আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি।
আগের লেখার লিঙ্কঃ
Click This Link
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর এই ধরনের ২০০০ হাজারেরও বেশী জাল হাদিস বর্ণনা করেছেন। উম্মুল মু’মিনিন আয়েশা ও আনাস বিন মালিক দু’জনের প্রত্যেকে ২০০০ হাজারের বেশী জাল হাদিস বর্ণনা করেছেন। এই ব্যক্তিবর্গ এবং তাদের মত অন্যরা স্বার্থান্বেষী শাসকগোষ্টীর আনুকুল্য পাওয়ার জন্য হাদিস জাল করার জন্য পরস্পরের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছিল।
আল্লাহই ভাল জানেন।
এই প্রচারাভিযানকালে হাদিসের নামে কত অসংখ্য কাহিনী উদ্ভাবন করা হয়েছিল। এর ফলে ইসলামী নীতিমালা-বিধান এবং আমলের বিকৃ্তি সাধিত হয়েছিল এবং সব উলট-পালট করে দিয়েছিল। এই ধারাবাহিকতায় প্রকৃ্ত ইসলাম সম্পুর্নভাবে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল।
শাসকগোষ্টী কেবল্মাত্র এই রুপান্তরিত ইসলামকে অফিসিয়াল স্বীকৃতি প্রদান করতো। এই ইসলামের বহিরাবরন ও মানদন্ড তৈ্রী হয়েছে মুয়াবিয়ার আমলে এবং এই ধারাবাহিকতার পথ ধরে ইহাই সত্য ইসলাম বলে প্রতিপন্ন হয়েছে।
ঐ বিষয়গুলো এখন এমন পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে,মহানবী(সাঃ)এর সত্য ইসলামকে যদি এই সকল দরবারী ইসলামে অভ্যস্ত লোকদের কাছে উপস্থাপন করা হয়,তবে প্রকৃ্ত সত্য হিসাবে তা বিশ্বাস করা কঠিন হয়া দাড়ায়। কারন তারা তাদের ইসলামকে জেনেছে সেইসব গ্রন্থ থেকে যেগুলো মিথ্যা এবং জাল হাদিস সমৃদ্ব। উদাহরন স্বরুপ আবুহোরায়রার কারখানায় উদ্ভাবিত একটি জাল হাদিস আমরা এখানে উল্লেখ করতে পারিঃ
---"একদল লোক রাসুল(সাঃ)কে জিজ্ঞাসা করলো, হে আল্লাহর নবী,হাশরের দিন আমরা কি আল্লাহকে দেখতে সক্ষম হবো?তিনি জবাব দিলেন,"পুর্নিমার রাতে চাঁদের দিকে তাকিয়ে তোমরা কি আনন্দ পাওনা?""আমরা পাই" তারা উত্তর দিল। আবার তিনি বললেন,"মেঘমুক্ত আকাশে সুর্য দেখার ক্ষেত্রে তোমরা কোন অসুবিধা অনুভব কর কি?"তারা উত্তরে বললো,"না,হে আল্লাহর নবী,করিনা। "তারপর তিনি বললেন,তোমরা আল্লাহকে দেখতে পাবে ঠিক একই রকমভাবে"।
শেষ বিচারের দিন আল্লাহ সকল মানুষকে একত্রিত করবেন এবং দুনিয়াতে তারা যার ইবাদাত করতো তাকে অনুসরন করার জন্য তাদেরকে নির্দেশ দিবেন। যারা সুর্য পুজা করতো তারা সুর্যকে অনুসরন করবে এবং যারা চন্দ্রকে পুজা করতো তারা চন্দ্রকে অনুসরন করবে;এবং যারা প্রেত(অশুভ আত্নার)পুজা করতো তারা তাদের দেবতার পশ্চাতে চলতে থাকবে। কেবল্মাত্র মুসলমান ও মুনাফিকেরা অবশিষ্ট থাকবে। অতপর লোকেরা পুর্বে যেরুপ আল্লাহর চিনতো তিনি তাদের সামনে ভিন্নরুপে আবির্ভুত হবেন,এবং বলবেন,"আমিই তোমাদের আল্লাহ"। তারা বলবেঃআমরা তোমা হতে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই"।
