যখন বিকাল হতে থাকে, হতে হতে সূর্যটা ঢলে পড়ে, পড়তে থাকে
এ্যামেজিং ওয়েবসাইট এর তথ্য নিয়ে বিবিসি একটা অনুষ্ঠান করে। 2002 সালের কথা। তখন আমি সেটার নিয়মিত দর্শক ছিলাম। একদিন ব্লগ সন্বন্ধে সেখানে একটা ফিচার দেখালো। আমি রীতিমত অভিভূত।
কারণ তার কিছুদিন আগে আমি ও শরৎ এমন একটা কনসেপ্ট নিয়ে ভাবতে শুরু করি। যেটা হবে একমাত্র বাংলায়। বিভিন্ন ওয়েব ডেভলপারদের সাথে আলাপের পরে অবশ্য উদ্যোগটাতে ভাটা পরে। কনসেপ্ট লেভেলেই অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়। তবে মনে হতে থাকে এর প্রয়োজনীয়তা ক্রমশ আরো ব্যাপক মাত্রায় ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা অনুভব করতে থাকবেন।
এবং আমাদের চেয়ে যোগ্য কোন উদ্যোক্তা এই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য এগিয়ে আসবেন। 2005 এর ডিসেম্বর। ইংরেজী ব্লগ ইতোমধ্যে পাড়ি দিয়েছে সূচনাকাল। সামহোয়ারইন তাদের যাত্রা শুরু করেছে। আমি ফেব্রুয়ারীর সম্ভবত 20 অথবা 21 তারিখ টিভির আইটি বিষয়ক একটা ম্যাগাজিনে এ সন্বন্ধে জানতে পারি।
22 তারিখই একটা আইডি খুলে ব্লগানো শুরু।
ব্লগর ব্লগরে আমার এখন অরুচি নেই। বিষয় বৈচিত্রে নতুনত্ব খুজতে চেষ্টা করছি নিরন্তর। তবে ব্লগ কেন্দ্রিক আবেগ-অনুভূতি তেমন জোরালো হয়নি। নিজস্ব জীবনের নানা অনুভূতির খেলা লিখেই আমি তৃপ্ত।
এখানে সংগঠিত বিভিন্ন মান অভিমান, ঝগড়া, গালি আমার মধ্যে কোন ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে নি। আসলে তেমন আলোড়িত করে না। একমাত্র প্রাপ্তি ছাড়া। প্রাপ্তির জন্য আমার অশ্রু নির্গত হয়েছে। নিজের অশ্রুকে ভয়ংকর মূল্যবান মনে করতাম - কারণ কারো জন্য তা ঝরতে দেখি না।
এখন অসংখ্য প্রাপ্তি প্রতিনিয়ত দেখছি চোখের সামনে - অস্বীকার করতে পারি না এদের চেয়ে ভাল আছি, দায়িত্ব টের পাই সেকারণে। দারিদ্রে, কস্টে, দুঃখে, রোগে, শোকে জর্জরিত মানুষকে বলতে ইচ্ছে করে-
তোমরা আমায় দোষী করো,
এসবকিছুর জন্যে একমাত্র এই আমি দায়ী,
অন্য কেউ নয়, অন্য কারু
কোনোই ভূমিকা নেই
তোমরা আমায় দোষী করো;
আসামী হাজির
(আমি অপরাধী, রফিক আজাদ)
চুয়াত্তুরের দূর্ভিক্ষের সময় যখন আমার জন্ম হয় তখন দুধের চেয়ে নুনের দাম বেশী ছিল। অবশ্য বাবার ফার্স্ট ক্লাস সরকারী মাইনে অভাব দেখতে দেয় নি । তবে অভাব দেখেছি এর পরে। আমি ছিলাম বাবার প্রথম সন্তান।
এর পরে আরো ভাই বোন। প্রতিদিন বেড়েছে প্রয়োজন। নুন আনতে পানতা ফুরানো সংলাপ দেখেছি অনার্স পরীক্ষা পর্যন্ত। প্রতিদিন হাত গুনে পাঁচ টাকা পকেটমানি তিনটা গোল্ডলীফ পারমিট করতো যার মধ্যে একটাকা থাকতো মন্টুর দোকানে বাকী। একবার এক সপ্তাহে সেখানে পাঁচটাকা বাকী জমাতে সে রাস্তা এভয়েড করেছিলাম লজ্জায় আরো সাতদিন।
পাঁচটা টাকার জন্য তার মুখোমুখি হতে না পারার লজ্জা আমার সারা জীবনের সংগী হয়ে থাকবে। অনার্স থেকে ভলান্টিয়ার ওয়ার্ক করি হাঙ্গার প্রজেক্টের সাথে - সেই সাথে শিক্ষকতা, কোচিং। নিজের খরচ নিজের সংস্থান হতে থাকে।
2001 সালের প্রথম দিনই ঢাকাতে আমার পদার্পন। ভাল একটা চাকুরী চাই।
মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছি। রেজাল্ট বের হতে অনেক অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে। এপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে চাকুরী জোগাতে হবে। গাবতলী বাস স্টান্ড থেকে গন্তব্য কাজিনের বাসা নিউডিওএইচএসে। সাত সকালের ঢাকার রাস্তাকে দেখে আমার মৃত লাশের আকাবাকা শরীর মনে হয়েছিল।
কিন্তু আমি জানি এ রাস্তাকে ভালবাসতে হবে - যদি ঢাকা্ই ছবির মত চোখের সামনে ঝোলে নো-ভ্যাকান্সী সাইনবোর্ড, তবুও। হতোদ্যম হওয়া চলবে না। তাই শুরু থেকেই হাটতে শুরু করলাম। প্রথম দিন গাবতলী থেকে মহাখালী পর্যন্ত হেটে গিয়েছিলাম। এরপর দীর্ঘ পাঁচ মাস আমি দেখেছি জীবন এক ভি্ন্ন চোখে।
অভিজ্ঞতা হয়েছে কত শত ভয়ংকর, করুন ঘটনার। মহাখালী থেকে সাতমসজিদ রোড ঘুরে শাহবাগ তারপর আবার গ্রীণ রোড ধরে মহাখালী পায়ে হেটে যাত্রা ছিল আমার প্রতিদিনের রুটিন। উত্তরা গিয়েছি কয়েকবার হেটে। আমি বলতে পারি জোর গলায় সমস্ত ঢাকা শহর আমার হাটা আছে। সব বস্তি আমার চেনা।
কমলাপুর থেকে টংগী গিয়েছি রেললাইনের স্লিপারে হেটে হেটে কয়েকবার, শখে নয় - প্রয়োজনে; অর্থ কস্টে। পাঁচ বছরে আমি এখন স্থির - নিজের জন্য হেটে ভাগ্যটাকে সামলে নিতে পেরেছি। এবার আপনাদের সাথে অসহায় মানুষের জন্য আবার হাটতে চাই। এ ওয়াক ফর ইমপ্রুভিং লাইফ অফ পোভার্টি স্ট্রাইকেন পিপল!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।