আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

চোরের উপর বাটপারি

জাদুনগরের কড়চা

[এটা আমার ড্রাফট পোস্ট ছিলো। ব্লগের বাগের কল্যাণে পোস্ট হয়ে গেছে। তাই আর লেখার ইচ্ছাও চলে গেছে] নাইজেরিয়ার ইমেইল দুনিয়ার প্রায় সবাই একবার হলেও পেয়েছেন। এসব ইমেইলে বলা হয় এরকম যে, নাইজেরিয়া বা আফ্রিকার কোনো দেশের এক ব্যাংকের লোক আপনাকে বলবে, তারা গোপন একটা ফান্ড (যার মালিক মারা গেছে) পেয়েছে, কিন্তু টাকাটা দেশে বসে মারতে পারছেনা, আপনার সাহায্য চায়। আপনার একাউন্টের মাধ্যমে টাকাটা স্থানান্তর করে তার ভাগ আপনাকেও দিবে।

এরকম ইমেইলে বিশ্বাস করার মতো বেকুব কম না। যেই মাত্র আপনার ব্যাংকের তথ্য পাঠাবেন, তখনই আপনার ব্যাংক থেকে টাকা সরাবে। অথবা, তখনি সরাবেনা, কিন্তু কিছুদিন পরে আপনাকে একটা চেক পাঠাবে, বলবে বেশি পাঠিয়েছে, অতিরিক্তটা যেন আপনি ওয়ার ট্রান্সফার করে নাইজেরিয়াতে পাঠিয়ে দেন। এধরণের ভন্ডামিকে বলা হয় ৪১৯ স্ক্যাম, কারন বাংলাদেশে যেমন ৪২০ ধারা, সেরকম নাইজেরিয়াতে ৪১৯ ধারা হলো বাটপারির আইন। নাইজেরিয়াতে এটা রীতিমত একটা শিল্প বাণিজ্যের পর্যায়ে চলে গেছে।

উইকিপিডিয়াতে সংগ্রহ করা তথ্যানুসারে এই খাতে আয়ের পরিমাণ বছরে প্রায় কয়েকশো মিলিয়ন ডলার। অনেক সময় লটারি জিতেছেন বলে যে মেইল পাচ্ছেন, সেটাও এদেরই কাজ। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ থেকে বুয়েটের এক ছাত্র বুয়েটের মেইলিং লিস্টে মেইল করে প্রশ্ন করেছিলো, ঐ টাকা সে কী করে পাবে!! বুঝুন তাহলে, এরকম চাপা ইমেইলে বিশ্বাস করার লোকের অভাব দুনিয়াতে নাই, তাই এই নাইজেরিয়ানরা বেঁচে বর্তে আছে। এবার শুনুন এক মার্কিন সাংবাদিক কী করেছেন। প্রথমে উনার কাছে ইমেইল আসলো, যথারীতি ঐ নাইজেরিয়ার ব্যাংকে টাকা স্থানান্তর ইত্যাদি ইত্যাদি এসব কথা বলে।

ঐ ভদ্রলোক মজা করার জন্য লিখে পাঠালেন, উনি খুব আগ্রহী, এবং দি হলি চার্চ অফ দি অর্ডার অফ দি রেড পেইন্টেড ব্রেস্টের একজন পাদ্রী উনি। চার্চের টাকা পয়সা দেখা শোনা করেন। এরকম বড় মাছ বড়শিতে গেঁথেছে ভেবে তো নাইজেরিয়ার সেই বাটপার মহাখুশি। লিখে জানালো, টাকা পয়সার ব্যাপার তাড়াতাড়ি সারতে চায়, তাই ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য দিতে। আর সে খুব ধার্মিক খ্রিস্টান ইত্যাদি ইত্যাদি।

