সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
ওয়ালী, আপনার বাংলাদেশী বিভাজন লেখাটি পড়লাম। বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড যে নি:সন্দেহে একটি জঘন্য কাজ, অন্ততপক্ষে তা বুঝতে পেরেছেন বলে ধন্যবাদ। যে সব বুদ্ধিজীবীরা স্বাধীন, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ চেয়েছিলেন, তাদেরকে কি সুচিন্তিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে, তার একটি রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল নিউ ইয়র্ক টাইমস এ। আমি সে রিপোর্টের মূল অংশগুলো অনুবাদ করে পোষ্ট করলাম। আশা করি তাতে বোধোদয় হবে ও হায়েনা কে দোস্ত না চিনে হায়েনা বলেই চিনতে শিখবেন।
.................................................
বাংলাদেশের গনহত্যায় জড়িত সাংবাদিক
মইনুদ্দিন যে বাংলা পত্রিকায় কাজ করতো, সে পত্রিকার রিপোর্টারদের কাছে সে একজন শান্ত, ভদ্র ও বুদ্ধিমান যুবক হিসেবেই পরিচিত। তার নম্র, সুন্দর চেহারা ও পরিস্কার ছাটা দাড়ি। মাঝে মাঝে একটি ডানপন্থী ইসলামিক দলের ফোন পাওয়া ছাড়া অন্য কোন অস্বাভাকিত্ব তার মাঝে দেখা যায়নি।
কিন্তু গত কয়েকদিনের ঘটনাপ্রবাহ পর্যালোচনা করে দেখা যায় যে, এই ফোনগুলোই যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ন ছিল। প্রমান পাওয়া গেছে যে মইনুদ্দিন একটা গোপন মৌলবাদী কমান্ডে আল বদরের প্রধান, যারা বাংলাদেশের প্রখ্যাত প্রফেসার, ডাক্তার, অর্থনীতিবিদ ও সাংবাদিকের হত্যাকারী।
এদেরকে ঢাকার একটি ইটখোলায় এনে হত্যা করা হয়েছে।
গত সতেরোই ডিসেম্বর থেকে শুরু করে তিন দিন ধরে এই হত্যাকান্ড চালিয়েছে খাকী প্যান্ট ও কালো সোয়েটার পড়া একটি দল, যাদেরকে আল বদর গ্রুপের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, সমস্ত বাংলাদেশী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা, যারা পাকিস্তানের অখন্ডতার বিপক্ষে ও ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন।
এই যুদ্ধের সমাপ্তি এসময়ে না ঘটলে তারা যে তাদের উদ্দেশ্যে পুরোপুরি সফল হতো, তা বিশ্বাস করেন অনেক বাংলাদেশীই। যে দেড়শো লোকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের অনেকেরই হাতের আঙ্গুল কেটে ফেলা ও আঙ্গুলের নখ তুলে নেয়া হয়েছে।
আল বদরের এই হত্যাকান্ডের পেছনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রচ্ছন্ন যোগসাজস রয়েছে, তার প্রমান ধীরে ধীরেই আরো বেশী ঘনিভূত হচ্ছে। মেজর জেনারেল রাও ফরমার আলী, পূর্ব পাকিস্তান সরকারের পতিরক্ষা পরামর্শদাতা। তার ডেস্কে আলবদরের রেফারেন্স সহ অনেক রহস্যময় কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। ক্যাপ্টেন তাহির, 'ভেহিকেল অফ আলবদর' ও 'ইউজ অফ আলবদর' লেখা নোট পাওয়া গিয়েছে তার টেবিলে। ক্যাপ্টেন তাহির হচ্ছে সেই রাজাকার কমান্ডার, যাদেরকে পাকিস্তানীরা বাংলাদেশীদের বিপক্ষে সন্ত্রাস ও বিভীষিকা বিস্তারের জন্যে কাজে লাগাতো।
আরেকটা কাগজে নিজামুদ্দিনের নাম লেখা ছিল। লেখা ছিল, 'নিজামুদ্দিন-মোটিভেটেড নিউজ'। নিজামুদ্দিন ছিলেন পাকিস্তান বিরোধী একটি দৈনিকের সাংবাদিক। যুদ্ব শেষ হওযার দুদিন আগে তাকে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তার নামের পাশে টিক চিহ্ন দেয়া ছিল।
আলবদর মইনুদ্দিন কে ধরে ঢাকা জেলে অন্তরীন করে রাখা হয়েছে। সে স্বীকার করেছে যে সে এই দলের কমান্ডার। মইনুদ্দিন যার সাথে একই ঘরে বসবাস করতো তার ডায়েরী উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে আল বদর সদস্যদের নাম ও তাদের যেসব টাকাপয়সা দেয়া হয়েছে, তার হিসেবপত্র লেখা ছিল। এরা দুজনেই জামাতে ইসলামী দলের হেডকোয়ার্টারের কাছাকাছি বাস করে।
এই জামাতে ইসলামীই এবারকার ন্যাশনাল এসেম্বলির ভোটে দাড়িয়ে মাত্র এক শতাংশ ভোট পায়। আলবদরকে জামাতে ইসলামীরই একটি সশস্ত্র অঙ্গসংঘটন হিসেবে পরিচিত, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষনা করার পর সাবধানে তৈরী করা হয়।
পুর্বদেশ পত্রিকার রিপোর্টার মইনুদ্দিনকে তারই এক সহকর্মীর সাথে তেরোই ডিসেম্বরে তর্কাতর্কি করতে দেখা যায়। তার কয়েক ঘন্টা পরেই আলবদরের লোকজন সেই রিপোর্টারকে তার বাসস্থান থেকে ধরে নিয়ে যায়। আতিকুর রহমান, একই পত্রিকার আরেকজন রিপোর্টার বলেন, 'আমরা তাকে খুজে বের করবোই, ধরবোই, তা যার বিনিময়েই হোক না কেন'।
ফঙ্ কাটারফিল্ড এর রিপোর্ট
নিউ ইয়র্ক টাইমস, 3 জানুয়ারী, 1972
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।