আলোকিত মানুষ চাই
কিশোরগঞ্জ থেকে: তিনি রাজনীতির মানুষ। মাটি আর মানুষের সঙ্গে রাজনীতি করেছেন জীবনভর। তিনি এখন রাষ্ট্রের অভিভাবক। দায়িত্ব আর পদের কারণে সাধারণ মানুষের সংশ্রব পাওয়া হয় না আগের মতো। তারপরও মন টানে মানুষের পাশে যাওয়ার।
আর এমন অভিব্যক্তিই প্রকাশ করলেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ। শনিবার তাকে ঘিরে উৎসব আমেজ ভাটির শহর কিশোরগঞ্জে। জনসমুদ্র শহরের পুরাতন স্টেডিয়াম। বিকাল সাড়ে তিনটায় গণসংবর্ধনা শুরুর আগে স্টেডিয়ামের বিশাল প্যান্ডেল ছাড়িয়ে সংলগ্ন সড়কের দু’পাশে কেবলই বেড়েছে জনতার স্রোত। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ যখন গণসংবর্ধনাস্থলে পৌঁছান তখন স্টেডিয়াম ভর্তি হাজার হাজার জনতা মুহুর্মুহু করতালির মধ্য দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।
সংবর্ধনার জবাবে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেন, এই অনুষ্ঠানে আপনারা আমাকে দেখতে পাচ্ছেন না, আমিও আপনাদের অনেককে দেখতে পাচ্ছি না। এ পরিবেশে আপনাদের সামনে আসার অভিজ্ঞতা আমার নেই। এটি আমার জন্য বড় বেদনাদায়ক। অথচ এই কিশোরগঞ্জে ১৯৬১ সাল থেকে আমি রাজনীতি করি। ৫৩ বছর যাদের পাশে ছিলাম, যাদের নিয়ে রাজনীতি করেছি।
আজকে তাদের মাঝে খোলামেলাভাবে স্বেচ্ছায় সাক্ষাত করার সুযোগ আমি হারিয়ে ফেলেছি। এটি আমাকে বেদনা দেয়।
কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ও গণসংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক মাজহারুল ইসলাম ভূঁইয়া কাঞ্চনের সভাপতিত্বে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট তার অতীত জীবনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে বলেন, পাকিস্তান আমলে জেল খেটেছি দুইবার এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও একবার জেল খেটেছি। এখন মনে হয়, আবারো আমি যেন জেলখানায় ঢুকে পড়েছি। প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ বলেন, আমি একটি কঠিন সময়ে দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছি।
নানা রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ প্রতিনিয়ত আমাদের নাড়া দিচ্ছে। সাধারণ নির্বাচনের সময় দেখতে দেখতে কাছে চলে এসেছে। দেশের এই কঠিন সময়ে আমি যেন আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে সম্মানের সঙ্গে পালন করতে পারি, আপনাদের মান-মর্যাদা যেন অক্ষুণœ রাখতে পারি সে জন্য আপনারা দোয়া করবেন। তিনি আরও বলেন, হাওরে আমার জন্ম, হাওরের জনগণের সাথে আমার নাড়ির সম্পর্ক। পাশাপাশি এ কিশোরগঞ্জে আমি বড় হয়েছি, তারুণ্যের এক বিরাট সময় আমি এ শহরে কাটিয়েছি।
গুরুদয়াল কলেজে পড়াশোনা করেছি। পাশাপাশি রাজনীতি করেছি। রাজনীতি করার কারণে কিশোরগঞ্জ জেলার সকল উপজেলায় এমনকি প্রতিটি ইউনিয়নে আমি কাজ করেছি। আপনাদের সহযোগিতা নিয়ে জনগণের কল্যাণে কাজ করার অনুপ্রেরণা পেয়েছি।
গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের হুইপ ও কিশোরগঞ্জ-৩ আসনের এমপি মুজিবুল হক চুন্নু, শেরপুরের এমপি আতিকুর রহমান, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মো. আফজাল হোসেন, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি ও প্রেসিডেন্টপুত্র রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, কিশোরগঞ্জ জেলা পরিষদের প্রশাসক এডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ ওয়াহিদুল ইসলাম পট্টু মিয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম এ আফজল, জেলা গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি এডভোকেট ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন, জেলা ন্যাপ সভাপতি এডভোকেট মোজাম্মেল হক খান রতন, জেলা জাপা সভাপতি আশরাফ উদ্দিন রেনু, জেলা সিপিবি সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও পিপি শাহ আজিজুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
উল্লেখ্য, প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর নিজ জেলা কিশোরগঞ্জে এটিই তার প্রথম আনুষ্ঠানিক সফর। শহরের খরমপট্টিস্থ নিজ বাসভবনে রাত্রিযাপনের পর রোববার সকাল ১১টায় সরকারি গুরুদয়াল কলেজে ও বেলা সাড়ে ১২টায় জেলা আইনজীবী সমিতি প্রদত্ত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি যোগদান করবেন। মধ্যাহ্ণভোজ শেষে প্রেসিডেন্ট বিকাল ৪টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে হেলিকপ্টারযোগে কিশোরগঞ্জ ত্যাগ করবেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।