আমরা এখানে অপেক্ষা করবো যতক্ষন না আল্লাহ আমাদের সামনে উপস্থিত হন এবং আমরা তাকে চিনবো। তারপর আল্লাহ আবার তাদের সামনে সেইরুপে উপস্থিত হবেন যেরুপে লোকেরা আগে তাঁকে চিনতো। তখন লোকেরা চিৎকার করে বলবে,"নিশ্চয়ই তুমি আমাদের প্রভু" এবং তারা তাঁকে অনুসরন করবে"(সহী বুখারী,১ম খন্ড,বিষয়ঃ"ফজল আল-সুজুদ",অধ্যায় ৯ "আল-সিরাতজসর জাহান্নাম"। মুসলিম ইবনে হাজ্জাজ নিশাপুরি,সহীহ খণ্ড ১,বিষয়ঃ"মারিফাহ তারিখ আল-রুইয়াহ"। )
এই হাদিসটি স্পষ্টতই আল্লাহ সম্পর্কে জ্ঞানের ভিত্তি এবং পরকাল সম্পর্কে ইসলামের মুল বিশ্বাসকে নষ্ট করে দেয়।
অন্য ১টি হাদিসে বর্নিত হয়েছে যে,শেষবিচারের দিনে মহানবী(সাঃ) আল্লাহর নিকট এইভাবে মুনাজাত করবেনঃ “হে আমার আল্লাহ আমি মুসলমানদের প্রতি রাগবশে যে বদদোয়া করেছি এর পরিবর্তে তুমি তাদের প্রতি রহম কর এবং তাদের পরিশুদ্ব করে দাও” (সুত্রঃসহি মুসলিম,বিষয়ঃমানলা আনাহু আল-নবী বা “জায়ালাল্লাহ লাহু জাকাতান ওয়া তহুরান”)।
……………………………
……….
আরো বর্নিত হয়েছে যে,একদিন মহানবী(সাঃ) মক্কায় নামাজ আদায়কালে সুরা নাজম-এর এই আয়াত “ তোমরা ভাবিয়া দেখিয়াছ “লাত” ও “উজ্জা” সম্বন্বে এবং ৩য় আরেকটি “মানাত” সম্বন্দ্বে?পযন্ত তেলাওয়াত করতেছিলেন। যখন তিনি এই আয়াত তেলাওয়াত করতেছিলেন,শয়তান মহানবীর(সাঃ) মুখে এই শব্দাবলী জুড়ে দিলঃ “এরা হলো বিশিষ্ট দেবতা যারা শ্বেতশুভ্র পাখির মত এবং তাদের অনুগ্রহ আকাংখিত”। মুর্তিপুজারীরা যখন এই শব্দগুলো শুনলো,তারা খুশী হয়ে গেল এই ভেবে যে,অবশেষে মহানবী(সাঃ) তাদের দেবতাদের সম্পর্কে ভাল বক্তব্য পেশ করলো,এবং একই সাথে সকল মুসলমান এবং কাফিররা সেজদায় চলে গেল। তারপর জীব্রাঈল আমিন(আঃ) অবতরন করলেন এবং রাসুলকে(সাঃ)তাঁর এই ভ্রান্তি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষন করলেন।
রাসুল(সাঃ) বললেন যে,শয়তান তার মুখে এই শব্দগুলো জুড়ে দিয়েছিল।
অন্য একটি বর্ননা অনুসারে,জীব্রাঈল (আঃ)মহানবী(সাঃ)কে সেই আয়াত পুনরায় তেলাওয়াত করতে বললেন, এই “এরা হলো বিশিষ্ট দেবতা” শব্দগুলো যোগ কর,রাসুল(সাঃ) তা করলেন। জীব্রাঈল তাকে বললেনঃ যে তিনি ঐ শব্দগুলো তাঁর কাছে নিয়ে আসেননি,এটা শয়তান যে তাঁকে (মহানবী) দিয়ে ঐ শব্দগুলো উচ্চারন করিয়েছে( “আমি তোমার পুর্বে যে সমস্ত রাসুল(সাঃ) কিংবা নবী প্রেরন করেছি তাদের কেহ যখনি কিছু আকাঙ্ক্ষা করেছে,তখনই শয়তান তার আকাঙ্ক্ষার কিছু প্রক্ষিপ্ত করে আল্লাহ তা বিদুরিত করেন”(সুরা হজ্জঃ৫২)এই মহিমান্বিত আয়াতের তাফসীরে সয়ুতি তার “দুররে মনসুর” নামক তাফসীর গ্রন্থে(৪/৩৬৬-৩৬৮) এই বিষয়বস্তুর সমর্থনে বিখ্যাত সাহাবাদের সুত্রে ১৪টি হাদিস বননা করেছেন)।
