অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা
কোনো এক বৃষ্টিভেজা দিনে সিক্ত যুঁথিকে দেখে প্রেমে পড়েছিলো তানভির, সেই মুগ্ধতার কতটুকু যৌনকামনা কতটুকু নিষ্কাম এই হিসাব করতে গিয়ে আমি সচারাচর সিদ্ধান্তে আসি এই প্রেমের সবটুকুই কামজ, এর পরও তানভীরের একনিষ্ঠতাকে দেখে আশ্চর্য হই সময় সময়। মাঝে মাঝে মনে হয় মেরি হ্যাড এ লিটল শীপের মতো তানভীর যুঁথির চারপাশে উপগ্রহের মতো ঘুরতেই থাকবে, কখনই নিজের অনুভব প্রকাশ করবে না এবং জঘন্য এলকা প্রত্যাখ্যানের স্মৃতি নিয়েই তার এই অনুসরন শেষ হবে।
গত 2 বছর ধরে একই দৃশ্য দেখে দেখে আমি হতাশ, অনেক ভাবে চেষ্টা করা হয়েছে তাকে উদ্্বুদ্ধ করার যেনো তানভির মনের ভাবটা প্রকাশ করে ফেলে, এ কাজ করার সাহস অর্জন করতে পারে নি এখনও। ক্লাশের সবাই জানে বিষয়টা, আমার ধারনা যুঁথিও অবগত তবে যেকোনো মেয়েই হয়তো স্তাবকপরিবৃত্ত হয়ে থাকতে ভালোবাসে, এটা তাদের একটা সেন্স ওফ পাওয়ার দেয়, ক্ষমতার মোহ অন্ধ, সব সময় সঠিক কাজটা করার সিদ্ধান্ত বাধাগ্রস্থ করে। সেদিন দিল্লিগামী ট্রেনের জানলা দিয়ে আসা বিকেলের রোদ, সেখানে আমরা সবাই আড্ডা দিচ্ছি, তানভীর উপরের বার্থে মাথায় মাফলার পেচিয়ে ঘুমাচ্ছে, তার পাশে বিশাল এক পেটমোটা ব্যাগ, সেই ব্যাগে 2টা বোতল আত্মগোপন করে আছে, একটা ড্রাই জিন একটা জন ডানিয়েল হুইস্কি, এবং তানভীর সময় সুযোগ পেলেই একবার করে ট্রেনের টয়লেটে গিয়ে একচুমুক দিয়ে আসে, এসে ব্যাগের অন্য কোনা থেকে একটা সিগারেট বের করে, এবং এর পর আবার উপরের বার্থে গিয়ে শুয়ে পড়ে, মোটামুটি এই ধারাবাহিকতাই চলছে গতকাল থেকে।
যুঁথি বসে আছে উলটা পাশে, ট্রেনের জানালার পাশে বসা নিয়ে মৃদু বচসা হয়ে গেলো। আমি এই স্বর্গের মতো জায়গা কোনো মতেই ছাড়বো না, এটাই একটা গতিশীল দানবের ভেতরে থেকেও আমাকে ভুমিসংলগ্ন রেখেছে, আমার ট্রেনের জানলা দিয়ে পিছে চলে সব কটা দৃশ্যই ভালো লাগে। সেখানে আস্তে ধীরে চায়ে চুমুক দিচ্ছি, যুঁথির পা এই পাশে উঠানো, আমার গায়ের সাথেই লেগে আছে, হঠাৎ গুতা লাগলো। যুঁথির দিকে তাকালাম, এখনও কেউ পা দিয়ে গুতা দিলে মেজাজ খারাপ হয়, লাথি বিষয়টার চেতনা এখনও স্পষ্ট ভেতরে, আমরা সামাজিকতার দাসত্ব করে যাই অবিরাম। যুঁথির চোখের ইশারা অনুসরন করে দেখলাম তানভীর বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে, আসলে