সাধারণ একজন মানুষ কার্টুন? হুম, এই নামেই আমাদের মধ্যে পরিচিত ছিল সে। চেহারার গঠন আর রংটা কার্টুনের মত ছিল বলেই এই নাম। পড়ত আমার থেকে ৩ ক্লাস নিচে। আমাদের ক্লাসরুমের পরেই পানির কল ছিল বলে প্রতি ক্লাসের পরেই আমাদের রুমের সামনে দিয়ে হেঁটে যেত। না পানি খেতেনা,ঐ বাহানায় আমাকে একটু দেখতে।
আমি প্রথম সারির বেন্ঞ্চ গুলোতে বসতাম বলে তার সুবিধাই হত। সাধারণত তিন ক্লাস পরপর ক্লাসরুম থেকে বেরোনোর নিয়ম থাকলেও আমার প্রতি তার দুর্বলতার কথা তার ক্লাসের প্রায় সবাই জানতো বলে প্রতি ক্লাস পরপরই বেরোতে পারতো। সে আবার স্কুলের সেরা সুন্দরীদের একজন ছিল। চেহারায় ছিল শান্ত শিষ্ট একটা ভাব। সবসময় দেখতাম আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো।
কখন থেকে শুরু বলতে পারি না। তবে আমি তার এই কাজটা খেয়াল করি ক্লাস টেনের ১ম সাময়িক পরিক্ষার হলে। তাও আবার হটাত্ করেই। তখন সন্দেহ হওয়ায় তাকে নজরবন্দী করি এবং বুঝতে পারি তার মনে বসন্তের রং লেগেছে। তো একদিন বন্ধু শুভ তাদের ক্লাসরুমের দরজায় দাড়িয়ে তার বান্ধবীর সাথে কথা বলছিল বলে আমি অন্যদিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে ছিলাম।
হটাত্ তার দিকে তাকাতেই ওমা এ কি !! মুগ্ধ নেত্রে আমার দিকে তাকিয়েই আছে তো আছেই। এমনি কি চোখে চোখ পড়ার পরেও চোখ সরানোর লক্ষণই নেই! কিন্তু আমি তার মত এত সাহসী না বলে চোখ সরিয়ে ফেলি। এভাবেই চলছিল দিনকাল। এরই মধ্যে চলে এল আমাদের টেস্ট পরিক্ষা। তো পরিক্ষার সময় আমি বসতাম দরজার পাশেই।
হলরুমেই তাদের ক্লাস হত বলে আমাদের পরিক্ষার কারণে তাদের ছুটি দিয়ে দেওয়া হত। কিন্তু একদিন দেখি মহাশয়া বাড়ি না গিয়ে বান্ধবিদের সাথে আমার সিট থেকে কোনাকোনি ভাবে দাঁড়িয়ে আছে তো আছেই। আরেকদিন আমি একটু আগেই স্কুলে চলে গিয়েছিলাম। তখনো বন্ধুরা কেউ না আসায় বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলাম। আমাকে একা দেখে হয়ত মনে মনে ভাবলো আজকা পাইছি তোরে।
কিছুক্ষণ পর দেখি বান্ধবীদের নিয়ে দল বেঁধে আমার দিকে আসতাছে। এরপর কি ঘটতে পারে তাহা আন্দাজ করে তাদের আশাহত করে আমি ক্লাস রুমে চলে যায়। তার বাড়ির রাস্তা ছিল স্কুলের দক্ষিণ দিকে আর আমার ছিল উত্তর দিকে। কিন্তু সে অনেকবার আমাদের পিছে পিছে চলে আসে কোন এক উদ্দেশ্যে। টিপিন ব্রেকে আমরা পাশের খালি রুমে নাস্তা করতে বসতাম আর তারা চলে যেত তাদের কমন রুমে।
কিন্তু আবারো কোন এক উদ্দেশ্যে একদিন দেখি সে আমাদের ঐ রুমে গিয়ে হাজির। কিন্তু না,এইবারও সে সফল হইতে পারলো না। কয়েকজন বন্ধুকে তার কাহিনী বলার পর তারা অনেক চেষ্টা করেছে আমাদের মধ্যে সেতু বন্ধনের বিনা পার্টির নিমার্ণকর্মী হতে। কিন্তু আমি তখন সেতু তৈরির পক্ষে ছিলাম না বলে তারা সফল হয়নি। ক্লাসে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলাম বলে ব্যাপারটা নিয়ে বন্ধুরা এতটাই উত্সাহি ছিল যে আমি শুধু রাজি হলেই প্রয়োজনীয় বাকি সব কাজ এমন কি প্রোপজটা তারা করে দিত।
এভাবেই চলতে চলতে আমি এসএসসি পাশ করে কলেজে চলে গেলাম। মাঝেমাঝে স্কুলে স্যারদের সাথে দেখা করতে গেলে খেয়াল করতাম দূর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একদিন দুপুরের দিকে কলিংবেল শুনে দরজা খুলে দেখি মহিলা একটাকে সাথে নিয়ে একটা আন্টি দাঁড়িয়ে আছেন। তো স্বাভাবিক ভাবেই আমি দরজা খুলে দিয়ে আমার রুমে চলে আসি। একে একে সবাই রুমে ডুকলো।
কে কে আসছে তা দেখার জন্য তাদের দিকে তাকাতেই ভূত দেখার মত চমকে উঠলাম। কারণ তাদের মধ্যে যে সেও ছিল!!শুধু আমি না আমাকে দেখে সেও এতটাই চমকে গিয়েছিল যে আম্মু যখন তাকে নাম জিজ্ঞেস করছিল তখন ভাল ভাবে কথাও বলতে পারছিল না। ঐদিন আম্মুর কাছ থেকে জেনেছি তার পারিবারিক পরিচয়
এবং জানতে পারলাম সে আমাদের দূর সম্পর্কের কাছের আত্মীয় হয়। এরপর চলার টুকটাক অনেক দেখা হয়েছে তার সাথে কিন্তু কখনো কথা হয়নি। ফলে তার সাথে সম্পর্কও হয়নি এবং আমি এখনো সিঙ্গেলই আছি যদিও আজকে ৫ বছর ধরে ফেয়ার এন্ড হ্যান্ডস্যাম এবং গত ডিসেম্বার থেকে পারফিউম এক্স ব্যবহার করছি।
(লাস্ট লাইনটা বুঝিতে হইলে এই দুইটা পণ্যের বিজ্ঞাপন দেখিতে হইবে....। এই ধরণের লেখা এই প্রথম বলে হয়ত কিছুটা এলোমেলো হয়েছে) #উত্সর্গ:- নোমান ভাই ও পাভেল ভাই। লেখাটা সুন্দর করতে তারা অনেক সাহায্য করেছেন# ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।