এই বর্ননাগুলো প্রখ্যাত ও নির্ভরযোগ্য সুন্নী পন্ডিত যেমন,তাবারী,ইবনে কাসীর,সুয়্যুতি এবং আল্লামা সাইয়েদ কুতুবের ভাষ্যে উল্লেখিত হয়েছে।
এই সকল ব্যক্তিবর্গ মহানবী(সাঃ)এর নামে এত বিশাল সংখ্যক জাল হাদিস বর্ননা করেছেন যে,তারা মহানবীর(সাঃ)সঠিক রুপ মিথ্যা ও অসত্য বক্তব্যের পর্দার আড়ালে ঢেকে দিয়েছেন।
কুরাইশ শাসকবর্গ ও তাদের কর্মকর্তাদের প্রতিকৃ্তি চিত্রিত হলো মেকি রঙে। অতিপ্রাকত গুনাবলি তাদের জন্য আবিস্কৃত হল,এবং তাদের বিরোধী পক্ষের ব্যক্তিবর্গ নিন্দার লক্ষ্যবস্তুতে পরিনত হল। উহা এমন পর্যায়ে উপনীত হলো যে আবুযর গিফারী,মালিক আশতার,আম্মার ইবনে ইয়াসির এবং তাদের মত ব্যক্তিবর্গ আত্নাভিমানী এবং ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ হিসাবে ঘোষিত হলো(সুত্রঃ “আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা”,লেখক-সাইয়েদ মুরতাজা আশকারী রঃ,১ম অধ্যায়)। এছাড়া,তারা আল্লাহর গুনাবলী,পুরুথথান ও শেষ বিচার,পুরস্কার ও শাস্তি,জান্নাত ও জাহান্নাম,পুর্ববতী নবীগনের কাহিনী,সৃষ্টির সুচনা,ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস এবং বিধিবিধান সম্পর্কিত বহু হাদিস তারা উল্লেখ করেছেন,কিন্তু প্রকৃ্তপক্ষে এসম্পর্কিত তথ্যের উৎস ছিল তাদের নিজস্ব মস্তিস্কের উদ্ভাবন।
প্রতীয়মান হয় যে,এই ধরনের অসংখ্য জাল করা হাদিস রয়েছে।
এই জাল হাদিসগুলোর বর্ননা ক্ষেত্র এত বিস্তৃত ছিল যে,ধর্ম সম্পর্কীয় সকল সত্য যেন ছায়ায় পরিনত হল, এবং এর পরিবর্তে উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসকবর্গের উদ্ভাবিত নতুন ইসলামের আবির্ভাব ঘটলো;তুর্কী উসমানী খেলাফতের শেষ পর্যন্ত এই ধারাবাহিকতা কার্যকরভাবে চালু ছিল।
ইসলামের ইতিহাসের সমগ্র অধ্যায় জুড়ে আর একদল লোকের অস্তিত্ব পাওয়া যায় যারা জাল হাদিস প্রস্তুতকারকদের বিরোধিতা করতো। এই দলের সদস্যবর্গ তাদের সাধ্যমত, এমনকি নিজের জীবিনের বিনিময়ে হলেও,রাসুলের(সাঃ)সঠিক সুন্নাহকে সংরক্ষন করার জন্য সচেষ্ট ছিলেন। রাসুলের(সাঃ) একজন বিশ্বস্ত সাহাবী আবুযর এই ব্যক্তিবর্গের মধ্যে অন্যতম অগ্রনী ছিলেন। একদিন তিনি একদল লোক পরিবেষ্টিত হয়ে মিনায় “২য় শয়তান”-এর নিকট বসে ছিলেন।