ওর চোখ বড়, বেশ বড়, উলটো দিকে বাঁখানো পাঁপড়ি, এবং এর সামনে 10 পাওয়ারের চশমা চোখগুলোকে একটু ঘোলাটে করে ফেলে, সেই চোখ দিয়ে একনজরে দেখছে তানভির, যুঁথির অস্তিত্ব এই দৃষ্টিকে অনুসরন করে সাড়া দিচ্ছে, বেচারা বিব্রত বোধ করছে, মাথা ঢাকলো, চাদরটা ভালো মতো জড়িয়ে বসার পরও ঠিক স্বস্তি পাচ্ছিলো না, বেচারাকে আমার স্বর্গ ছেড়ে দিতে হলো।
বেচার আমার পেছনে লুকালো বলা যায়। কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে আসতে করে বললো এর পর যদি এই ভাবে তাকায় আমার দিকে আমি ওর চোখ গেলে দিবো।
যাস্ট ইগনোর- এই কথা ছাড়া আমি কি বলতে পারি তাকে। পাত্তা না দেওয়া গায়ে না মাখানো এ ছাড়া অন্য কোনো সমাধান নেই, ভিন্নপথে চেষ্টা করে লাভ হবে না এটা আমি নিশ্চিত। কথা বলে অনেক কিছুই সম্ভব কিন্তু কথা বলে আমি যুঁথিকে তানভীরের প্রেমে ফেলে দিতে পারবো এমন বিশ্বাস আমার নেই, প্রেমের কথা শুনে বিচলিত হয় যারা তাদের আগ্রহ থাকে 16 আনার উপর 18 আনা, যুঁথি এমন কেউ না, ও একজনকে পছন্দ করে, এমন মেয়েকে অন্য একজনের প্রেমে ফেলানো কঠিন বিষয়।
তবে তরলমতিদের পদস্খলন সম্ভব হতে পারে। এত মানুষ পৃথিবীতে ,এত মানুষ পরকীয়া করছে, একসাথে 2-4 জনের সাথে প্রেম করছে, তারা এই ভাবেই করতে পারে, একনিষ্ঠতার অভাব, কিংবা প্রকৃত প্রেমিক ছবি স্পষ্ট না ওদের ভেতরে।
তানভীরের একনিষ্ঠতার সাথে টার অতিরিক্ত কামবোধ যুক্ত হয়ে ওকে প্রায় অন্ধ করে দিয়েছে, এটা যে সম্ভব না এই সত্যটাও উপলব্ধি করতে পারছে না। আমি নিশ্চিত জানি এই প্রস্তাব যাবে প্রত্যাখ্যানে, সফল হওয়ার সম্ভবনা যতটুকু সেই একই সম্ভবনা আমি পামেলা এন্ডারসনের বিছানায় অন্তরঙ্গ সময় কাটাচ্ছি ওর সাথে।
বিকাল শেষ হয়ে সন্ধ্যা হলো, আবারও একটা রাত আসছে, প্রায় 19 ঘন্টা কেটে গেছে এই বন্ধ কূপে, তবে এখনে গতর নাড়ানো যায় মোটামুটি ভাবে, ট্রেনের সুবিধাই এমন, বিভিন্ন স্টেশন থেকে লোক উঠায় এখন অবশ্য সীটের দেড়গুন মানুষ বগিতে, তাদের দাঁড়িয়ে থাকতে বললেও কোনো ক্ষতি হবে না আইনত, তবে মানবিকতার ধাককা লাগছে, ওদের 2 জন বসে আছে, এবং আরেক জন গুতাগুতি করে ঢুকবে এমন সম্ভবনা দেখে একটু কঠোর হতে হয়।
