১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারী দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত রিপোর্টের অংশ বিশেষ
"জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরীর গুডহিলস্থ বাসায় আজ স্থাপিত হয়েছে মুক্তিফৌজের শিবির। পোল্যান্ডের লোকেরা নাত্সী বন্দী শিবির ডাচভিয়ের পাশ দিয়ে যাবার সময় যেমন দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে চৌধুরীর বাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময় চাঁটগায়ের লোকেরা অনুরুপ দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে। কারন ২৫শে মার্চের পর থেকে স্বাধীনতার পূর্ব পর্যন্ত ওটি ছিল নির্মম অত্যাচারের কেন্দ্র।
চট্রগ্রামের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব,স্ত্রী কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয় এবং কুন্ডেশ্বরী বিদ্যাপীঠের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর বাবু নতুন চন্দ্র সিংহের হত্যাকান্ডের নেতৃত্ব দেয় সা.কা চৌধুরী। ২৬শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষনার পর প্রায় ৪৭ জন অধ্যাপক সস্ত্রীক আশ্রয় নিয়েছিল কুন্ডেশ্বরী ভবনে।
পাকবাহিনী চট্রগাম দখলের পর তারা সবাই ভারতে চলে গেলেও তিনি বলেছিলেন "যদি মরতে হয় দেশের মাটিতেই মরব। "পরিবারের সবাইকে সরিয়ে দিয়ে তিনি কুন্ডেশ্বরী ভবনেই অবস্থান করেন।
একাত্তরের ১৩ই এপ্রিল পাকসেনারা চারটি ট্যাংক এবং দুটি জিপ নিয়ে হাজির হয় সেখানে। এর একটিতে ছিল সা কা চৌধুরী। নতুন চন্দ্র সিংহ পাক সেনাদের তার কর্মকান্ডের ব্যাখ্যা দেবার পর যখন পাক সেনারা ফিরে আসছিল সে সময় সা কা চৌধুরী জানান তার বাবার নির্দেশ রয়েছে "মালাউন নতুন চন্দ্র ও তার ছেলেদের মেরে ফেলার জন্য।
এরপর মন্দিরের বিগ্রহের সামনে প্রার্থনারত সত্তর বছর বয়স্ক নতুন সিংহকে সালাউদ্দীন টেনে হিচড়ে বাইরে নিয়ে আসে। প্রথমে ট্যাংকের গোলার আঘাতে তার বহুকষ্টে গড়ে তোলা বিদ্যামন্দির গুড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর পাক বাহিনীর মেজর তাকে গুলি করলে তিনি চিত্কার করে মায়ের নাম নিয়ে লুটিয়ে পড়েন এরপর সা কা চৌধুরী রিভলবারের তিনটি গুলি ছুড়েন তার দিকে।
খুনীরা চলে যাবার পর তার লোকজনেরা তার শবের উপর একটি আচ্ছাদন দেয়। পাকসেনারা ফিরে এসে সেটা সরিয়ে ফেলে।
পাকসেনারা চলে যাবার পর আত্মগোপনকারী লোকেরা ফোটা ফোটা বৃষ্টির মধ্যে একটি শতরঞ্চী দিয়ে তার মৃতদেহ ঢেকে দেয়। পাক বাহিনী পরবর্তীতে ফিরে এসে সেটাও সরিয়ে ফেলে। এভাবে তিনদিন তার মৃতদেহ সেখানে পড়েছিল। "
তথ্যসূত্র : একাত্তরের ঘাতক ও দাললরা কে কোথায় ; দ্বিতীয় সংস্করন, ১৯৮৭ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।