http://aloukikhasan.blogspot.com
সামনের আসনে বসা দুইজন বাংলাদেশী ছেলেটির একজন আমি সুজন কিনা যখন জানতে চাইল আমি হোঁচট খেলাম। ভাবতেও পারিনি কেউ আমার ডাকনাম ধরে ডাকতে পারে। এমনকি ছেলেটিকে প্রথম দেখায় চিনতে পেরেছি তাও না। ছেলেটি আবারও জিজ্ঞেস করল, তুমি মতিঝিল মডেলে পড়তা না? আমি মাথা নেড়ে হ্যা বললাম। ছেলেটি বলল, আরে শালা।
আমি রোমেল। চিনস নাই।
আমি সঙ্গে সঙ্গে রোমেলকে চিনে ফেল্লাম। ও যে এতো শুকিয়ে গেছে ভাবিনি। রোমেল খুব ভালো ক্রিকেট খেলত।
মনে আছে একবার ধর্মশিক্ষকের পাঞ্জাবির পিছনে কালিকমের কালি আড়াআড়িভাবে ছিটিয়ে দিয়েছিল। খুব দুষ্ট ছিল। আমি জিজ্ঞেস করি, তুই কই যাস? দিল্লী।
রোমেল - না। আলীগড়ে পড়ি।
ইন্টার পাস করেই চলে এসেছি। তুই কই যাস?
-দিল্লী। এডিটিংয়ের উপর ডিপ্লোমা করতে।
-এডিটিং কি।
আমি এডিটিং কি বুঝিয়ে বললাম রোমেলকে।
রোমেলের পাশের ছেলেটির সঙ্গেও পরিচয় হলো। আমি জিজ্ঞেস করি, তুই এরকম চোরের মতো একবার উঠে আরেকবার বসছিস কেন?
রোমেল - আরে দোস্ত। দুইজন মানুষ কিন্তু টিকেট কাটছি একটা। টিটি আসার আগেই যেন বাথরুমে যেতে পারি। বুঝস না আরেকটা টিকিট কাটতে পারি নাই।
-টিটি কখন আসবে তুই জানস?
-হ। আসাযাওয়া করতে করতে ধারণা হয়ে গেছে।
-রাতে ঘুমাবি কই?
-আর ঘুম। তাছাড়া তুই তো আছিস। তোর বার্থে ঘুমাবো।
-ঘুমানোর কি দরকার। গল্প করেই রাত কাটিয়ে দিতে পারব। ইঙ্গিতে আমি জানালার পাশের মেয়েটির দিকে দেখালাম।
ট্রেণ প্রচণ্ড গতিতে ছুটে চলছে। রাত বলে বাইরের কিছুই টের পাচ্ছি না।
রোমেল বলল আমরা এখন বিহার ক্রস করছি। আমি জানালায় মুখ গলিয়ে কিছুই টের পেলাম না। রোমেল জানাল আলীগড় পৌছাবে সন্ধ্যার দিকে। তার দেড় ঘন্টা পর ওলড দিল্লী।
মেয়েটি চুল বাতাসে উড়ছে।
মনে আছে লাল রঙ্গের ড্রেস পরা ছিল সে। আমরা কিছু হালকা খাবার খেলাম। কিন্তু অবাক করার বিষয় আমাদের সঙ্গে কোনো পানি ছিল না। আমি আর রোমেল বলাবলি করছিলাম পানি কিভাবে খাওয়া যেতে পারে। রোমেল মেয়েটির কোকের দিকে তাকিয়ে বলল, ইস মেয়েটা যদি একটু কোক দিত।
আমি বললাম, হুম। এতো বড় বোতল। আমরা একটু খেলে কি হয়। রোমেল তুই একটু চেয়ে দেখ না। মেয়েটা তো মোটামুটি সুন্দরি।
না করবে না।
তখনই মেয়েটা অবাক করে বাংলায় বলে উঠল, কোক খাবেন? নিন না।
আমরা হতবাক হয়ে যাই। মেয়েটা বাংলা বোঝে। সাথে সাথে রিকল করা শুরু করলাম কোনো খারাপ কিছু কি বলেছি? রোমেল কোকের বোতলটা হাত বাড়িয়ে নেয়।
মেয়েটার সঙ্গে আলাপ হলো। দেবযানী, অবশ্য হিন্দিতে নাকি দেবইয়ানি বলে। থাকে এলাহাবাদ (অমিতাভ বচ্চনের এলাকায়)। বাবা-মা কলকাতার কিন্তু হিন্দিভাষী এলাহাবাদে থাকার কারণে বাংলা বলতে পারে, লিখতে ও পড়তে পারে না।
ভালোই হয়েছে।
মেয়েটার সঙ্গে প্রায় ঘন্টা দুয়েক আলাপ করলাম। বাংলাদেশ সম্পর্কে মেয়েটা আগে থেকেই জানে। ওর ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশী মেয়ে আছে কয়েকজন। এদিকে রাত আরো গভীর হয়ে যাচ্ছে। সবাই ঘুমানোর আয়োজন করছে।
আমি রোমেল উঠে গিয়ে দরজার কাছে গেলাম সিগারেট খাবো বলে। ওখান থেকেই দেখলাম দেবযানী ঘুমানোর আয়োজন করছে। ছোট একটা জায়গায় গুটিশুটি মেরে মেয়েটি ঘুমিয়ে পড়ল। ট্রেন দুলছে। আমিও ভবিষ্যত চিন্তায় আচ্ছণ্ন হয়ে পড়লাম।
দিল্লী যাওয়া, এডিটিং শেখা ....(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।