আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

৬৭তম গোল্ডেন গ্লোব এ্যাওয়ার্ড এবং কিছু কাটা-ছেঁড়া

.... তবুও আমি স্বপ্ন দেখি ... (স্বপ্ন, বাস্তব এবং ব্লগের সর্বস্বত্ব ব্লগার কতৃক সংরক্ষিত)

আর পাঁচ ঘণ্টা আঠার মিনিট পর শুরু হতে যাচ্ছে গোল্ডেন গ্লোব এ্যাওয়ার্ড। গোল্ডেন গ্লোব দিয়েই মূলতঃ শুরু হয় বছরের কমার্শিয়াল ফিল্ম গুলোকে স্বীকৃতি দেয়ার পালার । গোল্ডেন গ্লোবের পর আসবে বাফটা এবং তারপর অস্কার। এছাড়াও ছোট ছোট আরো বেশ কিছু এ্যাওয়ার্ড আছে যার অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেয়া হয়। যখনই এই এ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান গুলো হয়ে থাকে তখনই যেন তারার মেলা বসে রেড কার্পেটে।

যেহেতু আমরা দর্শক এবং আমাদের পয়সার উপর দিয়েই তাদের এই রেড কার্পেটে হাটা, অতএব চলুন আমরাও একটু কাটা ছেড়া করে দেখি তারা কী করল বছর ভর। গত বছর অস্কারের মূল ১১টা ক্যাটাগরির সম্ভাব্য বিজয়ী অনুমান করেছিলাম যেখানে ৯টা অনুমান ঠিক হয়েছিল এবং ২টা আমার বিবেচনায় দ্বিতীয় সেরা পেয়েছিল। ফলাফল, এতটাই অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম যে ২০০৯ সনে প্রায় ২০০ মুভি সিনেমা হলে গিয়ে দেখেছি। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা লাগবে এই মুভিগুলো অফ পিক আওয়ারে সিনেমায় গিয়ে দেখতে (যদিও আমি সবগুলো চরম পিক আওয়ারে, রিলিজের প্রায় প্রথম দিন গিয়ে দেখেছি)। যাইহোক, সারা বছর মুভি নিয়ে গবেষণা কতটুকু হল সেটার রিপোর্ট কার্ড জমা দেয়ার পালা এখন।

লিখতে বসলাম এবারের গোল্ডেন গ্লোবের সম্ভাব্য বিজয়ীদের নিয়ে কাটাছেড়া রিপোর্ট! প্রথমেই বলে নিচ্ছি গোল্ডেন গ্লোবের ইতিহাসে এবারই প্রথম লাইভ দেখাতে যাচ্ছে টেলিভিশনে। ব্রিটিশ কমেডিয়ান রিকি জার্ভেইজ এবারের আসরের হোস্ট। নমিনেশনের দিক দিয়ে এবার আপ ইন দ্যা এয়ার সর্বোচ্চ ছয়টা নমিনেশন পেয়েছে। নাইন পাঁচটা এবং এ্যাভাটার ও ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ড ৪টা করে নমিনেশন পেয়ে এর পর রয়েছে। এখানে আমি মূল ক্যাটাগরি থেকে সম্ভাব্য বিজয়ীদের নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করলাম।

সেরা চলচ্চিত্র (ড্রামা) ড্রামা ক্যাটাগরিতে এবার প্রেশাস এবং আপ ইন দ্যা এয়ার এর মধ্যে চরম লড়াই হবে। ক্রিটিকালি বললে আমি বলবো প্রেশাস জিতুক কিন্তু বাস্তবে সম্ভবত আপ ইন দ্যা এয়ার-ই জিততে যাচ্ছে। গত বছরের মত অস্কারের আগে আগে প্রতিটা মুভি নিয়ে এবারও বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে আগামী মাসে। সেরা চলচ্চিত্র (মিউজিকাল অথবা কমেডী) এই ক্যাটাগরিতেও দারুণ লড়াই আশা করছি। নাইন এবং ইটস কম্প্লিকেটেড এর মধ্যে কে জিতবে সেটা বলা খুব কঠিন।

