যা বুঝি, যা দেখি, যা শুনি এবং যা বলতে চাই
মহাপ্রলয় কবে হবে? (একটি আরবী উপকথা) (জিব্রাইল কেন ব্লগিং করছে না এর 2য় পর্ব)
আগের লেখায় কথা দিয়েছিলাম জিব্রাইল সম্পর্কে আরবদেশে চালু গল্পটা আপনাদের শোনাবো। আরবী ভাষায় আমার দক্ষতা সংস্কৃত ভাষায় আমার দক্ষতার সমান। সুতরাং সৈয়দ সাহেবের বয়ানকেই প্রামাণ্য মানছি। এ সৈয়দ, সৈয়দ হক নয়। সৈয়দ আলী।
যেহেতু তার পদবী সৈয়দ তখন আশা রাখি আরবী ভাষা নিয়ে তিনি মস্করা করবেন না। তবে ঝুঁকি কমানোর জন্য তার হুবহু কথাগুলোই তুলে দিচ্ছি। আমার কিছু বলার থাকলে তা শেষে সংযুক্ত করবো। সৈয়দ আলী বলছেন:
"মহাপ্রলয় কবে আসবে, সে সম্বন্ধে আরবদের ভিতর একটি কাহিনী প্রচলিত আছে। আল্লা-পাক নাকি একদিন প্রধান ফিরিশতা জিব্রাইলকে ডেকে আদেশ দেবেন, যাও তো, মানুষের ছদ্মবেশ ধরে পৃথিবীতে।
যে কোনো একজন মানুষকে শুধোও, জিব্রাইল এই মুহূর্তে কোথায় আছেন? জিব্রাইল পৃথিবীতে নেমে একজন মর্ত্যবাসীকে সেই প্রশ্ন শুধোলেন। লোকটা কিঞ্চিত বিরক্ত হয়ে বললো, ' এরকম বেফায়দা প্রশ্ন করে লাভটা তোমার কি? আমার এসব জিনিসে কোনো কৌতুহল নেই, তবে যখন নিতানত্দই শুধোলে তবে-দাঁড়াও বলছি। ' লোকটি দুই লহমা চিনত্দা করে বলল, 'হু, ঠিক বলতে পারবো না -তবে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই, সে এখন পৃথিবীতে। বেহেশ্তে নয়। '
জিব্রাইল স্বর্গে ফিরে আল্লাকে উত্তরটা জানালে তিনি বললেন, 'ঠিক আছে।
' তারপর কেটে যাবে আরো বহু সহস্র বৎসর। তার পর আবার আল্লা-পাক ঐ একই প্রশ্ন একই ভাবে শুধোবার জন্য জিব্রাইলকে পৃথিবীতে পাঠাবেন। এবারে যে মর্ত্যবাসীকে শুধোনো হল, সে বিরক্ত হল আরো বেশী। বললে, 'কি আশ্চর্য! এখনো মানুষ এরকম সম্পূর্ণ বাজে বেকার প্রশ্ন করে! হিসেব কষলে যে এরকম প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যায় না তা নয়, তবে দেখে এসব ব্যাপারে আমার কোন উৎসাহ নেই। আচ্ছা....'এক সেকেন্ড চিনত্দা করে লোকটা বললে, 'স্বর্গে তো নয়, স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে..,' ফের দু'সেকেন্ড চিনত্দা করে বললে, পৃথিবীতেই যখন, দাঁড়াও, হাঁ, কাছেপিঠেই কোথাও-আমি চললুম।
'
জিব্রাইল বেহেশতে ফিরে এসে আল্লাকে সব কিছু বয়ান করলেন। আল্লা বললেন, 'ঠিক আছে। ' তারপর কেটে যাবে আরো কয়েক হাজার কিংবা কয়েক লক্ষ বৎসর। আবার জিব্রাইল সেই হুকুম নিয়ে ধরাভূমিতে আসবেন। এবার যাকে শুধালেন সে তো রীতিমত চটে গেল - 'এসব বাজে প্রশ্ন...ইত্যাদি।
' জিব্রাইল বেশ কিছুটা কাকুতি-মিনতি করাতে সে নরম হয়ে বললো, 'তাহলে দেখি! হুঁ:, স্বর্গ নয়, পৃথিবীতে। ' তারপর আরেক সেকেন্ড চিনত্দা করে বললে, 'কাছে-পিঠে কোথাও'। তারপর আরো দু'সেকেন্ড চিনত্দা করে তাজ্জব মেনে বলবে, 'কী আশ্চর্য যে এরকম মস্করা করো। তুমিই তো জিব্রাইল-তবে শুধোচ্ছো কেন? এবার জিব্রাইল সব খবর দিলে আল্লা-পাক হুকুম দেবেন মহাপ্রলয়ের শিঙা বাজাতে।
কথিকাটির তাৎপর্য কি?
প্রথমতঃ, মানুষ তখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা করে করে এমন জায়গায় গিয়ে পৌঁছবে যে স্বর্গের খবর পর্যনত্দ তার অজানা থাকবে না।
দ্বিতীয়তঃ, কিন্তু তার তাবৎ জ্ঞান-বিজ্ঞান বিদ্যাচর্চার একমাত্র উদ্দেশ্য হবে সাংসারিক, বৈষয়িক, প্র্যাকটিক্যাল জিনিস নিয়ে। ইহলোক ভিন্ন পরলোক, পাপপুণ্যের বিচার, সে স্বর্গে যাবে না নরকে জ্বলে পুড়ে খাক হবে-এ সম্বন্ধে তার কোনো কৌতুহল থাকবে না, কারণ স্বয়ং জিব্রাইলকে হাতের কাছে পেয়েও সে এসবের কোনো অনুসন্ধান করলো না। এমন কি সৃষ্টিকর্তা আল্লা-দীন দুনিয়ার মালিক-যাঁকে পাবার জন্য কোটি কোটি বৎসর ধরে শত শত কোটি মর্ত্যের মানুষ স্বর্গের দেবদূত আমৃতু্য দেবদুর্লভ সাধনা করেছে, তার প্রতিও সে উদাসীন।
তৃতীয়তঃ, যেহেতু সে সৃষ্টিকর্তার অসত্দিত্ব,তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ উদাসীন অতএব কল্পনা করা কঠিন নয় যে, সে তখন বিশ্বভুবন তার খেয়ালখুশী মর্জি-মাফিক নিয়ন্ত্রণ করার প্রচেষ্টায় লেগে যাবে। "
সৈয়দ আলীর বয়ান এখানেই শেষ।
আমি আর এখন কিছু যোগ করছি না। এ বর্ণনা পড়ে কার কি প্রতিক্রিয়া হলো জানান তারপর নাহয় আমি শুরম্ন করবো কেন জিব্রাইলের বস্নগিং করা উচিত তার তৃতীয় কিসত্দি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।