আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিডিয়া, উন্নয়ন এবং দারিদ্র বিমোচন



এবারের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে'র আলোচ্য বিষয় হলো: মিডিয়া স্বাধীনতা ও দারিদ্র বিমোচনের মধ্যে সম্পর্ক। গত কয়েক দশক ধরে মিডিয়ার স্বাধীনতা ও দারিদ্র বিমোচনের মধ্যেকার অবশ্যাম্ভাবি জোরালো সম্পর্ক বিষয়ে আনর্্তজাতিক সচেতনা বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যবেণে দেখা গেছে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা, এনজিও এবং সরকার কর্তৃক স্থানীয় পর্যায়ে গৃহিত খুবই উচ্চ-সমর্থনীয় বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনার পরিণতি হচ্ছে নগন্য এবং অ-টেকসই। এর অন্যতম কারণ স্থানীয় পর্যায়ের জনগোষ্ঠীকে বুঝতে না পারা এবং তাদের অ-মতায়ন। এই প্রেেিত দারিদ্র বিমোচন, অবাধ ও স্বাধীন মিডিয়ার মধ্যে সম্পর্ক একটি শক্তিশালী অগ্রাধিকারভিত্তিক বিবেচনা, কারণ: প্রথমতঃ অবাধ ও স্বাধীন মিডিয়া সুশাসন সহজতর করে; এছাড়া তথ্যসমৃদ্ধ, সচেতন ও অংশগ্রহণমূলক জনসমষ্টি এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি ও উন্নয়ন ঘটায়।

দ্বিতীয়তঃ অবাধ ও স্বাধীন মিডিয়া জনগনের মৌলিক অধিকার, নাগরিক সমাজের সুদৃঢ়তা, রাজনৈতিক সচ্ছতা এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়ন চিহ্নিত ও পোক্ত করে। এগুলো সুস্পষ্টভাবে দারিদ্র বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ। সত্তরের দশক থেকেই একটি সমালোচনা উচ্চকিত, মিডিয়া গরীব মানুষের অবস্থা ও ইসু্য নিয়ে তেমন তৎপর নয়। এই বিতর্কে না জড়িয়ে বলা যায়, মিডিয়াই পারে জনগনের সচেতনতা ও মতামত তৈরিতে বড় ভূমিকা রাখতে। টেকসই উন্নয়নের জন্য সহিংস বৈরিতা বিশাল হুমকি।

দারিদ্রতা ও সহিংসতা ভয়ানক শৃঙ্খলে সহাবস্থান করে, সহিংসতা দারিদ্রতা বাড়ায়, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বন্ধন ধ্বংশ করে এবং জীবনহানি ঘটায়। মিডিয়া হল এই সহিংসতা নিবৃত করার আবশ্যকীয় কৌশল। আমাদের দেশে জেএমবি ও অন্যান্য সন্ত্রাসের প্রেেিত আমাদের মিডিয়ার শুভ উদ্যেগ এইেেত্র উল্লেখযোগ্য। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অম্যর্ত সেনের বিখ্যাত রচনা 'ডেভেলপমেন্ট এজ ফ্রিডম'-এ, তিনি ব্যক্ত করেন যে দারিদ্রতা আয়ের সাথে সম্পর্কিত কোন বিষয় নয়, তারচে বড় বিষয় হল সামর্থ স্তরের বঞ্চনা; অর্থবহ জীবনের জন্য দরকারি ক্রয়মতার অসাধ্যতা। এ সংজ্ঞানুসারে মানুষকে গরীব বানানোর অনেকগুলো কারণের একটি বিষয় হল স্বল্পআয়।

