আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৬৭তম জন্মদিনে শেখ হাসিনা

চেনা দুঃখ চেনা সুখ চেনা চেনা হাসি মুখ
১৯৪৭ সালের এই দিনে পৃথিবীর মুখ দেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ মুহূর্তে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৮তম অধিবেশনে অংশ নিতে অবস্থান করছেন পৃথিবীর অন্যপ্রান্তে নিউইয়র্কে। তবে দেশে শেখ হাসিনার জন্মদিনটি উৎসব আমেজে পালন করছে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জ্যেষ্ঠ সন্তান শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী তীরবর্তী প্রত্যন্ত পাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম গ্রহন করেন। তার ডাক নাম হাসু।

দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদির কোলে-পিঠে মধুমতি নদীর তীরে টুঙ্গিপাড়ায়। তারা পাঁচ ভাই-বোন। অপর চারজন হচ্ছেন শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। ভাই-বোনদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও রেহানা ছাড়া সবাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের হাতে নিহত হন। বাবার রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারণে তাকে খুব একটা কাছে না পেলেও শৈশব-কৈশোর আনন্দেই কেটেছে শেখ হাসিনার।

গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সাথেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। গ্রামের সাথে তাই তার নাড়ির টান। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন পুরনো ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়া বাসায় তারা ওঠেন।

বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টু রোডের বাসায় তারা বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। এখন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শেরেবাংলা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে খ্যাত। শুরু হয় তার শহর বাসের পালা তথা নগর জীবন। শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন।

ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ হাসিনা ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুব বিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ছয়-দফা দাবিতে পূর্ববাংলায় এক অভূতপূর্ব জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি হয়।

শাসকগোষ্ঠী ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। শুরু হয় প্রচণ্ড দমন-নির্যাতন। আটক থাকা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে। তার জীবন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে গভীর বিপদাশংকা ও দুঃসহ কষ্ট। এই ঝড়ো দিনগুলোতেই বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে ১৯৬৮ সালে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সাথে শেখ হাসিনার বিয়ে হয়।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের করাচিতে নিয়ে যাওয়ার পর গোটা পরিবারকে ঢাকায় ভিন্ন এক বাড়িতে গৃহবন্দী করে রাখা হয়। অবরুদ্ধ বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দী অবস্থায় তার প্রথম সন্তান ‘জয়’-এর মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যা সন্তান পুতুলের জন্ম হয়। ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হবার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। স্বামী ও ছোট বোনসহ তৎকালীন পশ্চিম জার্মানীতে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হবার খবর পান।

তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোনো পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। ১৯৮১ সালের ১৩ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাঁকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। আর ওই বছরেরই ১৭ মে তিনি দীর্ঘ ৬ বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে মাতৃভূমি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। ১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন।

১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের পরে তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং সে বছরের ২৩ জুন দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি সপ্তম জাতীয় সংসদে বিরোধীদলের নেতা নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে গেলেও ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং ৫০০ নেতা-কর্মী আহত হন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ব্যস্ততার মাঝেও শেখ হাসিনা সাহিত্য চর্চা ও সৃজনশীল লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষেআওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শনিবার বাদ জোহর বায়তুল মোকারম জাতীয় মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বিকেল চারটায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্য়ালয়ে মিলাদ, দোয়া মাহফিল, বস্ত্র বিতরণ ও আলোচনা সভা হবে। বিভিন্ন এতিমখানার দুঃস্থদের মধ্যে খাদ্য বিতরন করবে আওয়ামী লীগ। এছাড়া দুপুর ১২টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এবং প্যাগোডা, গির্জাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় উপসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা-সভা হবে। শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদ জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের টাওয়ার ভবন অডিটরিয়ামে শিশু কিশোরদের মাঝে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরন ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলা, আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক জোট এ উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

লিংক এখানে : http://www.protimuhurto.com
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।