সতর্ক করন " জামাত শিবির , যে কোন রকমের মৌলবাদী, ধর্ম ব্যাবসাই ও বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত সকল জানয়ারের প্রবেশ নিষেধ" পূর্ব পাকিস্তান সরকার
স্বরাষ্ট্র (রাজনৈতিক) অধিদপ্তর
সেকশন ১
পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধের পাক্ষিক গোপন প্রতিবেদন
১- রাজনৈতিক
১. অতি-বামপন্থীদের তৎপরতা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তারা প্রচারণা, দেয়াল-লিখন, নতুন লোকদের দলে ঢোকান, শ্রেণী ঘৃণা ছড়ান ও বিস্ফোরক ব্যবহারের মাধ্যমে তৎপর হয়ে উঠেছে। এরা গণ-আন্দোলন অথবা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সরকারের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যর্থতার জন্য অপেক্ষা করছে।
২. পূর্ব বাংলার কমিউনিস্ট পার্টির বাংলাভাষায় মূদ্রিত পত্রিকা ‘পূর্ব বাংলা’ প্রথমবর্ষ, বিশেষ পঞ্চম সংখ্যা, ডিসেম্বর, ১৯৭০-এর কপি সম্প্রতি পাবনায় গোপনে বিলি হয়েছে। এতে যুবসমাজ, শিক্ষার্থী, কৃষক, শ্রমিক, ও বুদ্ধিজীবীদের প্রতি দলে যোগ দেওয়ার ও একটি স্বাধীন জনগণতান্ত্রিক পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠায় কাজ করার আহ্বান জানান হয়েছে।
৩. সম্প্রতি ঢাকায় ‘পূর্ব বাংলার শ্রমিক কৃষক দলের’ (কমিউনিস্ট) ‘হাতিয়ার’ নামক সাইক্লস্টাইলকৃত পত্রিকার দ্বিতীয়বর্ষ, ৩০-৩৫ সংখ্যা, ১৯৭০-এর কপি গোপনে বিলি করা হয়েছে। এতে বাংলার আপামর জনগণের মুক্তির জন্য সা¤্রাজ্যবাদ, সামন্ততন্ত্র ও পুঁজিবাদবিরোধী শক্তিসমূহের ঐক্যের আহ্বান জানান হয়েছে।
৪. কৃষক-শ্রমিক সমাজবাদী দল ১৮-২-৭১ তারিখে ঢাকার আউটার স্টেডিয়ামে এক জনসভার (৫০০) মাধ্যমে গণবিক্ষোভ দিবস পালন করে। এতে শ্রমিক-স্বার্থ সুরক্ষাকারী সরকার প্রতিষ্ঠার দৃঢ়প্রত্যয় প্রকাশ করা হয়, রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দাবি করা হয়। কুমিল্লায় একইভাবে দিনটি পালন করা হয়।
৫. এনএপি (পিসি) ২০-২-৭১ তারিখে হবিগঞ্জে (৪০০০),২১-২-৭১ তারিখে মৌলভীবাজারে (৩০০০) ও ২২-২-৭১ তারিখে সিলেটে (৫০০০) জনসভা করেছে। এসব জনসভায় ভাষণ দেন মওলানা ভাসানী ও মশিউর রহমান। তারা লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। সিলেটের জনসভায় মশিউর রহমান বলেন, পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের পৃথক হয়ে যাওয়ার মধ্যে সমাধান নিহিত রয়েছে।
৬. এনএপি (পিআর)-এর উদ্যোগে জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে ১৯-২-৭১ তারিখে ঢাকা নগরীর মগবাজারে (১৫০), ২২-২-৭১ তারিখে ঢাকা নগরীর নিউ মার্কেটের কাছে (১৫০) এবং ২৩-২-৭১ তারিখে পাবনা জেলার ঈশ্বরদীতে (১০০০)।
এসব জনসভায় দলের নেতারা বক্তৃতা দেন। এগার-দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে সংবিধান প্রণয়ন, সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালুর দাবি জানান তারা এবং দক্ষিণ ভিয়েতনাম ও লাওসে মার্কিন হস্তক্ষেপের নিন্দা জানান। ঈশ্বরদীর জনসভায় কমিউনিস্ট পার্টির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের দাবি উত্থাপিত হয়।
৭. এনএপি (পিআর) ২৮-২-৭১ তারিখে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে। এতে হুশিয়ার করে বলা হয়, দেশের ভবিষ্যৎ সংবিধান যদি জনগণের ৬ ও ১১-দফা কর্মসূচির সঙ্গে সঙ্গতি রাখতে ব্যর্থ হয় তাহলে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়ে যাবে।
