মহানগর ঢাকায় এখন ঠিক কত মানুষ বাস করেন, আন্দাজ করতে পারেন? হিসাব বলছে, প্রায় দেড় কোটি। আর ঢাকা সিটি করপোরেশনের হিসাব বলছে, এই বিপুল জনসংখ্যার নগরে সাধারণ পথচলা মানুষের জন্য গণশৌচাগারের (পাবলিক টয়লেট) সংখ্যা ৬০টি। সংখ্যায় অপ্রতুল হলেও নোংরায় এগুলো সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। নিতান্ত বিপদে পড়ে শুধু পুরুষেরা এসব গণশৌচাগার ব্যবহার করতে বাধ্য হন। আর নারীদের কথা না বলাই ভালো।
নগরপরিকল্পনাবিদ নজরুল ইসলাম প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, রাজধানীতে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ লাখ মানুষ কাজের তাগিদে বাড়ি থেকে বের হন। তাঁদের শৌচাগারের প্রয়োজন। সে হিসাবে মহানগর ঢাকায় শৌচাগারের যে সংখ্যা, তা খুবই নগণ্য। জনসংখ্যার বিবেচনায় শহরে বেশ কয়েক হাজার শৌচাগার দরকার।
ওয়াটারএইডের এ দেশের পরিচালক খায়রুল ইসলাম বলেছেন, যেখানে লোকসমাগম হয়, সে জায়গাতেই পর্যাপ্ত শৌচাগার থাকা প্রয়োজন।
প্রতিটি বাস স্টপেজে আট-দশটি শৌচালয় থাকা দরকার। এ ছাড়া পার্ক, রেলস্টেশন, প্রেক্ষাগৃহের সমানে অর্থাত্ যেখানে লোকজনের যাতায়াত আছে, সেখানেই পর্যাপ্ত ব্যবহারোপযোগী শৌচাগার থাকা দরকার বলে তিনি মনে করেন।
ঢাকা সিটি করপোরেশনের (ডিসিসি) কর্মকর্তারা বলেছেন, জায়গার অভাবে তাঁরা নতুন গণশৌচাগার নির্মাণ করতে পারছেন না। আর যেখানে জায়গা আছে, সেখানে শৌচাগারের চাহিদা কম। শৌচাগারের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ব্যবহারোপযোগী করা প্রসঙ্গে ঢাকা সিটি করপোরেশনের (দক্ষিণ) প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহম্মেদ বলেন, বার্ষিক চুক্তিতে কিছু শর্তসাপেক্ষে শৌচাগারগুলো ইজারা দেওয়া হয়।
এ ক্ষেত্রে শৌচাগার পরিষ্কার রাখার দায়িত্ব ইজারাদারের। কিন্তু ইজারাদারের ওপর নজর রাখার দায়িত্ব কার, সে প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি।
ডিসিসির আওতাধীন এলাকায় যে ৬০টি শৌচাগার আছে তার ৩৭টি দক্ষিণে এবং ২৩টি উত্তরে। সেন্টার ফর আরবান স্টাডিজের এক জরিপে দেখা গেছে, এই ৬০টি শৌচাগারের মধ্যে ৪৭টি চালু আছে। আর মাত্র দুটিতে নারী কর্মী আছেন।
বাকিগুলোতে নারী কর্মী না থাকায় নারীরা সেখানে যান না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মতিন প্রথম আলো ডটকমকে বলেছেন, জনবহুল রাজধানীতে পর্যাপ্ত শৌচাগারের অভাবে মানুষ রাস্তাঘাট, ড্রেনসহ যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগ করছেন। পয়োবর্জ্য গিয়ে মিশছে নদীর পানিতে। এতে প্রতিনিয়ত পরিবেশদূষণ ঘটছে। পরিকল্পিত উপায়ে জনসংখ্যার হিসাব কষে গণশৌচাগারের সংখ্যা বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি।
শৌচাগার না অত্যাচার: গত শনিবার নিউমার্কেটের গণশৌচাগার থেকে নাকে ওড়না চেপে বেরিয়ে আসছিলেন একজন নারী। চোখে-মুখে একরাশ বিরক্তি। বললেন, ভেতরে এত দুর্গন্ধ, নেহাত বিপদে না পড়লে কেউ এখানে ঢুকবে না।
ওসমানী উদ্যানের গণশৌচাগার ব্যবহার করলে পাঁচ টাকা দিতে হয়। কিন্তু টাকা নিলেও নোংরা ও দুর্গন্ধের কারণে সেখানে ঢোকা কঠিন।
হাত ধোয়ার সাবানও নেই। একই অবস্থা নগরের ফার্মগেট, মহাখালী, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার গণশৌচাগারগুলোর।
নোংরার পাশাপাশি গণশৌচাগারগুলোতে (বিশেষ করে নারীদের ব্যবহূত) অশ্লীলতার মাত্রা আঁতকে ওঠার মতো। দেয়ালে নানা রকম অশ্লীল কথা লেখা, ছবিও আঁকা আছে। দেওয়া আছে মুঠোফোন নম্বর ও কুিসত ইঙ্গিত।
এ যেন আরেক নোংরাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার তীব্র প্রতিযোগিতা।
ডিসিসি-ইজারাদার কাদা ছোড়াছুড়ি: ডিসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, নিয়মিত পরিষ্কার করা, ব্লিচিং পাউডার ছিটানো, হাত ধোয়ার সাবান সরবরাহসহ আরও কিছু শর্তে ইজারা দেওয়া হয়। চুক্তিতে শৌচাগারগুলো নারীদের ব্যবহারোপযোগী রাখার কথাও বলা আছে। মাঝেমধ্যে ডিসিসির কর্মকর্তারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে শৌচাগারগুলো পরিষ্কার রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু তাতে কোনো ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
মো. মোতালেব হোসেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের দুটি শৌচাগার ইজারা নিয়েছেন। একটি ওসমানী উদ্যানে, অপরটি চকবাজারে। তিনি বললেন, শৌচাগার পরিষ্কার রাখার জন্য একজন লোক রাখা হয়েছে। কিন্তু তা প্রতিদিন ব্যবহার করে শত শত লোক। তাই নোংরা।
আর সাবান না থাকার কোনো উত্তর মেলেনি তাঁর কাছ থেকে।
এ ছাড়া আছে পয়সা না দিয়ে গণশৌচাগারগুলো বছরের পর বছর দখলে রাখার ইজারাদারদের নানা ফন্দি-ফিকির।
বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মহানগরে যে কয়টি হাতে গোনা গণশৌচাগার আছে, সেগুলো পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা ব্যস্ত আছেন পরস্পরের দোষ ধরতে। আর এর খেসারত দিচ্ছেন সাধারণ মানুষ। জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিত্সাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ইকবাল কবির বলেন, প্রস্রাব চেপে রাখার কারণে মূত্রতন্ত্রের প্রবাহে বিঘ্ন ঘটে।
এতে করে মূত্রে সংক্রমণ ও কিডনির নানা রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।