সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, ‘আমাদের রাজনীতিবিদেরা যতই অস্থিরতা সৃষ্টি করুন না কেন, আমাদের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, পোশাককর্মীরা অর্থনীতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। কারণ, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জ। ’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ থেকে রাজনীতিবিদেরা শিক্ষা নিয়ে অনুতপ্ত হবেন।
নবম সিটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কার ঘোষণা অনুষ্ঠানে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এ কথা বলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার স্থানীয় এক হোটেলে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে নবমবারের মতো এই পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দেয় বিশ্বখ্যাত সিটিগ্রুপের সিটি ফাউন্ডেশন।
সারা দেশ থেকে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মনোনয়ন পাওয়ার পর উপদেষ্টা পরিষদে ও বাছাই কমিটির মাধ্যমে নির্বাচনের পর ২০১৪ সালের মার্চ মাসে চূড়ান্তভাবে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হবে।
এই পুরস্কার মোট পাঁচটি বিভাগে দেওয়া হবে। এগুলো হলো কৃষি খাতে শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা, শ্রেষ্ঠ নারী ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, শ্রেষ্ঠ ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থা ও সৃজনশীল ক্ষুদ্রঋণ প্রদানকারী সংস্থা।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রোকেয়া আফজাল রহমান, শক্তি ফাউন্ডেশন ফর ডিসঅ্যাডভান্সমেন্ট উইমেনের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী পরিচালক হুমায়রা ইসলাম, উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সেলিমা আহমাদ, ক্রেডিট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরামের নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল, সিটি কান্ট্রি অফিসার রাশেদ মাকসুদ প্রমুখ।
ক্ষুদ্রঋণব্যবস্থা সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এসব দরিদ্র মানুষের কাছে যেতে পারে না বলেই ক্ষুদ্রঋণ উদ্ভাবিত হয়েছে।
এ জন্য সারা বিশ্বে এটা নিয়ে এত আলোচিত হচ্ছে। ক্ষুদ্রঋণ চালুর দিকে সমালোচনা করে বলা হয়েছিল, বাণিজ্যিক ব্যাংকই ঋণ দিয়ে তা ফেরত পায় না। আর জামানত ছাড়া প্রদত্ত ক্ষুদ্রঋণের অর্থ ফেরত আসবে না। ’
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া হয় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে। কে কত ঋণ পেল, তা সবাই জানে।
কিন্তু বাণিজ্যিক ব্যাংকে তা করা হয় না। ক্ষুদ্রঋণের অভিজ্ঞতা এখন কৃষিঋণের ক্ষেত্রে প্রয়োগের চিন্তাভাবনা চলছে। ’ তিনি আরও বলেন, ‘বড় ঋণগ্রহীতাকে ঋণ দেওয়ার মতো অবস্থা নেই ক্ষুদ্রঋণব্যবস্থার। সালমান রহমানকে ঋণ দিতে পারবে না ক্ষুদ্রঋণ। আর তাঁকে সামলানোর মতো ক্ষমতাও নেই ক্ষুদ্রঋণ ব্যবস্থার।
’
এই অর্থনীতিবিদের মতে, সারা দেশে প্রায় দুই কোটি ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা রয়েছেন। এর মধ্যে ৮ থেকে ১০ শতাংশ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা রয়েছেন, যাঁরা কর্মসংস্থান করছেন।
রোকেয়া আফজাল রহমান বলেন, সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশ আশপাশের দেশের তুলনায় ভালো করছে। এর কারণ, ক্ষুদ্রঋণ তথা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। ক্ষুদ্রঋণ নিয়েছেন দুই কোটি লোক, আর এর প্রভাব পড়ছে ১০ কোটি লোকের ওপর।
সেলিমা আহমাদ বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের পণ্যের বাজারজাতকরণে সহায়তা করতে হবে। তাহলে এই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা বৃহৎ অর্থনৈতিক পরিসরে যেতে পারবেন।
হুমায়রা ইসলাম বলেন, প্রচলিত ব্যাংকব্যবস্থায় দরিদ্র মানুষ ভালো ব্যবহার পান না। তাই আনুষ্ঠানিক ব্যাংক যতই চেষ্টা করুক, গরিব মানুষ ঋণ নেবে কি না, সন্দেহ রয়েছে। তবে এই পরিস্থিতির উন্নয়নে সময় লাগবে।
রাশেদ মাকসুদ বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে ডামাডোল চলছে। এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সম্মাননা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
সিটি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা পুরস্কারের জন্য এবারের উপদেষ্টা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। এ ছাড়া এই পরিষদে ব্যাংকার, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব রয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।