৮. ঢাকায় এএলের টিকেটে নির্বাচিত-এমএনএদের ১৬-২-৭১ তারিখে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এএলের পার্লামেন্টারি পার্র্টি গঠন করা হয়। এতে শেখ মুজিবুর রহমানকে নেতা ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপনেতা এবং এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামানকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমান সদস্যদের উদ্দেশে প্রদত্ত বক্তৃতায় ৬ ও ১১-দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে দেশের সংবিধান প্রণয়নে তার দৃঢ়প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন এবং যদি প্রয়োজন হয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংগ্রামের জন্য তাদের প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
৯. একই দিন (১৬-২-৭১) ঢাকায় অনুষ্ঠিত এএলের প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যদের এক বৈঠকে পাবনার মনসুর আলীকে এএলের প্রাদেশিক পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
১০. কুমিল্লা জেলার হাজীগঞ্জ থানার হোসেনপুর বাজারে ১৯-২-৭১ তারিখে এএলের এক জনসভায় (২৫০০) ভাষণ দেওয়ার সময় নির্বাচিত-এমএনএ মিজানুর রহমান চৌধুরী জনগণকে নিশ্চিত করে বলেছেন, ৩-৩-৭১ তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে ৬ ও ১১-দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে তারা সংবিধান প্রণয়ন করবেন এবং এ সংবিধান গৃহীত না হলে তারা ‘স্বাধীন পূর্ব বাংলা’ ঘোষণা করবেন।
১১. এএলের প্রস্তুত করা খশড়া সংবিধান ২৭-২-৭১ তারিখে দলটির পার্লামেন্টারি পার্টির সামনে পেশ করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখতে এক বৈঠকে গঠিত তিরিশ সদস্যের কমিটির কাছে পাঠান হয়েছে।
১২. ‘ওমর দিবস’ উপলক্ষে ২৬-২-৭১ তারিখে বায়তুল মুকাররমের সামনে খিলাফত-ই-রব্বানী পার্টি (কেআরপি) সমাবেশ করে। এতে কোরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতে সংবিধান প্রণয়নের দাবি জানান হয়। সমাবেশে বক্তারা জেড. এ. ভুট্টোর সমালোচনা করে বলেন, তিনি জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করছেন এবং তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বিঘœ ঘটাচ্ছেন।
২-যুব ও ছাত্র বিষয়ক
১৩. এ বছর প্রদেশজুড়ে ছাত্র, রাজনীতিক, শ্রমিক, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ও সর্বস্তরের জনগণ ব্যাপক উৎসাহের সঙ্গে ‘শহীদ দিবস’ পালন করেছে। এ উপলক্ষে কালো ব্যাজ ধারন করা হয়, কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়, প্রভাত ফেরি, শহীদ মিনারে গমন, মিটিং-সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে অনুষ্ঠান করে।
১৪. সর্বশেষ গণ-আন্দোলনে নিহত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. শামসুজ্জোহার স্মরণে পিবিবিসিইউভুক্ত শিক্ষার্থীরা ১৮-২-৭১ তারিখে ঢাকা নগরীর মালীবাগে সভা করে। সেখানে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতার জন্য হাতে অস্ত্র তুলে নিতে শ্রমিক ও কৃষকদের উস্কানি দিয়ে স্লোগান দেওয়া হয়।
১৫. ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলনে নিহত আবদুর রেজ্জাকের স্মরণে ১৯-২-৭১ তারিখে কুষ্টিয়া শহরে স্থানীয় ইপিএসএল আয়োজিত এক জনসভায় (১০০০) এ. এস. এম. আবদুর রব (ইপিএসএল/ভিপি-ডিইউসিএসইউ) তার বক্তৃতায় বলেছেন, উর্দুভাষী লোকজনকে পূর্ব পাকিস্তানে বাঙালি হিসেবেই থাকতে হবে যদি তারা থাকতে চায়। ইপিএসএলের আরেক নেতা মমতাজ বেগম তার বক্তৃতায় ঘোষণা করেন, তারা পূর্ব পাকিস্তানের পণ্য পাশ্চিম পাকিস্তানে যেতে দেবেন না।
১৬. ঢাকায় ২২-২-৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত পিবিসিইউয়ের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে (১০/১২) সন্দেহ প্রকাশ করা হয়, যে পূর্ব পাকিস্তানে আমেরিকা ঘাঁটি স্থাপনের চেষ্টা করছে এবং দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হতে পারে। বৈঠকে উপস্থিত সদস্যদের যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকতে বলা হয়।