লোকেরা তার নিকট ধর্ম সম্পর্কে প্রশ্নাবলী জিজ্ঞেস করছিল। হঠাৎ উমাইয়া সরকারের শয়তান-প্রকৃ্তির একজন কর্মকর্তা তার নিকট এলো এবং জিজ্ঞেস করলো, “লোকদের প্রশ্নের জবাব দান না করার জন্য তোমাকে কি সতর্ক করা হয়নি?”আবুযর জবাব দিলেন, “আমার উপর নজরদারী করার জন্য তুমিই কি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি”?এই কথা বলে তিনি তার ঘাড়ের দিকে অঙ্গুলী নির্দেশ করে বললেন, “যদি তুমি এইখানে তরবারি ধর এবং শরীর হতে মস্তক বিচ্ছিন্ন হওয়ার পুর্বে মহানবী(সাঃ)এর নিকট হতে যা আমি জানতে পেরেছি তার সামান্য কয়েকটি শব্দও উদ্বৃতি দেওয়ার সুযোগ পাবো বলে আমি বুঝতে পারি,তবে অবশ্যই তা আমি করবো”(সুত্রঃ সুনানে দারামি ১/১৩২,মুঃ ইবনে সা’দের “তাবাকার আল-কুব্রা”২/৩৫৪)।
রাশিদ হিজরী নামে অন্য একজন মহান ব্যাক্তি এই দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এটা সেই সময়ের কথা যখন কুফার গভর্নর জিয়াদ তার হাত এবং পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে তাকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল। বিপুল সংখ্যক লোক সে সময় তাকে দেখতে এসেছিল এবং শোক প্রকাশ করছিল।
রাশিদ তাদের উদ্দেশ্যে বললেন,”কান্না বন্দ্ব কর,কিছু একটা নিয়ে আস যার দ্বারা লিখতে পারা যায়,কারন আমি তোমাদের সেই নির্দেশগুলো জানাতে চাই যা আমি আমার মাওলার কাছ থেকে জেনেছি”। লোকেরা একমত হলো। কিন্তু এই খবর জিয়াদের কাছে পৌছার পর জিয়াদ তার(রাশিদের) জিহবা কেটে দিল(মুঃ ইবনে আল-হাসান তুসীর “ইখতিয়ার মারফা আল-রিজাল” যা “রিজাল কাশী” নামে পরিচিত এবং আল্লামা বাকির মাজালিশীর “বিহারুল আনোয়ার”৯/৬৩২।
মিসাম-এ-তাম্মার এই দলের একজন সাহসী কর্মী ছিলেন। যখন ইবনে জিয়াদ তার হাত এবং পা কেটে বিচ্ছিন্ন করে দিল এবং তাহে যখন ফাঁসিকাষ্টে ঝুলাতে যাচ্ছিল তখন তিনি মঞ্চে অতিকষ্টে একজন বক্তার মত দাড়ালেন এবং চিৎকার করে বললেন, “হে লোকেরা শুন,আমি ইমাম আলীর(আঃ) নিকট থেকে যে হাদিস টি শুনেছি তা শুনতে যার ইচ্ছা করে সে আমার কাছে আস”।
লোকজন ফাঁসিকাষ্টের নিকট জমায়েত হলো মিসাম-এ-তাম্মার তখন বলতে শুরু করলেন। ইবনে জিয়াদ যখন এটা জানতে পারলো,সে তার(মিসাম) জিহবা কেটে দেবার নির্দেশ দিল। জহবা কেটে দেবার পর পরই মিসাম-এ-তাম্মার ১ ঘন্টার বেশী তীব্র যন্ত্রনা ভোগ করেন নি;ফাঁসিকাষ্টে রক্তের ঝনার মাঝে শাহাদাত বরন করলেন(মুঃ ইবনে আল-হাসান তুসীর “ইখতিয়ার মারফা আল-রিজাল” যা “রিজাল কাশী” নামে পরিচিত এবং আল্লামা বাকির মাজালিশীর “বিহারুল আনোয়ার”,৭৬-৭৭)।
আমরা দেখতে পাই যে,রাজ্যে খেলাফতের প্রভাব ক্রমান্বয়ে বিশালাকারে বেড়ে যাচ্ছিল। পর্যায়টা এমন দাড়ি্যেছিল যে,তারা হালাল-হারাম সংক্রান্ত আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের(সাঃ) বিধান পরিবতন করে দিতে সক্ষ ছিল।