রাতের খাওয়ার শেষ হওয়ার আসলেই কিছু করার থাকে না, দীর্ঘ ভ্রমনের যন্ত্রনায় কাতর, এমন টানা 30 ঘন্টা ট্রেনে কাটানোর অভিজ্ঞতায় কি হবে জীবনে কে জানে। আর যতক্ষন দিন থাকে ভালোই লাগে কিন্তু ট্রেনের মৃদু আলোতে ঝিমানো ছাড়া অন্য কোনো কাজ ভালো জমে না। লুকু মুর্তজা,এক পাশের উপরের বার্থে আসতে ধীরে বোতল খুলছে, শমিক খাবে না, বাবু তমাল রুবেল স্পর্শ করবে না, তবে উৎসাহী যুঁথি এক চুমুক দিলো, ওর ব্যাগ রাখা সেই বার্থে, বেশ আয়েশ করেই ঘুমিয়ে পড়লো ওরা, ভয়ংকর ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে আরও একটা দীর্ঘ রাত শেষ হলো। তানভির খেয়ে উপরে উঠে শুয়েছে, আমিও কিছু ক্ষন উপরে বসে সিগারেট টানলাম, আর কতক্ষন ভালো লাগে আসলে, চলমান শীতল জেলখানা নিয়ে যাচ্ছে দিল্লি।
পরদিন সকালে পৌঁছালাম দিল্লি, দিল্লির ৗরোনো অংশের এক সস্তা হোটেলে থাকতে হবে।
সেখানে গিয়ে আবার কোলকাতার পুনরাবৃত্তি, তবে দিনের বেলা বলেই বেশ ভালো ছিলো অবস্থা, সবাই একই রকম ভ্রমনক্লান্ত, এর মাঝেও তমাল শক্ত মুখে চাবি বিতরন করছে, একটা জোট তৈরি হয়েছে, আইভি, স্বর্না যুঁথি এক রুমে, পপি সোনিয়া রিম্পি এক রূমে, জ্যোতি, পলি আর আরেকটা মেয়ে একরুমে
কোহিনুর শায়লা রহিমা একরুমে
উর্মি শাম্মি এবং এখন আরও কয়েক জনের নাম মনে পড়ছে না ওরা একটা রুমে।
মামুন পলাশ চন্দন ঝন্টু,দেলোয়ার মুকুল, সিরাজ, এরা সবাই পাশাপাশি রুমের সীট চায়। হোটেলের ফাঁকা কক্ষ গুলো এমন চাহিদা মোতাবেক খালি থাকে না এর উপর সস্তার 3 অবস্থা, কোনোটার জানালায়র কাঁচ নেই, কোনোটার কমোডে সমস্যা, কোনোটার বদনা নেই, কোনোটার বিছানায় সমস্যা, এর ভেতরে যুঁথি উত্তেজিত হয়ে ছুটে আসলো, ও ওর রুমে থাকবে না, ওরা চাবি নিয়ে যাওয়ার সময় সেই রুম থেকে এক জোড়া কে বের হতে দেখেছে, বিছানার অবস্থা সুবিধার না, সমস্ত বেডিং না বদলানো পর্যন্ত ঐ ঘরে কাটাবে না ও।
হোটেলের ম্যানেজমেন্টের লোকজনকে এসব সমস্যার জন্য ব্যাতিব্যাস্ত রেখেই, শমিক দুর্দান্ত একটা ছবি ফ্রেমে গেঁথে ফেললো। তানভির একটা বেঞ্চে বসে ছিলো ওর উলটা পাশে বসে আছে যুঁথি, দুজন দুদিকে তাকিয়ে আছে, যুঁথির চোখে মুখে সদ্য ঘটে যাওয়া ঘটনার আক্রোশ আর তানভিরের উদভ্রান্ত দৃষ্টি একটা আলাদা অর্থ তুলে ধরেছে সেই ছবিতে।
