www.runews.weebly.com
বিশ্বের প্রায় সব ভাষাভাষীর মানষ রুপকথায় শিয়ালকে ধূর্ত বলেই জানে। আমরা বাঙালীরা বলি শিয়াল পন্ডিত। শিয়ালকে নিয়ে গল্পসিনেমাও খুব একটাও কম হয় নি। একলা একলা বাড়ি ফিরতে মাঠের ধারে শিয়ালের তাড়া খেয়েছেন এমন লোকের সংখ্যাও খুব একটা কম নয়। কিন্তু শিয়ালের সঙ্গে মানুষের বন্ধুত্ব! অসম্ভব-এ কথাই হয়ত বলে উঠবেন সবাই।
অনেকে ঠোঁট উল্টে বলে ফেলতে পারেন 'ছ্যাহ'! শিয়ালের সঙ্গে মানুষের আবার বন্ধুত্ব হয় নাকি?
কিন্তু এই অসম্ভব দৃশ্য দেখতে হলে আপনাকে আসতে হবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখানকার প্রথম বিজ্ঞান ভবনে গিয়ে খোঁজ করুন সিরাজুল ইসলামের। তার সাথে দেখা হলে একটু পরেই বদলে যাবে আপনার শিয়াল নিয়ে চিরচেনা সব ধারণা। গত 6 বছর ধরে শিয়ালে সাথে বেশ দোস্তি জমিয়ে দিন কাটাচ্ছেন সিরাজুল ইসলাম। তার বাড়ি লীপুর জেলার বটতলি গ্রামে।
গত 34 বছর ধরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরী করছেন। তবে বিজ্ঞান ভবনের প্রহরী হিসেবে কাজ করেন 8 বছর ধরে। শিয়ালের সাথে সখ্যতা কিভাবে?
'একদিন এই ভবনের গ্যালারীতে অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেখানে একটি শিয়ালকে দেখে খুব মায়া লাগল। আমি আমার রুটির একটু খেতে দিলাম।
এভাবেই বন্ধুত্বের সুত্রপাত। ' পর দিন আবার এসে হাজির হলো। তবে এবার একটা নয় দুটো। আস্তে আস্তে যতইদিন যায় ওদের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে প্রতিদিন 5টি শিয়ালের সাথে দেখা সাাত হত সিরাজুল ইসলামের।
এখন রয়েছে দুটো। একটার নাম 'লেদু'। আরকটির নাম 'পন্ডিত'। ঝোপের ধারে গিয়ে পন্ডিত ডাক দিতেই বের হয়ে এল একটা শিয়াল। তারপর পকেট থেকে কেকের টুকরো দিতে লাগলেন।
কিন্তু শিয়ালটা কাছে আসতে ভয় পাচ্ছে। লোকজন সরিয়ে দিতেই ছুটে এসে খাওয়া শুরু করল। একটু দুরে দাড়িয়ে সিরাজুল জানালেন, রুটি ,ভাত মাংস সবই খায় এরা। আর সেজন্য তিনি প্রতিদিন ক্যাম্পাসের বিভিন্ন খাবার দোকান থেকে মাছের কাটা, মাংসের হাড় এনে এগুলোকে খাওয়ান। প্রথম বিজ্ঞান ভবনের সামনের ক্যাম্পাস কর্ণারের মালিক মোরশেদ জানালেন, সিরাজুল ইসলাম বাড়ি থেকে মাংস রান্না করে এনেও খাইয়েছেন শেয়ালকে।
এই শিয়ালের সঙ্গে বন্ধুত্ব রয়েছে আরও একজনের। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক প্রফেসর অরুন কুমার বসাক। তিনি মাঝে মধ্যেই বিস্কুট, রুটিসহ নানা ধরনের খাবার এনে শিয়ালকে খাওয়ান।
প্রথম বিজ্ঞান ভবনের আরেক দোকানদার জানালেন, 'একদিন সিরাজুল, প্রফেসর বসাক কেউ নেই। শিয়াল দুটো এসে প্রফেসর বসাকের চেম্বারের জানালায় এসে অাঁচড় কাটছে বার বার।
পরে সিরাজ ভাই এসে খাবার দিতেই শান্ত হল ওরা। ' দিনের বেলায় কাশ বন্ধ হয়ে গেলে যখন ভবন ফাঁকা হয়ে যায়, শিয়াল দুটো ওই জানালার পাশে বসে থাকে।
খাওয়া শেষ হতেই আবার ঝোপে ঢুকে গেল 'পন্ডিত'। সিরাজুল জানালেন আগে 5টা শিয়াল ছিল। কিন্তু ক্যাম্পাসের ছাত্র আর পুলিশ 3 টাকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে।
তিনি বললেন 'শিয়াল নিরীহ প্রাণি। ওদেরকে মারবেন না। মানুষের মমতা পেয়েই বেঁচে থাকুক না ওরা ওদের মত। এই কথা কটা একটু লিখবেন। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।