ভূল সময়ের মর্মাহত বাউল
শস্যপর্ব
(কবিতার কাগজ)
লিখেছেন
মোস্তাক আহমাদ দীন
জফির সেতু
মাহবুব লীলেন
পলাশ দত্ত
অজর্ুন মান্না
হাসান মোরশেদ
ফারুক আহমেদ মেহেদী
সম্পাদক
নজমুল আলবাব
সহযোগীতা
পলাশ দত্ত, অর্না রহমান, গৌরীশ রায়
1.
মোস্তাক আহমাদ দীন
সংবাদ
দেহ ধূলিকীর্ণ হলে সমুদ্র গল্প ভালো ফাঁদা যায়
এরূপ ভাবে যে সমুদ্রজন, কথাবার্তা বলে ফেলে আরো
তার স্বরে মাছেদের অাঁশ
তারও জানা_ স্তুূপাকার আন্ধি এসে গেলে
ল্য যে আর্ত বালুকণা
আমাকে অন্ধেলা পেয়ে তারাওতো দূরে পড়ে থাকে;
শুধু যা জানেনি_
আমারই দুঃখের তাপে ধন্দে পড়ে বেশ কিছু মাছ মরেছিল
চোখ
তী্ন সমপ্রদান এই রাতে; এই নৈঃশব্দ বরণ করে দূর দেশে চলে
যাই, যেন ফের পূর্ণরূপে ফিরে আসি ঘরে; তাছাড়া নৈকট্য, আমি
যাহা গৌণবোধে সর্বকালে মান্য করি আর যোগাযোগে ভেবে
বসি অন্যধারা সাঁকোর নির্মাণ। এমন ধারণা ছুঁয়ে ধ্বংসবীজ
কোথা হতে উড়ে যেন আসে_ ফলে সাঁকোর ভাঙন,
আমি তা দর্শন করে ভাবি, এমত চিহ্ন লিপি পাঠ করে বুঝে নেব
এ রকম চোখ আমি হারিয়েছি বেশ কিছু আগে।
নৈঃসঙ্গ, অনীহারমণ
যদি ভুল বকিয়াছিল তবে এত হাসি কেন ওই মেয়েদের? একদিন ঘুমঘরে
কাকঠোঁট যাহা কাহিয়াছে ভাবিলাম শকুন-অাঁতাত, পায়ে যে বরফরঙ
তবে কোন পথ হাঁটিয়াছ? আর মেঘেরাতো নিজেই ব্রীড়া_ এই কথা না হয়
আজো ভুল জানিয়াছে...
ওই কথা বলিতেই জোড়হস্ত প্রণতি_ আর যে নিপট বাস্তব, তাহা
মানিবার পূর্বেই ভেতরের ঘরদোর ধুলো হইয়াছে, প্রতিটি মৃতু্যর মতো
শূন্যের মুঠোগুলি তাহাদের বাড়ি নিয়া যায়; কেন যে করিল প্রণাম তাহারচে
যদি মিথ্যাই কহিত অসংখ্য মৃতু্যর মতো ওকে আমি তাড়াতে চাহিতাম
সাময়িকী
সেই উত্থিতা নৌকোর রূপে কাছে চালে এলে আমি তার অাঁচেও কেঁদেছি
এত গুণ_ আগুন কাহাকে বলে তবে...জল নাকি স্থল_ এই ভাবে
তাদেরও রূপ-বিরূপতা বিয়ে দ্বিধা ও সংশয় খুব গাঢ়ই হয়েছে_ তথাপি
উন্মোচনবার্তা খুব স্থৈর্যে প্রকাশিত;_ অথচ সৃজনবশত আমি
জলকেও স্থল বলে ফেলি, ঘোড়াকে মহিষ_ যদিও জেনেছি, নৌকো
বিনা জল কিছু নয়
লব্ধি
নদী পেতে এসে, জলে ডুবেছে আঙুরি
যার ফলে দুখি_
এই দুঃখ কারো-কারো মনে লেগে যায়
2.
