আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রাকৃতিক সম্পদ ও পেটেন্ট



আগ্রাসনের যুগে দালিলিক প্রমাণের অভাবে অনেক সম্পদ আমাদের হাতছাড়া হইয়া যাওয়ার আশাঙ্কা দেখা দিয়াছে। আগ্রাসন এখন আর কেবল সামরিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, আগ্রাসন এখন মেধা সম্পদ, সংস্কৃতি এবং মিডিয়ায় ব্যাপ্তি লাভ করিয়াছে। এমনকি ফল-ফসল আর গাছগাছড়াও আগ্রাসন হইতে মুক্ত নয়। গত 19 জুলাই একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বিশিষ্ট ফলবিজ্ঞানী ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম পস্নাজম সেন্টারের প্রধান গবেষক প্রফেসর ড. এমএ রহিমের উদ্ধৃতি দিয়া বলা হয়, ট্রাইফোলিয়েট অরেঞ্জ নামের এক ধরনের কমলার এক সময় বাংলাদেশে প্রচুর চাষ হইত। সাইট্রাস ডিজিজ প্রতিরোধী হওয়ার কারণে এই ধরনের প্রতিটি কমলার কলামে রুট স্টক হিসাবে ব্যবহার করা হইত।

কমলার এই গাছ সংগ্রহ করিয়া একটি শিল্পোন্নতদেশ দীর্ঘ 15 বছর গবেষণা চালায় এবং ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্ট নির্ণয় করিয়া ইহার উপর পেটেন্ট করাইয়া নেয়। একইভাবে ঐ দেশটি নিমের উপরও পেটেন্ট করে। ড. রহিম আশংকা প্রকাশ করেন, কমলা ও নিমের মতো এই দেশের অতি পরিচিত ঔষধি গুণসম্পন্ন থানকুনি পাতাও হাতছাড়া হইয়া যাইতে পারে। বাংলাদেশী থানকুনি গত পাঁচ বছর ধরিয়া ফ্রান্সে জন্মানো হইতেছে। অতিদ্রূত থানকুনির ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্ট নির্ণয় করিয়া নথিভুক্ত না করিলে যেকোন সময় ফ্রান্সের মালিকানা দাবি করিয়া তাহাদের নামে পেটেন্ট করিয়া ফেলিতে পারে।

সংশিস্নষ্ট পত্রিকায় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কৃষিবিজ্ঞানী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইপিএম ল্যাবের প্রধান গবেষক ও সিড প্যাথলজি সেন্টারের পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ বাহাদুর মিঞার উদ্ধৃতি দিয়া বলা হয়, বাসমতি ধান ভারত-পাকিসত্দানে দীর্ঘদিন যাবৎ চাষ হইলেও ইহার উন্নত বৈশিষ্ট্যের কারণে এই ধানের উপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে এবং প্রযুক্তিগত দিক দিয়া আগাইয়া থাকায় তাহারা এই ধানের মলিকু্যলার বৈশিষ্ট্য (ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্ট) নির্ণয় করিয়া উহার মালিকানা দাবি করিয়াছে। সম্প্রতি ভারত এই ধানের মালিকানা দাবি করিয়া আমেরিকার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করিয়াছে। একই প্রক্রিয়ায় দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মানো ঔষধি গুণসম্পন্ন এক ধরনের হলুদের উপর আমেরিকা পেটেন্ট করিয়াছে। ড. বাহাদুর জানান, বর্তমানে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় বাংলাদেশী পাটের চাষ করা হইতেছে। ইহা হইতে সঙ্গত কারণেই আশঙ্কা হইতেছে, আমাদের সোনালী আঁশ পাটের মালিকানাও একদিন বাংলাদেশের হাতছাড়া হইয়া যাইতে পারে।

একই পত্রিকায় বলা হয়, বায়োটেক শস্যভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানী আইসার (ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস ফর দ্য অ্যাকুইডিশন অব অ্যাগ্রিবায়োটেক অ্যাপিস্নকেশন) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের জাতীয় সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রফেসর ড. কেএম নাসির উদ্দিন জানান, দেশের সব ধরনের শস্য, ফলদ, বনজ ও ঔষধি বৃক্ষের মরকোলজিক্যাল (বাহ্যিক) ও মলিকু্যলার বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করিয়া তাহা নথিভুক্ত করা বর্তমানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রধান এজেন্ডা হওয়া উচিত। বাংলাদেশ শুধু অর্থসম্পদের দিক দিয়াই দরিদ্র নহে, তথ্যপ্রযুুক্তির ক্ষেত্রেও অনেক পশ্চাদপদ। কাজেই ভারতের মতো কোন শক্তিধর কোন দেশের বিরুদ্ধে আদালতে লড়াই করাও বাংলাদেশের পক্ষে সহজ কাজ নহে। বাংলাদেশে প্রায় 5 হাজার প্রজাতির উদ্ভিদ রহিয়াছে। পেটেন্ট আগ্রাসনের হাত হইতে বাংলাদেশী শস্য ও বৃক্ষসম্পদকে রক্ষা করিতে হইলে কৃষি মন্ত্রণালয়কে অতি দ্রত পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে।

'পস্ন্যান্ট ভ্যারাইটি অ্যান্ড ফারমার প্রটেকশন অ্যাক্ট'-এর খসড়া প্রণয়ন কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স অ্যান্ড পস্ন্যান্ট বিস্নডিং বিভাগের প্রফেসর ড. লুৎফর রহমান বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে অতি দ্রত বাংলাদেশী উদ্ভিদসমূহের ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্ট নির্ণয় করিয়া নথিভুক্ত করিলে এইসব উদ্ভিদের মালিকানা হাতছাড়া হওয়ার আশংকা দূর হইবে। তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানসমূহে ডিএনএ ফিঙ্গার প্রিন্ট নির্ণয়ের ব্যবস্থা রহিয়াছে। তিনি সবার আগে সুগন্ধি ধান, পাট, গম, আলু, ভুট্টা, সরিষা, আম, ইক্ষু, বহেড়া, হরিতকি, লুকলুকি ও মেওয়া ফলের বৈশিষ্ট্য নির্ণয় করিয়া তাহা নথিভুক্ত করার উপর জোর দেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ আমিরুল ইসলামও অনুরূপ অভিমত প্রকাশ করিয়া পেটেন্ট আগ্রাসনের হাত হইতে দেশী শস্য ও বৃক্ষসম্পদ রক্ষায় বিশেষ বাজেট বরাদ্দের মাধ্যমে ত্বরিৎ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারকে পরামর্শ দেন। ঃঃ দৈনিক ইত্তেফাক ঃ [লিংক=যঃঃঢ়://িি.িরঃঃবভধয়.পড়স/ধষষ.ঢ়যঢ়?রফ=ুঃৎুী্ংুং=1]23.07.2006[/লিংক] ঃঃ


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.