বিচ্ছিন্ন ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পরও চট্টগ্রামে শিবিরের ডাকা অর্ধদিবস হরতালে জনগণের সাড়া মেলেনি।
বরং আতঙ্ক সৃষ্টির সব চেষ্টা উপেক্ষা করে মানুষ রাস্তায় নেমেছেন, কর্মস্থলে গেছেন। জীবনযাত্রাও ছিল প্রায় স্বাভাবিক। পুলিশ এক শিবির কর্মীসহ চারজনকে আটক করেছে।গতকাল সকালে হরতাল শুরুর পর নগরীর বাদুগতলায় শিবির কর্মীরা ঝটিকা মিছিল করে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়।
এরপর সকাল সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর ষোলশহর বেবি সুপার মার্কেটের সামনে শিবির কর্মীরা সকালে হরতালের সমর্থনে ঝটিকা মিছিল বের করে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় আতঙ্কে লোকজন হুড়োহুড়ি করতে থাকে। মিছিল থেকে ইটপাটকেল ছুড়ে শিবির কর্মীরা ৩-৪টি অটোরিকশার কাচ ভাঙচুর করে এবং একটি অটোরিকশায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর শিবির কর্মীরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা অটোরিকশাটির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে বলে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে।
নগর পুলিশের সহকারী কমিশনারের বরাত দিয়ে বাংলানিউজ জানিয়েছে, তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে গাড়ির পোড়ানোর কোনো আলামত পাননি। স্থানীয়রাও কেউ এ ধরনের কোনো ঘটনা দেখেনি বলে আমাদের জানিয়েছেন। সম্ভবত পুরনো কোনো ঘটনার ছবি শিবির কর্মীরা আজকের হরতালের ছবি বলে সরবরাহ ও প্রচার করেছেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নগরীর ডিসি হিল এলাকায় শিবির কর্মীরা ঝটিকা মিছিল করে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ নগরীর আন্দরকিল্লা ও কাজির দেউড়ি এলাকা থেকে তিনজনকে শিবির কর্মী সন্দেহে আটক করেছে।
আমিন জুট মিল এলাকায় পিকেটিংয়ের চেষ্টাকালে এক শিবির কর্মীকে আটক করা হয়েছে। এদিকে বিচ্ছিন্নভাবে এসব সহিংসতার পরও নগরী ও জেলায় হরতাল চলেছে অনেকটা ঢিলেঢালাভাবে। হরতালে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগরীতে প্রায় দুই হাজার অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। হরতাল উপেক্ষা করে নগরীতে ভোর থেকে চলাচল করেছে বিপুল সংখ্যক মিনিবাস, হিউম্যান হলার, অটোরিকশাসহ বিভিন্ন গণপরিবহন। রিকশা চলাচলও একেবারেই স্বাভাবিক দেখা গেছে।
সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন কারখানা, অফিসের কর্মজীবী নারী-পুরুষ কর্মস্থলে যেতে রাস্তায় নেমেছেন। স্কুল-কলেজমুখী শিক্ষার্থীদেরও রিকশা-অটোরিকশা করে ছুটতে দেখা গেছে। নগরীতে দোকানপাট, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিস, অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও খোলা ছিল। ট্রেন চলাচলও স্বাভাবিক ছিল। বিক্ষিপ্তভাবে দূরপাল্লার কিছু যানবাহনও হরতালের মধ্যে চট্টগ্রাম ছেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (পশ্চিম) আরেফিন জুয়েল।
চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য ওঠানামা হরতালের মধ্যে একেবারেই স্বাভাবিক ছিল বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
রাজশাহীতে শিবির-পুলিশ সংঘর্ষ : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট এলাকায় পুলিশের সঙ্গে শিবির কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল দুপুর আড়াইটায় শিবির কর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করে ককটেল বিস্ফোরণ ও ভাঙচুর করলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে এতে বড় ধরনের কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ। প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, রাবি শিবিরের সেক্রেটারি সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়াসহ ৮ নেতা-কর্মীকে আটকের প্রতিবাদে দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেট থেকে মিছিল বের করে শিবির।
মিছিলটি কাজলা এলাকার কেডি ক্লাবের মোড়ের দিকে এগিয়ে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় শিবির কর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে এবং চারটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। তারা রাস্তা অবরোধের চেষ্টা চালায় এবং একটি অটোরিকশা ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ ১৫-২০ রাউন্ড শটগানের গুলি, রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করলে শিবির কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। দৌড়ে পালানোর সময় শিবির কর্মীরা কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম আবদুস সোবহান বলেন, শিবির কর্মীরা ভাঙচুর চালানোর চেষ্টা করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। শিবির কর্মীরা ককটেল ও গুলি ছুড়েছে বলে জানান তিনি। গতকাল ভোরে র্যাব-৫ এর একটি দল তাদের আটক করে। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ দলীয় নথিপত্র বিস্ফোরক দ্রব্য জব্দ করা হয়। এদিকে শীর্ষ নেতাদের আটকের ঘটনায় নাশকতার আশঙ্কায় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
র্যাব-৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নগরীর সাহেব বাজার এলাকায় শিবির পরিচালিত কনটেস্ট কোচিং সেন্টারে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। একই সঙ্গে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র, নয় রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল এবং ১৩টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।
ন আরও জানান, আটক অন্য সবাই রাবি শাখা শিবিরের শীর্ষ নেতা। তারা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার সঙ্গে জড়িত। তবে র্যাব কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের নাম পরিচয় জানানো হবে।
এদিকে শিবির সেক্রেটারি আটকের ঘটনায় রাবি ক্যাম্পাসে শিবিরের নাশকতার আশঙ্কায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তারিকুল হাসান বলেন, 'ক্যাম্পাসে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।