীল করার উদ্দেশ্যে এ প্রতিষ্ঠানটি খাদ্য ও প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রয়েছে। সাতটি গবেষণা বিভাগ এবং ষোলটি গবেষণা শাখার আওতায় এ প্রতিষ্ঠানটি খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনায় দেশের সর্ব বৃহৎ জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। বর্তমানে দ্রুত পচনশীল খাদ্যদ্রব্য যেমন- মাছ, মাংস, ফল ও সবজি সংগ্রহ পরবর্তী প্রক্রিয়াজাতকরণ, সংরণ, গুদামজাতকরণ ও প্যাকেজিংসহ খাদ্য, মৎস্য ও পশুখাদ্যে টক্সিন, এন্টিবায়োটিক ও পেস্টিসাইডের উপস্থিতি, পুষ্টিসমৃদ্ধ বিভিন্ন প্রকার খাদ্য ও শিশুখাদ্য উৎপাদন, শস্য প্রযুক্তি, এনজাইম ও ফার্মেন্টেশন প্রযুক্তির বিভিন্ন ত্রে সমূহের উপর কাজ করছে।

এই ইনস্টিটিউটের গবেষণা বিভাগ গুলি হচ্ছে-(১) প্ল্যান্ট ফুড প্রোডাক্টস, (২) ফুড গ্রেনস, লিগিউমস ও অয়েল সীডস, (৩) এনিম্যাল ফুড প্রোডাক্টস, (৪) মাইক্রোবায়োলজি, (৫) বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড এপ্লায়েড নিউট্রিশন, (৬) ফুড সাইন্স এন্ড কোয়ালিটি কন্ট্রোল এবং (৭) ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট এন্ড রুরাল টেকনোলজি। এ পর্যন্ত ২১২ টির অধিক শিল্প পদ্ধতি এ প্রতিষ্ঠান উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর মধ্যে প্রায় ১৬৫ টি পদ্ধতি বিভিন্ন শিল্পোদ্যোক্তাদের নিকট ইজারা দেয়া হয়েছে। প্রায় ৭৫০টি গবেষণা প্রবন্ধ এই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশ করেছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পাশাপাশি খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা, কাস্টম, খাদ্য ও পশুখাদ্য শিল্পকারখানা, এবং খাদ্য আমদানীকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রযুক্তিগত সহয়তা, বিশ্লেষণ এবং পরীা সেবা দিয়ে থাকে।

এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠানে রয়েছে অত্যাধুনিক এলসি এম এস/এম এস (খঈগঝগঝ) মেশিন যা নিয়মিতভাবে চিংড়ী রপ্তানী শিল্পে বিশ্লেষণ ও পরীা সেবা দিয়ে আসছে। এই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীগণ প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এমএসসি ও পিএইচডি গবেষকদের গবেষণা প্রকল্প তত্ত্বাবধান করে থাকে। এছাড়া রিসার্চ ফেলো, সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের প্রশিণ ও প্রযুক্তিগত দিক নির্দেশনা দেয়া হয়। স¤প্রতি খাদ্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট মাছ ও দুধে ফরমালিন সনাক্ত করণ কিট, চিনি ও মুড়ির হাইড্রোজ, ইউরিয়া এবং ফলে কার্বাইডের পরিমান নির্ণয় পদ্ধতি উদ্ভাবন করে জাতীয় ভাবে ভেজাল বিরোধী অভিযানে সহায়তা করছে। জ্বালানি গবেষণা ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (আইএফআরডি), ঢাকা জ্বালানি গবেষণা ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (আইএফআরডি) ১৯৫৪ সালে তদানীন্তন পিসিএসআইআর-এর পূর্বাঞ্চলীয় গবেষণাগার-এর একটি বিভাগ হিসাবে এর কার্যক্রম শুরু করে।

পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন নামে পরিবর্তিত হয়ে সর্বশেষ ১৯৮০ সালে গবেষণা বিভাগ ও এপ্লিকেশন বিভাগ দু’টির অধীনে ছয়টি সেকশনসহ আইএফআরডি, বিসিএসআইআর-এর একটি পৃথক ইনস্টিটিউট হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ইনস্টিটিউট বায়োগ্যাস, বায়োমাস, বায়োফুয়েল, সৌরশক্তি, বায়ুশক্তিসহ প্রায় সকল নবায়নযোগ্য শক্তির উপর গবেষণা ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের সাথে সাথে প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের জীবাশ্ম জ্বালানির গুণগতমান উন্নয়নের জন্য গবেষণা কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া জ্বালানির সাশ্রয়ী ব্যবহারের ল্েয বিভিন্ন মডেলের উন্নত চুলা এই ইনস্টিটিউট উদ্ভাবন করেছে যেগুলোর মাধ্যমে অর্ধেকেরও বেশি জ্বালানি (কাঠ, খড়কুটা ইত্যাদি) সাশ্রয় সম্ভব। উন্নত চুলা ব্যবহারে গ্রীন হাউস নির্গমন অর্ধেকের বেশি কমে এবং ইনডোর বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ হয়। সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে এই ইনস্টিটিউট সারা দেশে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ উন্নত চুলা সম্প্রসারণ করেছে।

উন্নত চুলার বিভিন্ন মডেলের নির্মাণ, রণাবেণ ও মেরামতের উপর এ প্রতিষ্ঠান প্রশিণ দিয়ে থাকে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ হাজার জনকে প্রশিণ দেয়া হয়েছে। পচনশীল বর্জ্য হতে বায়োগ্যাস তৈরির জন্য দেশীয় উপযোগী স্থারডোম মডেল এই ইনস্টিটিউট উদ্ভাবন করেছে এবং এ প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের জন্য সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ২২ হাজারের বেশি বায়োগ্যাস প্লাণ্ট তৈরি করেছে। সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী এসব নির্মিত প্লান্টের বেশির ভাগই চালু রয়েছে। এই প্রযুক্তিকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছাতে এই ইনস্টিটিউট প্রশিণ দিয়ে থাকে এবং ইতোমধ্যে প্রায় ১২০০ জনকে প্রশিণ দেয়া হয়েছে।

সকল জীবাশ্ম জ্বালানির গুণগত মান পরীার প্রায় সকল সুবিধা এ প্রতিষ্ঠানে বিদ্যমান রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/ব্যক্তির সরবরাহকৃত নমুনার গুণগত মানের পরীার রিপোর্ট এ প্রতিষ্ঠান প্রদান করে। আইএফআরডি কর্তৃক উদ্ভাবিত বিভিন্ন পণ্য ও প্রযুক্তির মধ্যে রয়েছে বায়োগ্যাস প্রযুক্তি, বিভিন্ন মডেলের উন্নত চুলা, ব্রেক ওয়েল, সোলার ওভেন, সৌর চুল্লী, সোলার ড্রায়ার, এনার্জি সেভিং এলইডি লাইট ইত্যাদি। এই ইনস্টিটিউট উন্নত চুলা, বায়োগ্যাস, সৌরশক্তিসহ জ্বালানি সম্পর্কিত প্রায় সকল বিষয়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও জনসাধারণকে পরামর্শ সেবা প্রদান করে থাকে। লাগসই প্রযুক্তির প্রয়োগ ও স¤প্রসারণ শীর্ষক সেমিনার ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে প্রতিবছর এ ইনস্টিটিউট তার উদ্ভাবিত বায়োগ্যাস, উন্নতচুলা এবং সৌরশক্তি প্রযুক্তির ব্যবহার সম্পর্কে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ করে থাকে।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.