আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আবার যুদ্ধের সাজে সজ্জিত মিসর। আগামি রবিবার মুরসি হটাও আন্দোলন।

পাওয়ার অব পিপল স্ট্রংগার দেন দি পিপল ইন পাওয়ার। http://mhcairo.blogspot.com/ আবার যুদ্ধের ডঙ্কা বাজছে নিলনদের দেশে। উত্তাল ঢেও আছরিয়ে পরছে ভূমধ্যসাগরের তীরে। পৃথিবীর সাক্ষ বহনকারী পিরামিড হতে যাচ্ছে আরেকটি ইতিহাসের সাক্ষী। তুর পাহাড়ের পাদদেশ, সুয়েজখালের পার এমনকি আল-আযহার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠও আজ গড়ম ব্রাদারহুড সরকারকে উচ্ছেদ করার আন্দোলনে।

কি হবে..? আর কি হবে না..? এই সমীকরনের সামনে আজ মিসর সহ সমস্ত আরব জাতি। বাকি আর মাত্র এক দিন। আগামী ৩০ তারিখ রবিবার ফজরের পর থেকে আন্দোলনকারীরা জমায়েত হবেন বিখ্যাত তাহরীর স্কয়ারে। ছেলে বুড়ো কিংবা নাই নারী পুরুষের ভেদাভেদ। নাই টেক্সি ড্রাইভার কিংবা ব্যবসায়ীর পরিচয়।

সবাই যেন যেতে চলছে আন্দোলনে। অন্তত গত ১৫ দিনে আমার বাস্তব অবজারভেসনে এমনটাই ধরা পরেছে। এবার দাবি একটা,''মুরসি তুমি সরে দাড়াও''। রবিবারের আন্দোলনের আগে এ পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় এক আমেরিকান সাংবাদিক সহ চার জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হয়েছে। পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন স্থানে ব্রদারহুডের অফিস।

মুহাম্মদ মুরসি মুসলীম ব্রাদারহুডের পক্ষ থেকে প্রার্থিতা পেয়ে নির্বাচনে হাড্ডা হাড্ডি লড়াইয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। ক্ষমতায় আসার পর পরই তিনি লক্ষ জনতার সামনে নিজের গায়ের কোট খুলে জনতার উদ্দেশ্যে বুক পেতে দিয়ে বলেন,, দেখুন, আমি কোন বুলেট প্রুফ জ্যাকেট পরে আসি নি। জনতা আমাকে ভোট দিয়েছে তাই আমি জনতাকে ভয় পাই না। বরং তারা আামার বন্ধু ও ভাই। যেই দৃশ্যে মার্কিন মুল্লুক সহ সারা বিশ্বে হৈচৈ ফেলেদিয়েছিল।

অনেকেই ভাবছিল হয়ত বিশ্ব এক নতুন নেতা পেতে যাচ্ছে। কিন্তু এর ঠিক দুই মাসের মাথায় নিজের বাসভবনেই নিরাপদে থাকতে পারছিলেন না মুরসি। সরকারি বাসভবনের চারপাশে বড় বড় পাথর টুকরো দিয়ে প্রাচীর তৈরি রে তবেই রক্ষা পান নবনির্বাচিত এই নেতা। তাহলে কি ঘটল এই অল্প সময়ে যে পরিস্থিতি একেবারেই পাল্টে গেল। আসুন কিছুটা অনুসন্ধান করি...................... এ বিষয়ে আমি ২০ এর অধিক সাধারন মানুষের সাথে কথা বলেছি।

১) মুহাম্মদ সালেম, বয়স ৩৫/৩৬ আইনবীদ। আমার প্রশ্ন ছিল তোমরা ৩০ তারিখ কি চাও। - সালেম: আমরা মুরসিকে চলে যেতে বলছি। -> কেন...? সে তো নির্বাচন করে আসছে। - সে নির্বাচন করে আসছে ঠিকই কিন্তু সেই সময়ে মানুষ নিজেদের সুচিন্তিত মতামত দিতে পারে নি।

-> ঠিকাছে, তাহলে তোমরা তার মেয়াদ পর্যন্ত অপেক্ষা কর। তারপর নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচন কর। -সালেম: মনে কর তোমার এক টুকরো জমি আছে। তুমি একজনকে দিলে সেই জমি চাষাবাদ করার জন্য। কিন্তু সে যদি চাষাবাদ বাদ দিয়ে সেখানে বিল্ডিং তুলা শুরু করে তুমি কি করবে....? তুমি কি তাকে বাধাঁ দিবে নাকি বিল্ডিং উঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে.....? - অবশ্যই বাধাঁ দিব কারন বিল্ডিং উঠানো হয়ে গেলে তাকে হয়তো আর সরানো যাবে না।

