আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরিবর্তনের পথে দরকার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির বিকাশ-২ : থিউরি অব ডিজিটাল বাংলাদেশ

আমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগে অধ্যয়ন করছি। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ কনসেপ্টটা আসলে গোলমেলে আমার কাছে । আমার মনে হয়েছে প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে সমাজের lower level থেকে upper level পর্যন্ত গ্রাম শহর সবখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রসারই ডিজিটালাইজেশন অব বাংলাদেশ । কথা হল এটা কতটুকু হচ্ছে বা হবে এবং বাংলাদেশেই এটা কতটা ফলপ্রসূ ।

প্রথমেই একটা ঘটনা দিয়ে শুরু করি। নুতন বছরের শুরুতেই আমাদের একজন কোর্স শিক্ষক একটা এসাইনমেন্ট দেন । তারিখ হল ১জানুয়ারি। জমা দেওয়ার তারিখ ৮জানুয়ারি। দুর্ভাগ্যবশত সেদিন আমি ক্লাসে যাইনি ।

খবর পেলাম ২তারিখ । স্যার কিছু রেফারেন্স বই দিলেন সেমিনার থেকে নিতে বললেন । বলাবাহুল্য বইগুলো সেমিনার এবং লাইব্রেরি কোনটাতেই পাইনি । বলতে পারেন "এক্সক্লুসিভ" বই । যাক শুনার পর গেলাম সেমিনারে বইয়ের জন্য ।

শুনলাম আমাদের জ্ঞানী এবং মেধাবী কয়েকজন সহপাঠী ফটোকপি করার জন্য নিয়েছে বইগুলো । সুতরাং আমাদের মতো গাধা স্টুডেন্টদের জন্য ওই বইগুলান ভাগ্যে জুটল না। ভাবলাম "কবে পাই তারতো কোন নিশ্চয়তা নাই যাই লাইব্রারিতে পাই কিনা দেখি " !!!!!!!! প্রিয় পাঠক,আপনাদের জ্ঞাতার্থে বলি,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কেন্দ্রিয় লাইব্রেরির মতো এত বই এর সমাহার এবং এতো বড় গ্রান্থাগার বাংলাদেশের আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে নাই । কিন্তু সেখান থেকে পড়ার বই খুজে নিতে আপনার জান খারাপ হয়ে যাবে । ঘটনা হল কি গ্রন্থাগারের বুকলিস্ট এর জন্য কম্পিউটার রুমে ঢুকলেই দেখা যায় রুমে ৪টির মতো মান্দাতার আমলের কম্পিউটার মজুদ আছে ।

খুব খুশির সংবাদ যাইহোক !!!!দুঃখের বিষয় হল সেখানে ২টা কম্পিউটার চালু আছে এবং অপারেটর একজন । কাহিনী হচ্ছে ,সেই কম্পিউটারে গ্রন্থাগারের ৩ভাগের ১ভাগ বই এর তালিকা এবং বই কোড লোড করা নাই । স্যাররা রেফেরেন্স দেয় আর গিয়ে দেখা যায় কোড নেই তো বইও নেই । কম্পিউটারে যে বইগুলোর নামই নেই অনেকসময় সেগুলো পাওয়া যায় ক্যাটালগে । কোন সুযোগ নেই পছন্দমত বই নেবার আগে কোড পরে বই ।

এত্তোবড় গ্রন্থাগারে বই এর অভাব নেই কিন্তু বিষয়ভিত্তিক বই এর সন্ধানে আপনাকে একমাস ধরে বইএর লিস্ট এবং কোড সংগ্রহের জন্য হাটাহাটি করতে হতে পারে । এই ডিজিটাল বাংলাদেশ। !!!! এবার আসি আসল ঘটনায় । গেলাম বই খুজতে ৬টা বইয়ের কোড লিখে কাউন্টারে বই দিতে বললাম স্লিপ দিয়ে। তেনারা বই এনে দিলেন ২টা।

বললেন,"অন্য বইগুলো স্যাররা নিয়ে গেছেন "। যাক,২টা বই ভরসা । পৃষ্টা নম্বর লিখে গেলাম ফটোকপি সেকশনে । ওরা বলল,"আপনি আজকে(২জানুয়ারি) দিচ্ছেন তো আপনি ফটোকপি পাবেন ৫তারিখ শনিবার। হিসাব করলাম ৫তারিখ পেলে ৬,৭ এই ২দিন সময় পাচ্ছি তো এসাইনমেন্ট ৮তারিখ জমা দিতে পারব।