জফির সেতু
প্রতিতুলনা
মেদমাংস থেকে উৎসারিত যে রক্ত আমি তা দিয়ে দিয়েছি
আল্পনা করে যাত্রাপথে_ আমি বুঝে গিয়েছি গোলাপও রাঙা হতে
পারে না প্রেমিকের রক্তের চেয়ে। ভেবেছি যারা জন্মান্ধ তারা যেনো
চুষ্মান হয়ে ওঠে_ কেননা, পৃথিবীতে এখনো অন্ধের সংখ্যই বেশি।
পাখির গান আর দূরাগত ঝর্ণার শব্দ শুনে যারা আজও চমক ও আনন্দ
পায়, তাদেরই বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
বসন্ত ভেদ করে পাখির যে স্বর আর পাহাড় ফেটে ঝর্ণার যে
সুর_ প্রেমিকের শব্দহীন হৃদয়ের মতো ততোটা বাজেনা; প্রকৃতিতে
সামান্যই তার ভূমিকা আছে!
কেউ কেউ ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তি নিয়ে বাঁচে, তাদেও মন মায়ামৃগে মজে না!
বাদবাকী যারা, আপন রক্তের চোরাগোপ্তা আগুনে ঝাঁপ দেয় একদিন
নিজেই ছাই হয়ে উড়বে বলে!
কৃষকতা
আমার ুধা পেয়েছিলো কিন্তু হা-য়ের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিলো
এক গাছি সোনালি চুল
আমার শস্যগন্ধা দিনে এ রকমই ঘটে চলেছে অথচ আমার সম্পর্কে তুমি
জানো আর মানো অন্য কিছু।
একবার আম্রমঞ্জরি প্রহরে এক মধ্যবয়স্কার শীতের আগুনের মতোন লাল
জিহ্বার দাবানল থেকে রা পেতে আমি তৈরি করেছিলাম জলের বু্যহ
এবং তার শরীরকে সাপ বিবেচনা করে পালিয়েছিলাম পাতা ও পাখির দেশে।
পরের শীতে দেখি তার ভাঙা কবর ছেয়ে গেছে স্বর্ণলতা গাছে।
সেই প্রথম আমার সঙ্গম পিপাসা জাগে আর আমার ভেতওে আবিষ্কার
করি অসম্ভব এক মধুর চাকের মতোন আগুন।
এদিকে আমার সম্পর্কে তুমি ভাবো অন্যকিছু অথচ আমি একটুও
ভবিষ্যৎবাণী করতে পারিনা এমনকি নিজের জলপাই রঙকেও চিনতে
ভুল করি।
বরং তোমাকে আমি ফুলগাছ ভেবে রাঙা এক জবা
ভেবে শস্যের সুড়ঙ্গ ভেবে ডানাওলা পতঙ্গ হয়ে তোমাতে ঢুকতে
চেয়েছি যেনো তোমার ভেতওে আমি চাষ করতে পারি অসংখ্য
বহুবর্ণ মথ;
কিন্তু বোঁটা ছেঁড়া গাছে কষ ঝরতে দেখে মনে পড়ে ঈভের উরুতে
পুরুষের প্রথম পতন আর কালো কৃষকের জাতিস্মরী গান নিয়ে বেরিয়ে
পড়ি পৃথিবীর অকর্ষিত জমির সন্ধানে; আমি ভুলেই গিয়েছিলাম
এখনো পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ লোক ুধার্ত...
3.
মাহবুব লীলেন
কাসান্দ্রা
তোমার আহবানে খুলে গেল প্রাচীর তালা
সরে গেল মরচে ও মাকড়ের জাল
কলসীর গভীর থেকে যাবজ্জীবন বন্দী করেছ
রাুসে আর্তনাদে বললাম-কে তুমি কল্যাণী
দ্বিতীয়া জননী হলে কঠিন জলে?
