পাশ্চাত্যের বৈষয়িক উন্নয়ন, তাদের দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা যেমন রাস্তার ট্রাফিক আইন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার,সামাজিক শৃঙ্খলা, ভদ্রতা, শিষ্টাচার, পরমত সহনশীলতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি সামাজিক কল্যাণকর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বিরাজমান তা ৩য় বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করার প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসার দাবী রাখে। কিন্তু এসব করতে মুসলিমদেরকে তাদরে কৃষ্টি কালচারের ও ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধ বিসর্জন না দিয়েও করা সম্ভব এবং সে জন্য পাশ্চাত্যের সব কিছুর অন্ধ অনুকরণের মানসিক গোলামে পরিণত হওয়ার প্রয়োজন নাই যা আমাদের দেশের সেক্যুলারদের অধিকাংশরাই চান। এদের ইচ্ছা দেশের মানুষ বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সবাই পাশ্চাত্যের সবকিছুর অন্ধ অনুকরণ করে মানসিক দাসত্বে নিমজ্জিত হউক।
পশ্চিমা দেশের সুশীল সমাজের (civil society)ও তাদের দেশের আভ্যন্তরীণ নিয়ম নীতির প্রতি মুসলিমদের আপত্তি নাই কেননা সে সব অধিকাংশ নীতিতে ইসলামের বিশ্বজনীন আদর্শের সদৃশ পাওয়া যায়। আর যা মিলে না তাতেও আপত্তি হওয়ার কিছু নাই কারণ তাদের জন্য তারা যেটা ভাল মনে করেছে তা তারা গ্রহণ করেছে “লা-কুম দি নিকুম”।
আপত্তির প্রশ্ন উঠে যখন ইসলাম বিরোধী আচার অনুষ্ঠান জোর করে মুসলিম সমাজে চালু করার চক্রান্ত চলে।
মুসলিমদের আপত্তি হল পশ্চিমা শক্তির সাম্রাজ্যবাদী বৈদেশিক নীতির (foreign policy) বিরুদ্ধে, যার ভিত্তি পরিলক্ষিত হয় ভণ্ডামি আর দ্বৈতনীতির উপর। অন্যদিকে পশ্চিমা সাধারণ মানুষের সাথেও মুসলিমদের কোন বিরোধী নাই এবং মুসলিমরা তাদের দেশের অন্যায় অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কিংবা অভাব অনটনের তাড়নায় পশ্চিমা দেশে পাড়ি জামালেও দুষের কিছু না যদি তারা নিজেদের ধর্ম পালনে বাধা না পায়।
যে প্রেক্ষাপটে সেক্যুলারিজম পশ্চিমা দেশে চালু হয়েছিল তার সাথে মুসলিম দেশের কোন মিল নাই। মধ্যযুগীয় পাদ্রী শাসনের অত্যাচার ও দেউলিয়া নীতির বিপক্ষে চালু হয়েছিল পশ্চিমা দেশে সেক্যূলার শাসন ব্যবস্থা কিন্তু মুসলিম দেশে হচ্ছে তার বিপরীত অবস্থা।
মুসলিম দেশে সেক্যুলারদের দুর্নীতি আর সন্ত্রাসী শাসন ব্যবস্থার কবল থেকে মুক্তি পেতেই মানুষ ঝুঁকছে ইসলামে প্রতি। সেক্যুলারদের অবিশ্বাস্য দুর্নীতি ও অকথ্য লুটতরাজের পরও তারা দেশের উন্নতি করেছে বলে যতই গলাবাজি করুক না কেন মানুষ তাদেরকে বিশ্বাস করতে পারে না। তুরস্কের উদাহরণই দেখেন সে দেশে সেক্যুলার পন্থিদেরকে মানুষ কিভাবে প্রত্যাখ্যান করে ইসলাম-বান্ধব রাজনীতিবিদদেরকে শাসন ক্ষমতায় বসিয়েছে। সাম্প্রতিক মিশরে কি হয়েছে তা তো সবার জানা। আগেই বলেছি মুসলিম দেশের সেক্যুলার আর পশ্চিমা দেশের সেক্যুলারদের প্রেক্ষাপট যেমন ভিন্ন তেমনি তাদের চারিত্রিক তফাৎ আছে।