শেষ পযন্ত বিষয়টি এমন দুর্ভাগ্যজনক অবস্থায় পৌছাল যে,খলিফাদের জারীকৃ্ত আদেশ আল্লাহর বিধান হিসাবে কার্যকর হতে থাকলো।
যা হোক উসমানের খেলাফতের পর বেশীদিন এই পরিস্থিতি টিকতে পারেনি। গনঅভ্যূথান এই স্বেচ্ছাচারী শাসনের অবসান ঘটায়। তবে জাল হাদিস প্রস্তুতকারক ও প্রচারনাকারী একদল শক্তিশালী লোকের সহায়তায় স্রোতধারা মুয়াবিয়ার দিকে ঘুরে গিয়েছিল। মুয়াবিয়া পুরনো রীতি-নীতি পুনঃপ্রচলনের জন্য একটি কার্যপরিকল্পনা নির্ধারন করলো(উম্মুল মু’মেনিন আয়েশা,আবু হোরায়রা,আনাস ইবনে মালেক,আব্দুল্লাহ ইবনে উমর,আব্দুল্লাহ বিন আমর,মুগিরা বিন শোবাহ এবং সামরাহ বিন জুন্দুর-এর মত লোকেরা ছিল এর বর্ননাকারী।
আরো তথ্যের জন্য জানুন “আল হাদিসুন উম্মুল মু’মিনিন আয়েশা” এবং “মিন তারিখ আল-হাদিস”। সাইয়েদ আবুল হোসাইন শারফুদ্দিনের “আবু হোরায়রা”,শেখ মাহমুদ আবু রাইয়াহ-র “আজওয়া আলা সুন্নাহ আল-মুহাম্মাদিয়া” এবং শেখ আল-মুজিরাহ”)এবং অতীতের সেই তথাকথিত গৌ্রবোজ্জ্বল রীতি পুনঃপ্রতিষ্টা করলো। তবে ইমাম হোসাইনের(আঃ)শাহাদাত এই সকল নীল-নকশা চিরতরে ব্যার্থ করে ছিল এবং তৎপরবর্তী খলিফাদের পক্ষে অতীত রীতি-নীতির পুনঃপ্রচলন আর কখনোই সম্ভবপর হয়ে উঠেনি। এই কারনে সঠিক ইসলামের বিপরীতে দরবারী ইসলামের উদ্ভাবন ও সংযোজন কার্যক্রমের আর কোন উন্নতি দেখা যায়নি(আব্দুল মালিকের অনেকগুলো কার্যক্রমের একটি হলো হজ্জ করার জন্য লোকজন কাবা ঘরের পরিবর্তে জেরুজালেম যাবে এবং তৈ্রীকৃ্ত ঘর তাওয়াফ করবে,কিন্তু এই উদ্ভাবন ধোপে টেকেনি। দেখুনঃ “তারিখ আল ইয়াকুবী”৩/৭-৮,নাজাফে প্রকাশিত)।
পরবতী খলিফারা নতুন কোন উদ্ভাবন চালু করতে পারেনি।
ইমাম হোসাইন(আঃ)এর শাহাদাত আরও একটি সুফল বয়ে এনেছিল। ইসলামের সঠিক রুপের অনুসারী এবং মহানবীর(সাঃ)হাদিস পুরুজ্জীবনের প্রচেষ্টাকারীদের প্রতি প্রতিশোধ্মুলক কার্যাবলী,যেমন জেল-জুলুম,নির্দয় আচরন,অত্যাচার-নির্যাতন এবং হত্যাকান্ড হ্রাস পেয়েছিল,কারন পরবর্তী রাজন্যবর্গ এই ধরনের যন্ত্রনাদায়ক ও অমানবিক ব্যাবস্থা গ্রহন করতে সমর্থ হয়নি। অতঃপর তারা পুববর্তী খলিফাদের নিয়োজিত কর্মীদের সৃষ্ট হাজার হাজার জাল হাদিস হতে সঠিক হাদিস বাছাই করার জন্য তাদের সকল প্রচেষ্টা নিয়োজিত করার সিদ্বান্ত নিল,এবং এইগুলো মুসলমানদের নিকট সহজলভ্য করে দিল।
উমর ইবনে আব্দুল আজিজের খেলাফতে আরোহনের মাধ্যমে শতবর্ষ ধরে হাদিসের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার অবসান ঘটলো।