হাতের জোনাকি আলোয় ঘুরে ফিরে দেখলে আমার আনাহারী মুখ
আর হঠাৎ ঘোমটা টেনে বাতাসে লুকালে নিজস্ব আগুন
মনে হল যেন চিনতাম তোমাকে গত জন্মেও খুব
সেই নারী তুমি
বন্দিত্ব ঘুঁচিয়ে কেড়ে নাও মুক্ত আকাশ
ুধা জাগানিয়া গান গেয়ে সরিয়ে ফেল সুস্বাদু ফল
দানব জাগানো তোমার শখের খেলা
শরীরী ুধায় জন্মের ভয়
যে ভয়ে যুবতী হওনি কোনদিনও তুমি
কৈশোর ছেড়েই হয়ে গেছ শাড়িপরা এক নারী কংকাল।
আবৃত আগুন
শরীরে শরীর ঘষে তুই জ্বালাসনা আগুন মনে মন ঠুকে মারিস বোমা
তোর মুখে বারুদ জ্বলে বুকে শীতল বরফ
জঠরে নবকের ুধা নিতম্বে নিহত পাহাড়
হত্যার অধিকার পেলে তুই, খুন হয়ে যেতাম আমি অনেকটা আগেই
রাষ্ট্র মতায় গেলে তুই কারাগারে ঠিকানা নিতাম আমি
আর ঈশ্বর হয়ে গেলে আমি হতাম নিতান্ত প্রেমিক
কিছু্ই হলিনা তুই হলি এক মামুলি নারী
সভ্যতার সাধারণ চোখে কুৎসিৎ বিকলাঙ্গ পঙ্গু মানুষ
জননী হওয়া ছাড়া যার আর করবার নেই কিছু
বার্ধক্যে যাওয়া ছাড়া গন্তব্য নেই কোন
কাপুরুষ প্রেমিকের জন্য কান্না ছাড়া নেই কোন গতি
ভেতরে অগি্নগিরি জ্বলে তোর বাইরে মৃত পৃথিবীর খড়
মরবার আগে মেরে কেটে মর-পুড়িয়ে মর মৃত সভ্যতার লাশ
তোকে যারা রেখে গেছে অচু্যতের দলে
ওদেরর জ্বালিয়ে মার খেয়ে সাধারণ মরণের আগে।
4.
পলাশ দত্ত
মৃতু্য হোক
বেশ, দরোজা খুলে দেয়া যাক, এসে ঢুকে পড়ুক কেউ একজন।
তারপর? তারপরতো সেই মাঠ পেরিয়ে মাঠের দিকেই যাওয়া_
গুড়িয়ে দিয়ে গাছ, গুড়িয়ে দিয়ে ঘাস। যত কাছে, তত তাড়াতাড়ি।
কতো? পোশাক বদলে, ইন্দ্রিয় খুলে মানুষের কাছে কাছে; কাছাকাছি।
থামুক। থেমে জেনে নিক ভুল। ভুল পাল্টে যাক প্রমাদে। প্রমাদ মেখে বুঝে নিক, কত তাড়া।
আমাদের মৃতু্য হয়, আমরা মৃতু্য এড়াই, এড়িয়ে মৃতে যাই; মৃৎ-এ যাই।
মৃৎ মাটির মতো, তাকে গড়া যায়, তা গড়ে ওঠে, তা ভেঙে পড়ে, তা জুড়ে যায়
আমরা মৃৎ-এ যাই। মৃত? গড়ে ওঠে, ভেঙে পড়ে, জুড়ে যায়, মরে যায়।
এভাবে একদিন, বিনাসংকল্পে
তবুও এখানে কবিতার সময় নেই। দাঁড়ানোরও।
মিথ্যে বলি আমি। মুখোশ আমার। ক'জন তা মানে?
চেনা-অচেনার পরিচয় কে কে সরে দূরে?
পাল্টানোরও সময় নেই, সময় নেই উল্টানোর, পরের পৃষ্ঠায় যাবার।
মানুষে মানুষে কাজের কথা । কাজের খসড়া
মরে মরে শুধু মৃতু্যর দিকে।
পাতা উল্টে গেলে পেঁৗছানো যেত।
এইভাবে পত্রদমন। অবিরলে আটকে রাখা যায়?
গময় নেই। সময় নেই। দাঁড়ানোরও।
তবু কেন দাঁড়াই সবাই?
5.
অজর্ুন মান্না
জটিলতা
'আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই ওই মানবীর তুমুল সহবাস। '
মরে গেলে তবু থেকে যাবে চিরন্তন যন্ত্রণাগহন
পরাণের গহিন ভেতরে নেমে আসে যে কালসাপ,
তার আরাধন স্বাপে যাপনঃ আলো ও অাঁধারে।
বিনম্র অতীত করে গেছে গ্লানির, মোহের অযুত বাড়াবাড়ি,
তর্জনী কাটা শিকল; মুহূর্ত সব অর্বাচীন বোধে ঠাসা?