মুসলিম দেশের সেক্যুলারদের উদ্দেশ্য দেশ প্রেম নয় বরং নিজেদের পকেট পূজা ও সাম্রাজ্যবাদীর তাঁবেদারি করা আর যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় থাকা সেজন্য দরকার হলে দেশের মানুষের উপর অত্যাচার চালিয়ে যাওয়া।
মুসলিম নির্যাতনের আধুনিক হাতিয়ার
মুসলিম দেশে সেক্যুলারিজম হচ্ছে মুসলিম নির্যাতনের অন্যতম আধুনিক হাতিয়ার । সেক্যুলার কথাটির বাংলা তরজমা জোর করে করা হয় ধর্মনিরপেক্ষতা। সেক্যুলার শব্দটির মর্ম ও ভাব কি আসলে এতটুকুই? দেশ ও বিশ্ব প্রেক্ষাপটে শব্দটির প্রয়োগ ও মর্ম খুঁজে দেখলে অনুমিত হয় যে, সেক্যুলার অর্থ ধর্মনিরপেক্ষতা নয়, ধর্মহীনতা।
তবে মুসলিম বিশ্বের বিবেচনায় অবশ্য সেক্যুলার শব্দের অর্থ ব্যাপকভাবে ধর্মহীনতাও নয়; প্রধান ও বিশেষ একটি ধর্মের শূন্যতাকেই এখানে সেক্যুলারিজম বলে প্রচার করা হয়।
বাংলাদেশের উদাহরণই দেখা যাক এখানে সেক্যুলারিষ্ট হিসেবে পরিচিত সুশীল ও রাজনৈতিকরা যখন কোনো মন্দির-গির্জায় যান এবং নানা বিষয়ে তাদের পাশে দাঁড়ান তখন তার সেক্যুলার চরিত্র নষ্ট হয় না, কিন্তু কোনো মসজিদ-মাদ্রাসায় যেতে তিনি দ্বিধান্বিত থাকেন, কেবল তার সেক্যুলার ইমেজটা ভেঙ্গে যাওয়ার ভয়ে। এ দেশে টুপি-দাড়ি, পাঞ্জাবি-পাজামা থাকলে সেক্যুলার থাকা যায় না, কিন্তু ধুতি, পৈতা, ক্রুশ, উত্তরীয় ও গৌঢ় বসন থাকলে সেক্যুলার থাকতে সমস্যা হয় না। বোরকায় সমস্যা হয়, সিঁথির সিঁদুরে সমস্যা হয় না।
রাষ্ট্রকে সেক্যুলার বানানোর কথা বলার সময় বলা হয়-ধর্ম যার যার, কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতিতে দেখা যায়, ধর্ম কারো কারো। সবার ধর্মাচরণকে প্রচলিত সেক্যুলারিজমের দৃষ্টিতে স্বীকার করা হয় না।
মুখে বলা হয়, সেক্যুলার হতে পারে কেবল রাষ্ট্র, এর কোনো প্রভাব ব্যক্তি ও সমাজ পর্যায়ে পড়তে পারে না। অথচ এখন সমাজ, প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায়েও সেক্যুলার হওয়ার নমুনা চালু হয়ে যাচ্ছে। মুখে বলা হয় সেক্যুলারিজম মানে ধর্মনিরপেক্ষতা, কিন্তু সেক্যুলারিজম মানে যে বিশেষ একটি ধর্মের শূন্যতা, বাস্তবে তার আলামতই চারদিকে দৃশ্যমান।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে একজন মুসলিম যার মনে সামান্যতম ঈমান আছে তার পক্ষে কি এরকম সেক্যুলার হওয়ার সুযোগ আছে? যার মাঝে সামান্যতম বিবেক বিচার ও ন্যায়পরায়ণতা আছে তিনি কি এমন সেক্যুলারিজম কোনো দেশে চাইতে পারেন?
