দিন শেষে বলি ভালো আছি।
কোন এক ফিচারে পড়েছিলাম গল্ডফিশের স্মৃতিশক্তি নাকি পাঁচ সেকেন্ড। যতদূর মনে পরে সেটা হুমায়ুন আহমেদের কোন ফিচার ছিল। লেখক বলেছিলেন বাঙালি নাকি অনেকটা গোল্ডফিশের মত। তারা কিছুদিনের মধ্যেই ঘটন অঘটন সব বেমালুম ভুলে যায়।
গোল্ডফিশের উদাহরণটা হয়ত ভুল ছিল কারন গোল্ডফিশের স্মৃতিশক্তির সময়কাল কমপক্ষে তিন মাস কিন্তু আমাদের সল্পস্মৃতির তকমা ছিল যথার্থ। এ, বি, এম মুসা রচিত একটা সালতামামি পড়েছিলাম প্রথম আলোতে। এ, বি, এম, মুসা ব্যক্তি হিসাবে কেমন সেটা আমি বিচার করছিনা আমি শুধুতার কলামটার কথা বলছি। সালতামামিতে গত বছরের অনেক গুলো অঘটনের কথা পড়ার সময় নিজেকে হুমায়ুন আহমেদের গোল্ডফিশ বলে মনে হচ্ছিল। যেমন বন্ধু রাষ্ট্রের অর্থনিতীর সুবাত্তি জ্বালানর জন্য তিস্তার বুকের উপর যখন বাঁধ দিয়ে তিস্তার লালবাত্তি জ্বালান হল তখন কয়দিন আমরা খুব চিৎকার করলাম।
আমার তিস্তা পারের বন্ধুটা খুব দুঃখ করে বল্ল “ভাই জানেন রাতে ঘুমাইতে গেলে এখনো তিস্তার পানির সোঁ সোঁ শব্দ শুনতে পাই। “ এখন মনে হয় সে আর শব্দ শুনতে পায়না। তাকে একবারো খোঁজ নিতে দেখিনা কি হোল তার সাধের তিস্তা নদীর। কপোতক্ষের উপর একটা সাকো ছিল। ভাঁটার সময় নদে পানি শুকিয়েযেত, ছোট বাচ্চারা সব জোয়ার আসার ঠিক আগমূহুর্তেই ঐ সাকোর উপর উঠত।
জোয়ারের পানি যখন আসত তখন মনে হত যেন একটা দানব আসছে। চারিদিক পানির গর্জনে কেপে উঠত আর সেই পানির ঝাপটাই দলনার মত কেঁপে উঠত সাকো। এখন কপোতক্ষ মরে গেছে। জয়ারেও পানি নাই ভাটাতেও পানি নাই। তাতে কোন নেতার ক্ষতি হয়েছে বা কোন মন্ত্রির ব্যবসায় লস গিয়েছে বলে মনে হয়না।
তিস্তা গেলেও কিছু হবেনা। তাই কারো মাথা ব্যথা নাই। আর আমার বন্ধুটি সোঁ সোঁ শব্দ ছাড়ায় ঘুমান শিখে গেছে। তাই তারও কোন ঠেকা নাই তিস্তার কাছে।
আমি ভুলে গেছি সাগর রুনির কথা।
সামুতে এখনো ব্যনারটা আছে। স্ক্রল করার সময় হয়ত চোখে পরে কিন্তু কোন ভাবান্তর হয়না। প্রতিদিনের ডাল ভাতের মতই হয়ে গেছে ব্যানারটা। প্রথম কয়টাদিন খুব উঃ আঃ করলাম তারপর ধিরে ধিরে ভুলেই গেলাম যে কোন এক খুনির বিচারের জন্য আমি ৪৮ ঘন্টার একটা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির শেষটা দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। সেই ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে প্রাই একটা বছর কেটে গেছে এখনও কেউ জানেনা খুনি কে আর আমিও কাউকে প্রশ্ন করিনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নতুন কি মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিলেন।
আমার মনে আছে তাজরিন গার্মেন্টসের ঘটনার পর অনেকেই কান্না ধরে রাখতে পারেনি। শায়দিয়া গুলরুখ এর “Letter from an unborn child” পড়ে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু কই সেই শতাধিক পড়া লাশের খুনের বিচার? কি হয়েছে সেই গার্মেন্টস মালিকের, কি হল সেই অসহায় পরিবার গুলোর? কোন খোবরই আমি জানিনা। এমনকি জানার চেষ্টাও করিনা।