অমর্ত্য সেনের শব্দগুচ্ছে বলা যায়, দারিদ্রতার চারিত্র হল,স্বাভাবিক (ওহঃৎরহংরপ)-এর বিপরীতে চাকচিক্য (ওহংঃৎঁসবহঃধষ)। সুতরাং উন্নয়ন প্রয়াসে স্থানীয় জনগনের মতায়নের পথে প্রত্য কিংবা পরো মতা হরণকারি বিষয়গুলো জ্ঞাত হওয়া জরুরি। যদি স্থানীয় জনগনকে উন্নয়ন সহযোগি ও মতপ্রকাশের সুযোগ দেয়া হয় তবে উন্নয়নপগুলো টেকসই উন্নয়নের সঠিক সমাধান খুঁজে পাবে। বুঝতে হবে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি কিংবা সংস্থার সরাসরি অংশগ্রহণ থেকে স্থানীয় জনগণের মতায়ন অধিক কার্যকর। বিভিন্ন উদ্যেগ, রাজনীতি ও পরিস্থিতিতে সুপ্রচুর তথ্য প্রবাহে জনগন ঘটনা ও চলমান জীবন বিষয়ে অংশীদারিত্ব বোধ করে।

উন্নয়নে অংশগ্রহণ ও অনর্্তভূক্তি জনগনকে অধিকার-তৎপর থাকতে অনুপ্রেরণা যোগায়। যখন জনগন অনুভব করবে যে সার্বজনীন মানব অধিকার ঘোষনা'র অন্যতম দুটো দফা _ তথ্য পাওয়ার অধিকার ও মতপ্রকাশের অধিকার তাদের েেত্র বাস্তবায়িত হয়েছে তখন তারা আরো মতায়িত হবার তাড়না বোধ করবে এবং এইসব অধিকার তাদের সম্মানিত করবে। একজন মতায়িত ব্যাক্তি দরকারি সম্পদ ও সুযোগ অর্জনে সামর্থ রাখে। অতএব বলতে পারি ব্যক্তিকে নিজের মতো প্রকাশ করার মধ্যেই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। মুক্ত মিডিয়ায় সংরতি মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি রাজনৈতিক অধিকার।

আর দারিদ্র বিমোচনের অধিকার হল একটি সামাজিক অধিকার। মানবাধিকার কর্মীদের মধ্যে এই দু'ধরনের অধিকার নিয়ে বিতর্ক চলছে বহুদিন ধরে। উন্নতদেশগুলো প্রাধান্য দেয় প্রথমটি, যুক্তি দেখায়, নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সংরণের মাধ্যমে সামাজিক, অর্থনৈতিক, এবং সাংস্কৃতিক অধিকার সংরণ ও চিহ্নিতকরণ জন-মতায়ন ঘটায়। উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে মৌলিক প্রয়োজনের নিয়ন্তাস্বরূপ সামাজিক অধিকারই প্রাধান্য পায়, তাদের যুক্তি মতামত কিংবা চলাফেরার স্বাধীনতা একজন ুধার্ত মানুষের কোন কাজে লাগে না। মুক্ত মিডিয়া এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের মধ্যে সংযোগ সম্পর্ক তৈরি করে, এই দুই প্রতিযোগি অধিকারের কাঠামোয় নুতন হৃদ্যতা গড়া দরকার।

অধিকন্তু আমাদের উপলব্ধির ব্যপ্তি বাড়াতে হবে: কিভাবে কোন নির্দিষ্ট অধিকার শক্তিশালী করে অন্যকে শ্রীসম্পন্ন করা যায়, এবং কিভাবে অধিকার কাঠামোর মধ্যেকার রাকবচসমূহ আন্তসম্পর্কিত। মিডিয়া-ব্যাক্তিত্ব, উন্নয়ন সংস্থা, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিকরা সমন্বিত হয়ে, বলিষ্ঠ আলাপচারির মাধ্যমে উদ্ভাবন করতে হবে মত প্রকাশ ও তথ্য প্রবাহ কিভাবে দারিদ্র বিমোচন ভূমিকা রাখবে; তেমনি উন্নয়ন সহযোগি ও মিডিয়া সংস্থার দায়িত্ব হবে আন্তঃপ্রচেষ্টায় জাতিসংঘ গৃহিত 'সহস্রাব্দ ল্য' পূরনের কৌশলপত্র তৈরি করা। এই প্রচেষ্টা বাস্তবায়িত হলেই এবারের ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে'র উদ্দেশ্য সফল হবে। ফকরুল চৌধুরী লেখাটি দৈনিক যুগান্তরে ওয়ালর্ড প্রেস ডে উপলক্ষে ছাপা হয়

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.