তো বাসায় চলে এলাম নিশ্চিন্তে । কালেভদ্রে লাইব্রেয়ারিতে যাই তো চেহারা দেখাতে তাই নিজেকে বেশ পড়ুয়া পড়ুয়া মনে হচ্ছিল । এলো শনিবার । ক্লাস শেষ করে গেলাম ফটোকপির জন্য । ঢুকেছি মাত্র বলল,"মেশিন নষ্ট আগামি বুধবারের আগে পাবেন না " ।

মেজাজ তখন পুরাই খারাপ হই গেল। কারন,এসাইনমেন্ট কি করে করব?! বললাম,"২টা বইয়ের এই সামান্য ফটোকপি করে দিতে প্রথমে নিলেন ৩দিন এখন বলছেন আর ৩দিন চাই আপনার করে দিতে । পড়ালিখা কি আমাদের করতে হবে?!!!!"। লোকটা যা বলল," আপনি নিজেই আবস্থা দেখুন,আর কতো বই জমে আছে,আমারাও তো মানুষ "। এই ফটোকপি রুম এর পরিসংখ্যানটা পরিষ্কারভাবে দেই ।

কৌণিক দূরত্বে ২ টা টেবিল ,কয়েকটা বুকশেলফ ,ঢুকার মুখে নিচু ধাচের একটা শোকেস । রুমের একপ্রান্তে পাশাপাশি ২টি ফটোকপি মেশিন ,অন্যপাশে ১টি। ভাবছেন বুঝি," এত ফটোকপি মেশিন তাহলে ফটোকপি করতে এত সময় নেয় কেন?!" আসলে ২টা নষ্ট,মানুষ আছে ফটোকপির জন্য ৩ জন । ওই একটা মেশিনই নষ্ট আর ফটোকপিতে দেওয়া বইয়ের পাহাড় জমে গেছে। দেখলাম একেকজন ২০০/৩০০ পৃষ্টা করে ,কেউ কেউ পুরা বই ফটোকপিতে দিয়েছে।

আসা করি বুঝেছেন ব্যাপারখানা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে প্রায় ২৫০০০ এর মতো ছাত্রছাত্রী পড়াশুনা করছে। তাদের অন্তত ৫০জন যদি ২টা করে বই ফটোকপিতে দেয় তাহলে এগুলো ফটোকপি করতে ৩ দিন সময় খুব বেশি নয়। একটা বাস্তব চিত্র তুলে ধরলাম ডিজিটাল বাংলাদেশের ,কোন অভিযোগ নয় অথবা কোন বিরুদ্ধবাদিতা নয় স্রেপ আমাদের প্রয়োজন এবং বাস্তবতার চিত্র । আমার একজন প্রিয় শিক্ষক এর বলা একটি গল্প লিখে শেষ করব।

চট্টগ্রাম কলেজের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ড.ইউছুপ আলী স্যার আমাদের অর্থনীতি ক্লাস নিতেন এবং প্রায় খুব রসিয়ে রসিয়ে এই গল্পটা বলতেন, "এক কৃষক দেনার দায়ে মহাজনকে তার জমির খাজনা দিতে পারতেন না । তো স্বভাবতই মহাজন ডেকে আগামী কালকের মধ্যে আমার খাজনা চাই । তখন কৃষক বলল, কর্তা কি করে আমি আগামী কালকের মধ্যে আপনার খাজনা পরিশোধ করব ? আমার তো আপনার মতো জমি নাই। মহাজন বললেন ,যদি আমি আমার জমি সব দিয়ে দেই তুই কি করবি? তখন কৃষক বল্ল,সত্যি সত্যি দিবেন হুজুর? মহাজন বললেন ,হা,তবে এক শর্তে ,তোকে আমি জমির একপ্রান্তে ছেড়ে দিব ,ওখান থেকে তুই দৌড়ানো শুরু করবি সূর্যাস্তের দিকে , তোকে দৌড়ানো শেষ করতে হবে সূর্যাস্তের আগে । যদি তুই পুরা জমি দৌড়ে আস্তে পারস ওই টিলার ওখানে তাহলে এই সব জমিগুলো তোর ।

কৃষক দৌড়ানো শুরু করল ,সে ভাবল, সব জমিগুলোই আমার চাই ,তাই সে দৌড়াতেই থাকল ,যখন সূর্যাস্ত হল তখন কৃষক পরে গেল মুখে ফেনা তুলে । এবং মারা গেল । পরদিন মহাজন এসে দেখে বলল, কৃষক যদি না মরে সে যেটুকু দৌড়ে এসেছে সেটুকু চাইত আমি দিয়ে দিতাম কথামত । কিন্তু বেটে লোভী তাই মরে গেল অতিরিক্ত চাইতে গিয়ে । (চলবে)  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।