সময়, কবিতা, ছোটগল্প, দেশ, দেশাচার
ক্রোয়াশিয়ায় বেড়াতে গিয়েছিলাম গত বছর সামারে। জার্মানী থেকে অস্ট্রিয়া, ইতালী, স্লোভেনিয়া হয়ে যেতে হয়। ওখানে উমাগ নামে একটি ছোট শহর আছে আড্রিয়াটিক সাগরের পারে। ছোট্ট একটি বাংলো ভাড়া করেছিলাম এক সপ্তাহের জন্যে সমুদ্রের ধারেই। আমাদের বাংলোর সামনে বিশাল এক শষ্যক্ষেত, ডানদিকে সমুদ্র।
যারা বাংলোগুলো ভাড়া দিয়ে থাকেন, তাদেরই রেষ্টুরেন্টে সকালের নাস্তা ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা ছিল।
কয়েকটি দিন সাঁতার কেটে ও আশেপাশের নৈসর্গিকতা উপভোগ করে কাটালাম। সৌন্দর্যের অফুরন্ত ভান্ডার ক্রোয়াশিয়ার এই উপকুল ভাগ। সার্বিয়া থেকে আলাদা হবার পর দনি পুর্ব বিস্তারি সমুদ্রের পুরো সৈকতই ওদের দখলে। তবে বেশীরভাগই পাথুরে সৈকত।
পানিতে নামতে গেলে বেশ সাবধানে নামতে হয়। ট্যুরিস্ট সেন্টার ও ক্যম্পিং এলাকার ছড়াছড়ি। ইটালীর প্রভাব দেখা যায় বেশ। বাড়ীঘরের চেহারাও ইটালীয়ান ধাঁচে। ঢোকার আগে প্রতিটি শহরের নাম ইটালীয়ান ও ক্রোয়াশিয়ান ভাষায় লেখা।
কোন কোন শহরের নাম দুই ভাষায় এক হলেও দু'বার লেখা রয়েছে। প্রথম বুঝতে পারিনি। যেমন একটি শহরের নাম পুলা, কিন্তু শহরে ঢোকার সময় পুলা পুলা লেখা দেখে ভেবেছিলাম এটাই শহরটির নাম।
যুগোস্লাভিয়া সময়ে এ এলাকাটি ছিল ধনী ইউরোপীয়ান দেশগুলো মধ্যবিত্তদের অবকাশ যাপনের স্থান। ইটালী ও ফ্রান্সের তুলনায় এখানে বেড়ানো ছিল তুলনামূলক ভাবে অনেক অনেক সস্তা।
একধরনের ট্যুরিজম-উপনিবেশ ছিল এ এলাকাটি - বিশেষ করে জার্মানদের জন্যে। এখন আর সে অবস্থা নেই। সেজন্যে জার্মানরা এখনও আফসোস করে।
ফেরার সময় সোজাপথে না এসে অষ্ট্রিায়ায় পাহাডী ঘুরপথ বেছে নিলাম। হঠাৎই লেখা দেখলাম ইওরোপের সবচে উঁচু পথ সামনে।
আমিও সেদিকেই গাড়ী ছোটালাম। 2800 মিটার উঁচু। নিয়ে যায় ওটসতালার গ্লেচারএ। গ্লেচারের ইংরেজী প্রতিশব্দ জানামতে একই। বাংলায় বলতে গেলে বলতে হয়, গ্লেচার এক চির বরফের স্থান, বারো মাসই বরফে ঢাকা ।
সাপের মতো অাঁকাবাঁকা রাস্তায় চালাতে চালাতে কতোক্ষনের মাঝেই সামার পাল্টে যেন শীত চলে এলো। গাড়ী থেকে বাইরে বেরুনোর আগে গরম কাপড় পড়ে নিতে হলো। মনে হল পৃথিবী ছাড়িয়ে অন্য কোথাও চলে এসেছি আমরা। আশে পাশের অন্য পাহাড়ও উপর থেকে দেখতে পাচ্ছি। পাহাড়ের চুড়োয় বরফের সফেদ টুপি।
মনে হল যেন মেঘের উপর দাঁড়িয়ে আছি । শরীরটাকে বেশ হালকা মনে হলো। বরফ গলা জলের ঝির ঝির শব্দ পাহাড়ের কোনায় কোনায়। পাহাড়ের খাদে ঘিরে বিশাল দেয়াল। সেখানে বরফ গলা জলকে জমিয়ে রাখার জন্যে এক বিশাল জলাধার তৈরী করা হয়েছে।
প্রয়োজনঅনুযায়ী বিভিন্ন শহরগুলোতে সরবরাহ করা হয়।
চড়াই উৎরাই পেরিয়ে খানিক নামার পরও গ্রীস্ম ফিরে এলো আবার। আমরা তখন ফিরতি পথে, আমাদের শহর মিউনিখে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।