সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
বাঙলাদেশে কাদিয়ানী সমপ্রদায়ের কাউকেই চিনিনা আমি। এদের ধর্মসংক্রান্তু চিন্তাধারা সাথে সামান্য পরিচয় থাকলেও বিশদ কিছু জানা নেই আমার। কিন্তু জানি, এরা আমাদেরই মতো রক্তমাংসে গড়া মানুষ। এরা আমাদের মতোই হাটাচালা করে, এদের বাবা মায়েরা এদের ছেলেমেয়েদেরকে আমাদের বাবা মায়ের মতোই ভালবাসেন। এটাই আমার জন্যে যথেষ্ট তাদের আত্মাধিকারকে মেনে নেয়া যুক্তিতে।
এজন্যে আমাকে যদি কাদিয়ানী সমর্থক বলা হয়, তাহলে আমি তাহলে আমি বাংলাদেশে শিয়া, হিন্দু, বৌদ্ধ সংখ্যালঘুদের সমর্থক। ভারতে আমি মুসলমান সংখ্যালঘুদের সমর্থক। ইসরাইলে ও প্যালেষ্টাইনে মুসলিম আত্যাচারিতদের, তেমনিভাবে স্পেনে জাতীগতভাবে সংখ্যালঘুদের প্রশ্নে বাস্কেনদের ও তুরস্কে কুর্দিদের। আর্থাৎ যেখানে যত সংখ্যালঘু নিষ্পেষনের যাতাপিষ্টে দলিত হচ্ছেন, তাদের আমি সমর্থক। এখানে বেশ কয়েকজন ব্লগার অন্য কয়েকজন ব্লগারকে, যারা আমার মতোই কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষনার পক্ষপাতি নন, তাদেরকে ঢালাও ভাবে কাদিয়ানীদের সমর্থক বলে নিন্দা করেছেন।
তারা তাদের বুদ্ধিবিবেকের সীমাবদ্ধতার কারনে এই সমর্থনের নিগুঢ় অর্থ বোঝার ক্ষমতা অর্জন করতে পারেনি। মানবিকতার বিশাল প্রবাহের এই বন্যা তারা তাদের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে ধারণ করতে পারেন নি, সেকাণে সমর্থনের এই বিশালত্ব কাদিয়ানী ছাড়িয়েও আরো অনেক বেশী বিস্তারিত, তা তাদের চোখে পড়ে নি। সেজন্যেই তাদের বক্তব্যে নিন্দার প্রকাশ পায়।
এদের একজন বলেছেন, আমরা তো ওদেরকে হত্যা করতে যাচ্ছি না, শুধুমাত্র সরকারের কাছে দাবী জানাচ্ছি তাদেরকে অমুসলিম ঘোষনা করার। এর মাঝে আবার অমানবিকতার কি দেখেলন তীরন্দাজ? কিন্তু ভদ্রলোক জানেন না যে, তিনি যাকে ছোট অধিকার হরণ বলে আখ্যা দিতে চাইছেন, তা একসময় ছোট ফুলকি থেকেই বিস্ফোরণে পরিনত হতে পারে।
পৃথিবীর বড় বড় ধর্মযুদ্ধ, যাতে লাখো লাখো মানুষ প্রান হারিয়েছেন, এসব ছোট ছোট ফুলকি থেকেই সৃষ্ট। প্রতিটি মানুষের মানবিক অধিকার রয়েছে, নিজের পছন্দ অনুযায়ী নিজেকে দেখা। এ ভদ্রলোক তার নিজের ধর্মবোধের প্রভাবে একটি সংখ্যালঘু গোষ্ঠির সে অধিকার হরণ করতে চাইছেন, পরিনামে একটি সমাজে অশুভ আগুন জ্বালাতে চাইছেন, অথচ এর ভেতরে অমানবিক কিছু দেখতে পাচ্ছেন না। ধর্মবোধ মানবিকতাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না, আথচ এ ভদ্রলোক সকাল সন্ধ্যা অকাতরে ঈশ্বরের লানত নিজের পৈত্রিক সম্পত্তির মতো বিতরণ করে যাচ্ছেন। আমি তার অমানবিক ধর্মবোধকে ধিক্কার দিই।
প্রবাসে ভারতের কাদিয়ানী সম্প্রদায়ের একজনকে অনেক আগে থেকে জানি। তার চিন্তাবোধ ও ধর্মান্ধতা আমার পছন্দের নয়। এটা আমার ব্যক্তিগত অপছন্দ। সেজন্যে মনে করিনা, আমার অধিকার রয়েছে তাকে অমুসলিম ঘোষনা করার। আমার যেমন মুক্ত বাতাসে নিজের ফুসফুসকে প্রসারিত করে নি:শ্বাস নেবার অধিকার রয়েছে, তেমনিভাবে তার নিজেরও রয়েছে এই একচ্ছত্র অধিকার।
জার্মনীর বাভারিয়ায় হিজাব পড়ে মেয়েদের স্কুলে আসা নিষেধ করা হয়েছে। এখানকার কিছু তথাকথিত প্রগতিশীল জার্মান বন্ধুরা তাতে সমর্থন জানিয়েছেন। আমি এই বন্ধুদের সাথে নিজেকে এক কাতারে মনে করি না, যদিও নিজে হিজাবহীন সমাজের পুজারী। যারা হিজাব পড়ছে, তা তাদের ব্যাক্তিগত অধিকার ও আমি মনে করি যতোক্ষন না তারা অন্যকে হিজাব পড়তে বাধ্য না করছে, ততক্ষন তাদের বিরুদ্ধে কোন কিছু বলা তাদের ব্যাক্তিস্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের সামিল।
আমার দৃষ্টি প্রসারিত আমি পৃথিবীকে অনেক বড় করে দেখি।
মনে করি এ পৃথিবীর আলো, বাতাস, মাটিতে প্রতিটি মানুষেরই সমান অধিকার রয়েছে। যাদের দৃষ্টিশক্তি সীমাবদ্ধ, তারা তাদের এই সীমাবদ্ধতার কারনেই নিজেদেরকে প্রতিনিয়ত অন্ধকার কুয়োর বন্দীত্বে আবিস্কার করেন। এতে নিজেদের আত্মবিশ্বাসে যে চিড় ধরে, তার প্রভাবে পাশের অস্তিত্বের সাথে বিবাদে মত্ত হন। পাশের অস্তিত্বের অধিকার হরণে সচেষ্ট হন। নিজেদের দৃষ্টিসীমাবদ্ধতার কারনে নিজের চারপাশকেও সীমাবদ্ধ দেখে অন্যকে কামড়াতে প্রয়াসী হন।
এরা যাতে আবার এদের সুস্থতা ফিরে পান, সেজন্যই এই কুয়োর ব্যঙদের প্রতি আহব্বান, আপনাদের দৃষ্টিশক্তি প্রসারিত করুন। ব্যঙ থেকে আবার মানুষ হবার সুস্থতার পথে এটাই আপনাদের একমাত্র অমোঘ মহৌষধ!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।