পরিবর্তনের জন্য লেখালেখি
কলেজে আমাদের নাম হয়ে গেল ডি ফোর। ডেয়ার ডেভিল ড্যান্সিং ডুয়ো । অথবা ড্যান্সিং ডিভা কিসিং ড্রাংকেন ডেফোডিল। কিন্তু আমাদের কোন বদনাম হলো না। আমরা দুইজনেই পড়ালেখায় ভালো।
বর্না তো ফাটায় ফেলে । আর কলেজের সব ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারীর সাথে আমাদের দারুন খাতির । ফলে দুনিয়ার সব রকমের বদমাইসি করেও কোন দিন ধরা পড়ি না। তবে আমাদের শয়তানি গুলা সাধারনত আমরা ছাড়া অন্য কেউ বুঝতোও না। উচচমার্গীয় ব্যাপার স্যাপার।
একদিন স্টারের বিরানী খাব। স্কুটার ভাড়া, বিরানীর দাম কোনটাই নাই। পকেট, পার্স ঝেড়ে ঝুড়ে ৪৬ টাকা পাওয়া গেল। মাইক্রো বায়োলজির মুশাররাফ ভাইয়ের কাছ থেকে টিনের থালা নিলাম। তারপর ডিপার্ট্মেন্টের সামনে বসে সুর করে গান গাওয়া শুরু করলাম।
একটা টাকা দিয়া যান
আমার রাঙা ভাঈজান
প্রফ দিব, এ্যাপ্রন নাই
মানবতা ভিক্ষা চাই ! .............ইত্যাদি ইত্যাদি !
ডিপার্ট্মেন্টের হেড আদিবের মা। উনি বেরিয়ে এসে কোন রকমে ২০০ টাকা হাতে ধরিয়ে দিয়ে কান ধরে মেডিকেল চত্বর থেকে বের করে দিলেন, আর এও বলে দিলেন, এই রকম আবার করলে আব্বু আম্মুকে বলে দিবেন । হু কেয়ারস, বিরানী খাইলে বাপের নাম!!!
নিজের অজান্তেই অট্টহাসি [ আসলে অট্ট না, ছোট্টই ] । হাসি শুনে খোকন ছুটে আসে।
ঃ আপামনি কি হইসে ? চা আনুম?
ঃ আন।
ঘন চা!
বর্নার কাশি তখনো থামে নাই । মেঝের দিকে তাকিয়ে খোকন সাহেব জিগায়,
ঃ আফনে কি এট্টু গলা ভিজাই লইয়া আবার কাশবেন নাকি একবারে কাশাকাশি শেষ হইলে চা আনুম?
বর্না খোকনকে চামুচ ছুড়ে মারে ! পিচচি হাসি মুখে দৌড় মারে , ইস্পিশাল ঘন চা বানানোর জন্য।
খোকন সদ্য কৈশোরে । আপাদের চা দেওয়ার পাশাপাশি উদ্ভিন্ন যৌবনা শরীর গুলোর ভাঁজে ভাঁজে ওর চোখ আলগোছে ঘুরে আসে। আমার চোখ এড়ায় না ওর এইটুকু কৌতুহলী চুরি!
আশ্চর্য ব্যাপার হচ্ছে আমাকে বা বর্নাকে কিছু বলা বা দেওয়ার সময় খোকনের চোখ থাকে মেঝেতে , কখনোই কোন দিন এক্চোখ তুলে দেখে না! এমনকি আমরা যখন বিল মিটিয়ে চলে যাচ্ছি,পিঠ ফেরানো, তখনো না! যেন অলিখিত কোন চুক্তি আছে ওর চোখের সাথে আমাদের , সে তার পাপ বিদ্ধ দৃষ্টি কিছুতেই রাঝবে না বর্না কিংবা আমার শরীরে !
অদ্ভুত ভাবায় আমাকে এই শ্রদ্ধা।
আজিব ব্যাপার। সহজ সরল মনের সহজিয়া সম্মান । মনে হয় পৃথিবীর সব থেকে দামী। এতটা সম্মান আর কোন পুরুষ চোখ আমাকে করেছে কি না সন্দেহ! মানব মন!!!!
বর্না শেষ পর্যন্ত উঠে বসতে পারে। চোখের পানি ওর ঘন কালো টানা টানা পাপড়ি গুলো জড়িয়ে মড়িয়ে ভয়াবহ সুন্দর করে ফেলেছে ।
এক এক বার পলক ফেলছে আর উপর নিচের পাপড়ি একে অন্যকে আলিঙ্গনে এক একটা কবিতা হচ্ছে।
অনেক্ষন হয়ে গেল। এই নয়ন কাব্য বন্ধ করে উর্মি শর্মির খবর নেওয়া দরকার।
আমরা চা খেয়ে বিল মিটিয়ে উঠে পড়ি। ভীষন ফুরফুরে আনন্দে ভাসছি দুইজনেই।
আমার গয়না গুলি কই বেচবো , আলোচনা সেই পথেই চলতে থাকে ।
ঢাকা
২০০৩
[ পরবর্তী পর্বে সমাপ্য]
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।