শহীদ মিনার ,আমাদের ভাষা আন্দোলনের এক নীরব সাক্ষী । এর অবস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে । একটু সহজ করে বললে এর অবস্থান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইন্স annex ভবনের ঠিক বিপরীত পাশে। সাইন্স annex ভবনে চারটি বিভাগ আছে :আইন ,ভূগোল ও পরিবেশ ,গণিত এবং পরিসংখ্যান । ছেলেবেলায় যখন কিনা ক্লাস ফাইভ এ পড়ি তখন একবার আব্বু-আম্মুর সাথে ঢাকায় ঘুরতে এসেছিলাম ।
বাড়ি থেকে আসার আগে ঢাকার দর্শনীয় স্থানগুলোর একটা লম্বা তালিকা করেছিলাম,ওর মাঝে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারও ছিল । যদিও সেবার শাহবাগের জাদুঘর দেখেই চলে যেতে হয়েছিল শহীদ মিনার আর দেখা হয়নি । দূরদর্শনে ২১শে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরের অনুষ্ঠান খুব আগ্রহের সাথে দেখতাম । পুরো শহীদ মিনার ধুয়েমুছে কি পরিষ্কার না করা হত ...দেয়ালে শোভা পেত" মাতৃভাষা"নিয়ে বিভিন্ন কবি -সাহিত্যিকের সুন্দর সুন্দর লেখনি । ....সব মিলিয়ে শহীদ মিনার চত্বর যেন নতুনের জয়গান করত ।
তাইত,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সবুজ চত্তরে যখন কিনা নিজেকে আবিস্কার করলাম তখন আনন্দটা দিগুন হয়ে গিয়েছিল, যখন দেখি শহীদ মিনার আমার গণিত বিভাগের সামনে। শহীদ মিনার বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রামের এক মূর্ত প্রতীক ...বিদেশী সংস্কৃতির কাছে হার না মানার এক বলিষ্ঠ পদচিহ্ন ...সেই শহীদ মিনারে এসে মানুষ আন্দোলন সংগ্রামের এক "নতুন ইতিহাস"রচনা করবে এটাই সবার প্রত্যাশা। গত চারটি বছরে এরকম নানারকম অধিকার,বৈষম্য ,অনাচার ,দুর্নীতির বিরুদ্ধে যেমন আন্দোলন করতে দেখেছি ..ঠিক তেমনি (নতুন আবিষ্কৃত!) "শবদেহ "কে শ্রদ্ধা জানানোর উতসবও !চোখে পড়ে নিয়মিত। কিন্তু এসব কিছুকে ছাড়িয়ে যে আন্দোলনটি আমার হৃদয়ে দাগ কেটেছে আর তা হলো শিক্ষক সমাজের আন্দোলন । কারণ, গত চারটি বছরে এই মানুষ গড়ার কারিগরদেরকে সবচেয়ে বেশি দিন তাদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে হয়েছে এবং হচ্ছে ..আমরা যখন বলি, তখন কেউ কম বলিনা ..শিক্ষকরা আমাদের পরম শ্রদ্ধার পাত্র ,শিক্ষকরা একটি জাতিকে গড়ে তোলেন ,শিক্ষকের স্থান সবার উপরে ..আরো কত কি ...!কিন্তু আমাদের শিক্ষকরা কেমন আছেন আমরা কতটুকু তার খবর রাখি!!!বাংলাদেশে তিন পদ্ধতির শিক্ষা ব্যবস্থা বর্তমানে বিদ্যমান :বাংলা ,ইংরেজি এবং ধর্ম ভিত্তিক শিক্ষা ...এদের মাঝে ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষকরা মোটামুটি বেশ সচ্ছল।
কারণ এখন পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যমে তারাই পড়ালেখা করে যাদের বাবা-মা আর্থিকভাবে বেশ সচ্ছল । তাই সরকারীভাবে পৃষ্ঠপোষকতা না করলেও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষকরা ছাত্রদের "মোটা"বেতন এবং প্রাইভেট tutoni করে জীবন-যাপন করেন। । । সমস্যা মূলত ধর্মভিত্তিক এবং বাংলা মাধ্যমের শিক্ষকদের ।
এদের মাঝে ধর্মভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা সরকারী ভাবে কিছুটা অনুদানের(যদিও তার পরিমান খুবই কম )মাধমে পরিচালিত হলেও মূলত ধর্মপ্রাণ মানুষের আর্থিক অনুদানের দিকেই সবসময় চেয়ে থাকতে হয়। । সরকারী ভাবে যেগুলো পরিচালিত হয় সেগুলার অনুদান ও সঠিক সময়ে পাওয়া যায়না । বাকি থাকলো বাংলা মাধ্যম। স্কুল এর শিক্ষকরা (ধর্মভিত্তিক এবং বাঙলা )সব চেয়ে বেশি বঞ্চনার শিকার ।
মাসের পর মাস পেরিয়ে যায় তারা তাদের বেতন পাননা । দোকান থেকে বাকি খেতে হয়। মাস শেষেও যখন বেতন পাননা তখন দোকানির সামনে মাথা নিচু করে চলা ছাড়া আর উপায় থাকেনা । ....ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি,শায়েস্তা খার আমলে টাকায় আট মন ধান পাওয়া যেত। ..এটা ঠিক এখন শায়েস্তা খার আমল না ..এখন বাংলাদেশের জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের তনয়া শেখ হাসিনার আমল ..কিন্তু আমাদের টাকার মান এখন এত কমে গেছে যে এখন ফকির ও একটাকা নিতে চায়না,বাদামঅলার কাছে দুই টাকার বাদাম নিতে চাইলে বলে ভাই পাচ টাকার কমে বেচিনা।
জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে ..সাধারণ মানুষের অবস্থা দুর্বিসহ ...জীবনযাত্রার মান বাড়েনি বেড়েছে জীবনযাত্রার বিভিন্ন উপকরণের দাম। এহেন পরিস্থিতিতে স্কুলগুলো MPO(মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার)খুব জরুরি এবং সেই সাথে বর্ধিত বেতন । এই লেখাটি যখন লিখছিলাম তখনও আমার কানে ভেসে আসছিল মানুষ গড়ার কারিগররা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য গগনবিদারী আত্মচিত্কারে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তুলেছে । আমার প্রিয় এই শিক্ষাগুরুদের যখন কিনা পাঠশালায় বসে মানুষ গড়ার কথা ঠিক সেই সময় রোদে-পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে ,পুলিশের টিয়ারসেল,স্প্রে এবং জলকামানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য । এই তো কিছুদিন আগে পুলিশের তাড়া খেয়ে অসুস্থ হয়ে অবশেষে একজন শিক্ষক মারা গেল(Click This Link)।
কি আজব দেশে আমরা আমরা বসবাস করি যেখানে কিনা একজন শিক্ষকেও নিজের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই করতে হয় !হায়রে মানবধিকার !!আর কত শিক্ষককে তাদের জীবন বিলিয়ে দিতে হবে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য ..আমরা কি শুধু গালভরা সম্মান! দিয়ে যাব, আর তাদের সম্মানীর জন্য তাদের রাস্তায় জীবন দিতে হবে ?কুকুর দমন করার স্প্রে সহ্য করতে হবে ?! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।