"ফাদার" লিখে পাঠালেন, নাইজেরিয়ান ব্যাটাকে আগে প্রমাণ দিতে হবে যে, ধর্মে, বিশেষত এই চার্চের মূল মন্ত্রে তার বিশ্বাস আছে। তাই একটা ফটো, আর একটা দলিলে সই লাগবে। নাইজেরিয়ান বাটপার টাকার গন্ধে মশগুল। তাকে ফাদার জানালেন, তাঁদের এই চার্চের সদস্যরা সবাই লাল রং দিয়ে বুকে একটা বৃত্ত আঁকে। তাই নাইজেরিয়ানকে এরকম একটা ছবি পাঠাতে হবে।

নমুনা হিসাবে ফটোশপের কারসাজি করা একটা ছবি পাঠানো হলো। আর একটা শর্তনামা, যার মধ্যে ছিলো এরকম শপথ, "আমি আর কোনোদিন হিপ হপ গান শুনবোনা", "আমি আমার প্রতিবেশীর গাধার দিকে কুনজর দিবো না", "আমি পবিত্র গরুকে উপাসনা করবো" ইত্যাদি। বেটা নাইজেরিয়ান এই ফর্ম সাইন তো করলোই, আর সাথে সাথে খালি গায়ে ওরকম বুকে লাল গোল্লা এঁকে ছবি তুলে পাঠালো!! মজা তো সবে শুরু। এর পর হেক্টর নামের ঐ তথাকথিত "ফাদার" করলেন কি, "আমরা খুব প্রীত তোমার কাজে", এরকম একটা ইমেইল পাঠালেন। বেটা ঠগ এবার টোপ ছাড়লো, বললো, ঐ কয়েক মিলিয়ন ডলার এখনি পাঠাচ্ছি, শুধু পাঠাবার খরচ বাবদ ১৮ হাজার ডলার লাগবে!! "ফাদার হেক্টর" তখন লিখে জানালেন, এই টাকা দিতে সমস্যা নাই, তবে চার্চের এরকম লেনদেনের একটা ফী আছে, প্রায় ৬০ হতে ৮০ ডলারের মতো, সেটা উনি তো নিজের পকেট হতে দিতে পারেন না, তাই ঐটা যদি নাইজেরীয় ব্যাটা পাঠিয়ে দেয়, তাহলেই উনি ১৮,০০০ ডলার পাঠিয়ে দিবেন।

তাজ্জব ব্যাপার, ঠগ ব্যাটা এই পাল্টা-টোপটা গিলে ফেললো। কয়েক দিন পরে "ফাদার" হেক্টরের নামে ডিএইচএল মারফত ৬০ ডলার নগদ এসে পৌছালো। এবার "ফাদার হেক্টর" ডুব মারলেন। নাইজেরীয়তো মহা চিন্তিত হয়ে ইমেইল করলো। কিছুদিন পরে হেক্টর জবাব দিলেন, উনি এখন চার্চের ১৮ হাজার ডলার নিজেই মেরে দিয়ে এখন সার্কাসে যোগ দিয়েছেন, ফটোশপে তৈরী একটা ছবিও পাঠালেন প্রমাণ স্বরূপ।

নাইজেরীয় ঐ লোকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। তবে তার টাকার শোক পাকাপোক্ত হওয়ার আগেই "ফাদার" মাইক মায়ার্স ইমেইল করলেন, এবং হেক্টরের বস হিসাবে পরিচয় দিলেন। (মাইক মায়ার্স চেনা চেনা লাগছে? ঐযে, অস্টিন পাওয়ার্স, ওয়েইন্স ওয়ার্ল্ড সিনেমাগুলার নায়ক, কমেডিয়ান) যাহোক "মাইক মায়ার্স" জানালেন, হেক্টর চাকুরি ছেড়ে দিয়েছে, তবে ওর ইমেইল পড়ে তিনি এই মিলিয়ন ডলারের খবর পেয়েছেন, এবং সেটা চান। এবার নাইজেরীয় একটু সাবধানী।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.