পাগলের প্রলাপ....
পটিয়ায় কর্নেল অলির গাড়িবহরে বিএনপির হামলা : দু'জন নিহত
চট্টগ্রাম বু্যরো
চট্টগ্রামের পটিয়ায় এলডিপির জনসভায় যোগ দিতে যাওয়ার পথে নেতাকমর্ীদের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়েছে বিএনপি-জামায়াতের সশস্ত্র ক্যাডাররা। বেপরোয়া ক্যাডাররা জনসভার প্রধান অতিথি এলডিপির নির্বাহী সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদের গাড়িবহরেও হামলা চালায় এবং তার গাড়ি ভাংচুর করে। মঙ্গলবার বিকাল 3টায় পটিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে সমাবেশ শুরুর আগে ও পরে ক্যাডাররা বিভিন্ন পয়েন্টে দফায় দফায় পরিকল্পিত হামলা চালায়। এ ঘটনায় দু'জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। নিহতদের এলডিপি তাদের কমর্ী বলে দাবি করেছে।
অপরদিকে বিএনপি বলেছে, নিহতরা তাদের কমর্ী। পটিয়ায় জনসভা কাভার করতে যাওয়ার সময় মনসার টেকে সাংবাদিকদের 3টি গাড়িও এক ঘণ্টা আটকে রাখে বিএনপি নেতাকমর্ীরা। শান-িরহাট, বাদামতল, চৌমুহনী, কমল মুন্সিরহাট, থানার মোড়সহ 10টি পয়েন্টে অবস্থান নেয়া সশস্ত্র বিএনপি-জামায়াত ক্যাডারদের তাণ্ডবে পুরো পটিয়া রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। যেখানেই এলডিপির মিছিল, সেখানেই সশস্ত্র ক্যাডাররা হামলা চালিয়েছে। তবে বিএনপি-জামায়াতের প্রবল প্রতিরোধের মুখেও জনসভায় ব্যাপক লোক সমাগম ঘটে।
এলডিপির দু'কমর্ীকে হত্যার জন্য পটিয়ার সাবেক বিএনপি সাংসদ শাহজাহান জুয়েলকে দায়ী করেছেন কর্নেল অলি। জনসভায় তিনি জুয়েলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করারও ঘোষণা দেন। অন্যদিকে নিহত দু'জনকে বিএনপি তাদের কমর্ী দাবি করে আগামীকাল থেকে সভা ও এর পরদিন বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে। হামলায় নিহত দু'জন হচ্ছে শাহ আলম (23) ও নেছার আহমদ (27)। বিএনপি দাবি করেছে, এর মধ্যে শাহ আলম বানিগ্রাম ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি ও নেছার আহমদ কুসুমপুরা ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক।
এলডিপির বক্তব্য_ এ দু'জন এর আগে ছাত্রদল করলেও এলডিপি গঠন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলডিপিতে যোগ দেন। নিহত নেছার আহমদের পিতা আবদুস সালাম এবং শাহ আলমের পিতা শরীফ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাদের ছেলে বিএনপি করে, এলডিপিতে যোগ দেয়নি। বরং এলডিপির গাড়ি তাদের মিছিলের ওপর তুলে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ জন্য তারা পটিয়ার এলডিপি নেতা এয়াকুব আলীকে দায়ী করে আহাজারি করতে থাকেন।
গতকাল বিকাল 3টার দিকে এলডিপির জনসভায় যাওয়ার পথে মনসারটেক বাদামতল এলাকায় বিএনপি-জামায়াত ক্যাডারদের হামলার সময় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মুখে পড়ে দু'জন নিহত হন।
এলডিপি অভিযোগ করেছে, বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা একটি মিছিল থেকে এলডিপির জনসভাগামী জিপ থেকে নামিয়ে শাহ আলম ও নেছারকে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। অন্যদিকে বিএনপি দাবি করেছে, তাদের মিছিলের ওপর এলডিপির জনসভামুখী জিপ তুলে দিয়ে দু'কমর্ীকে হত্যা করা হয়। বিএনপি এ জন্য এলডিপি নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়েরের প্রস'তি নিচ্ছে। এদিকে পটিয়ায় 14 দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ও আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল হক চৌধুরী সন্ধ্যায় মেডিকেল মর্গে নিহত দু'জনকে দেখতে যান। তিনি এ ঘটনার জন্য গাজী শাহজাহান জুয়েলকে দায়ী করে বলেছেন, জুয়েল এলডিপির ওপর বর্বরোচিত হামলার নায়ক সেজে পটিয়ায় ঐতিহ্য ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে।
তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
এলডিপি চট্টগ্রামে টানা তিনদিনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার পটিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে সমাবেশের আয়োজন করে। এর আগের দিন চন্দনাইশে এলডিপি লাখ জনতার সমাবেশ করে। আজ মহানগরীতে কর্নেল অলির শোডাউনের কর্মসূচি রয়েছে। চন্দনাইশে নির্বিঘ্নে সমাবেশ করলেও পটিয়ায় জনসভায় বিএনপি-জামায়াতের প্রবল প্রতিরোধের মুখে পড়ে এলডিপি।
এলডিপির জনসভা প্রতিরোধ করতে বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা পটিয়ার 10টি পয়েন্টে সশস্ত্র অবস্থান নেয়। কমল মুন্সিরহাটে একদল নেতাকমর্ী কর্নেল অলিকে কালো পতাকা প্রদর্শন করে। বিকাল 3টায় মনসারটেকে প্রথমে এলডিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিমের গাড়ি ক্যাডারদের তোপের মুখে পড়ে। ক্যাডাররা তার গাড়িতে হামলা চালানোর জন্য ধেয়ে এলে তার গাড়ি ব্যাক দিয়ে পেছনে সরে যায়। এ সময় চট্টগ্রাম শহর থেকে জনসভা কাভার করতে যাওয়া সাংবাদিকদের বহনকারী 3টি মাইক্রোবাসও এক ঘণ্টা আটকে রাখে।
বাদামতল এলাকায়ও বিএনপি-জামায়াত ক্যাডাররা অবস্থান নেয়। এলডিপির জনসভাগামী একটি জিপ আটকে তারা কমর্ীদের ওপর বেপরোয়া হামলা চালায়। এখানেই দু'জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। পটিয়া থানার মোড়, ডাকবাংলো, কমল মুন্সিরহাটে বিএনপি-জামায়াত ক্যাডারদের অবস্থান ছিল। বিকাল সাড়ে 3টার দিকে চন্দনাইশ থেকে পটিয়া জনসভাস্থলে আসার পথে সদরের কাছে রয়েল কমিউনিটি সেন্টারের সামনে কর্নেল অলির গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়।
এখানে পুলিশ এগিয়ে এলে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। শুধু জনসভায় আসার পথে নয়, সমাবেশ থেকে ফেরার পথেও এলডিপি কমর্ীরা পথে পথে হামলার মুখে পড়ে। কোথাও কোথাও উভয়পক্ষে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কর্নেল অলির জনসভা শেষ হওয়ার পরও এক ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিল উপজেলা পরিষদ চত্বর। ফেরার পথে পুনরায় বিএনপি-জামায়াত ক্যাডারদের হামলার আশংকায় পুলিশ ও নেতাকমর্ীরা তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
এলডিপির সংবাদ সম্মেলন : পটিয়ায় এলডিপি নেতাকমর্ীদের ওপর হামলার পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাৎক্ষণিকভাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে পটিয়া উপজেলা ও পৌরসভা এলডিপি নেতারা বলেন, জিরি শফি চেয়ারম্যান, আশিয়ার জাফর চেয়ারম্যান, কুসুমপুরার রেজাউল করিম নেছার চেয়ারম্যান, কেশিহরের জসিম মাস্টার, খরনার মফজল আহমদ, আমজুরহাটের ক্যাডার শওকত, হাইদগাঁওয়ের ক্যাডার জসিম ও ইউনুছের নেতৃত্বেই হামলা, ভাংচুর হয়েছে। বিএনপির সাবেক এমপি গাজী শাহজাহান জুয়েল ও তার ভগি্নপতি সাইফুদ্দিন খালেদ বাবুলের নির্দেশেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। জুয়েল ও বাবুল এর আগে বিভিন্ন সমাবেশে প্রকাশ্যে বক্তৃতায় কর্নেল অলি ও এয়াকুব আলীকে হত্যার ঘোষণাও দিয়েছিল। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন পটিয়া এলডিপির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, হামলায় নিহত শাহ আলম ও নেছার আহমদ আগে বিএনপি ও ছাত্রদল করলেও তারা দু'জনই এলডিপিতে যোগ দিয়েছেন।