অপর ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সহাবস্থান ও সদাচারের বিষয়টিকে ধর্মনিরপেক্ষতা হিসেবে চিহ্নিত করার কোনো প্রয়োজন আছে কি? কোনো মুসলিমের জন্য অপর ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে সহাবস্থান ও সদাচারের বিষয়টিকে ব্যক্তি হোক, প্রতিষ্ঠান, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র হোক সব ক্ষেত্রেই তো সহাবস্থান ও সদাচারের বিষয়টি ধর্মীয় প্রেরণা থেকেই করা যায় অন্তত ইসলামের ক্ষেত্রে। ইসলাম তো সবার জন্য উদার।
মুসলিম বিশ্বের বিগত দিনের ইতিহাস তার পরিচয় দেয়। তারপরও সবক্ষেত্রে মুসলমানদের মাঝে ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেক্যুলারিজমকে প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়ার তাৎপর্য কী তা সকল মুসলিমদের চিন্তা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাল আমলে প্রণীত শিক্ষানীতির ক্ষেত্রেও প্রথমে ‘সেক্যুলার’ এবং পরে প্রতিবাদের মুখে তার পরিবর্তে ‘অসাম্প্রদায়িকতা’ ধরনের শব্দ বসানো হয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের রাষ্ট্রকে ‘সেক্যুলার’ বানানো কিংবা ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায় পর্যন্ত সেক্যুলার রূপে গড়ে তোলার এ চেষ্টা বা প্রবণতার পেছনে কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে তা কি আসলে কোনো সূক্ষ্ম বিষয়? আসলে মুসলিম দেশে নিজ ধর্মের প্রতি মুসলিমদেরকে একটু একটু করে নিরূত্সাহ করে দেওয়ার পথ রচনাই এসব সেক্যুলারপন্থীদের মুল টার্গেটবললে কি ভুল বলা হবে? নিজের ধর্মকে ভালো মনে করেও অপর ধর্মগুলির প্রতি সূক্ষ্ম একটি আত্মিক স্বীকৃতির পথ এ প্রক্রিয়ায় তৈরি করা এর উদ্দেশ্য। একটু একটু করে সর্বধর্মীয় মানসিকতার স্রোতে গা এলিয়ে দেওয়ার অনুভূতি সামনে চলে আসে এ উপায়ে।
মুসলমানের হৃদয় থেকে তাকওয়ার অনুভূতিকে উচ্ছেদ করে কথিত ‘সহনশীলতা’র মেজাজ এ প্রক্রিয়ায় চাঙ্গা করা হয় যাতে দ্রুত ইসলামী কালচারে পৌত্তলিকতা সহ ইসলামী মুল্যবোধের দাফন করা যায়। বাদশাহ আকবর তার ‘দ্বীনে এলাহী’ দিয়ে এ কাজটিই করতে চেয়েছিলেন কিন্তু আজ সেক্যুলারিজমের বদৌলতে মুসলিম সমাজকে বিভ্রান্ত করে “দ্বীনে এলাহী” প্রতিটি মুসলিম পরিবারে চালু হচ্ছে । তাই এক দিকে নিজেদেরকে মুসলিম বলে অন্যদিকে পৌত্তলিকতার পৃষ্ঠপোষক হতে গর্বিত হওয়া বিবেকে বাধে না!
