আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শীতের সন্ধ্যায় এই সব বিবেক টিবেক...

.এই ব্লগে যে কয়টি পোস্ট আছে, সেগুলোর মন্তব্য সরাসরি প্রকাশিত হবে না। এই অক্ষমতার জন্য অগ্রিম ক্ষমাপ্রার্থী।

এক. বৌ হেসে ফেলে। তোমাকে এই জ্যাকেটটায় প্যাকেট,প্যাকেট লাগছে। আয়নায় তাকিয়ে আমিও হেসে ফেলি।

অনেকদিন পরা হয় না জ্যাকেটটা। গত একবছরে মুটিয়েছি বেশ,জ্যাকেটটা এখন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। আমি আরেকটা জ্যাকেট টেনে নিই। পোলার ফ্লিসের পশমী জ্যাকেট। খুব ওম।

গতবছর বন্ধুর গার্মেন্টসে ফ্লিসের অর্ডার এসেছিল অনেকগুলো। তার থেকে বেছে বেছে ছয়টি জ্যাকেট এনেছি। দামী ডিজাইনার ওয়্যার। একেকটি একেক রংয়ের। মুড বুঝে পরি।

সাংঘাতিক আরাম। দুইটা ব্লেজার বানাতে দিয়েছি। ঈদের পরে এই অবরোধের ধাক্কায় বেটা দর্জি দোকান খুলেছে কী না কে জানে। খবর নিতে হবে। তবে এমনিতে রাফ ইউজের জন্য আমার লেদার জ্যাকেটটাই ভালো।

টান মেরে পরে ফেলা যায়। কৈশোর ও তারুন্যে,যখন খুব গরীব ছিলাম,তখন একটা জিন্সের জ্যাকেটের শখ ছিল। আর লেদার জ্যাকেটের স্বপ্নতো দেখারই সাধ্য ছিলো না। এখন যেমন একটা প্রাইভেট জেট প্লেনের স্বপ্ন দেখতে গেলে নিজেকে বোকা মনে হয়, তখন লেদার জ্যাকেটের স্বপ্নটাও অনেকটা এরকম ছিল। দুই. তুমুল শীত পড়েছে আজ রাতে।

ইচ্ছে ছিল একটা লং ড্রাইভে বের হবো,অবরোধের রাতে রাস্তাঘাট বেশ ফাকা ফাকা থাকে। ময়মনসিংহ রোডে গাড়ি নিয়ে টান দিতে খুব আরাম। যাওয়া হচ্ছে না। প্রচন্ড কুয়াশা,এই কুয়াশায় গাড়ি চালাতে ইচ্ছে হয় না। তার থেকে বাসায় বসে ডিভিডিতে নতুন একটা সিনেমা দেখা ভালো।

একটা সিগারেট খাওয়া দরকার। আমি বারান্দায় এসে দাড়াই। হিম বাতাস শরীর কেটে কেটে যাচ্ছে। কতো টেম্পারেচার আজ? সাত না আট বোধহয়। আচ্ছা বরফ পড়া শুরু হবে নাতো আবার! ঘোর কুয়াশায় চারপাশ ঝাপসা দেখায়।

ল্যাম্প পোস্টের আলো কেমন যেন ফ্যাকাসে জ্যোৎস্নার মতো। ল্যাম্প পোস্টের পাশে জড়সড়ো ওটা কী ? মানুষ না কুকুর? কেমন কুকড়ে বসে আছে! মানুষইতো মনে হয়। আহারে, বেচারার বড়ো কষ্ট। ঘরেই টিকতে পারছি না ঠিক মতো,ও কেমনে রাস্তায় টিকে আছে শীতের কাপড় ছাড়া! ঘরহীন মানুষে দেশটা ছেয়ে গেছে। বার্থরেট কন্ট্রোলে সরকারের উদ্যোগী হওয়া দরকার।

একটু আগুন জ্বালিয়েও তো বসতে পারে ছাগলটা। অবশ্য এই বাতাসে আগুন জ্বালানোও যাবে না বোধহয়। একটা শীতের কাপড় দিয়ে আসবো নাকি বেচারাকে। উহু,আমার আবার পুরোনো কাপড় জমা রাখার অভ্যাস নেই। বৌ পুরোনো কাপড় দিয়ে ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে বাসন কোসন কিনে ফেলে নিয়মিত।

আচ্ছা ,একটা ফ্লিসের জ্যাকেট দিয়ে দিলে কেমন হয়। অথবা জাম্পারটা । তাড়াহুড়ো করে গতবছর নেক্সট এর সেল থেকে কিনেছিলাম। কিন্তু দেশে আসার পর আর রং পছন্দ হয়নি। আরে ধুর,কী ভাবছি আবোল তাবোল।

নতুন কাপড় চোপড় আবার দান করা যায় না কী! আমি কি দাতা হাতেম তাঈ! হা:হা:হা:। তিন. সিগারেটে শেষ টান দিয়ে আমি ঘরের ভেতর ঢুকে পড়ি। বৌ কফি বানাচ্ছে। আরামদায়ক কুইল্টের লেপে পা মুড়ে আমি এখন কফি খেতে খেতে নতুন ছবিটা দেখব। ধীরে ধীরে আমার পা গরম হবে,শরীর গরম হবে।

গরম কফি ভেতরে হিম কাটিয়ে গরম করে তুলবে শ্বাস নালী। এই সন্ধ্যায় শুধু ঐ রাস্তার লোকটির জন্য আমার বিবেক গরম হবে না। মৃত মাছের চোখের মতো সে থাকবে হিম,শুধুই হিম...

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।