১৭. ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল থানার কালীবাজারে ২১-২-৭১ তারিখে পিবিবিসিইউয়ের এক জনসভায় (১০০) শ্রেণীশত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে পল্লী অঞ্চলের মানুষদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তৃতা দেওয়া হয়।
১৮. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ২৪-২-৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত ইপিএসইউ(পিআর)-এর এক কর্মীসভা থেকে দাবি করা হয়েছে, যদি ৩-৩-৭১ তারিখে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির অধিবেশন অনুষ্ঠিত না হয়, তবে ‘স্বাধীন বাংলা’ সরকার গঠনের জন্য গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
৩-সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি
১৯. প্রদেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রয়েছে।
৪-শ্রমিক পরিস্থিতি
২০. ২১-২-৭১ তারিখে সভা ও মিছিলের মাধ্যমে শহীদ দিবস পালন করেছে টঙ্গী, আদমজী নগর, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ ও তেজগাঁওয়ের (ঢাকা) শিল্প-শ্রমিকরা। এ উপলক্ষে টঙ্গীতে আয়োজিত এক জনসভায় (৫০০০) পিবিএসএফ সার্বভৌম গণতান্ত্রিক স্বাধীন পূর্ব বাংলা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরুর আহ্বান জানিয়েছে শ্রমিকদের।
২১. কথিত নয়-দফা দাবি পূরণ না করায় পূর্ব পাকিস্তান ডাক বিভাগের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীরা ১৮-২-৭১ তারিখ সকাল থেকে ধর্মঘট আরম্ভ করেছিল।
কর্তৃপক্ষ তাদের কয়েকটি দাবি মেনে নেওয়ায় ২৫-২-৭১ তারিখে তারা আবার দায়িত্ব পালন শুরু করেছে।
২২. জাতীয় পে কমিশন প্রতিবেদন প্রকাশ না-করা এবং অন্যান্য দাবি পূরণ না-করার অভিযোগে পূর্ব-ঘোষিত সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ও খুলনার টিঅ্যান্ডটি দপ্তরের টেলিফোন অপারেটররা ২৫-২-৭১ ও ২৬-২-৭১ তারিখে কালো ব্যাজ ধারণ করে। এছাড়াও তারা ২-৩-৭১ তারিখে প্রতীকী ধর্মঘট ও ১৫-৩-৭১ তারিখ থেকে পুরোদমে ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
২৩. ঘূর্ণিঝড়ের কারণে আগাম বেতনের দাবিতে ৬-১-৭১ তারিখ থেকে ধর্মঘটরত চট্টগ্রামের পাহাড়তলি রেলওয়ে ওয়ার্কশপের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ইপিআরইএল ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের আহ্বানে ২৩-২-৭১ তারিখ সন্ধ্যা থেকে তাদের কাজ আবার শুরু করেছে। ১১-দফা দাবির বাস্তবায়ন না করার প্রতিবাদে ১৮-১-৭১ তারিখ থেকে ধর্মঘটে যাওয়া সৈয়দপুর (রংপুর) রেলওয়ে ওয়ার্কশপের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মীরা তাদের ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছে।
৫-আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি
২৪. আগের বছরের একই পক্ষকালে সংঘটিত ৭টির বিপরীতে ৯৪টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে।
২৫. বিভাগওয়ারি ডাকাতির পরিসংখ্যান-
বিভাগ চলমান পাক্ষিক সমীক্ষণ গত বছরের একই সময়ের হিসাব
ঢাকা ৩১ ৩
চট্টগ্রাম ১০ ২
খুলনা ২০ ১
রাজশাহী ৩৩ ১
মোট ৯৪ ৭
৬-অর্থনীতি, চাষাবাদ ও জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি
২৬. জনগণের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখনও অসন্তোষজনক রয়েছে। কর্মসংস্থান পরিস্থিতিও অত্যন্ত খারাপ। অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মূল্যে ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে।
