আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্যাংকিং খাত লণ্ডভণ্ড, মেধাশূন্য ।। জোট সরকারের জঞ্জাল

বাঙ্গালী জাতির গৌরবময় ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় সংস্কৃতির জন্য অপমানজনক কোনকিছু এই ব্লগে লেখা যাবে না।

বিএনপি-জামাত জোট সরকার রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমুহের উচ্চ পদে দলীয় লোকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে সমগ্র আর্থিক সেক্টরে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে গেছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এতে ব্যাংকিং খাত কেবল মেধাশূন্যই হয়ে পড়েনি_ এর 'চেইন অফ কমান্ড'ও পুরোপুরি ভেঙে গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, জোট সরকারের আমলে যোগ্য, মেধাবী ও পেশাদার ব্যাংকারদের অনেককে কালো তালিকাভুক্ত করে পদোন্নতি বন্ধ করে দেওয়া হয়। দলীয় সমর্থক অধসত্দনদের পদোন্নতি দেওয়া হয় দেদারসে।

ফলে পদোন্নতি বঞ্চিত অনেক মেধাবী ব্যাংকার চাকরি ছেড়ে দেন। অফিসার থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পর্যনত্দ ব্যাংকের সকল পদে জোট সরকারের নির্লজ্জ দলীয়করণ এবং উচ্চ পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে এ খাতে হতাশা চরম আকার ধারণ করে। জোট সরকার বহু সিনিয়র কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে অনুগত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে ব্যাংকের এমডি পদে বসায়। তাদের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় পরও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে ব্যাংকের উচ্চ পদগুলো জোট সরকার নিজেদের নিয়ন্ত্রণেই রাখে। বিশেষ করে সোনালী ব্যাংকের এমডি এম তাহ্মিলুর রহমান, বেসিক ব্যাংকের এমডি এ এইচ ইকবাল হোসেন, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এমডি আশরাফ আলী ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ফুসিয়ার রহমানকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

পাশাপাশি জনতা ব্যাংকের এমডি এস এম আমিনুর রহমানকেও জ্যেষ্ঠ সহকমর্ীদের ডিঙিয়ে এমডি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। ফলে ব্যাংকিং খাতে স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত এবং জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে কনিষ্ঠ ও দলীয় কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে এমডি ও ডিএমডি করা আর্থিক খাতে শৃঙ্খলাভঙ্গের সরাসরি প্রমাণ বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। তাদের মতে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও দলীয় পদোন্নতি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কেবল সুষ্ঠু বিকাশকেই ব্যাহতই করে না বরং এর ফলে অভ্যনত্দরীণ প্রশাসনের সব কাজ দলীয় নির্দেশেই পরিচালিত হওয়ায় দুনর্ীতিও ব্যাপকভাবে বিসত্দার লাভ করে। জোট সরকার শেষ সময়ে সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি মোঃ আমানুল্লাহকে পদোন্নতি দিয়ে কৃষি ব্যাংকের এমডি, সোনালী ব্যাংকের জিএম আব্দুল লতিফ ভুঁইয়াকে ডিএমডি এবং কৃষি ব্যাংকের জিএম জয়নাল আবেদীনকে ডিএমডি পদে পদোন্নতি দিয়েছে।

সূত্র জানায়, দলীয় আনুগত্যের পুরষ্কার হিসেবে এসব কর্মকর্তাকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শীর্ষ পদে বসানোর মূল কারণ হচ্ছে বিএনপি নেতা ও দলের পৃষ্ঠপোষক ব্যবসায়ীদের নামে বড়ো অংকের ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা করা, বিদেশে টাকা পাচার, ঋণের সুদ মওকুফ ও ঋণ পুনঃতফসিল করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেওয়া বলে সূত্রটি দাবি করে। জোট সরকার গত পাঁচ বছর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে কনিষ্ঠ কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়েছে, বিদায়কালেও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সুপারিশকে উপেক্ষা করে এমডি পদে 3 জন জ্যেষ্ঠ ডিএমডিকে পদোন্নতি বঞ্চিত করে কনিষ্ঠজনকে পদোন্নতি দেওয়ার ব্যবস্থা করে গেছে। জানা গেছে, ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদোন্নতির জন্য চারজন সিনিয়র ডিএমডির নাম তালিকাভুক্ত করা হয়। তালিকাভুক্তরা হচ্ছেন অগ্রণী ব্যাংকের ডিএমডি ফ র ম হাফিজ উল ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ডিএমডি মোঃ ফজলুল হক ও নুরুল হুদা চৌধুরী এবং সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি মোঃ আমানুল্লাহ। কিন' দলীয় আনুগত্যের কারণে জ্যৈষ্ঠতার তালিকায় চতুর্থ স্থানে থাকা মোঃ আমানুল্লাহকে পদোন্নতির জন্য মনোনীত করা হয়।

মোঃ আমানুল্লাহ ডিএমডি হিসেবে কর্মরত ছিলেন মাত্র 2 বছর। অথচ পদোন্নতি বঞ্চিত বাকি তিনজনই ডিএমডি হিসেবে প্রায় 5 বছর ধরে কর্মরত আছেন। এছাড়া ডিএমডি পদে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে 10 মহাব্যবস্থাপকের (জিএম) তালিকা করা হয়, তালিকার 5 ও 8 নম্বর কর্মকর্তাকে ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার জন্য মনোনয়ন করা হয়েছে। জ্যেষ্ঠতার তালিকা লঙ্ঘন করে যে দুজন জিএমকে ডিএমডি হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার জন্যে মনোনয়ন করা হয়েছে তারা হচ্ছেন কৃষি ব্যাংকের জিএম জয়নাল আবেদীন ও সোনালী ব্যাংকের লন্ডন শাখার জিএম আবদুল লতিফ ভুঁইয়া। সূত্রটি আরো জানায়, জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পদোন্নতির তালিকায় প্রথমে ছিলেন হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের জিএম রায়হানা ইউসুফ, দ্বিতীয় হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের জিএম খন্দকার সাবেরা ইসলাম, তৃতীয় অগ্রণী ব্যাংকের জিএম সৈয়দ আব্দুল হামিদ, চতুর্থ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের জিএম আব্দুল হক, পঞ্চম জনতা ব্যাংকের জিএম জয়নাল আবেদীন, ষষ্ঠ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের জিএম জগলুল করিম, সপ্তম ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশের (আইসিবি) জিএম ফাইকুজ্জামান, অষ্টম সোনালী ব্যাংকের জিএম আবদুল লতিফ ভুঁইয়া, নবম ফখরুল ইসলাম এবং দশম স্থানে ছিলেন জাহাঙ্গীর আলম।

বিগত কয়েক বছরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে যেসব জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছিলেন, তাদের অনেকেই ক্ষোভে-দুঃখে চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ বেসরকারি ব্যাংকে উচ্চ পদে যোগদান করেছেন। */*ভোরের কাগজ*/*

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.