আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হটাও আওয়ামী লীগ বাঁচাও দেশ

রংপুরের ঐতিহাসিক জনসভায় বিরামহীন বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া জনতার উদ্দেশে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেছেন, স্লোগান এখন একটাই- হঠাও আওয়ামী লীগ, বাঁচাও দেশ। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনাদের মেয়াদের আর মাত্র তিন মাস সময় আছে। এরপর বিদায় নিতে হবে। আর নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আমরা কোনো নির্বাচনে অংশ নেব না।

তিনি বলেন, ২০০৭ সালে প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে আওয়ামী লীগ মেনে নেয়নি। তিনি নিরপেক্ষ ব্যক্তি ছিলেন। আপনি একজন দলীয় প্রধান। সেখানে আপনার অধীনে আমরা কী করে নির্বাচন করব? কাজেই আপনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার তো প্রশ্নই ওঠে না। কারণ আপনার অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।

তিনি বলেন, আমি ভোট চাইতে আসিনি। ভোট রুখতে এসেছি। আওয়ামী লীগের পাতানো ভোট রুখতে হবে।

গতকাল বিকাল পৌনে ৫টায় রংপুর জেলা স্কুল মাঠে বেগম খালেদা জিয়া যখন বক্তব্য শুরু করছিলেন, তখন থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি আর বাতাস শুরু হয়। এরপর প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তৃতায় মুষলধারায় বৃষ্টি পড়ে।

এ সময় তিনি বলেন, রংপুরে দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টি হয় না। এই বৃষ্টি আল্লাহর রহমত। রংপুরের মানুষ জেগেছে। বিকাল পৌনে ৪টায় রংপুর জেলা স্কুল মাঠে স্থানীয় ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভাস্থলে পৌঁছলে নেতা-কর্মীরা করতালি দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। খালেদা জিয়া মঞ্চে আসন গ্রহণ করার পর রংপুরের ঐতিহ্যবাহী ভাওয়াইয়া গান 'ওকি গাড়িয়াল ভাই'-এর সুরে প্রধান অতিথিকে বরণ করে নেওয়া হয়।

নীলফামারীর সন্তান কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন এ গান পরিবেশন করেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে বেগম জিয়া বগুড়া সার্কিট হাউস থেকে সড়কপথে রংপুরে আসেন। যাত্রাপথে মহাস্থানগড়, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে রংবেরংয়ের পোস্টার, ব্যানার ও তোরণ তৈরি করে তাকে অভিনন্দন জানানো হয়। জনসভায় জাতীয় পার্টির 'দুর্গ' হিসেবে পরিচিত রংপুরে দলটির সাবেক দুই সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলী সরকার, শাহ সোলায়মান আলম ফকির, তারাগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন নবী দুলাল, তারাগঞ্জ জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক আহসান হাবিব বেগম জিয়ার হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে বৃহত্তর রংপুরের ২৩ আসনে বিএনপি ১৩টি আসনে নির্বাচিত হয়েছিল।

এরশাদের পতনের পর '৯১ সালের নির্বাচনে রংপুরে জাতীয় পার্টির উত্থান ঘটে। কারাবন্দী এরশাদকে মুক্তির জন্য বৃহত্তর রংপুরের সবগুলো আসন পায় জাতীয় পার্টি। হাজার হাজার নেতা-কর্মীর উপস্থিতিতে জনসভাটি জনসমুদ্রে রূপ নেয়। পুরো নগরে বেলা ১২টার পর থেকে স্ব্বাভাবিক যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বগুড়া থেকে রংপুর সড়কের বিভিন্ন অংশে হাজার হাজার নেতা-কর্মী দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

বিরোধীদলীয় নেতাকে স্বাগত জানিয়ে পথে নির্মাণ করা হয় শতাধিক তোরণ। দীর্ঘদিন পর খালেদা জিয়ার সফর উপলক্ষে পুরো শহরকে সাজানো হয় বর্ণিল সাজে। জেলার প্রবেশ পথ মডার্ন মোড় থেকে সেনানিবাস চেকপোস্ট পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার পথ বিরোধীদলীয় নেতার গাড়িবহরকে এগিয়ে নিয়ে যায় ৩০ জনের একটি অশ্বারোহী দল। সার্কিট হাউস পর্যন্ত দুই কিলোমিটার পথে নানা সাজে সজ্জিত মেয়েরা নেচে-গেয়ে গ্রাম বাংলার বিভিন্ন চিরায়ত দৃশ্য ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে বিরোধীদলীয় নেতাকে অভ্যর্থনা জানান। সরকারের একদলীয় নির্বাচন করার কথা উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, 'আমরা একদলীয় নির্বাচন অংশ নেব না।

তারা ডিসি, এসপি, ইউএনওদের একদলীয় নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলছে। তা না হলে তাদের চাকরি থাকবে না। আমরা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনী বলতে চাই, আপনারা সরকারের অন্যায় কাজে ব্যবহার হবেন না। আপনারা কোনো ব্যক্তি বা দলের পক্ষে কাজ করবেন না। প্রশাসনকে বলব, নির্ভয়ে নিরপেক্ষভাবে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে থাকুন।