হামলায় জড়িত চেয়ারম্যানদের তিনদিনের মধ্যে গ্রেফতার না করলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে বলে তিনি জানান। হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এলডিপি পটিয়ায় মানববন্ধন, প্রতিবাদ সভাসহ তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
শাহজাহান জুয়েলের বক্তব্য : পটিয়ার সদ্য বিদায়ী বিএনপি সাংসদ শাহজাহান জুয়েল পটিয়ায় সংঘাত, সংঘর্ষ ও দু'জন নিহত হওয়ার জন্য এলডিপি সভাপতি কর্নেল অলিকে দায়ী করে বলেছেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চারদল পটিয়ার বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করছিল। তাদের শান-িপূর্ণ সমাবেশ মিছিলে এলডিপি জনসভাগামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালালে বিভিন্ন স্থানে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পটিয়ার বাদামতলে নিহত দু'জনকে তিনি তার দলের কমর্ী দাবী করে বলেছেন, এলডিপির জনসভাগামী জিপ চারদলের মিছিলে তুলে দিলে দু'ছাত্রদল নেতা শাহ আলম ও নেছার আহমদ নিহত হন।
নগরীতে এলডিপির মিছিল : এদিকে গতকাল রাতে পটিয়ায় দু'কমর্ী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে নগরীতে মিছিল করেছে এলডিপি। শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে লালদীঘি পূর্বপাড় থেকে বের হয়ে মিছিলটি নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলপূর্ব সমাবেশে নেতৃবৃন্দ এ ঘটনার জন্য জুয়েল ও তার ভগি্নপতি বাবুলকে দায়ী করেন।
আরও যারা আহত : পটিয়ায় এলডিপির জনসভাকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সংঘর্ষে দু'জন নিহত হওয়া ছাড়াও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এর মধ্যে যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন_ নাজিম উদ্দিন, নুরুল আলম, আনোয়ার মিয়া, আহমদ কবির, আজিজ, নাজি, ইসমাইল, নয়ন, কায়সার।
আগের দিনেও হামলা : পটিয়ায় এলডিপির জনসভা উপলক্ষে মাইকিং করার সময় সোমবারও বিএনপি ক্যাডাররা হামলা করে। থানার মোড়ে দু'কমর্ীকে মারধর করে আদালত ভবনের পুকুরে ফেলে দেয় ক্যাডাররা। এ সময় তারা মাইকও ভাংচুর করে। এলডিপি নেতারা বলেছেন, চন্দনাইশের জনসভায় লাখ লোকের সমাগম দেখে দিশেহারা বিএনপি পটিয়ায় পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে।
অন-ত 10 হাজার কমর্ী যোগ দিতে পারেনি : এলডিপি জানিয়েছে, পথে পথে হামলা বাধা ও সংঘর্ষের কারণে অন-ত 10 হাজার এলডিপি নেতাকমর্ী জনসভায় যোগ দিতে পারেননি। বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল ও গাড়িবহর নিয়ে জনসভাস্থলে আসার সময় হামলার খবরে অনেকে ফিরে গেছেন। কোথাও কোথাও অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন নেতাকমর্ীরা।
দক্ষিণ জেলা বিএনপির বিবৃতি : চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে বলেছেন, পটিয়ায় চারদলের শান-িপূর্ণ মিছিলে এলডিপির সন্ত্রাসীরা গাড়ি তুলে দিয়ে ছাত্রদলের দু'নেতাকে হত্যা এবং 15/20 জনকে আহত করেছে। সংগঠনের সভাপতি আহমদ খলিল খান, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বুলবুল, যুগ্ম সম্পাদক শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুদ্দিন খালেদ বাবুল এ ঘটনার জন্য এলডিপিকে দায়ী করে দোষী ব্যক্তিদের গ্রেফতার ও শান-ি দাবি করেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।