- ঠিক বলছো। মুহাম্মদ মুরসিও ঠিক এমন কাজটাই করছে। সে সরকার ব্যাবস্থাকে এমন দিকে নিয়ে যাচ্ছে যে তাকে আরো চার বছর সময় দিলে তাকে আর সরানো সম্ভব হবে না। তাই তাকে এখন সরিয়ে দেয়াটাই দেশের জন্য ভাল। - ঠিকাছে, মুরসি চলে গেলে তোমরা কাকে চাইবে।

- আমরা চাইবো সেনাবাহিনি ৬ মাসের জন্য ক্ষমতা নিক। এবং সুষ্ঠ নির্বাচন করুক। - আমি: ভাল, কিন্তু পরের নির্বাচনেও আবার ব্রাদারহুডের পক্ষ থেকেই কেহ আসার সম্ভাবনা বেশি। সেক্ষেত্রে কি করবে? - হ্যা, তারপরও যদি ব্রাদারহুডের কেহ আসে তাহলে অন্তত আমার কিছু বলার নাই। আমি মেনে নিব না হয় বিষ খেয়ে মরে যাব।

আর আন্দোলন করব না। ২) মুস্তফা ফাতহি। ঔষধ কম্পানির মেনেজার। বয়স ৩৬/৩৭। - তিনি বললেন, মুরসি নিজে খুব ভাল মানুষ।

আমি তাকে ভালবাসি। কিন্তু একটি রাস্ট্র চালানোর মতো দক্ষ তিনি নন। তার রয়েছে অভিজ্ঞতার অভাব। আরো আছে দলীয় নেতাদের চাপ। যার কারনে তিনি নিজে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না।

তাই আমরা এমন সরকার কখনোই মেনে নিতে পারি না। তাই অবশ্যই আমি ৩০ তারিখ মাঠে নামবো এবং তাকে বিদায় করেই ঘরে ফিরবো। ৩) টেক্সি চালক মাগদি, বয়স ২৫/২৬। - তার ভাষায় মুরসি তার দেয়া একটা প্রতিজ্ঞাও রাখতে পারে নি। আর পারবে বলেও মনে হচ্ছে না।

বরং যত দিন যাচ্ছে তত অন্ধকারই দেখতে পাচ্ছি। তেলের জন্য লম্বা লাইন আর সহ্য হয় না। যেটা মুবারকের আমলে কখনোই ছিল না। তাই আমিও নামব ৩০ তারিখ। মুরসিকে বিদায় করেই ঘরে ফিরব।

৪) টেক্সি চালক মুহাম্মদ বয়স ৫০/৫২। মুরসিকে আমিও ভোট দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন আমি খুশি না। কারন সে কথা মত কাজ করতে পারে নি। কিন্তু তাকে সরালেও কোন উপায় দেখছি না।

বরং আরো বেশি করে বিপদে পরা সম্ভাবনাই বেশি মনে হচ্ছে। ৫) দোকানদার মুস্তফা, বয়স ৩৫/৩৬। ইসলাম কখনোই কট্টরতাকে সাপোর্ট করে না। কিন্তু মুরসি আসাতে সালাফি পন্থিরা বেশ আক্রমনাত্বক হয়ে উঠেছে। তারা তিনদিন আগে চারজন শিয়ামুসলমানকে হত্যা করেছে।

মিসরের মাটিতে আমরা এসব দেখতে চাই না। এইভাবে আমি সাধারন জনগনের অনেকের সাথে কথা বলেছি। এ্যক্টিভ ব্রাদারহুডের সমর্থক ব্যাতিত কাউকে বিনা বাক্যে মুরসির সমর্থক পাই নি। আমার দৃস্টিতে মুরসির একবছরের সফলতা ও ব্যর্থতা: - অর্থনীতিতে চড়ম ধস। - ট্যুরিস্ট প্রধান দেশের ট্যুরিস্ট গায়েব।

- ডলারের মুল্য স্মরন কালের বৃদ্ধি। - তেলের জন্য লম্বা লাইন। - লোডসেডিং যা আগে কখনো ছিল না। - ইভটিজিং অবিশ্বাস্য আকার ধারন। - রাজনৈতিক সংকট সারা বছর।

- কট্টর ধর্মান্ধদের উপদ্রপ। - ট্রাফিক জ্যাম। - শহড় অপরিস্কার। - জিনস পত্রের মুল্য বৃদ্ধি। - খুনাখুনি।