২৭. এ পক্ষকালে ধান-চালের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে।
প্রদেশে মোটা চালের গড় মূল্য প্রতি মণ ৩৫.৫০ টাকা, যা আগের পক্ষকালে ছিল ৩৪.৯৯ টাকা। মোটা চালের সর্বোচ্চ দাম ছিল খুলনার সাতক্ষীরায় প্রতি মণ ৪০.০০ টাকা। অন্যদিকে একই চালের সর্বনি¤œ দাম ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানে প্রতি মণ ৩০.০০ টাকা।
২৮. চিনি, লবণ, চা ও মশলার সরবরাহ সন্তোষজনক রয়েছে। তবে মশলার দাম সচরাচরের মত চড়া ছিল।
২৯. সাধারণভাবে জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতি সন্তোষজনক ছিল। দু’এক স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কলেরার খবর জানা গেছে।
৭-বিবিধ
৩০. পটকা-(১) ১৭-২-৭১ তারিখে রংপুর জেলার সৈয়দপুর শহরে পি ই রেলওয়ে হসপিটালের মেডিক্যাল অফিসার ডা. জি.এম. মুহিউদ্দীনের বাসভবনের দোতলা লক্ষ্য করে একটা পটকা নিক্ষেপ করা হয়। সেটা বাথরুমের জানালায় লেগে বিস্ফোরিত হলে কাঁচ ও নেটের ক্ষতি হয়। বাসভবনের কারও এতে ক্ষতি হয়নি।
বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
(২) ১৮-২-৭১ তারিখ বেলা প্রায় ১১টায় হাতে কাগজের ব্যাগ নিয়ে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজন যুবক ঢাকা নগরীর আবদুল গনি সড়কে অবস্থিত ব্যুরো অফ ন্যাশনাল রিকনস্ট্রাকশন (বিএনআর)-এর কার্যালয়ে প্রবেশ করে। তারা সেখানে ৫টি হাত বোমা ও ২টি মলোতভ ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ওই কার্যালয়ের একজন পিওন ও দুই হামলাকারী আহত এবং কার্যালয়ের কিছু জিনিসপত্রের ক্ষয়ক্ষতি হয়। যুবকরা ঘটনার পরপরই চম্পট দেয়।
বিস্ফোরণে সৃষ্ট আগুন দ্রুত নিভিয়ে ফেলে দমকলবাহিনী।
(৩) ২৫-২-৭১ তারিখে ঢাকার সূত্রাপুর থানার ১১৪ বিসিসি রোডে আদম আলী নামে এক হোটেল বয়ের হাত পটকার বিস্ফোরণে জখম হয়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি এবং এ ঘটনায় একটি মামলা করা হয়েছে।
(৪) ২৫-২-৭১ তারিখ রাতে ঢাকার নওয়াবপুর রোডে নিগার হোটেলের কাছে আরেকটি পটকা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে কারও আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
(৫) ২৫-২-৭১ তারিখ রাতে আরও একটি পটকা নিক্ষেপ ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে খুলনা জেলার দৌলতপুর থানার মহেশ্বরপাশায় পাট ব্যবসায়ী ওয়াজেদ আলী হাওলদারের বাড়িতে। এতে কোনও ক্ষয়ক্ষতি না-হলেও ওয়াজেদ আলী হাওলাদারের সাবান কারখানা হিসেবে ব্যবহৃত একটি খড়ের ঘরে আগুন ধরে যায়।
৩১. অল-পাকিস্তান উলেমা কনফারেন্স (১০০) পূর্ব পাকিস্তান শাখার সম্মেলন ঢাকার পাটুয়াটুলি জামে মসজিদে ১৭-২-৭১ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে অসমতা দূর করা, ইসলামী সংবিধান প্রণয়ন করা, সংখ্যালঘুদের জন্য পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদির দাবি জানান হয়।
৩২. ঢাকা জেলার সিরাজদীখান থানার রাজানগরে ‘কৃষ্ণ লীলা’ গীতিনাট্য অনুষ্ঠান নিয়ে স্থানীয় জনতা ও রাজানগর ফাঁড়ির পুলিশ কনস্টেবলদের মধ্যে ১৯-২-৭১ তারিখ রাত প্রায় ১০টায় সংঘর্ষ বাধে।
পুলিশ পাঁচ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করলে এক গ্রামবাসী নিহত হয়। একজন কনস্টেবলের রাইফেল কেড়ে নিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে গ্রামবাসী এবং আরেকটি রাইফেল খোয়া যায়। পরে রাইফেল দুটি উদ্ধার করা হয়।
এম. এম. হক
সচিব
পূর্ব পাকিস্তান সরকার
স্বরাষ্ট্র দপ্তর
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।