বিনোদন, গল্প এবং কলা - এই তিনটাকে যদি এক সাথে ধরে বছরের সেরা মুভি নির্বাচন করতে বলা হয় তবে আমি চোখ বন্ধ করে ইটস কম্প্লিকেটেড-কে রায় দেব। ঘণ্টা দুই আগেই দ্বিতীয় বারের মত মুভিটা দেখে আসলাম। এক কথায় অসাধারণ। এ্যাওয়ার্ড জিতুক বা না জিতুক, সবার দেখা উচিত। তবে মন যতই বলুক ইটস কম্প্লিকেটেড জিতুক কিন্তু এবার ফল সম্ভবত যাচ্ছে নাইনের দিকে।

নাইন যে মুভির উপর ভিত্তি করে তৈরী (এইট এন্ড হাফ) সেটা ব্রিটিশ ফিল্ম ইন্সটিটিউট কতৃক আয়োজিত জরিপে ডাইরেক্টর এবং ক্রিটিক্স – উভয়ের মতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দশটা মুভির একটা। তবে নাইন আমাকে হতাশ করেছে। দেখা যাক এইট এন্ড হাফের প্রভাব তাকে গোল্ডেন গ্লোব এনে দিতে পারে কি না। সেরা অভিনেতা (ড্রামা) এই এ্যাওয়ার্ডটা জর্জ ক্লোনির না জেতার কোন কারণ দেখছি না। আপাতত অন্যদের আমি হিসেবে রাখতে পারছি না।

তবে গোল্ডেন গ্লোবের একটা বৈশিষ্ট্য হল মাঝে মাঝেই উল্টাপাল্টা অভিনেতা এ্যাওয়ার্ড পেয়ে বসে। তেমনটা না হলে অনুমান ভুল হবার কথা নয়। সেরা অভিনেত্রী (ড্রামা) প্রেশাস-এর ডেবুট্যান্ট অভিনেত্রী গ্যাবি (Gabourey Sidibe)। এতটুকু গ্যারান্টি দিয়ে বলা যায় গ্যাবি এবার গোল্ডেন গ্লোব, বাফটা এবং অস্কার, তিনটাই জিততে যাচ্ছে। ইয়াং ভিক্টোরিয়াতে এমিলি ব্লান্ট-এর অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করেছে।

শুধু তাই নয় রীতিমত এই ব্রিটিশ অভিনেত্রীর ফ্যান বানিয়ে দিয়েছে। তবে সেই অভিনয় এ্যাওয়ার্ড জেতার জন্য যথেষ্ট নয়। সেরা অভিনেতা (মিউজিকাল অথবা কমেডী) শার্লক হোমস-এর ভূমিকায় রবার্ট ডাউনি জুনিয়র অসাধারণ ছিল। তিনবার দেখেছি শার্লক হোমস সিনেমায় গিয়ে। একেকবার মনে হচ্ছিল কোনান ডয়েল যেন শত বছর আগে ডাউনিকে দেখেই হোমসকে লিখেছিলেন।

এতটাই ঢুকে গিয়েছিল সে চরিত্রের ভেতরে। তবুও গোল্ডেন গ্লোবটা সম্ভবত জিততে যাচ্ছে আইরিশ-এ্যামেরিকান অস্কার বিজয়ী অভিনেতা ডেনিয়েল ডে লুইস। নাইন মুভিতে তার অভিনয় ডাউনির থেকেও অসাধারণ ছিল। নাইনে একটা গান আছে - বি ইটালিয়ান। গানটা যেন ডেনিয়েল ডে লুইস-কে সবচেয়ে বেশী অনুপ্রাণিত করেছিল! আইরিশ থেকে সে ইটালিয়ান হয়ে গিয়েছিল এই মুভিতে।

সেরা অভিনেত্রী (মিউজিকাল অথবা কমেডী) মেরিল স্ট্রিপ পেতে যাচ্ছে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। তবে দেখার বিষয় কোন মুভির জন্য। দুটো মুভির জন্য সেরা অভিনেত্রীর দুটো নমিনেশন পেয়েছেন তিনি এবার। তার ইটস কম্প্লিকেটেড মুভিটা জুলি এন্ড জুলিয়া থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী। অতএব আমার ধারণা প্রথমটার জন্যই পেতে যাচ্ছেন।