সফলতা: সফলতা ঐভাবে চোখে পরার মত নয়। তবে আন্তর্জাতিক কিছু কাজ করেছেন তিনি। ফিলিস্তিনিদের অধিকার কিছুটা সংরক্ষন করার ব্যাবস্থা করতে পেরেছেন। -- আমার দৃস্টিতে উপরের ব্যর্থতাগুলোর পিছনে কিছু কারন আছে। যেটা বিশ্লেশন না করলে সংকটের গভিরতা বুঝা যাবে না।

২৫ জানুয়ারির আন্দোলনে মুবারকের পতন ঘটিয়ে মুরসি ক্ষমতায় আসলেও ৩০ বছরের শিকর যে কত গভিরে পৌছতে পারে সেটা মিসরের মানুষ অনুধাবন করতে পারছে না। বড় বড় সমস্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান হয়ত মুবারক পন্থিদের হাতে নয়তো খ্রিষ্টানদের হাতে। ফলে এই সমস্ত ব্যবসায়িরা মুরসি সরকারকে কোন সহযোগিতা করে নি বরং উল্টো সমস্যা তৈরি করে মুরসিকে দোষি সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেছে। ছোট ছোট আন্দোলনেই বিভিন্ন সরকারি অফিস পুড়িয়ে দিয়ে সারাবছর সরকারকে ব্যাস্ত রাখছে বিচার শালিস দিয়ে। বড় বড় তেল কম্পানি তেল মজুদকরে রেখেছে।

বিচার বিভাগের প্রায় সম্পুর্নটাই এখনো মুবারক পন্থিদের দখলে। তারা সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ডকে প্রশ্নবিদ্ধকরে মুরসিকে রেখেছে চাপের মুখে। মোট কথা মুরসি যদি সকলের সাপোর্ট পেত তাহলে ঠিকই সে দেশের জন্য কিছু করতে পারত। আর এজন্যই এখানকার জ্ঞানিরা বলছেন মুরসির রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব তাই তিনি মানুষের এই ধরনের সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেন নি। আর দলীয় করনের ব্যাপারটা মুরসির জন্য হয়ে দাড়িয়েছে উভয়সংকট হিসেবে।

সরকারের বিভিন্ন স্থানে যারা বসে আছেন তারা তাকে সাহায্য করছেন না আবার তাকে সহায্য করার জন্য নিজদলীয় লোক নিয়োগদিলে সেটা হয়ে যাচ্ছে স্বজনপ্রিতি। -বর্তমান দৃশ্য: আগামী ৩০ তারিখের আন্দোলনে ব্যপক সহিংসতার আবাস পাওয়া যাচ্ছিল অনেক আগে থেকেই। ব্রাদারহুড ও তাদের শক্তি ও সামর্থ দেখানোর জন্য দফায় দফায় কায়রোর রবা আদাবিয়ায় সমাবেশ করছেন। সেখানেও জনগনের ঢল নামছে। রাস্তাঘাটে প্রায়ই ট্যন্ক কামান সড়িয়ে নিতে দেখা যাচ্ছে।

কারন, সমস্ত মন্ত্রনালয় সরকারি বড় বড় অফিস ও আদালত, ব্যান্ক, বড় বড় কম্পানি, সুয়েজ খাল, যাদু ঘরের মত গুরুত্বপুর্ন ভবন গুলিকে নিরাপদ রাখার দায়িত্ব সেনাবাহিনিকে দেয়া হয়েছে। তারা আজ শনিবার থেকেই এইসবের দায়িত্ব নিয়ে নিবেন। সেনাবাহিনীর অবস্থান: সেনাবাহিনীর অবস্থানই বর্তমান পরিস্থিতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারন তারা চাইলে মুরসিকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে আর তারা না চাইলে মুরসি সহজেই ভয় পাবার লোক নয়। সেনাবাহিনী অবশ্য স্পষ্ট বলে দিয়েছে আমাদের ক্ষমতার কোন প্রয়োজন নেই আমরা সবসময় জনগনের পাশে ছিলাম ও পাশে থাকব।

একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়: আমরা অনেকেই মিসরের এই পরিস্থিতিতে ভিত হয়ে সিরিয়া, লিবিয়ার কথা স্নরন করি কিন্তু মিসরের প্লাস পয়েন্ট তাদের সেনাবাহিনী। তারা এটা কিছুতেই হতে দেবে না। সবশেষ ড্রাইভার ইসলামের (৩০) কথাই আমার সবচেয়ে যুক্তিপুর্ণ মনে হয়েছে। মুরসি কিছুতেই ক্ষমতা ছাড়বে না। তবে ছাড়বে যদি ২০০০/৩০০০ প্রাণ যায়।

আমিতো শুনে ভয়ে কাপতে আরম্ব করলাম,, ইয়াল্লা আর রক্ত দেখতে চাই না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.