অবশেষে তমালের ধৈর্য্যচুতি হলো, ক্ষিপ্ত তমাল মামুনকে ডেকে বললো এর পরের স্টপেজে আমি আর এই দায়িত্বে নেই, তুমি চাবি বিতরন করবে, আমাকে যেই রুম দিবে আমি সেই রুমের চলে যাবো, শালার কথা শুনতে পারবো না, তোমরা যতটা জার্নি করছো আমিও ততটাই জার্নি করছি, তোমরা ক্লান্ত হইলে আমিও ক্লান্ত এর মধ্যে এই খানে চাবি দিতাছি, এইটাও তোমার পছন্দ না, তো কও আমাকে আমি কি আগে আইসা এইখানের রুম দেইখ্যা তোমাগোরে রুম দিতাছি। আমিও যতটা জানি তোমরাও ততটাই জানো রুম সম্পর্কে ,যদি সমস্যা থাকে গ্রো আপ, কমপ্লেইন কর ময়ানেজমেন্টের কাছে, আমার কাছে এসে বলা কেনো।
মামুনের দাবি তা হবে না, ওদের সাথে সুক্ষ ছলনা করা হচ্ছে, নির্বাচনে বহুল ব্যাবহৃত এ শব্দাবলি শুনে আমার হোাগার বাল পর্যন্ত দাউ দাউ কইরা জ্বলতেছিলো, আমিও বিতরনকর্মি হয়ে গেলাম, তমাল চাবি বিলায়, আমি বিভিন্ন জনের অভিযোগ শুনি, সেগুলোর জন্য কতৃটপক্ষের সাথে যোগাযোগ করি।
এই সব ঝামেলা মিটিয়ে পুরোনো দিল্লির ভাঙাচোড়া রাস্তায় হাঁটছিলাম আমি আর জসিম, উদ্দেশ্য গোসল করে ফ্রেশ হয়ে খাওয়ার আগ পর্যন্ত একটু আড্ডা মারা, সবাই বাথরুমে ঢুকেছে, একেক জন 30 মিনিট করে নিলে আমার সিরিয়াল আসতে আরও 1 ঘন্টা বাকি। এই অবসরে একটু হেঁটে দেখা যাক, হাঁটছি মনের আনন্দে, এই আনন্দে ব্যাঘাত ঘটালো এক পুলিশের গাড়ী, সরাসরি আমাদের পিছনে এসে থামলো।
কেয়া করতে হো, কাণহা সে আয়া হো।
আমি খুব গম্ভির মুখে বললাম ক্যান ইউ স্পিক ইন ইংলিশ, আই ডোন্ট আন্ডারস্ট্যান্ড হিন্দি প্রোপারলি।
বেচারার উত্তর দিলো জসিম, হাম লোক স্টুডেন্ট হে, বাংলাদেশ সে আয়া হে, ঘুরনে কে লিয়ে,
আমাকে বললো আবার গম্ভির মুখে ইংরেজিতে বললাম উই আর ফ্রম বাংলাদেশ, উই আর স্টুডেন্ট ওফ ঢাকা উইনিভার্সিটি, উই আর ইন এ স্ট্যাডি টু্যর ।
তুমাহা পাসপোর্ট কিধার হ্যায়।
আমি বিরক্ত হয়ে বললাম ইট ইজ ইন আওয়ার হোটেল ডু উই সাপোজ টু কিপ আওয়ার পাসপোর্ট উইথ আস অল দি টাইম, ইফ ইউ উইশ ইউ ক্যান কাম উইথ আস টু দি প্লেস হোয়ার উই আর েেস্টয়িং, বেচারা ক্ষমা দিয়ে চলে গেলো, যাওয়ার আগে এক গাদা উপদেশ দিলো, কখনই পাসপোর্ট হাত ছাড়া করতে হয় না এটাও একটা উপদেশ ছিলো তার।
আবার ফিরে এসে দেখলাম নিচে রান্নার আয়োজন চলছে, আসলে হোটেলের নীচে একটা বড়সর কিচেন আছে ওখানেই রান্নার আয়োজন চলছে, মেনুসব্জি, মুরগি সাদা ভাত সালাদ, খারাপ না মোটেও তবে এই রাঁধুনির রান্না সুবিধার না, আধপেটা খেয়ে থাকতে হলো। খাওয়া শেষ করে একটু দিল্লি শহরে ঘুরাঘুরি করা হলো। কর্নাট প্লেস কিংবা এই নামের এক জায়গা আছে সস্তা মার্কেট ওখানেই অধিকাংশ মানুষ যাচ্ছে, জিনিষ কিনবে। আমার পকেটে নাই টাকা, আমি এক প্যাকেট সিগারেট কিনলাম, একটু ফলের রস খেয়ে একটু সাউথের ইডলি দোসা খেয়ে নিলাম, ওটাই আমার কেনা কাটা।