হিজরী ২য় শতকের আগমনের সাথে সাথে দরবারী ইসলামের অনুসারীরা তাদের রাজন্যবগের নিকট হতে মহানবীর(সাঃ) হাদিস লিপিবদ্ব করার অনুমতি পেয়ে গেল। এই সুত্র ধরে মহানবীর এবং তাঁর সাহাবীদের জীবনী ভিত্তিক বিশাল সংখ্যক গ্রন্থ সংকলিত হলো। কিন্তু তাদের হাজার হাজার সংখ্যকের মধ্যে সঠিক ইসলামের প্রকৃত অনুসারীদের সুত্রে পাওয়া গেল মাত্র অল্প কয়েকটি হাদিস। তবে যারা রাজন্যবর্গের নিকট তাদের বিবেক বিক্রয় করে দিয়েছিল সেইসব তথাকথিত বুদ্বিজীবীদের কাছে ঐ হাদিসগুলো স্বল্প সংখ্যক হয়েও মাথা ব্যথার কারন হয়ে দাড়িয়েছিল। এর থেকে উত্তরনের জন্য তারা দুটো পন্থা অবলম্বন করেছিলঃ
প্রথমতঃবুদ্বিবৃত্তিকভাবে হাদিস বর্ননাকারী(রা’বী)-দের সম্পর্কে তথ্যানুসদ্বান এবং হাদিস বাছাইকরন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এই সিদ্বান্ত গৃহীত হয় যে,যদি কোন রা’বী ইমাম আলী(আঃ)এর কোন সুহ্রদ বা সহযোগী হতো,তবে তার বর্ননাকে দুর্বল বা মুল্যহীন ভাবা হতো(দেখুনঃহাদিসের উপর সকল সুন্নি বই)।
দ্বিতীয়তঃইমাম আলীর(আঃ)বর্ননা বাদ দিয়ে তারা হাদিসের বই সংকলিত করেছিল।
এইভাবে সংকলিত হাদিস বইগুলোকে “সহীহ” হিসাবে তারা পরিচিত করালো এবং সেহুলো সংখ্যায় নির্দ্ধারিত হলো ছয়টি। তন্মধ্যে বোখারীকে সবচেয়ে বেশী নির্ভরযোগ্য বিবেচনা করা হল,কারন তিনি ঐ পন্থা দু’টোর প্রতি বিশ্বস্ত ছিলেন সবচেয়ে বেশী। তিনি এমনকি খারেজী যেমন-উমর ইবনে খাত্তানের নিকট থেকেও হাদিস গ্রহন করেছেন,কিন্তু আবু আব্দুল্লাহ জাফর সাদিকের(আঃ) নিকট হতে কোন হাদিস তার সহীহতে অন্তর্ভুক্ত করেননি। একইভাবে তিনি খলিফাদের(১ম ৩ খলিফা)বর্নিত এই ধরনের সকল হাদিস,সেগুলো অসম্পুর্ন এবং টুকরা টুকরা হওয়া সত্বেও,তার সহীহতে অন্তর্ভুক্ত করেছেন।
এই কারনেই দরবারী ইসলামের অনুসারীরা আল-কোরানের পর বোখারীর হাদিস গ্রন্থকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মনে করে।
একই ভিত্তিতে আত্নজীবনী এবং ইতিহাসের গ্রন্থসমুহের মধ্যে তারিখে তাবারী-কে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ইতিহাস গ্রন্থ হিসাবে গন্য করা হয়। কেননা তিনিও এই ক্ষেত্রে বোখারীর পদাংক অনুসরন করেছিলেন। তিনি নব-ইসলামের কর্মকর্তাদের নিকট সম্মানিত ব্যক্তিবর্গের স্বার্থের সাথে ন্যুনতমভাবেও সাংঘর্ষিক হয় এমন কোন হাদিস তার গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত না করার ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নশীল ছিলেন। অন্যদিকে তিনি সেই সকল হাদিসও তার গ্রন্থে উদ্বৃতি হিসাবে এনেছেন যেগুলো ১ম ৩ খলিফাদের নিষ্টুর কার্যসমুহকে ন্যায়ানুগ প্রতিপন্ন করেছিল।
