আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লালন দর্শনের ভাষ্য ''শহরে ষোলজন বোম্বেটে'

রংপুর

লালন দর্শনের ভাষ্য ''শহরে ষোলজন বোম্বেটে''- ফকির লালন সাঁইজি তার দেহতত্ত্ব মুলক একটি গানে বলেন- শহরে ষোলজন বোম্বেটে করিয়া পাগলপারা, তারাই নিলো সব লুটে । রাজ্যেশ্বর রাজা যিনি, চোরের ও শিরোমণি নাশিল করিব আমি, কোন সময় কার নিকটে । ছয় জনা ধনী ছিল, তারা সব ফতুর হলো কারবারে ভঙ্গ দিলো, কখন যেন যায় উঠে । ছিল ধন-মাল পোরা, খালি ঘর জমা করা লালন কয় খাজনারই দায়, কখন যেন যায় লাটে । এই ষোলজন বোম্বেটে হলো মানব নফসের ছয় রিপু এবং দশ ইন্দ্রিয় ।

আমাদের নফস বা মন বা জীবনীশক্তি বা জীব আত্মা স্বভাবতই ভোগবাদী । মন তার ষড়রিপুর কারণে বিষয় থেকে বিষয়ান্তে সর্বদা ছুটে চল মানবদেহে ষড়রিপু কাজ করে মনের দশটি ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে । যথাbr /> ষড়রিপু- কাম(আসক্তি/যৌনতা), ক্রোধ (রাগ), লোভ, মোহ (মায়া), মদ(অহংকার, আত্মগর্ব) এবং মাতসর্য (হিংসা, ঈর্শা) । মনের ইন্দ্রিয় দু'প্রকার- পঞ্চ জ্ঞান ইন্দ্রিয়- চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা , জিহ্বা ও ত্বক । পঞ্চ কর্ম ইন্দ্রিয় - বাক (মুখ), হস্ত (হাত), পাদ (পা), পায়ূ(গূহ্যদ্বার বা মলদ্বার) এবং উপস্থ (জননেন্দ্রিয় বা যৌনদ্বার) ।

মন আবার জ্ঞান ইন্দ্রিয় ও কর্ম ইন্দ্রিয় এই উভয় ইন্দ্রিয়ের অন্তর ইন্দ্রিয় । মন, বুদ্ধি, আমিত্ব ও চিত্ত (আত্ম প্রকৃতি) এই চারটিকে মিলিয়ে অন্ত:করণ বা ক্বালব বলা হয় । কালবে সদায় তিনটি ভাব বা গুণের উদয় হয়। যথাbr /> সতভাব (সত্ত্বগুণ) : বিশ্বাস, ভক্তি, প্রেম, মনের বিশুদ্ধতা, সত্যবাদিতা ইত্যাদি উতপত্তি হয় কালবের সতভাব হতে । রাজসিক ভাব (রজ:গুণ) : লোভ- লালসা, ইন্দ্রিয়শক্তি, ভোগবিলাস, আরাম-প্রিয়তা, অহংকার ও হিংসা ইত্যাদি উতপত্তি হয় কালবের রাজসিকভাব হতে ।

তামসিক ভাব (তমগুণ) : নিদ্রা, আলস্য, লাঞ্চনা-বঞ্চনা, খুন- খারাবি, জালিয়াতি, লুন্ঠন, চোর্য্যবৃত্তি, সতীত্বহরণ ইত্যাদি উতপত্তি হয় কালবের তামসিক ভাব হতে । আত্মার (রুহের) স্বভাব হতে সতভাবের (সত্ত্বগুণ) উদয় হয় । মাতৃরজ: হতে রাজসিক ভাবের (রজ:গুণ) উদয় হয় । পিতৃবীজ (বীর্য) হতে তামসিক ভাবের (তমগুণ) উদয় হয় । এই মাতৃরজ: এর চারবস্তু এবং পিতৃবীজের চারবস্তু হতে দেহ ও দেহের শক্তি (নফস, মন, জীবআত্মা) তৈরি হয় ।

আল্লাহর দশ আসে রুহ(আত্মা) হতে । এজন্য বলা হয়, ১৮ চিজে মানব তৈরি । ১৮ চিজ দিয়ে তৈরি মানবের মধ্যে উপরোক্ত তিনভাব সদায় কালবে উদয় হচ্ছে । ষোলজন বোম্বেটে (ষড়রিপু ও দশ ইন্দ্রিয় ) মিলে-মিশে সদায় কালবে এই তিন ভাবের(সত্ত্ব, রজ:, তম) মধ্যে আঘাত হানে । কিন্তু রুহের দুটি গুণ জ্ঞান ও বিবেক (সাধকরা অনেক সময় এ দুটিকে সুমতি নারী বলে ) দ্বারা নফস (মন, জীবনীশক্তি) পরিচালিত হলে কালবে সতভাবের উদয় হয় এবং মন সর্বদা ভালো কাজে ধাবিত হয় ।

অপরদিকে নফসের ষড়রিপু (সাধকরা অনেক সময় এই ছয় কুরিপুকে কুমতি নারী বলে ) তার দশ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে রুহের জ্ঞান ও বিবেক কে (সুমতি নারী) পরাজিত করতে পারলে মানব মনে সর্বদা রাজসিক ভাব (রজ:গুণ) এবং তামসিক ভাব (তমগুণ) বিরাজ করে । ফলে মানুষ খারাপ চিন্তা, খারাপ কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না এবং মন সর্বদা দুনিয়া রঙ্গিন আবেদনের দিকে ছুটে চলে । ফলে এই মানবই আস্তে আস্তে পশুত্ব স্বভাব গ্রহণ করে । ফলে আকৃতিতে মানুষ থাকলেও প্রকৃতিতে (স্বভাবে) পশু বা পশুর চেয়ে খারাপ হয়ে যায়

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.