আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

‘গণশ্রাদ্ধ ৭১’ বন্ধ করার স্বপক্ষে বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন দু’টির সুস্পষ্ট অবস্থান

প্রগিশীল, মুক্তমনা, সমঅধিকার এবং মানবতাবাদে বিশ্বাসী

ঢাকার শ্রী শ্রী রমনা কালী মন্দির ও শ্রীমা আনন্দময়ী আশ্রম প্রাঙ্গনে কথিত ‘গণশ্রাদ্ধ’ এর সাথে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। আজ ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩, সোমবার সকালে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ‘গণশ্রাদ্ধ’ সম্পর্কে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেন। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কানুতোষ মজুমদার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সিনিয়র সদস্য অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাশগুপ্ত, সভাপতিমণ্ডীর সদস্য কাজল দেবনাথ, বাসুদেব ধর, জয়ন্ত সেন দীপু, মঞ্জু ধর, মিলন কান্তি দত্ত, জে. এল. ভৌমিক, পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ, মহানগর পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল চ্যাটার্জী, মহিলা ঐক্য পরিষদের সভানেত্রী জয়ন্তী রায় প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কয়েকদিন ধরে ‘মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও নিখোঁজ হিন্দু শহীদদের আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে ‘গণশ্রাদ্ধ ৭১ এবং সকল শহীদদের জন্য সর্বধর্মীয় প্রার্থনা’ শীর্ষক একটি বিজ্ঞাপনের প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৪২ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে এবং এই সুমহান অর্জনের জন্য ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নারী-পুরুষ-শিশু আত্মাহুতি দিয়েছেন।

তাঁদের এ আত্মদান আমাদের চলার পথে অবিনাশী প্রেরণা হয়ে রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের অমর শহীদদের ধর্মীয়ভাবে বিভাজন করে দেখার অবকাশ আদৌ ছিল না এবং এখনও নেই বলেই আমরা মনে করি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী এ ধরণের সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টির অপচেষ্টা চালায় এবং তাদের উদ্দেশ্য মোটেই সৎ ছিল না। স্বাধীন বাংলাদেশেও এই অপচেষ্টা আমরা বিভিন্ন সময়ে লক্ষ্য করেছি। বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে কারা কী উদ্দেশ্য নিয়ে হঠাৎ করে ‘গণশ্রাদ্ধ’ আয়োজনে উদ্যোগী হয়েছেন সেটা বিজ্ঞাপন থেকে স্পষ্ট নয়।

তবে এ ধরণের পদক্ষেপ মুক্তিসংগ্রামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করা শরিকদের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে বলেই আমরা মনে করি। মুক্তিযুদ্ধে অগণিত হিন্দু ধর্মাবলম্বী নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। বাংলাদেশে শত শত হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় পরিচালিত হয়েছে গণহত্যা এবং এ বিষয়ে এই সম্প্রদায়ের সদস্যদের আবেগ ও সংবেদনশীলতাও আমাদের অজানা নয়। আমরা মনে করি, এই আবেগকে ব্যবহার করে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা এবং এমনকি রাজনৈতিক অঙ্গন ঘোলাটে করার দুরভিসন্ধি থাকা বিচিত্র নয়। নেতৃবৃন্দ বলেন, হিন্দু ধর্মে পূর্বপুরুষ ও স্বজনদের মৃত্যু হলে মৃতের আত্মার সদ্গতি কামনায় শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানের বিধান রয়েছে এবং এর অধিকার কার ওপর বর্তায় সেটাও স্পষ্টভাবে উল্লেখিত রয়েছে।

এখানে গণশ্রাদ্ধ বলে কিছু নেই । স্বাধীনতার দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় পরে মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী স্বজনদের আমরা স্মরণ করতে পারি এবং এজন্য স্মরণ সভা ও প্রার্থনা আয়োজনে কারও আপত্তি থাকতে পারে না। কিন্তু শহীদদের ধর্মীয় বিভাজন অগ্রহণযোগ্য। স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মাহুতিদানকারী সবাইকে বিভিন্ন সময়ে আমরা স্মরণ এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করি। তাদের জন্য নিজ-নিজ উপাসনালয়ে প্রার্থনার আয়োজন করা হলেও কারও আপত্তি থাকার কথা নয়।

স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে প্রত্যেক ধর্মের উপাসনালয়ে একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। কিন্তু ‘হিন্দু শহীদদের’ জন্য যেভাবে ‘গণশ্রাদ্ধ’ অনুষ্ঠানের বিষয়টি হঠাৎ করে সামনে আনা হয়েছে তার পিছনে সুদূরপ্রসারী কু-রাজনৈতিক মতলব থাকা অসম্ভব নাও হতে পারে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরও হিন্দুসহ বিভিন্ন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বঞ্চনা-অবিচার-বৈষম্যের অনেক ঘটনা ঘটেছে এবং তার প্রতিকার হতেই হবে। এজন্য এই সম্প্রদায়ের প্রতিটি সদস্যের যেমন আরও সক্রিয়তা দাবি রাখে, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাসী এবং অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনাসম্পন্ন প্রতিটি নাগরিকেরও চাই সম্মিলিত প্রয়াস। শহীদদের ধর্মীয়ভাবে বিভাজন করা এই লক্ষ্য অর্জনের সহায়ক হতে পারে না।

যারা এ ধরণের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা প্রকৃত পক্ষে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের স্বার্থেরই ক্ষতি করছেন এবং জাতিকে বিভক্ত করতে চাইছেন। এ কারণে এ ধরণের পদক্ষেপ থেকে নিবৃত্ত হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।