এজন্য দেখা যায়,তাবারী তার গ্রন্থে ইসলামের শত্রুদের বানানো শত শত মনগড়া হাদিস বর্ননা করেছেন,এবং এইভাবে মহানবী(সা)ও ১ম ৩ খলিফাদের সময়কালের ঐতিহাসিক সকল ঘটনাকে বিকৃ্ত করেছেন(সুত্রঃ “আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাহ”,২য় খন্ড,লেখক-সাইয়েদ মুরতাজা আশকারী রঃ)। এইকারনে সেই লেখক(তাবারী) খলিফা ও তাদের সহযোগিদের প্রতি তার একনিষ্ট আনুগত্যের কারনে এত বিখ্যাত হয়েছিলেন যে,তিনি (তাবারী)ঐতিহাসিকগনের পুরোধা(নেতা) হিসাবে অভিহিত হন। তার পরবর্তী সময়ে ইবনে আসির,ইবনে কাসীর এবং ইবনে খালদুনের মত অন্যান্য ঐতিহাসিকগন মহানবী(সাঃ)এর সাহাবীদের ইতিহাসের ক্ষেত্রে তার লেখনীর উপর নির্ভর করেছেন(দেখুনঃ “আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাহ”,২য় খন্ড,লেখক-সাইয়েদ মুরতাজা আশকারী রঃ)।
৪র্থ হিজরী শতকের পরের সময়ে দরবারী ইসলামের অনুসারীরা ঐ ৬টি হাদিস গ্রন্থ ছাপার অক্ষরে প্রকাশ করে এবং সেগুলোর ভিত্তিতে কার্যক্রম গ্রহন পরিচালনার ঘোষনা জারী করে।
ইতিহাস লেখকের ক্ষেত্রে কেবল্মাত্র তাবারী ও তার অনুসারীদেরকে প্রধান উৎস হিসাবে গন্য করার পরিনামে লেখকগনের সংকলিত শত শত ইতিহাস,হাদিস এবং তাফসীরগ্রন্থ বিভ্রান্তির অতল তলে নিমজ্জিত হয়েছে(বালাজুরীর বিশালাকার ইতিহাস গ্রন্থ “আন্সাব আল-আশরাফ” এবং মাসুদীর মধ্যমাকার ইতিহাস গ্রন্থ “আখবার আল-জামান” এবং “আওসাত” হতে সংক্ষিপ্ত আকারে উদ্বৃত)।
এই পথ ধরে সঠিক ইসলামের মহানবীর(সাঃ)যা মানবজাতির জন্য অনুগ্রহ হিসাবে এনেছিলেন তার অনুসন্দ্বান এবং গবেষনা সকলের জন্য চিরতরে বন্দ্ব হয়ে যায়।
৪র্থ হিজরী শতকের পর হতে আজ পর্যন্ত মানবগোষ্টির প্রজন্মসমুহ সেই গ্রন্থকারগনকে অন্দ্বভাবে অনুসরন করেছিল। এর পরিনামে এখন,মহানবীর(সাঃ) আহলে বাইতের(নবী পরিবার আঃ)ধারার অনুসারীগনকে ব্যাতিক্রম হিসাবে বাদ দিলে,সকল মানুষ জানে যে, “ হাদিস উদ্ভাবনকারীদের” মাধ্যমে বাস্তবরুপ প্রাপ্ত দরবারী ইসলামই হচ্ছে সর্বজনস্বীকৃত ইসলাম। অতপর আমরা দেখতে পাই যে,ইসলামের সঠিকরুপ,এর বিধিবিধান,আদেশ-নিষেধ,নীতিমালা ও আমল,ইতিহাস এবং অতীতের প্রথিতযশা ব্যক্তিবর্গের জীবনীর সঠিক চিত্র জানার পর সর্বপ্রধান বাধা হচ্ছে জাল হাদিসের অস্ত্বিত্ব।
আমরা উপরে যা উল্লেখ করেছি তার আলোকে ইহা সময়ের অতিজরুরী গুরত্বপুর্ন হয়ে দেখা দিয়েছে যে,ইসলামী বিশ্বের সকল প্রজ্ঞাবান এবং জ্ঞানবান পন্ডিত সঠিক ইসলাম সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য বিস্তারিত তথ্যানুসদ্বান করতে অগ্রসর হবেন।
ইহা খুজে পাবার একমাত্র উৎস হচ্ছে রাসুলের(সাঃ) আহলে বাইতের(আঃ) ধারা।
শেষ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।