এর মধ্যে দেখলাম এখানে কফির প্রচলন বেশ, 5টা কাপ কফি বেচছে সব জায়গায়, চায়ের দাম 3টাকা।
অবশ্য ভারতে বোধ হয় চা বানায় না রান্না করে, সর্বমশলার সুগন্ধি এবং অতিরিক্ত মিষ্টি এই চায়ের কমন বৈশিষ্ট। সেখানে দুপুর বেলা জটিল মজার এক জিনিষ দেখলাম ভ্রাম্যমান টয়লেট।
একটা গাড়ীর পেছনে 8টা টয়লেট লাগানো, ওটা ঘুরছে, বড় কাজ 2 টাকা ছোটো কাজ 1 টাকা। দিল্লিতে তখন নিয়ম হয়েছে জনসমাগমে সিগারেট নিষিদ্ধ, দিল্লির ধোঁয়া দুষনের পরিমান এত বেশি হালকা কুয়াশ হলে রাস্তা অন্ধকার হয়ে যায়, এখানে নিরিহ সিগারেটের চেয়ে বেশী প্যাসিভ স্মোকিং ক্যান্সারের সম্ভবনা। তবে পরিবেশবাদী দলেরা সিগারেটের বিরুদ্ধে যে রকম অপপ্রচারনা চালাচ্ছে তাতে এর পর পাছায় সিগারেট ঢুকিয়ে টানতে হবে।
প্রকাশ্য কোনো রাস্তায় সিগারেট টানা যাবে না। হোটেলে লেখা আছে ধুমপান নিষেধ সেটা মেনে চলা যায়, তবে সবাইকে মানতে হবে, সিনেমা হলেও কেউ সিগারেট টানে না, ওখানেও নিষিদ্ধ, এসব তো মানুষ মেনেই চলছে, হাসপাতালে সিগারেট নিষিদ্ধ করা দরকার আছে, এমনিতে অবশ্য বাংলাদেশের হসপাতাল খুব একটা পরিচ্ছন্ন না তবে এর সাথে বিড়ি সিগারেট অবশিষ্টাংশ যেভাবে পা-বাহিত হয়ে অপারেশন থিয়েটারের মেঝে পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাতে কিছু নির্দিষ্ট স্থানে নিষিদ্ধ করা ঠিক আছে।
দিল্লি আজব শহর একই সাথে আলট্রা মডার্ন এবং একই সাথে প্রাচীন, দিল্লির কোনো এক দূর্গে যাওয়া হলো, কত জায়গা অপচয় করেছে মানুষ, যুদ্ধ করার জন্য কষ্ট করে নির্মান করেছে অনেক কিছুই, বাহাদুর শাহ জাফরের সাথে সম্পর্কিত কোনো এক জায়গায় দেখলাম সেই বেচারার একটা শায়েরি লেখা, ওটার ইংরেজিও করা আছে সব বান্দা তো আর উর্দু পারে না।
এসব ঐতিহাসিক স্থাপনার প্রতি আমার মুগ্ধতা কম, ঢাকার লালবাগের কেল্লাও আমার কাছে বেশ বিরক্তিকর মনে হয়েছে জীবনে একবারই গিয়েছিলাম তাও প্রেমিকাকে নিয়ে, বেচারার কেল্লা দেখার সাধ ছিলো, তবে ভালো লাগে নাই, আসলে বুঝতে পারছিলাম এখানে কি জন্য মানুষ আসে। গাইড ফাইডের টোয়াককা না করে কেউ একজন ইতিহাসবিদ হয়ে এই কেল্লার ইতিহাস বয়ান করলো।