সেরা অভিনেতা (পার্শ্ব চরিত্র) এখানে কোন প্রতিযোগিতা হবে না এবার। ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস মুভিতে স্ক্রিস্টোফ ভাল্টজ এতটাই অসাধারণ ছিল যে কান চলচিত্র উৎসবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার জেতার পর সবাই ধারণা করছে এবার অস্কারটাও সে পাবে। সেই দৌড় এখনও অনেক দূর, তবে গোল্ডেন গ্লোবটা তার ব্যাগেই যাচ্ছে নিশ্চিত। ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস মুভিতে তার অভিনয় গত বছরের ডার্ক নাইটের হিথ লেজারকে মনে করিয়ে দিচ্ছিল। হিথ লেজারের অভিনয়ের কারণে জোকারের ছায়ায় যেমন ব্যাটম্যান হারিয়ে গিয়েছিল এখানেও তেমনই ব্রাডপিটকে ভাল্টজ-এর আলোকচ্ছটায় ম্রিয়মাণ মনে হয়েছে।

সেরা অভিনেত্রী (পার্শ্ব চরিত্র) সবগুলো নমিনেশনই দুর্বল। পেনিলোপি ক্রুজ যদি গত বছরের ভিকি ক্রিস্টিনা বার্সিলোনার মত এবার নাইনের জন্য ছক্কা মারে তবে অবাক হব না। যাইহোক, এই ক্যাটাগোরিতে অনুমান না করেই ছেড়ে দিচ্ছি। সেরা চিত্রনাট্য চিত্রনট্যের দিক দিয়ে আমার মতে ২০০৯ এর সেরা মুভি ছিল ডিস্ট্রিক্ট নাইন। গল্প বলার ধরণ এত সুন্দর ছিল মুভিটায় যে কোন স্টার ছাড়াই হিট করেছে।

ইটস কম্প্লিকেটেড এর চিত্রনাট্যও অসাধরণ। একই কথা প্রযোজ্য আপ ইন দ্যা এয়ার-এর জন্যেও। কে জিততে পারে বলা কঠিন তবে তিনটাই আমার প্রিয় মুভি। যে কেউ জিতলেই খুশি হব। সেরা পরিচালক জেমস ক্যামেরন? এ্যাভাটার যে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে নিল সেটা কিন্তু কোন স্টারের জন্য নয়।

ডাইরেক্টরের জন্য। স্টার যদি কেউ থেকে থাকে সেখানে, সেটা ডাইরেক্টর জেমস ক্যামেরন স্বয়ং। টাইটানিকের পর এটাই তার প্রথম পরিচালিত মুভি। আবার কি সে বাজি মাত করবে? আমার তাই মনে হচ্ছে। তবে ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস এর পরিচালক টারানটিনো তাকে যথেষ্টই বেগ দেবে।

টারানটিনোর ইনগ্লোরিয়াস বাস্টার্ডস মুভি বানানোর ক্ষেত্রে একটা মাস্টার পিস ছিল গতবছর। আমি জুরি হলে তাকেই এ্যাওয়ার্ডটা দিতাম। সেরা এনিমেডেট ফিচার ফিল্ম এটার রায় আমি ১০০% নিশ্চিত ভাবে দিতে পারবো। “আপ” ছাড়া এই বছর আসলে কোন ভাল এ্যানিমেটেড মুভিই আসে নি। একমাত্র আপ মুভিটাতেই গল্প আছে, আছে বক্তব্য এবং বিনোদন।

অবধারিত ভাবে এটাই পেতে যাচ্ছে এবারের গোল্ডেন গ্লোব। মোটামোটি এই হল মূল ক্যাটাগরির নমিনেশন এবং তাদের আলোচনা। কতটা খাটে আমার অনুমান সেটা দেখা যাবে আর একটু পরই। সময় আর বেশী নেই। ক্যালিফোর্নিয়ার ব্যাভার্লি হিলস থেকে একটু পরই লাইভ দেখাতে শুরু করবে গোল্ডেন গ্লোব এ্যাওয়ার্ডের ৬৭তম আসর।

এর ফাঁকে আসুন আমরা একটু আড্ডা জমিয়ে নেই। কমেন্ট অংশে আপনিও এই চলচিত্র বিষয়ক আড্ডায় অংশ নিতে পারবেন। সবাইকে শুভেচ্ছা। ১৭ জানুয়ারি ২০১০ ডাবলিন, আয়ারল্যান্ড।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।