জাদুনগরের কড়চা
আমার বিশ্ববিদ্যালয়, অর্থাৎ !@@!467164 !@@!467165 !@@!467166 !@@!467167 !@@!467168-!@@!467169 ঠাট্টা করে যে নামগুলোতে ডাকা হয়, তার একটা হলো - ইউনিভার্সিটি অফ ইন্ডিয়ান অ্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ চাইনিজ। কারণটা আসলেই ঠিক - এখানে চীনা ও ভারতীয় ছাত্রের সংখ্যা খুবই বেশি। এটা প্রকৌশলে অনেক শাখাতেই আমেরিকার প্রথম ৫টা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে পড়ে, কিন্তু প্রথম সারির অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চাইতে এখানে বিদেশি ছাত্র ভর্তি করে অনেক বেশি।
যাহোক, এখানে আমি থাকি ফ্যামিলি অ্যান্ড গ্রাজুয়েট হাউজিং, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায়। যেসব ছাত্রদের পরিবার আছে, তারা অনেকেই এখানে থাকে।
আমাদের এলাকাটাকে দেখলে অনেক সময় চায়নাটাউন বলে ভ্রম হতে পারে। কারণ, এখানে বসবাস করা অধিকাংশ মানুষই চীনা। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস হতে বাসায় আসতে বাসে দশ মিনিট লাগে। এই দশ মিনিট চীনা ভাষায় বিভিন্ন কথা শুনতে হয়।
অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সিঁড়িঘরে ঢুকলেই বিচিত্র সব গন্ধ পাওয়া যায়।
চীনাদের রান্না আমরা চাইনিজ রেস্টুরেন্টে কিন্তু কখনোই খাই না। আসলে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে চীনা খাবারের নামে আমাদেরকে দেশী খাবারই অন্য কায়দায় গছিয়ে দেয়। আসল চীনাদের খাবার পুরা আলাদা, আর আমাদের বাঙালি নাকে তা সহ্য করা বড় দায়।
মানুষ হিসাবে চীনারা কিন্তু খুব পরিশ্রমী। চীনা ছাত্র বা অধ্যাপকেরা পাগলের মতো খাটতে পারে।
তাই দেশ হিসাবে এদের উন্নতি এরকম হচ্ছে। এদের গলা দিয়ে ইংরেজি বের হয় না, কিন্তু তার পরেও এরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা পায় প্রচন্ড অধ্যাবসায়ের জোরে।
গরম কালে আমাদের বাসস্ট্যান্ডে কাঁচাবাজার বসে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার পাশে ক্ষেত আছে, যা থেকে বাগান করার জন্য গ্রীষ্মকালে প্লট বরাদ্দ দেয়। চীনারা অনেকেই বাবা-মাকে নিয়ে এসেছে।
ঐসব বুড়াবুড়িরা রীতিমত কোদাল, বালতি, শাবল ইত্যাদি নিয়ে চাষবাস শুরু করে। তাই গরমকালে একেবারে টাটকা ফল, শাক, এসব পাওয়া যায়। মজার ব্যাপার হলো, চীনা যে বুড়িরা এসব বেচতে বসে, তারা বিন্দুমাত্র ইংরেজি জানে না। ওদেরকে যাই প্রশ্ন করিনা কেনো, জবাব একটাই One Dollar!!! ওরা কেবল এইটাই জানে। অবশ্য কিছু প্রশ্ন করলে উৎসাহের সাথে চীনা ভাষায় অনেক অনেক কথা বলতে থাকে।
আমি আর আমার স্ত্রী মাঝে মাঝে বোঝার চেষ্টা করি, কোনো শব্দ যদি কোনোদিন আঁচ করতে পারি।
এখানে যারা পিএইচডি করতে আসে, সবাই প্রচন্ড মেধাবী, তবে অন্যরকম ব্যাপার ঘটে গরম কালে। সামারের ৩ মাসে এখানে সাধারণত ক্লাস বন্ধ থাকে, কিন্তু অনেক শর্ট কোর্স থাকে। আর আমাদের দেশের মতো চীনেও "মামা-চাচা ধরা"র ব্যাপারটা চালু আছে। তাই সামারে যেসব চীনারা এক দঙ্গল বেঁধে এই শর্ট কোর্স করতে আসে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের দেখেই বোঝা যায়, খুব অগা-মগা টাইপের।
আমি এই অ্যাপার্টমেন্টে প্রথম আসি বছর তিনেক আগে। একদিন বিকালে বাইরে হাটছিলাম। হঠাৎ দেখি পুরাপুরি খালি গায়ে শুধু শর্টস পরে এক লোক হাটা হাটি করছে। আমার নিচের তলার চীনা বেশ কয়েকজন ঐ শর্ট কোর্স করতে এসেছিলো, তাদের বাসার পর্দা টর্দা কিছুই নাই। ভিতরে চীনা লোকগুলো শর্টসও বাদ দিয়ে কেবল অন্তর্বাস পরে দিব্বি হাটা চলা, আড্ডা, খাওয়া দাওয়া সব করছে।
বাইরে থেকে তাদের দেখা যাচ্ছে, এটা নিয়ে তাদের কোনোই মাথা ব্যাথা নাই। আমার বেকুব বনে যাওয়া দেখে পাশের বিল্ডিংএর বাংলাদেশী ভাই জানালেন, এরা ঐ "মামা-চাচা-ধরা" পার্টি। অন্য চীনারা, যারা একটু শিক্ষিত, তারা অন্তত খালি গায়ে এভাবে ঘুরাঘুরির অসভ্যতাটা করে না।
শেষ করছি ডিপার্টমেন্টে ল্যাবের কথা বলে। আমাদের ল্যাবে বেশ কয়েকজন প্রফেসরের ছাত্ররা বসে।
এর অনেকেই চীনা। আমার প্রফেসর একদিন আমাদের গ্রুপের একজনকে প্রশ্ন করলো, "এখানে অন্য কে কী কাজ করছে"। ঐ মার্কিনী ছেলেটা জানালো, ল্যাবে ইংরেজিতে তো কেউ কথা বলেনা। ল্যাবের জাতীয় ভাষা এখন চীনা হয়ে দাঁড়িয়েছে, ফোন থেকে শুরু করে আড্ডা, সবই চীনা ভাষায় হয়।
এই ঘটনা শোনার পরের দিনই প্রফেসরেরা সব বৈঠক করে পরে ইমেইল করলেন, ল্যাবে আজ থেকে ইংরেজি ছাড়া অন্য ভাষায় নিজেদের মধ্যে আড্ডাবাজি বন্ধ।
এখন কিছুটা মুক্তি পেয়েছি, চীনা ভাষার কথোপকথন শোনা থেকে। নইলে হয়তো চীনা ভাষাটা নিজেও বলা শুরু করতাম!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।