স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি । তবে স্বপ্ন দেখা নিয়ে কিছুদিন যাবত একটা সমস্যা হয়ে গেছে । নতুন দেখা স্বপ্নগুলো কেন যেন পূরণ হচ্ছে না খুব শীঘ্রই এই সমস্যা কেটে যাবে এই আশাতেই আছি ।
ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনে গিয়েছি টিকিট কাটতে। জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ দূরত্ব এবং সময়সাপেক্ষ ভ্রমন, তাও আবার সম্পূর্ণ একা।
মনে মনে কিছুটা অস্থির হয়ে আছি এজন্যে । স্টেশন বেশ ফাঁকা, আর কেমন যেন গুমোট একটা আবহাওয়া । একটু দূরে রেল লাইনের উপর অনেক মানুষ কিছু একটাকে ঘিরে গোল হয়ে দাড়িয়ে আছে। কারণ খুঁজতে গিয়ে যা শুনলাম তা মনে হলে কিছু দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠে এখনো শরীর শিউরে উঠে । আমি আসার কিছুক্ষন আগের ঘটনা ।
আমার থেকে দুই এক বছরের বড় এক ছেলে দুই রেল লাইনের মাঝখান দিয়ে হাঁটছে, কানে মোবাইল ফোন ( চলন্ত অবস্থায় এ কাজ আমরা অনেকেই করি) । সময় মধ্য দুপুর, রেল লাইনের আশেপাশে মানুষজন প্রায় নেই বললেই চলে। মোবাইলে কথা বলতে বলতে ছেলেটা এতোটাই তন্ময় হয়ে গেছে যে চারপাশের কোন কিছুই তার খেয়াল নেই, দূরে যে একটা রেলগাড়ি ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে তাও সেটাও না । রেল চালক সম্ভবত ভাবলেন সামনের মোবাইলে কথা বলতে বলতে চলা মানুষটা একটু পরেই পেছনে ট্রেনের শব্দ পেয়ে লাইন থেকে সরে যাবে, তাই আর হুইসেল বাজালেন না ।
ট্রেন এগিয়ে আসছে ।
সামনে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম । চালক ওখানে রেল থামাবেন । বেশ কাছাকাছি চলে আসার পরও চালক দেখলেন সামনের মানুষটা লাইন থেকে সরছে না, তার কানে ট্রেন আসার শব্দ যায়-ই নি । মানুষটা হাটছেও আস্তে আস্তে আর আন্তঃনগর ট্রেনটার গতি বেশ ভালোই থাকায় দুরুত্ব কমছে দ্রুত। চালক এবার বাধ্য হয়ে হুইসেল বাজালেন ।
যারা খুব কাছ থেকে ট্রেন, লঞ্চের হুইসেলের তীক্ষ্ণ শব্দ শুনেছেন তারা অবশ্যই জানেন হঠাৎ শুনলে অনেক মানুষই চমকে গিয়ে সম্পূর্ণ হতবুদ্ধি হয়ে যাবে ...এবং ঠিক এই ব্যাপারটাই ঘটলো । ....... মোবাইলে কথা বলতে বলতে হাঁটতে থাকা মানুষটা হঠাৎ খেয়াল করলেন তার ঠিক পেছনেই একটা ট্রেন চলে এসেছে, তীব্র স্বরে বাঁজছে হুইসেল, প্রতি মুহূর্তে কমছে দূরত্ব । ঘটনার আকস্মিকতায় তিনি একেবারে বোধশক্তিহীন হয়ে গেলেন। ট্রেন লাইন থেকে এক পা বাড়িয়ে ডানে বা বায়ে চলে গেলেই তিনি বেঁচে যান । কিন্তু সেটা তার মাথায় আসলোই না, বরং হতভম্ব, আতঙ্কিত হয়ে তিনি লাইন ধরে ছুটতে থাকলেন সোজা সামনের দিকে।
ট্রেন চালক সামনে থেকে সরে যাওয়ার জন্যে বারবার হুইসেল বাজাচ্ছেন । ট্রেন চলে এসেছে মানুষটার আরো কাছে । চালক চাইলে ব্রেক করতে পারেন, কিন্তু এখন ব্রেক করলে ট্রেন স্টেশনে পৌছানোর বেশ কিছুটা আগেই থেমে যাবে । তিনি ভাবছেন সামনে থেকে মানুষটা ডানে বা বায়ে চলে যাবে । তাই তিনি এখনো ব্রেক টানছেন না ।
প্রচন্ড আতঙ্কিত অবস্থায় মানুষের চিন্তা শক্তি নিষ্ক্রয় হয়ে যায় । মানুষটা এক পা দিয়ে ডানে বা বা'য়ে সরে না গিয়ে, তিনি লাইন ধরেই দৌড়াতেই থাকলেন এবং হঠাৎ স্লিপারে পা বেঁধে লাইনের মাঝখানে ছিটকে পরে গেলেন। ট্রেনের চালক এবার মরিয়া হয়ে ব্রেক টানলেন, কিন্তু ততক্ষনে বহু দেরী হয়ে গেছে । ব্রেক করলেও চলন্ত ট্রেন থামতে বহু সময় লাগে । কাজেই ব্রেক করেও কাজ হলো না ।
ট্রেন লাইনের উপরের মানুষটার শরীরের কোমড়ের উপর থেকে মাথা পর্যন্ত অর্ধেক ছেঁচড়ে নিয়ে আসলো স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম পর্যন্ত আর শরীরের বাকি অর্ধেক পরে রইলো কয়েকশ গজ পেছনে রেল লাইনের উপর । ....... অবশ্য ট্রেনের নিচে পিষ্ট হয়ে যা অবশিষ্ট ছিলো ওসবকে বোধহয় আর মানুষের শরীর বলা যায় না ।
আশ্চর্যের ব্যাপার মোবাইলটার কিছুই হয় নি, এমনকি ডিসপ্লের গ্লাসটাও ভাঙ্গে নি। আমি যখন জটলার কাছে গেলাম তখন শুনলাম একজন মোবাইলটা হাতে নিয়ে কন্টাক্ট লিস্ট থাকা মোবাইল মালিকের বাড়ির নম্বার খুঁজে ফোন দিচ্ছেন ...
...." হ্যালো .. হ্যালো । হ্যা ভাই শুনছেন? ... এই মোবাইলটা যার তিনি আপনার কি হন? ... ছোট ভাই? .. আপনি কি এখন একটু ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনে আসতে পারবেন? ... জ্বী জ্বী, জরুরী ।
... কতক্ষণ লাগবে আসতে? .. হ্যালো .. হ্যালো । "
ওমন একটা কল কিন্তু আমাদের পরিবারেও চলে আসতে পারে যে কোন দিন, আমাদের জন্যেই! কারণ রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মোবাইলে কথা বলা, হাত দিয়ে স্ক্রিনের উপরের রোদ ঢেকে চোখের সামনে এনে মেসেজ পড়া, লিখা, ফেসবুক ব্রাউজিং করা আমাদের অনেকের জন্যেই অতি সাধারণ ব্যাপার । এ কাজে অভ্যস্ত সবাইকে শুরুর কথাটা আবারো বলি : " Your mobile talking, messaging, facebooking can wait. But unfortunately life can't."
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।