ভাষা ঃ হায়ারোগি্লফিক-
সে,_ তার পুরোনো হরপ্পার খোঁজ রাখে
রাখেনা তত্ত্বীয় সত্য-মিথ্যার তথ্য!
জলের আদর
বেহুলা ভাসাবে ভেলা চাঁদোয়ার নীচে লীন্দর ঃ গলা দেহ, বেহুদা
বেঁচে থাকার উৎসব কালো জলের উপর ছায়ারা ঘন হয়ে দাঁড়ায়
বুকের কাপড় খসে বেহুলার_ 'সতী হবে, সতী হবে, সাবিত্রী হবে
জীবন জুড়ে'! জল পান করে শরীর... কাপড় খসে, আবার
জড়ায় ঃ জল গড়ায় বুকের স্বর্গে, উরুর গুহায়...পেছনের
উঠোনে দীঘল ছায়া কালো এবং সুখী। শরীর পান করে
জল- (অাঁধার নেমে আসে চাঁদোয়ার নীচে) বেহুলার দেহ জুড়ে জলের
আদর, নদীর শাসন পাতাল ছোঁয় শরীর ছোঁয়া জল;
ঈাতাল কাঁদে...ও বেহুলা, এবেলা ফেরাও
ভেলা...দূরে তীর...পঁচা দেহ কাঁদে লীন্দর...
6.
হাসান মোরশেদ
(এই কবিতার কোন শিরোনাম নেই)
উই পোকা বুনে যায় উৎসবের বিষন্ন চাদর
'এত পাপ কেন প্রভূ'_ প্রশ্নের মেলেনা উত্তর
শৈবাল গিলে খায় পাঁজরের সজল বিন্যাস
প্রভূ হাটে নিয়ে যান আমাদের সবুজ সন্যাস।
হাটে হাটে ফেরি হয় কিশোরের কোমল নাটাই
নোলক বন্ধক রেখে বোনটারে সদরে পাঠাই
সদরে সমুজ্জল সব ঝিকিমিকি জণ্ডিস বাতি
ভানুমতি, ভানুমতি-আয় মা উৎসবে মাতি।
কত নামী ক্রেতা এল, রংঢং কত আহলাদে
চাদর বুঝে নিল কুমারীর প্রথম রক্তপাত
প্রাণায়ামে প্রণত প্রভূ, উৎসব শেষ_
শাড়ীপড়ে এইবার, বাড়ি ফিওে চল তুমি
_প্রিয় বাংলাদেশ!
7.
ফারুক আহমেদ মেহেদী
উপহার সমগ্র
আমাকে মেঘের ভয় দেখালে তুমি আজ
যে মেঘের রঙ বিবর্ণ ধূলির মত
অধর ফোটালো বৃষ্টির ফুল
আত্মার ভেতরে রাত্রি নামালে তুমি
ফালি ফালি করে কেটে আমাকে দিলে তোমার সূর্য্যমুখী তেজ
আমার শোকের সত্য সৌরভ তোমাকে দিল উচ্ছ্বাসের সবুজ দিন
আমাকে চিনতে হলো রাতে রোদে
মনে হলো এই আমি কতোটা ব্যাকরণহীন
প্রাগঐতিহাসিক, অশ্লীল সময়ের প্রতিনিধি
আমার মুখে মধ্যযুগীয় শকুনের বলিরেখা
এই আমি সনাতন সময়ের অপুরুষ
দেখলাম তোমার রঙধনু চোখের মত বালিহাঁস
অবজ্ঞায় আমাকে দিল দ্রোহী উপদেশ
তোমার পেছনের শাদা মরুভূমি
আমাকে দিলো অদ্ভুত শীতের অসুখ
সোনালী মাছ হয়ে_ সেই তুমিই
আমার আহত সত্ত্বায় তুলে দিলে অসমাপ্ত করুণা
আমি এখন ধূলির ঝড় হয়ে উড়ি
তোমার ভেতর বাড়িতে...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।