আমি একটু দুরে দাড়িয়ে সিগারেট টানলাম। তবে দেখার মতো বিষ্য হলো এখানে প্রচুর কবুতর। ছাদের উপর সারি বেধে বসে আছে, বাকবাকুম শব্দটা বোধ হয় সঠিক না, পায়রার আওয়াজের ভেতরের একটা গুমগুম ভাব আছে, তবে বাকবাকুমই সই, এত দিন ধরে লিখছে জনগন ওরা আমার চেয়ে বেশী বুঝে। আবার রাতে ফিরলাম হোটেলে। ঠিক সামনেই একটা স্টেশন, অবশ্য আমাদের ট্রেন এই স্টেশনে থামে নি, রাত 11টায় খবর আসলো অবস্থা গুরুতর, সোনিয়া রিম্পি কাল সকালেই দিল্লি থেকে ঢাকা যাওয়ার ফ্লাইট ধরবে, এই দিকে তমাল ক্ষিপ্ত, ঐ দিকে হলবাসীর সুক্ষ দুর্নিতীর অভিযোগ, পুরা ফাঁপড়ে আছে ভারতভ্রমন।
সমস্যার উৎস জানার প্রচেষ্টায় সফল হলাম, সোনিয়া রিম্পির রূমমেট যে ছিলো সে টয়লেট ফ্ল্যাশ কর নি, বরং সোনিয়াকে কয়েকবার ফ্ল্যাশ করতে হয়েছে, এই মিনিমাম ডিসেন্সির অভাব এবং তার মনে হয়েছে ঢাকাবাসি ছেলেরা তার যোগ্য কদর করছে না, এইসব মিলিয়ে তাদের সিদ্ধান্ত তারা চলে যাবে।
আরও খবর নিয়ে জানা গেলো সেই বেচারা রুমমেটের ডিহাইড্রেশন হইছে, সাথে ডাইরিয়া, বেচারা সমানে বমি করছে, উপর নীচ 2 দিক দিয়েই সমানে যাচ্ছে। তাকে দোষারোপ করার কিছু নেই, অসুস্থ একটা মানুষ, তবে ওদের যুক্তিও ফেলনা না, ওরা এসেছে ভ্রমনে, এখানে আনন্দ করবে ওরা রামকৃষ্ণ মিশনের সেবিকা হয়ে জনসেবার নিমিত্তে এখানে আসে নাই।
শমিক হন্য হয়ে খুঁজছে আমাকে। র সাথে বাইরে বের হলাম।
আমারও কিছু কথা বলা দরকার, আমিও কিছু ছবি তুলবো ওর ক্যামেরায়, অবশ্য আলোচনা সেই খাতে যাওয়ার সময় পেলো না, ড়াতের খাওয়ার সবটুকুই ব্যায় হলো সোনিয়া এবং রিম্পির ঢাকাগমনের অনিবার্যতা রোধ করতে, বিভিন্ন রকম প্রস্তাব, রুম এরেনজমেন্টের ধারনা, কার সাথে কে কমপ্যাটিবল কে কার সাথে মোটেও থাকবে না, এবং এমনও অবস্থা নেই যে সোনিয়া রিম্পিকে আলাদা 2 বেডের রুম দেওয়া যাবে, এটা অনৈতিক, এত কিছুর হিসাব মেলানো সহজ না, আমাদের 47 জন মানুষের ভেতর 45 জন মানুষের কথা চিন্তা করতে হচ্ছে, অবশেষে রাত 5টায় আলোচনায় ক্ষন্ত দিয়ে ঘরে ফিরলাম, সবাই নিঃসাড়, ঘুমাচ্ছে, আমিও চরম ঠান্ডা বিছানায় শুয়ে পড়লাম, পরদিন আগ্রা যাবো। এর আগে দিল্লিতে কেনাকাটা সারতে হবে সবার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।