আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবনের বৈপরীত্য



ধানমন্ডির নিপূন , লালমাটিয়ার আড়ং ফেল - ভাইয়ার জন্য পাঞ্জাবী পছন্দ হচ্ছে না। অবশেষে সোবহানবাগ, শুক্রাবাদ এরিয়ায় মিরপুর রোডে আমার দেখা মতে নতুন গড়ে উঠা কে ক্রাফট, ওজি, অঞ্জন, বাংলার মেলা সহ আশপাশের আরো কয়েকটি স্টোরে খোঁজ নিলাম। এখানেও নিরাশ। কানাডতে প্রবাসী বাঙ্গালী কমিউনিটির মিলন মেলায় বাঙ্গালিত্ব প্রদর্শের জন্যই আমাকে ভাইয়ার বর্ণনার মেরূন কালারের পাঞ্জাবী নিয়ে যেতে হবে। ডোনার অবশ্য আমি নিজেই।

ওর জন্মদিনে এটাই হবে আমার অন্যতম উপহার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশ মোটেও ভাল না। হাতে সময় কম। টিকিট কনফার্ম। তাই হন্যে হয়ে খুঁজছি সেই স্বপ্নের পাঞ্জাবী! বিচ্ছুটা (আমার কাজিন নাদিয়া ) যে কিনা গত একমাসে আমার পিছে জোঁকের মত লেগে আছে- ওই বলল নাসিমাপু একবার বসুন্ধরায় খোঁজ নিয়ে দেখ- না।

সদ্য দার্জিলিং, শিলং ঘুরে আসা ব্লগার হাবিবমহাজনকে মোবাইলে ফোন দিলাম সাথে থাকার জন্য। ভাইয়া আমাদের সময় দিতে অপরাগতা দেখালেন। বলনেন সামনে রিহ্যাব ফেয়ার উপলক্ষ্যে কিছু সফটওয়্যার ও ওয়েব রিলেটেড কাজে খুবই ব্যস্ত। দম ফেলার সুযোগ কম। কোনভাবেই সময় দিতে পারবেন না।

সম্ভবতঃ এজন্য ব্লগেও তার নতুন পোস্ট দেখছি না। সিএনজি চালিত অটোরিক্সাও বসুন্ধরাগার্ডেন সিটিতে যেতে চাইছে না। বুঝতে পাড়লাম এর কারন কাছে এবং ভাড়া কম বলে। অগত্যা রিক্সা নিয়ে সোবহানবাগ , শুক্রাবাদ হয়ে রাজাবাজারের গলির ভিতর দিয়ে মার্কেটের পিছন দিক দিয়ে ঢুকলাম। ঢুকার সময় আমার চোখ ছানাবড়া।

গ্রাউন্ড ফ্লোড়ে এত্ত দামি দামি গাড়ি ! আসলে ঢাকা শহরের প্রাইভেট কার, মাইক্রো বাস, প্রাডো জিপের বহর দেখলে সাধারণ মানুষকে ভিরমি খেতে হয়। মনেই হয় না আমরা গরীব দেশের নাগরিক। দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠীই দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। ঢাকা মহানগরসহ বিভাগীয় ও জেলা শহরের বস্তিতে লাখো লাখো মানুষ চরম মানবেতর জীবনযাপন করছে। একটি জরিপে দেখা গেছে এ দেশে প্রতিদিন প্রায় 1 কোটি মানুষ রাতে না খেয়ে ঘুমাতে যায়।

সুশিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত অগণিত মানুষ। নদীভাঙন এবং ভূমি সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্যে ভূমিহীনদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। বেকারত্বের হার মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এই বৃহৎ মানবগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে রাষ্ট্র পরিচালকদের ভূমিকা খুবই নগণ্য। হাজী মুহমমদ মুহসীনের মতো থাকলে জনগণের এ দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থা থাকত না।

আমাদের রক্ষকরাই ভক্ষক। দেশের সিংহভাগ সমপদ গুটিকয়েক ব্যক্তি ভোগ করছে। এরাই বিদেশ থেকে অপ্রয়োজনীয়, বিলাস দ্রব্য আমদানি করে দেশের অর্থসমপদের অপচয় করছে। কলকাতা, সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালয়েশিয়ায় কেনাকাটা না করতে পারলে তাদের সাধ মেটে না। 14 কোটি লোকের এই গরিব দেশে এই বিদেশ নির্ভরতা না কমাতে পারলে দেশের সমৃদ্ধি আনয়নের পরিকল্পনা আকাশ কুসুম কল্পনা হয়ে থাকবে।

ঢাকায় দেখেছি, ফুটপাথে নিঃস্ব মানুষ ঘুমিয়ে আছে। তাদের বস্ত্র নেই, খাবার নেই। জীর্ণশীর্ণ কঙ্কাল শরীর নিয়ে জীবনসংগ্রামে ব্যস্ত। অথচ কোনো বিদেশী যদি সুপার মার্কেটে যায়, তাহলে সে ভাববে না বাংলাদেশ একটি অনুন্নত দেশ। ঢাকা শহরে সামপ্রতিক বছরগুলোতে বছরে গড়ে 60-70 হাজার মোটর গাড়ির রেজিসট্রেশন হচ্ছে।

হাউজিং ব্যবসা, অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রি, সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেলের প্রসার ঘটেছে। ব্যক্তিগতভাবে তৈরি বড় বড় টাওয়ার, নেতা-নেত্রীদের বিলাসবহুল জীবনযাপন তো বলে না এ দেশ গরিব। যেখানে একজন টোকাই বা পথশিশুকে এক বেলা খাবার জোটাতে 12-16 ঘন্টা শ্রম দিতে হয়, সেখানে জীবনের এই বৈপরীত্য কেন? যেখানে এ দেশে মানুষের দৈনিক গড় আয় এক থেকে দেড় ডলার, সেখানে ধনকুবেররা কিভাবে অঢেল সমপদের মালিক বনে যাচ্ছে?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.