আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যে বাগেরহাটের রামপালের তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সিদ্ধান্ত থেকে না সরলে ১২ অক্টোবর কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি।
আজ শনিবার রামপালে লংমার্চের সমাপনী ঘোষণা করে বক্তব্য দেন কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। তিনি সুন্দরবন ঘোষণায় বলেন, সরকার যদি জনগণের দাবির বিরুদ্ধে যায়, তাহলে সেই পদক্ষেপ উপড়ে ফেলবে জনগণ। তিনি বলেন, সুন্দরবনকে নিজ শক্তিকে বিকশিত হওয়ার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। সেই নীতিমালা দ্রুত প্রয়োগ করতে হবে।
সমাপনী ঘোষণা দেওয়ার আগে কমিটির আহ্বায়ক শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, সুন্দরবনের পাশে শুধু ভারত নয়, অন্য যেকোনো দেশ বা দেশীয় প্রতিষ্ঠান যদি ধ্বংস করার প্রকল্প নেয়, তা প্রতিরোধ করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের আন্দোলন কোনো দল বা মতের নয়। সুন্দরবন রক্ষায় সারা দেশের মানুষের জাতীয় আন্দোলন। ’ এ আন্দোলনে সবাইকে শরিক হওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান।
লংমার্চে খুলনা, যশোর, বাগেরহাটের বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষ যোগ দেয়।
বাগেরহাটে সমাবেশ
দুপুরে বাগেরহাট শহরের পুরাতন কোর্ট চত্বরে লংমার্চ উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেছেন, লংমার্চের মধ্য দিয়ে সারা দেশের দেশপ্রেমিক জনতা একত্র হয়েছে। এ জনতা সুন্দরবন ধ্বংসের সব চক্রান্ত রুখে দেবে।
এই লংমার্চে যাঁরা যোগ দেননি, কিন্তু সুন্দরবন ধ্বংসের বিরুদ্ধে সোচ্চার আছেন, তাঁদের প্রতি নিজ নিজ এলাকায় ‘সুন্দরবন রক্ষা কমিটি’ গড়ে তোলার আহ্বান জানান জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক।
সমাবেশে জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকারি নানা ধরনের তৎপরতায় ইতিমধ্যে সুন্দরবন ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মধ্য দিয়ে একে চিরতরে ধ্বংস করে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, ‘আমাদের যেহেতু বিদ্যুতের সংকট আছে, বিদ্যুৎ আমাদের প্রয়োজন, তাই বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়টি আমাদের সামনে মুলো হিসেবে ঝুলোনো হয়েছে। তবে এর পেছনে রয়েছে সুন্দরবনকে চিরতরে ধ্বংস করে দিয়ে একে মুনাফার রসদে পরিণত করার চক্রান্ত। এরই মধ্যে নানা দেশি-বিদেশি কোম্পানি সুন্দরবনের আশপাশের এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছে। এসব আয়োজন বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশকে মায়ের মতো আগলে রাখা সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক মানুষ এ চক্রান্ত বাস্তবায়ন হতে দেবে না।
’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, ‘সব চক্রান্ত বানচাল করে আমরা বাগেরহাটে পৌঁছেছি। সব বাধা অতিক্রম করে রামপালে পৌঁছাব। সুন্দরবনকে আমরা রক্ষা করে ছাড়বই। ’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্সের সঞ্চালনায় সমাবেশে বাম রাজনৈতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সাংস্কৃতিক সমাবেশ হয়।
এর আগে বেলা একটার দিকে বাগেরহাটে প্রবেশ করে লংমার্চের কাফেলা। বাগেরহাট শহরে পৌঁছানোর পর হাজারো মানুষ রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে তাদের স্বাগত জানায়।
খুলনায় সমাবেশ
খুলনা ছাড়ার আগে আজ সকাল সাড়ে নয়টার দিকে নগরের শহীদ হাদিস পার্কে একটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে জাতীয় কমিটির খুলনা জেলা আহ্বায়ক মনোজ দাসের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
আনু মুহাম্মদ বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি হলে প্রথম আঘাত আসবে সুন্দরবনের ওপর।
সুন্দরবন ধ্বংস হলে হাজারো মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হবে। সুন্দরবনে থাকা প্রাণীকুল মারা যাবে। রামপালের খুব কাছে খুলনা নগর। তাই এখানেও এর প্রভাব হবে তীব্র।
এ সময় শহীদ হাদিস পার্ক ও এর আশপাশের এলাকা স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে।
‘জনতা সুন্দরবন ধ্বংসের চক্রান্ত রুখে দেবে’
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।