আজ মুসলিম পরিচিতি নিয়েও ব্যক্তি পর্যায়ে ‘সেক্যুলার’ বানানোর মধ্য দিয়ে এ কাজটি করা হচ্ছে কৌশলে। রাষ্ট্রকে সেক্যুলার বানানোর প্রয়াসের সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তি, স্বার্থ ও মতবাদের সম্পর্ক থাকে। শোনা যাচ্ছে, সংবিধান সংশোধনের মধ্য দিয়ে আবার সেক্যুলার রাষ্ট্রের পোশাক গায়ে দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
সে রকম কিছু আদৌ হবে কি না কিংবা হয়েই গেলে তখন কী হবে সে বিষয়ে সংলাপের প্রয়োজন। কিন্তু ব্যক্তি, সমাজ ও প্রতিষ্ঠানের পর্যায়ে সেক্যুলার বানানো বা হওয়ার যে ধ্বংসাত্মক কসরত শুরু হয়েছে এর সঙ্গে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সেক্যুলারবাদীরা তাদের সম্পৃক্ততা বা আগ্রহের কথা প্রকাশ্যে না বলে বরং তারা বলেন ধর্ম যার যার। তাদের এ কথার অর্থ দাঁড়ায়, ব্যক্তি পর্যায়ে ধর্মপ্রাণতাকে তারা একদমই নিরুৎসাহিত করেন না। কিন্তু’ শব্দের প্রয়োগ যাই থাকুক, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, আস্থাহীন, সংহতিবোধ-হীন ও দুর্বল-চিত্ত মুসলিমের এক নব সংস্করণ গড়ে উঠছে সেক্যুলার মুসলিম রূপে। সেক্যুলার চেতনাধারী এই মুসলিমদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে কোনো শিক্ষা বা বৈশিষ্ট্য ও প্রতীক নিয়ে অবমাননাকর কোনও ঘটনা ঘটলেও তিনি নিশ্চল দীঘির জলের মতোই থাকেন অচঞ্চল ও নির্বিকার।
তার সামনে এটা কোনো ইস্যুই নয়। কারণ তিনি তো সেক্যুলার চেতনা লালন করেন। ধর্মীয় বিষয়ে প্রতিক্রিয়া গ্রহণ বা প্রকাশের মধ্যে তো তিনি যেতে পারেন না। উম্মাহর কোনো অংশে ভয়াবহ বিপর্যয় ও বেদনা নেমে এলেও তারা হাস্যোচ্ছল, তাদের চেহারায় ব্যথিতের বা মালিন্যের কোনো ছাপ পড়ে না। কারণ তার অন্তর তো একটি ধর্ম বা ধর্মানুসারীদের জন্য বরাদ্দ নয়, সেখানে সব ধর্মের স’মান।
সুতরাং উম্মাহর কোথাও কিছু ঘটলেই তিনি মুষড়ে পড়তে পারেন না! এভাবে সংহতিবোধ-শূন্য, ঐক্য-চেতনারহিত ও প্রাণহীন এক উদার মুসলিম জেনারেশন গড়ে উঠছে সেক্যুলার মুসলিমের নামে।
বিশ্বাস, আস্থা, স্বীকৃতি ও চেতনায় গভীরভাবে ইসলামকে গ্রহণ ও লালন করাই হচ্ছে যে কোনো মুসলমানের ন্যূনতম ঈমানের শর্ত। আল্লাহর কাছে নিজ ধর্মের একক গ্রহণযোগ্যতা, নিজ ধর্মের পূর্ণাঙ্গতা এবং চূড়ান্ত সম্পর্কে পূর্ণ আস্থাই মুসলমানের মুসলিম পরিচিতির প্রথম পাঠ। বিশ্বাস, আস্থার ও চেতনায় এ অবস্থান থেকে সামান্য সরে আসলে কোনো মুসলিমের পক্ষে মুসলিম হিসেবে গণ্য হওয়ার কোনো অবকাশ থাকে না। এরপর আসে অপর ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সদাচার, তাদের সঙ্গে সহাবস্থানের ইসলামস্বীকৃত উজ্জ্বল আদর্শের পাঠ।
ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের সাথে সদাচার ও কল্যাণকামিতা ইসলামের শিক্ষা। বিপদাপদে অমুসলিমদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার শিক্ষা ইসলামে রয়েছে। নিজের ধর্ম বিশ্বাসে ভেতর-বাহিরে অনড় থেকে অপরের প্রতি সৌজন্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াই মুসলমানদের বৈশিষ্ট্য। নিজের বিশ্বাস ও আস্থাকে ধুসর করে দিয়ে কিংবা সে চেতনা থেকে আলগা হয়ে গিয়ে কেউ যদি ‘উদার’ হওয়ার জন্য ‘সেক্যুলার’ হতে চান তাহলে তিনি তার পরিণতি নিজ হাতে নিয়েই তা হতে পারেন। অন্য কোনোভাবে নয়।
সেক্যুলারদের কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণতন্ত্র।
বর্তমান বিশ্বে নিরপেক্ষ নির্বাচন ও গণতন্ত্রের দাবী সবাই করেন। কিন্তু সেক্যুলারদের কাছে মুসলিম বিশ্বে নিরপেক্ষ নির্বাচন তখনই গ্রহণযোগ্য হবে যখন একমাত্র তাদের বিজয় সুনিশ্চিত হবে। শাসনতন্ত্র হতে হবে একমাত্র তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার তা না হলে সে শাসনতন্ত্র বদলাতে কোন বাধা নাই। সেটি দেখা গিয়েছে আলজেরিয়া, তুরস্ক, ফিলিস্তিন, মিশর ও বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে।
আর তাদের এ দাবীর সাথে সহ যোদ্ধা হচ্ছে বর্তমান বস্তুতান্ত্রিক সভ্যতার সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্য-বাদী শক্তি যারা মুসলিম বিশ্বের সম্পদ লুটতে চায় বিভিন্ন পন্থায়। আর তাদের স্বার্থে তারা রাজা বাদশাহ, সামরিক বা বেসামরিক স্বৈরাচারী শাসকদেরকেও সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা করতে তৎপর।
অতএব সেক্যুলারিজম বা তথাকথিত ধর্মনিরপেক্ষতা যে আসলে মুসলিম নির্যাতনের আধুনিক হাতিয়ার তা কি অস্বীকার করা যায়?