সাংবাদিকরাও ভালো করেই জানেন বাংলাদেশি পাব্লিক বাসি খবর খায়না।
তাই নিত্ত নতুন গরম গরম খবরে পত্রিকার পাতা ভরা। পুরনো খবরের হদিস বাজারে চলেনা। পত্রিকার পাতায় বড় করে আসে বিশ্বজিত কে কুপিয়ে হত্যা। youtube এ ভিডিও। এরকম চখের সামনে একজন মানুষ কে কিছু সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কুপিয়ে মেরে ফেল্ল! আর পশাক ধারি কিছু প্রশাসনিক কর্মি তাকিয়ে তাকিয়ে তাই দেখল।
তাদের দেখে মনে হচ্ছিল খুব মজা পাচ্ছে এবং এত ভালো করে পর্যবেক্ষন করছিল যেন রাতের বেলাই বউকে রগরে রগরে এই কাহিনী শুনাতে হবে। সেই কুপাকুপি দল ছাত্রলীগের গর্বিত শাখা প্রতিষ্ঠা হচ্ছে দেশ ছারিয়ে বিদেশের সনাম ধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। হায়রে সেলুকাস অদ্ভুত শুধু দেশ না অদ্ভুত এই দেশের মেধাবি ছাত্ররাও। কিছুদিনের মধ্যেই আবার নিজের পিতাসম শিক্ষকদের উপর পুলিশের নির্যাতন। সমসাময়িক এত রগ রগে ঘটনা থাকলে আগের গুলো মনে রাখব কি করে?! তাইতো আমরা ভুলে গ্যাছি পদ্মা সেতুর নামে দুর্নিতির বিরাট ফাঁদ পেতেছিলেন আমাদের মন্ত্রী সাহেব।
তবুও নির্লজ্জের মত তাকে শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিকের তকমা দেয়ারপরও নিজেকে দেশপ্রেমিক বলতে দ্বিধা হয়না।
যদি এখন বাংলাদেশি তরুণদের প্রশ্ন করা হয় যে “শিবির কি খারাপ?” আমি হলফ করে বলতে পারি মাত্র ২০ শতাংশ তরুণ হ্যাঁবোধক উত্তর দিবে। অধিকাংশই উত্তরে নিরব থাকবে। এই নিরবতা সম্মতির লক্ষন না এই নিরবতা দ্বিমতের। আমরা ভুলে গেছি নব্বই এর দশকে শিবিরের দৈরাত্ব।
রগ কাটা আর আর হলের রুমে রুমে ঢুকে চাপাতি দিয়ে ফালাফালা করে ফেলা সেই শিবির নাকি নিজেদের বদলে ফেলেছে। তাদের প্রতি সবার সমবেদনা। আগামি ১০ বছর পরে সবার কাছেই শিবির হবে আদর্শ ছাত্র সঙ্গঠন! কিন্তু কেউ মনে রাখবেনা কাদের হাতে এই শিবির তৈরি। এর শিকড়ে কত লক্ষ বাঙ্গালির খুনের ইতিহাস। তখন সবাই ভুলেই যাবে এই দেশের মুক্তির জন্য কখনও যুদ্ধ হয়েছিল, কতজন মানুষের জীবন আর কত নারীর ইজ্জতের বিনিময়ে নিজেকে স্বাধীন বলে দাবি করি আমরা।
আর কিছু কপোট ধর্মের মুখোশ পরা তথাকথিত আলেম ক্ষমতার লোভে কিভাবে নিজের দেশের, নিজের প্রিতবেশিদের হায়নাদের হাতে তুলে দিয়েছিল খুন করার জন্য, ধর্ষন করার জন্য। তারাই আবার বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে গাড়ি হাকিয়ে সংসদে যায়। আমরাই তাদের ভোট দেয় এবং তাদের হাতে গড়া ছাত্র সঙ্গঠনের জন্য সমবেদনা জানাই।
মানতেই হয় আমাদের স্মৃতিশক্তি সেই পাঁচ সেকেন্ডের গোল্ডফিশের থেকেও খারাপ। আর এই স্বল্প স্মৃতি নিয়ে নির্বোধের মতই জীবন আমাদের।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।