বেঁধেছে এমনও ঘর শুন্যের ওপর পোস্তা করে..
মিথিলাকে আমি চিনতাম না। এমনকি ব্লগেও তার সাথে আমার কোনরকম যোগাযোগ হয়নি। আজ সারাদিন আমাদের অতি পরিচিত ব্লগ একটু ভিন্ন চেহারা নিয়ে উপস্থিত ছিলো। এই অপরিচিত ভারাক্রান্ত চেহারা প্রয়োজনে আরো অনেকদিন টিকে থাকুক। এ আঘাত প্রতিটি মূহুর্তে আমাদের মনে করিয়ে দেবে যে আমরা মানুষ, হাজার বছরের ঐতিহাসিক পথ চলায় যে প্রবৃত্তির চেয়ে বুদ্ধিবৃত্তি আর শুভবোধের সত্বাকেই গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট হিসেবে অর্জন করেছে।
মিথিলাকে আমি চিনতাম না কিন্তু আমিনুল কে চিনতাম। বলা ভালো চিনেছিলাম। তার বিক্ষত অচেতন শরীরটির সাথেই আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিলো। মৃত তাকে আমি বিদায় দিয়েছিলাম। এই পুরো সময়কাল ছিলো তিন দিন।
তিন দিন আগেই নোয়াখালী থেকে ঢাকা দাউদকান্দি আসার পথে দাউদকান্দিতে একটি প্রাইভেট কার মুখোমুখি একটি বাসের সাথে সংঘর্ষে পুরোপুরি বিধধস্ত হয়। আমিনুল ঐ কারটির ড্রাইভার ছিলো। বয়স বড়জোর 28। দূর্ঘটনাটিতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় দুজন। আমার দূঃসম্পর্কের আত্মীয় তারা।
তাদের কথা বলা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। আমি আমিনুলের কথা বলবো।
আমিনুল সহ জীবিত যে চারজন ঢাকায় সেন্ট্রাল হাসপাতালে এসে পৌছায় আমিই প্রথম তাদের রিসিভ করি। প্রথম তিনটি শরীর বের করার বেশ খানিকটা পরে আমরা লক্ষ করি যে ভিতরে আরেকজন রয়েছে। তারপর ইমার্জেনিস, তারপর আই সি ইউ।
শেষ পর্যন্ত পিজি। অন্যরা এখন বিপদমুক্ত। কিন্তু বাঁচানো যায়নি আমিনুলকে।
আমিনুলের বাচ্চা মেয়েটিকে আমি প্রথম থেকেই এভয়েড করতে চেয়েছিলাম। দুদিন একটু সরে সরে থাকলেও গত রাতে পিজি থেকে আমিনুল তে বের করার সময় সেটা সম্ভব হয়নি।
পোস্টমর্টেমের ঝামেলা এড়ানো, কফিন ও অন্যান্য ব্যস্ততা না থাকলে কি পরিস্থিতি হতো ভাবতে পারিনা। কেন জানি অকালে মরে যাওয়া মানুষগুলিই খুব ভালো হয়। বাড়িওয়ালা, আমিনুলের শ্বসুর, আর ছোট ভাইগুলি র বয়ানে পাওয়া জীবিত আমিনুলের ফুর্তিবাজ স্বত্তা আর পরোপকারী মনের যে রূপ হাজির করলো তা সন্দেহাতীতভাবেই একজন সুন্দর মানুষকে পরিচিত করেছে আমার সাথে।
ময়মনসিংহের উদ্দেশে আমিনুলের যাত্রা করাতে করাতে গভীর রাত হয়ে যায়। চিৎকার করে কাঁদতে থাকা শিশুকন্যাটি আমি কোলে নিলেই হঠাৎ করে থেমে যায় যা ছিলো অপ্রত্যাশিত।
তখন আমিনুলকে এম্বুলেনেস ওঠানো হয়ে গেছে। হাসপাতালের স্টাফ শক্ত চেহারাগুলিও দেখলাম অকৃত্রিম দূঃখবোধে ভারাক্রান্ত। অথচ কিছুক্ষন আগেও তারা তুমুল দরকষাকষি করেছে লাশ ছাড়ার আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে। মন খারাপ করা জমাট অনূভুতি কেন জানি গলতে শুরু করলো। বহুদিন পর মনে হলো একদল মানুষের সাথে দাড়িয়ে আছি আমি; একজন মানুষ।
মিথিলা, আমিনুল তোমাদের মৃতু্য ব্যর্থ হয়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।