আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্কুল আমার ইস্কুল

স্মৃতিচারণ-১: আজ সোমবার। স্কুলে টিফিন এর পর মফিজ স্যারের (ছদ্ম নাম) বাংলা ২য় পত্র ক্লাস। স্যারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তিনি পড়া পারলেও মারেন, না পারলেও মারেন। স্যারকে কেউ দেখতে পারে না। সবাই মিলে সকাল সকাল প্লান করলাম টিফিনের সময় স্কুল পালিয়ে কর্মচারী ক্লাবের সামনের পুকুরে ঝাপ দেব।

যেই কথা সেই কাজ। সবাই পালালাম। রাশেদ, কামরুল, পায়েল, শাহীন, তাজু, ইমন, কাওসার (ছদ্ম নাম) কেউ বাদ নেই । মজার ব্যাপার হল বাপ্পিও (ছদ্ম নাম) পালিয়েছে। শুধু পালায়নি মোল্লা (মো. ইউসুফ) আর রিমন (সৈয়দ তৌফিক ইমাম) (ছদ্ম নাম)।

বিষয়টি মোটামুটি সবার বাসায়ও জানাজানি হয়েছে। আমার বাসার পরিস্থিতি হল আমি যত খারাপ কাজই করতাম না কেন যদি বাসায় এসে বলতাম “মা আমার সাথে রাশেদ, কামরুল, পায়েল ওরা ছিল, তবে সাত খুন মাফ”। আমার আর কোন দোষ নেই। কেননা ওরা ছিল ক্লাসে প্লেসের ছাত্র। একদিন রাশেদ, আমি ও আরো কয়েকজন ২১ ফেব্রুয়ারীর আগের দিন ফুল চুড়ি করতে গিয়েছিলাম।

আমরা ধরা খাইনি বরং রাশেদ সেচ্ছায় গিয়ে ধরা দিয়েছিল। তারপর কি হল? সে কাহিনী না হয় রাশেদই বলবে। যাই হোক দিনটা কাটলো অনেক ভয় ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। পরের দিন ঠিক একই অবস্থা টিফিনের পর মফিজ স্যারের বাংলা ২য় পত্র ক্লাস। কিন্তু স্যারতো নামের পাশে লাল কালিতে মোটা মোটা বৃত্ত দিয়ে রেখেছেন।

সবার নামের পাশেই বৃত্ত শুধু দুইজন ছাড়া। এ দিকে বাসায় জানাজানি হওয়াতে ক্লাস না করেও উপায় নেই। সকাল সকাল একটা প্লান করলাম যে স্যারকে বলব স্যার ওরা দুইজন আমাদের পালাতে বলে ওরা ক্লাস করেছে আর আমরা পালিয়েছি। এটাই বলব ফাইনাল হল। টিফিনের পর আজ সবাই ক্লাসে।

স্যারের চেহারার দিকে তাকানো যাচ্ছে না। রেগে অগ্নিশর্মা। যেন টর্নেডো বয়ে যাচ্ছে। স্যার এক এক করে রোল ডাকছিলেন আর বলছিলান “দাঁড়াও”। বলে রাখা ভাল প্রতিদিনই টিফিনের পর আরো একবার রোল ডাকা করা হত।

একে একে সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম, শুধু দুইজন ছাড়া। রোল ডাকা শেষে স্যার আমাদের মারতে উঠে আসছেন ঠিক তখনই সবাই সমস্বরে বলে উঠলাম, স্যার ওরা দুইজন আমাদের পালাতে বলে ওরা ক্লাস করেছে আর আমরা পালিয়েছি। স্যার কিছুক্ষণ স্তম্ভিত থেকে ব্যাপারটা মনে মনে উপলব্ধি করলেন। হয়ত ভাবছিলেন সবাই এক দিকে তাহলে ওরা দুজনই এ কান্ড ঘটিয়েছি। যাই হোক স্যার আমাদের আর মারলেন না।

শেষে একতা ভঙ্গের দায়ে জালি বেতের বারি ওদের পিঠে। ওফ... সবাই হাফ ছেড়ে বাচলাম। যাই হোক মফিজ স্যারের মার ভয় পায় না এমন কে আছে। স্মৃতিচারণ-২: স্কুলে টিফিনের সময় টিফিন শেষ করে আশে পাশে হাটতে বের হতাম। যথারীতি একদিন বের হয়েছি।

হঠাৎ সামনে আমাদের শ্রদ্ধেয় হ্যাড মাওলানা স্যার (ছদ্মনাম)। স্যারকে সবাই সালাম দেয় “স্লামালাইকুম স্যার”। ঐ দিন আমি ভাল করে সালাম দিয়েছিলাম “আসসালামু আলাইকুম”। স্যার কোন উত্তর দিলেন না মনে মনে আমাকে বেয়াদব ভাবলেন। হাটা শেষে যখন স্কুলে ফিরলাম দেখি মেইন গেইটের সামনে স্যার দাঁড়ানো।

আমাকে দেখেই কাছে ডাকলেন, আমি এগিয়ে যেতেই স্যার বলে উঠলেন, “এই ব্যাটা সেয়ানামি করিস”। বলা মাত্রই স্যারের হাতে বেত ছিল না বলে দুই হাত ও দুই পা আমার উপর চালালেন। আমি স্যারের পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চাইতে থাকলাম। কিছুক্ষণ পর স্যার শান্ত হলেন আর বললেন, “আর সেয়ানামি কইরবি?”। আমি মাথা নাড়াতেই স্যার বললেন, “এই ব্যাটা যা”।

ওরে বাবা, সবাইকে বোঝানো গেলেও স্যারকে অসম্ভব। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.