আমরা আপনাদের পাশে আছি। ' একই সঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দেন, যদি প্রশাসন সরকারের পক্ষে কাজ করে জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, তার পরিণতি শুভ হবে না। জনগণ আপনাদের চিহ্নিত করে রাখবে। খালেদা জিয়া বলেন, নির্বাচন কমিশনকে বলব, আপনারা একদলীয় নির্বাচন করতে পারেন না। এখনো সময় আছে, আপনারা মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ান।

নির্দলীয় সরকারের আন্দোলনে জনগণের সমর্থন চেয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই দাবিতে আমরা আন্দোলনে নামব। আপনারা কি আমার সঙ্গে নামবেন? এ সময় উপস্থিত জনতা হাত তুলে হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। ইনশাল্লাহ রাজপথে আপনাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হবে। ' আগামী আন্দোলন সম্পর্কে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, '২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের সময় আছে। সংসদে নির্দলীয় সরকারের বিল এনে পাস করুন।

নির্দলীয় সরকারের প্রধান কে হবেন, তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নির্দলীয় সরকারের দাবি না মানা পর্যন্ত কোনো আলোচনা হতে পারে না। তিনি অভিযোগ করেন, সরকার জনগণকে ভয় পায় বলে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে চায় না। তারা নিশ্চিত জানে যে, ক্ষমতায় না থাকলে তাদের ভরাডুবি হবে। রংপুরে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে বাতিল করেছে অভিযোগ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, 'আমরা আগামীতে ক্ষমতায় এলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করব। আরও যেসব দাবি আছে, তাও আমরা মানব।

তবে আপনারা আমার একটা দাবি পূরণ করবেন, তা হচ্ছে- নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আমার সঙ্গে আন্দোলনে নামবেন। এ সময়ে পুরো মাঠে জনসমুদ্র বৃষ্টির মধ্যে হ্যাঁ সূচক জবাব দেন। বেগম খালেদা জিয়া বলেন, 'আওয়ামী লীগের টার্গেট হচ্ছি আমি। কিন্তু আমি ভয় করি না, বহু অত্যাচার সহ্য করেছি। আওয়ামী লীগ সরকার কেবলমাত্র দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস আর চুরি করেছে।

তারা শেয়ারবাজারের টাকা লুট করেছে, ব্যাংকের টাকা লুট করেছে। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, 'পদ্মা সেতু হলো না কেন? কারণ আওয়ামী লীগ কমিশন খেয়েছে। ' তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, 'ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে কে?' খালেদা জিয়া বলেন, 'তারা বলে, বিএনপি এলে নাকি সন্ত্রাস হবে। আমি বলি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশে সন্ত্রাস ও লুটপাট বাড়বে। আওয়ামী লীগ আমলে যশোরের উদীচী ও পল্টনে বোমা ফুটেছে।

বিশ্বজিৎকে কারা হত্যা করেছে তা দেশবাসী জানে। সীমান্তের নিরাপত্তা সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে বেগম জিয়া বলেন, সীমান্তে শুধু ফেলানী নয়, তার মতো অনেককে হত্যা করা হয়েছে। সরকারের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে শুধু গুম, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, খুন ও নির্যাতন। আগামীতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, নিরপেক্ষ প্রশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, কর্মসংস্থানসহ ঐক্যের রাজনীতির ধারা প্রবর্তন করবেন বলে অঙ্গীকার করেন খালেদা জিয়া। আগামীতে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে আমরা জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় গেলে দেশের সুষম উন্নয়ন করব।

দেশকে সমৃদ্ধের পথে নিয়ে যাব। পরিবর্তনের ধারায় নিয়ে আসব। তিনি অবিলম্বে সব রাজবন্দীর মুক্তি দাবি করেন। জেলা বিএনপি আহ্বায়ক মোজাফফর হোসেনের সভাপতিত্বে জনসভায় ১৮ দলীয় জোটের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি অলি আহমদ, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফত মজলিশের চেয়ারম্যান মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, জামায়াতে ইসলামীর কর্ম পরিষদের সদস্য মাওলানা এম শামসুল ইসলাম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান শফিউল আলম প্রধান, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মূর্তজা, বাংলাদেশ মুসলীম লীগ (বিএমএ) সভাপতি এএইচএম কামরুজ্জামান খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জনসভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বিএনপির জেলা জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মমতাজ শিরিন ভরসা, সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী, সাবেক এমপি নুর মোহাম্মদ মণ্ডল, কাউনিয়া সভাপতি এমদাদুল হক ভরসা, তারাগঞ্জ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খান, অঙ্গসংগঠনের হাজী আবু তাহের, রইচ আহমেদ, আবদুস সালাম, জহির আলম নয়ন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। জনসভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামসুজ্জামান শামু ও যুব দলের সহসভাপতি ফরহাদ হোসেন আজাদ। এর আগে বগুড়া সার্কিট হাউস থেকে রওনা হওয়ার পথে বেগম জিয়া বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবি হবে জেনেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংবিধান থেকে তুলে দিয়েছে। দেশের ৯০ ভাগ মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের কথাটি বলতেই আমি সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছি।

তাই আগামী দিনের আন্দোলন দেশ রক্ষার, গণতন্ত্র রক্ষার, দেশের মানুষের অধিকার রক্ষা, আইনের শাসন এবং সুষম উন্নয়ন। আজ বেগম জিয়া রাজশাহীতে ১৮ দলীয় জোট আয়োজিত জনসভায় বক্তব্য রাখবেন।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।