একজন মুসলিমের হৃদয়, বোধ, চেতনা ও বিশ্বাস হচ্ছে একান্তই পবিত্রতায় আচ্ছাদিত অখণ্ডনীয় একটি অবয়ব। আর বাস্তবে ময়দানে সহাবস্থান, সদাচার ও সৌজন্য হচ্ছে একটি বিস্তৃত অনুশীলনের দেহ। একটার সঙ্গে অপরটিকে সবক্ষেত্রে মিলিয়ে ফেলা সম্ভব নয়।
সবার সঙ্গে চলতে হবে, সৌজন্যও রক্ষা করতে হবে। কিন্তু সবার বিশ্বাস ও চেতনাকে ধারণ করা তো যাবে না। জীবন চলার পথে একজন বিশ্বাসী মুসলিমের এ ছাড়া অন্য কোনো উপায় খোলা নেই বলেই মানি। এক্ষেত্রে রাজনীতি, দলমত কিংবা তত্ত্বের দখলদারিত্বের কোনো সুযোগ করে দিয়ে যারা বিশ্বাসের শুভ্রতাকে মলিন করতে উদ্যোগী হবেন তারা অবশ্যই ভুল করবেন এবং এ ভুলটি জাগতিক ভুলচুকের হিসাব অতিক্রম করে তাদেরকে পরকালের অনন্ত গভীর সংকটে নিক্ষেপ করতে পারে। মতাদর্শ কিংবা দলীয় পক্ষ-বিপক্ষ বিবেচনা থেকে যেকোনো বিষয়কে দেখার একটা অভ্যাস আমাদের সমাজে চালু হয়ে গেছে।
এমনকি অপরিহার্য ও অকাট্য ধর্মীয় বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেও এ বদ অভ্যাসটি থেকে আমরা মুক্ত হতে পারি না। বদ অভ্যাসের এ মহামারির মধ্যে বাস করে বর্তমান আলোচনাটিকেও সে চোখে না দেখতে অনুরোধ করছি। মুসলিম হিসাবে আমার আপনার প্রত্যেকের জীবনের অমূল্য সম্পদ-ঈমানের হেফাযতের জন্য আসুন সবাই সতর্ক হই। ব্যক্তিগত জীবনে ‘সেক্যুলার’ হওয়ার ধ্বংসাত্মক রোগ থেকে মুক্ত থাকি এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় “ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে অসৎ নেতৃত্বের পাতর মুসলিম সমাজের বুকে যারা চাপিয়ে দিতে চায় তাদের মুখোস খুলে দেই।
কৃতজ্ঞতা:[/sb
এ নিবন্ধটি প্রণয়নে ফেইসবুক ও অর্ন্তজালের আমার যে সকল বন্ধুদের ইমেইল ও ব্লগ-তথ্যের কিছু সহায়তা গ্রহণ করেছি বিশেষকরে পেশ ঈমাম,বাইতুর রহমান সেন্ট্রাল মসজিদ-বগুড়া সহ সবাইকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।